ইসলামী ব্যাংকিং আসলে কি? কিভাবে ডিপোজিট সংগ্রহ করে এবং কিভাবে তা বিনিয়োগ করে?
বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকিং আসলে কি? কিভাবে Deposit সংগ্রহ করে এবং কিভাবে তা বিনিয়োগ করে? আসুন জেনে নেই সে সব প্রশ্নের উত্তর। এক সময় বাংলাদেশের কিছু লোক সুদ এর ভয়ে টাকা ঘরে রেখে দিত। আবার কিছু লোক টাকার নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রচলিত সুদ ভিত্তিক ব্যাংকে টাকা রাখলেও তারা ব্যাংকের নিকট লিখে আসত যে তার টাকার বিপরীতে কোন সুদ সে গ্রহন করবে না। কারণ এসকল লোকেরা ভয় পেত আল্লাহর ঐ বাণীকে যা সুরা বাকারার ২৭৫ নং আয়াতে বলেছেন “আল্লাহ সুদ হারাম করেছেন আর ব্যবসাকে হালাল করেছেন”।
আবার তারা আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করাকে ভয় পেত কারণ আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করা মানে ধ্বংস অনিবার্য কেননা আল্লাহ বলেছেন “যারা সুদ নিয়ে কারবার করবে তারা যেন আমার সাথে প্রকাশ্যে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে”।
এসকল লোকদের কথা মাথায় রেখে এবং কিছু ব্যাংকার প্রচলিত সুদ ভিত্তিক ব্যাংক ছেড়ে ব্যাবসা নির্ভর এবং শরীয়া ভিত্তিক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিল কারণ তারা ভয় পাচ্ছিল যে, তাদের যেন মৃত্যুর পর জাহান্নামের আগুনে না পুড়তে হয় কেননা রাসুল (সাঃ) বলেছেন “সুদের দাতা, গ্রহিতা, সুদের লেখক এবং সাক্ষ্যদাতা সকলে জাহান্নামে যাবে”।
তবে ব্যাংকাররা প্রচলিত ব্যাংকিং কার্যক্রম জানলেও শরীয়া ভিত্তি ব্যাংকিং সম্পর্কে তেমন ধারণা না থাকায় দেশের বড় বড় আলেমদেরকে নিয়ে একটা বোর্ড গঠন করলেন যার নাম হলো শরীয়া বোর্ড। এই বোর্ড এর কাজ দেওয়া হলো কোন কোন পদ্ধতিতে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক ব্যাংকিং চালানো যায় সে মতামত দিতে। যার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে দুই জায়গাতে কল্যান লাভ হবে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
এখন জানা যাক কি সেই পদ্ধতি যার ভিত্তিতে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে তবে বিষয়টা একটু পরে জানা যাবে আগে একটা গল্প মনে এসে গেল যা আপনাদের শুনাতে চাই:
একদা একটা গ্রামে একজন সৎ লোক ছিল সে যেমন ছিল সৎ তেমন ছিল দক্ষ ব্যবসায়ী আবার তার বাসার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভাল ছিল। তাই গ্রামের লোকেরা কেউ কেউ টাকা, পয়সা তার কাছে জমা রেখে যেত শুধু নিরাপত্তার স্বার্থে আবার কেউ টাকা রেখে বলত আপনি ব্যবসা করেন লাভের অংশ আমাকে দিয়েন।
তাই সে ভাবল যেহেতু আল্লাহর রসুল বলেছেন “তোমরা যখন লেনদেন করবে তখন লিখে রাখ আর যখন চুক্তি করবে তখন সকল বিষয় স্পষ্ট করে এবং সুনির্দিষ্ট করে নিবে। সে ক্ষেত্রে আমানত কারীদেরকে দুই ভাগে ভাগ করে নিয়েছিল। যথা:
১. যারা লাভ চাইত তাদেরকে বলত লাভ হলে আপনি পাবেন ৬৫% আর যদি লোকসান হয় তাহলে সমস্ত লোকসান আপনাকে নিতে হবে আর আমি লাভ হলে ৩৫% নিব আর লোকসান হলে আমার শ্রম শুধু লোকসান হবে। আপনি যদি এ শর্ত মেনে টাকা জমা রাখেন তাহলে আমি জমা রাখব।
২. আর যারা শুধু মাত্র নিরাপত্তার স্বার্থে টাকা জমা রাখত তাদেরকে বলত “আপনার টাকা আমার ব্যবসার কাজে লাগাতে চায়। আপনি প্রয়োজন হলে চাওয়া মাত্রই আমি ফিরিয়ে দিব এ ব্যাপারে আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি জমা রাখব তবে ব্যবসায় লাভ হলে আপনাকে দিব না এবং লোকসান হলে আপনাকে বহন করতে হবে না। এই বলে তার আমানত রাখা টাকা ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে নিত কেননা পূর্ব অনুমতি ছাড়া কারও আমানতের টাকা ব্যবহার করা হলে আমানতের খেয়ানত করা হয়। লোকটির টাকা জমা রাখার যে পদ্ধতি তার প্রথমটিকে বলা হবে মুদারাবা এবং দ্বিতীয় পদ্ধতিকে বলা হবে Al-Wadeah.
