ব্যাংক হিসাব খোলার পদ্ধতি কি?
ব্যাংক স্থায়ী, চলতি ও সঞ্চয়ী- এ তিন ধরনের হিসাবের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত গ্ৰহণ করে এবং উত্তোলনের সুযোগ দেয়। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকে হিসাব খুলতে আগ্রহী হলে উল্লেখিত তিনটি হিসাবের মধ্যে কোন হিসাবটি খুলতে আগ্রহী তা তার পছন্দের উপর নির্ভর করে। তিনি যে হিসাবই খুলেন না কেন এজন্য তাকে কতিপয় নিয়ম কানুন ও পদ্ধতির অনুসরণ করতে হয়। অর্থাৎ কোন ব্যাংকে হিসাব খুলতে হলে কতকগুলো সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন পালন করতে হয়। ব্যাংক তার নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে আমানতকারীগণ ব্যাংকে হিসাব খুলে থাকে। নিম্নে ব্যাংকে হিসাব খোলার পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করা হলো।
(ক) চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাব খোলার পদ্ধতি
ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়। এ জন্য প্রয়োজন আপনার নিজের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), নমিনির ছবি ও এনআইডি এবং ওই ব্যাংকে হিসাব রয়েছে এমন একজন পরিচয়দানকারী। সঙ্গে সবার স্বাক্ষর তো লাগবেই। জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংক যোগাযোগ করবে, এমন একজনের নাম-ঠিকানাও দিতে হবে। প্রতিটি হিসাব খোলার সময় গ্রাহক পরিচিতি তথ্য (কেওয়াইসি) জমা দিতে হয়। চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাব খোলার পদ্ধতিসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো-
১. নির্ধারিত ফরমে আবেদন
চলতি ও স্থায়ী হিসাব খোলার জন্য প্রথমেই ব্যাংকের নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করে তা যথাযথভাবে পূরণপূর্বক দস্তখত করে ব্যাংক কর্মকর্তার নিকট জমা দিতে হয়। আবেদন ফরমে আমানতকারীর বিস্তারিত বিবরণ, স্বাক্ষর উল্লেখসহ দুই কপি সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হয়। উল্লেখ্য যে, ব্যাংক কর্মকর্তা আবেদনকারীকে আবেদন ফরমের সাথে একট নমুনা স্বাক্ষর কার্ডও দিয়ে থাকে৷
২. পরিচিতকরণ
আবেদনপত্রে আমানতকারীকে পরিচিত বা সনাক্ত করার জন্যে যে ঘর বা কলাম থাকে উক্ত স্থানে পরিচয় প্রদানকারীর স্বাক্ষরসহ, নাম, ঠিকানা, পেশা ও ব্যাংকের হিসাব নম্বর উল্লেখ্য করতে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিচয়করণের জন্যে আলাদা একটি বিশেষ ফরম দেয়া হয়। পরিচিত করানো ছাড়া ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য অনুমতি দিবে না।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
৩. নমুনা স্বাক্ষর কার্ড
আবেদনপত্রের সাথে বা আবেদন করার পর ব্যাংক যে নমুনা স্বাক্ষর কার্ড সরবরাহ করে তার এক পাশে পুরো নাম ও অপর পাশে আবেদনকারীকে একাধিক নমুনা স্বাক্ষর দিতে হয়। ব্যাংক উক্ত কার্ড সংরক্ষণ করে এবং চেক যখন জমা হয় তখন চেকের স্বাক্ষরের সাথে উক্ত কার্ডের নমুনা স্বাক্ষর মিলে কি-না তা পরীক্ষা করে দেখে। উল্লেখ্য যে, নমুনা কার্ডে আমানতকারী তিনটি স্বাক্ষর করবে।
৪. প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি/ দলিলপত্রাদি
ব্যক্তিগত বা একক হিসাব খোলার জন্য অতিরিক্ত কোন দলিলপত্র জমাদান অপরিহার্য না হলেও প্রাতিষ্ঠানিক যেমন- অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র, যৌথমূলধনী কোম্পানির ক্ষেত্রে স্বারকলিপি ও নিবন্ধপত্র, সমবায়ের ক্ষেত্রে উপবিধি ইত্যাদি এবং অনেক ক্ষেত্রে যৌথ হিসাব খোলার জন্যে বিভিন্ন দলিলপত্র যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে। তাছাড়া, অংশীদারি কারবার, যৌথ মূলধনী কারবার, সমবায় সমিতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক হিসাব খোলার সম্বন্ধে ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সিদ্ধান্তের কপি পেশ করতে হয়।
৫. লিখিত অঙ্গীকারনামা
আমানতকারী ব্যাংক হিসাব নিজে পরিচালনা না করে কোন মনোনীত ব্যক্তি দ্বারা পরিচালনা করতে চাইলে উক্ত ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, নমুনা স্বাক্ষরহ এ মর্মে আমানতকারীর লিখিত ও স্বাক্ষরযুক্ত অঙ্গীকারনামা ব্যাংকে পেশ করতে হয়।
৬. আবেদনপত্র ও দলিলপত্রাদি পরীক্ষা
আবেদনকারী কর্তৃক আবেদনপত্র, নমুনা স্বাক্ষরের কার্ড ও অন্যান্য দলিলপত্র ব্যাংকে জমা দেবার পর ব্যাংক কর্মকর্তা উক্ত দলিলপত্রাদি যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সন্তুষ্টি হলে উক্ত আবেদনপত্র মঞ্জুর করে হিসাব খোলার অনুমতি প্রদান করে এবং হিসাবের একটি নম্বর বরাদ্দ করে।
৭. প্রাথমিক আমানত জমা
হিসাব খোলার অনুমতি পাওয়ার পর মক্কেলগণ ব্যাংক থেকে জমার রসিদ সংগ্রহ করে প্রদত্ত হিসাব নম্বর অনুযায়ী নগদ অর্থ কাউন্টারে জমা দেবে। উল্লেখ্য, ন্যূনতম জমা সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত নিয়মানুযায়ী সঞ্চয়ী হিসাবের জন্য কমপক্ষে এক হাজার টাকা ও চলতি হিসাবের জন্য কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা জমা দিতে হয়।
৮. পাস বই ও চেক বই সংগ্রহ
উপরিউক্ত কাজগুলো সমাপ্ত হলেই ব্যাংকের হিসাব খোলার কার্যক্রম শেষ হয়ে যায়। এরপর গ্রাহকের নামে ব্যাংক চেক বই ও পাস বই কিংবা ডেবিট কার্ড ইস্যু করে। চেক ও ডেবিট কার্ডের সাহায্যে আমানতকারী ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতে পারে এবং পাস বই এর মাধ্যমে হিসাবে লেনদেনের পরিমাণ ও সমাপ্তি জের সম্পর্কে জানতে পারে। অনেক সময় ব্যাংক পাস বই না দিয়ে মাসিক হিসাব বিবরণী সরবরাহ করে। যদিও বর্তমানে কিছু বিশেষ হিসাব ছাড়া সাধারণ হিসাবের ক্ষেত্রে পাস বই ইস্যু করা হয় না।
(খ) স্থায়ী হিসাব খোলার পদ্ধতি
স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট (এফডি) হচ্ছে ব্যাংক বা ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত একটি আর্থিক উপকরণ যা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাখা হয় এবং এতে বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত সঞ্চয়ী হিসাবের চেয়ে বেশি হারে সুদ/ মুনাফা প্রদান করা হয়। স্থায়ী হিসাব বা ফিক্সড ডিপোজিট খোলার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- এখানে।