ওয়ারিশ সনদ কেন দরকার এবং কিভাবে তুলতে হয়
বন্টনযোগ্য সম্পদ থেকে প্রথমে অংশীদারগণকে তাদের জন্য নির্ধারিত অংশ প্রদান করা হবে। বাকি সম্পত্তি যদি থাকে তবে রেসিডুয়ারিগণের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে। যদি অংশীদার বা রেসিডুয়ারির মধ্যে কোন ওয়ারিশ না থাকে তবে দূর সম্পর্কীয় আত্বীয়গণের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ নীতি
(ক) মৃতের সাথে যার কারণে বা মাধ্যমে সম্পর্কযুক্ত তিনি বেচেঁ থাকলে পরবর্তী সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তি ওয়ারিশ হবে না। যেমন পিতা বেচেঁ থাকলে ভাই সম্পত্তি পায় না।
(খ) একই শ্রেণির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নিকটবর্তীর কারণে দূরবর্তী বঞ্চিত হয়। যেমন পিতার কারণে দাদা বঞ্চিত হয়। ব্যতিক্রম-কন্যার কারণে ভাইয়ের ছেলে বঞ্চিত হয় না।
(গ) পাচঁজন উত্তরাধিকারী কোন অবস্থাতেই বঞ্চিত হবে না।
১. সন্তান-পুত্র এবং কন্যা,
২. পিতা,
৩. মাতা,
৪. স্বামী, ও
৫. স্ত্রী। এদেরকে প্রাথমিক উত্তরাধিকারী বলা হয়ে থাকে।
উপরোক্ত ৫ জনের মধ্যে তিন জনের বিকল্প উত্তরাধিকারী রয়েছে। তারা হচ্ছে-
১. সন্তানের সন্তান (যত নিম্নে হতে পারে),
২. দাদা (যত উপরে হতে পারে), ও
৩. দাদী অথবা নানী (যত উপরে হতে পারে)। স্বামী ও স্ত্রীর কোন বিকল্প উত্তরাধিকারী নাই।
(ঘ) প্রাথমিক উত্তরাধিকারী থাকলে তার বিকল্প উত্তরাধিকারী সম্পত্তি পাবে না। ব্যতিক্রম-যখন কোন পুত্র থাকবে না কিন্তু এক কন্যা ও ছেলের কন্যা থাকলে কন্যা ১/২ অংশ এবং পুত্রের কন্যা ১/৬ অংশ পাবে।
(ঙ) সাধারণ সমপর্যায়ের নারী পুরুষের অর্ধেক থেকে পাবে। যেমন কন্যা পুত্রের অর্ধেক পাবে।
(চ) দুটো কারণে একজন উত্তরাধিকারী সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়।
১. যার সম্পত্তি বন্টন হচ্ছে তাকে হত্যা করলে; ও
২. ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করলে।
(ছ) কোন ব্যক্তির মৃত্যুর সময় তার জীবিত আত্মীয়গণ উত্তরাধিকারী হিসাবে বিবেচিত হবে।
ওয়ারিশ হিসাবে অংশীদারেরা কে কি পরিমাণ সম্পত্তি পাবে সে বিষয়ে কতিপয় উদাহরণ
(ক) মৃত ব্যক্তিঃ পিতা-পিতার পিতা, মাতা-মাতার মাতা, দুই কন্যা-পুত্রের কন্যা।
কোন ব্যক্তি মৃত্যুকালে পূর্ববর্ণিত ৬ ধরনের আত্নীয়/ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করলে, ওযারিশরা নিম্নোক্তভাবে সম্পত্তি প্রাপ্য হবেন।
১. পিতা—————–১/৬ (যেহেতু কন্যা আছে)
২. পিতার মাতা———- (পিতার কারণে বাদ)
৩. মাতা—————– ১/৬ (যেহেতু কন্যা আছে)
৪. মাতার মাতা———- (মাতার কারণে বাদ)
৫. দুই কন্যা———— ২/৩
৬. পুত্রের কন্যা——— (কন্যার কারণে বাদ)।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
(খ) মৃত ব্যক্তিঃ- পিতা-মাতা, কন্যা-পুত্রের কন্যা ৪ জন
কোন ব্যক্তি মৃত্যুকালে পূর্ববর্ণিত ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করলে তার ওয়ারিশরা নিম্নোক্তভাবে সম্পত্তি পাবেন।
১. পিতা——————-১/৬ (সন্তান বর্তমান)
২. মাতা———— —– ১/৬ (সন্তান বর্তমান)
৩. কন্যা———— —— ১ (এক কন্যা)
৪. পুত্রের কন্যা ৪ জন—— ১/৬ (প্রত্যেকে ১/২৪ অংশ)।
(গ) মৃত ব্যক্তিঃ– মাতা-বোন-পিতা।
১. পিতা———— ১/৩ (সম্পত্তি নাই এক বোন আছে)
২. বোন———— (পিতার কারণে বাদ)
৩. পিতা———— ২/৩ (অংশীদার ও রেসিডুয়ারী)।