মুদারাবা পদ্ধতিতে যিনি অর্থ দিবে তাকে বলা হবে সাহিবাল মাল বা মাল ওয়ালা আর যে ঐ সরবরাহকৃত অর্থ দিয়ে মেধা খাটিয়ে লাভ করার জন্য ব্যবসা করবে তাকে বলা হবে মুদারিব। ইসলামী ব্যাংকগুলি এই দুই পদ্ধতিতে গ্রাহকের নিকট থেকে আমানত গ্রহন করে থাকে। যা হোক লোকটির সম্পর্কে আবার জানা যাক সে কিভাবে তার নিকটে থাকা টাকা দিয়ে ব্যবসা করত।
১. সে লোকটি মাল কিনে ক্রয় মূল্যের সাথে খরচ ও নিজের কাংখিত লাভ যোগ করে অন্য লোকদের নিকট বিক্রয় করত। ক্রেতারা কিস্তিতে মালের মুল্য পরিশোধ করে দিত। অর্থাৎ যখন কোন ব্যক্তি এসে বলত আমি একটা ফ্রিজ কিনতে চাই তখন লোকটির চাহিদামত ফ্রিজটি কিনে তার নিকট বিক্রি করত। এ ক্ষেত্রে ফ্রিজটির ক্রয়মূল্য এবং খরচ এবং লাভ সব কিছু প্রকাশ করে লোকটির সম্মতিতে তার নিকট বিক্রি করত।
লোকটির নিশ্চিত লাভে বিক্রয় করার এই পদ্ধতিকে বলে বাইয়ে মুরাবাহা।
২. কখনও কখনও ব্যবসায়ী লোকটি পাবলিকের চাহিদা মত বাজার থেকে মালটি ক্রয় করে তার কাংক্ষিত লাভ যোগ করে বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে বাকীতে বিক্রয় করে দিত ক্রেতা তার মালের মূল্য পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময় পরে পরিশোধ করে দিত এ ক্ষেত্রে মালটির ক্রয় মূল্য গ্রাহককে জানাতেন না।
লোকটির ক্রয় বিক্রয়ের এই পদ্ধতির নাম হলো বাইয়ে মুয়াজ্জাল বা বাকীতে বিক্রয় করা।
৩. কখনও কখনও কিছু কৃষক আসত তারা কৃষি জমি চাষ করতে, সার এবং কিটনাশক কেনার জন্য অর্থ ঋন হিসাবে চাইত এবং তারা বলত ধান উঠলে সুদ ও আসল সব আপনাকে ফেরত দিব কিন্তু তিনি বলতেন টাকা ঋণ দিয়ে তার চেয়ে বেশী টাকা নেওয়া সুদ হয়ে যায় তাই এটা করা সম্ভব নয় তবে আপনি একটা কাজ করতে পারেন তা হলো যে ধান চাষ করছেন তা উঠলে আমার টাকার বিপরীতে আপনি ধান দিয়ে দিবেন তবে এ ক্ষেত্রে ধানের দাম, ধানের পরিমান, ধানের নাম এবং সরবরাহের তারিখ ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হত। ব্যবসায়ী লোকটি ধানের মূল্য নির্ধারনের সময় তার যাতে কাংখিত লাভ হয় সেভাবে মূল্য নির্ধারণ করত এবং কৃষক তাতে সম্মত হত।
লোকটি যে পদ্ধতিতে কৃষকদের মাঠের ফসল অগ্রিম ক্রয় করে অগ্রিম ফসলের দাম পরিশোধ করে দিত তাকে বলা হয় বাইয়ে সালাম।
৪. একদিন তার এলাকার একজন টেইলার্স এর মালিক এসে বলল ভাই আমি এলাকার একটা স্কুলের ছাত্রদের ২০০ ড্রেস তৈরী করে দেওয়ার অর্ডার পেয়েছি যার প্রত্যেকটা ড্রেসের মূল্য নির্ধারণ করেছে ৫৫০ টাকা কিন্তু নগদ টাকা না থাকায় আমি সুতা, বোতাম, বকরুম ইত্যাদি কিনতে পারছি না তাই আপনি যদি আমাকে ৫০,০০০ টাকা ঋণ দেন তাহলে আপনাকে স্কুল থেকে বিল পাওয়ার পর সুদ সহ পরিশোধ করে দিব, একথা শুনে ব্যবসায়ী লোকটি বলল আমি টাকা দিয়ে টাকা বেশী নেই না কারণ এটা সুদ হয়ে যায়।
তবে আপনি একটা কাজ করেন আমার নিকট ১০০ টি ড্রেস আপনার নিকট থেকে কিনতে চাই যার প্রত্যেকটার দাম দিব ৫০০ টাকা করে যদি আপনি রাজি হন তাহলে হলে ১০০ পিচ ড্রেসের মূল্য হিসাবে আপনাকে ৫০,০০০ টাকা এখন দিয়ে দিব আর আমি ঐ ড্রেস গুলি স্কুলের নিকট ৫৫০ টাকা দামে বিক্রয় করে আমার টাকা পেয়ে যাব। একথা শুনে টেইলার্সের মালিক খুশি হল এবং বলল কোন সমস্যা না কারণ আমি হিসাব করে দেখেছি প্রতি পিচ ড্রেসের খরচ পড়বে ৪৫০ তাই ৫০০ টাকা দামে আপনাকে দিলেও আমার প্রতি পিচে ৫০ টাকা লাভ থাকবে। একথা বলে লোকটি বলল আচ্ছা ভাই এই পদ্ধতির নাম কি?
প্রশ্নের উত্তরে ব্যবসায়ী লোকটি বলল “এই ক্রয় বিক্রয়কে বলে বাইয়ে ইসতেসনা অর্থাৎ কোন পন্য প্রস্তত করে দেওয়ার চুক্তিতে প্রস্তুত হওয়ার পূর্বেই কিনে নেওয়া।
৫. একবার তার এলাকার একজন ব্যবসায়ী এসে বলল “ভাই, আমার বাজারে একটা জমি আছে সেখানে একটা দোকান ঘর তুলতে চাই আপনি আমাকে ৩ লাখ টাকা দেন আমি সুদ সহ তিন বছরের মাসিক কিস্তি দিয়ে শোধ করে দিব।
কিন্তু ব্যবসায়ী লোকটি বলল না এ ভাবে টাকা দেওয়া যাবে না তবে আপনি একটা কাজ করেন তা হলো আপনার এ দোকান বানানোর খরচ কত হবে এটার একটা স্টিমেট মিস্ত্রির কাছ থেকে নিয়ে আসুন একথা শুনে লোকটি বলল “আমি Idea নিয়েছি যে ৪ লাখ টাকা লাগবে তখন ব্যবসায়ী লোকটি বলল তাহলে আমরা যৌথভাবে বিনিয়োগ করব অর্থাৎ আপনি ১ লাখ আর আমি ৩ লাখ টাকা দিয়ে দোকানটা বানাব তারপর যৌথভাবে দোকানের মালিক হব। আমার মালিকানার অংশ আপনাকে ভাড়া দিব আপনি আমার অংশের ভাড়ার সাথে মুল টাকা ফেরত দিবেন। তিন বছর পর আমার টাকা সম্পূর্ণ পরিশোধ হলে আপনি সম্পূর্ণ দেকোনটার মালিক হবেন যদি এ চুক্তি মানতে রাজি থাকেন তাহলে আমি বিনিয়োগ করতে পারি। একথা শুনে লোকটি বলল এটাতো ভাল System আমি রাজি আছি। একথা বলার পর লোকটি বলল এই System টার নাম কি?
তার প্রশ্ন শুনে ব্যবসায়ী লোকটি বলল এ পদ্ধতির নাম হলো HPSM বা Hire Purchase under Sirkatul Milk অর্থাৎ প্রথমে যৌথভাবে পুজি বিনিয়োগ করে তা প্রস্তুত হলে যৌথ মালিকানা লাভ হবে। তার পর অন্যজনের মালিকানা ক্রয় করে একক মালিকানা অর্জিত হবে।
ইসলামী ব্যাংকগুলি তাদের আমানতের টাকা ঐ ব্যক্তির মতই বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে বিনিয়োগ করে যা শরীয়া বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত।
কার্টেসিঃ এহসান উল্লাহ, আইবিবিএল।
তার মানে ইসলামি ব্যাংক থেকে সরাসরি টাকা লোন নিতে পারা যাবে না? মানে আমি ৫০,০০০ টাকা লোন নিতে চাই।