(ঘ) মৃত ব্যক্তিঃ- পিতার মাতা-মাতার মাতা-পিতার পিতা। মৃত ব্যক্তির পিতার মাতা (দাদী), মাতার মাতা (নানী) ও পিতার পিতা (দাদা) ওয়ারিশ থাকলে সম্পত্তি পাবে।
(ঙ) কোন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে ৫ জন ব্যক্তিকে কোন ক্রমে বাদ দেওয়া যাবে না। কোন মৃতের পিতা, মাতা, স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকলে তাদের অংশ আগে বন্টন করতে হবে। অবশিষ্ট সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে পুত্র কন্যা থাকলে পুত্র ও কন্যা থাকলে পুত্র কন্যার দ্বিগুণ পাবে। তবে সন্তানের সন্তান, দাদা, দাদী অথবা নানীর বিকল্প উত্তরাধিকারী রয়েছেন। যেমন-
মৃত ব্যক্তিঃ-পিতা-মাতা-স্ত্রী-দুই পুত্র-দুই কন্যা। কোন ব্যক্তি মৃত্যুকালে পূর্ববর্ণিত ৪ ধরনের আত্নীয়/ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করলে, ওয়ারিশরা নিম্নোক্তভাবে সম্পত্তি প্রাপ্য হবেন।
১. পিতা————- ১/৬ (যেহেতু কন্যা আছে)
২. মাতা————- ১/৬ ( যেহেতু কন্যা আছে)
৩. স্ত্রী————— ১/৮
৪. অবশিষ্ট সম্পত্তি = ১-/+১/৬+১/৮=১৩/২৪ অংশ
৫. এক পুত্র পাবে -১৩/২৪ এর ২/৬ =১৩/৭২ অংশ
৬. দুই পুত্র পাবে -১৩/৩৬ অংশ
৭. এক কন্যা পাবে -১৩/২৪ এর ১/৬ = ১৩/১৪৪ অংশ
৮. দুই কন্যা পাবে -১৩/৭২ অংশ।
ওয়ারিশ সনদ কেন দরকার?
সনদটি উত্তরাধিকারগণকে তাদের নামে কোন সম্পত্তি হস্তান্তরিত আছে কিনা, বা উত্তরাধিকার যোগ্য কতটুকু সম্পদ আছে তা সত্যায়ন করে থাকে। উত্তরাধিকারী/সুবিধাভোগীর আবেদনের প্রেক্ষিতে উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী সনদটি ইস্যু করা হয়। ওয়ারিশ সনদ কার্যকরী, কিন্তু সব সময় এর বলে মৃতের সম্পদে উত্তরাধিকার নাও পাওয়া যেতে পারে। সাথে প্রয়োজন, একটি মৃত্যু সনদ এবং অনাপত্তি সনদ। যে আদালতের এখতিয়ারে সম্পত্তি রয়েছে, সেখানে আবেদন জারি করতে হয়। ওয়ারিশ সনদের নিয়ম-কানুন উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫ (The Succession Act, 1925) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
আরও দেখুন:
◾ ব্যাংকে রেখে যাওয়া মৃত ব্যক্তির আমানত কে পাবে?
◾ ব্যাংক গ্রাহকের মৃত্যুতে উত্তরাধিকারী ও নমিনী কর্তৃক টাকা উত্তোলনের নিয়ম
◾ মৃত ব্যক্তির হিসাবে গচ্ছিত টাকা কে পাবে নমিনী নাকি ওয়ারিশ?
◾ মৃত ব্যক্তির টাকা কে বা কারা পাবেন?
◾ উত্তরাধিকার সনদ কী? উত্তরাধিকার সনদ কীভাবে নেবেন?
ওয়ারিশ সনদ কিভাবে পাবেন?
ওয়ারিশ সনদ সাধারণত: স্থানীয় পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রদত্ত প্রত্যয়ন পত্র। যা একজন মৃত ব্যক্তির আইনি উত্তরাধিকার/ওয়ারিশদের স্বীকৃতি দেয়।
আবার ওয়ারিশ সনদ দেওয়ানী আদালতের মাধ্যমেও পাওয়া যায়। সাধারণত অর্থ ও অস্থাবর সম্পত্তির দেনা – পাওনা ইত্যাদির সুষ্ঠ হিসাব পাওয়া জন্য ও যাতে করে ভবিষ্যতে কোন ধরনের ঝামেলা না হয় সে জন্য দেওয়ানী আদালতের মাধ্যমে ওয়ারিশ সনদ নেওয়া হয়।
ওয়ারিশ সনদ সনদের জন্য কি কি লাগবে?
# ওয়ারিশগণের ১ কপি ছবি (সত্যায়িত)
# মৃত্যু সনদ ১ কপি (সত্যায়িত)
# মেয়র/সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান এর তদন্ত প্রতিবেদন।
ওয়ারিশান সনদ পাওয়ার আবেদন পত্র
# ওয়ারিশান সনদ পত্র পাওয়ার জন্য আবেদন পত্রের নমুনা ১ পেতে ক্লিক করুন এখানে
# ওয়ারিশান সনদ পত্র পাওয়ার জন্য আবেদন পত্রের নমুনা ২ পেতে ক্লিক করুন এখানে