মূলধন বাজার কি?
মূলধন বাজার পারস্পরিকভাবে সম্পর্কযুক্ত কিছু বাজারের সমষ্টি যেখানে মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদের জন্য আর্থিক পুঁজির ধার প্রদান ও ধার গ্রহণ এবং বিনিয়োগ কার্য সম্পাদিত হয়। স্বল্পমেয়াদি মূলধন সংস্থানের বাজার তথা মানি মার্কেটের সাথে মূলধন বা পুঁজি বাজারের পার্থক্য হচ্ছে এই যে, মানি মার্কেট বা মুদ্রা বাজার অনূর্ধ্ব এক বছরের জন্য পুঁজি সরবরাহ করে। অপরপক্ষে, পুঁজি বাজার ৫ বৎসর বা তদূর্ধ্ব মেয়াদের জন্য পুঁজি সরবরাহ করে। মূলধন বা পুঁজি বাজারে সরকার বা সরকারি এজেন্সিসমূহের ইস্যুকৃত দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্র, কোম্পানিসমূহের শেয়ার ও ঋণপত্র/বন্ড, নগদ টাকার লেনদেন সম্পাদিত হয়। যে সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মূলধন সংগ্রহ ও বিতরণে নিয়োজিত রয়েছে তাদের সমনতয়ে পুঁজি বাজার গঠিত। পুঁজি বাজারে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা অনেক এবং তাদের মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ, সেভিংস অ্যান্ড লোন অ্যাসোসিয়েশন, ক্রেডিট ইউনিয়ন, মিউচ্যুয়াল সেভিংস ব্যাংক, ফিন্যান্স হাউজ, ফিন্যান্স কোম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স, ডিসকাউন্ট হাউজ, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি, লিজিং কোম্পানি, বিনিয়োগ ব্যাংক ও কোম্পানি, পেনশন ফান্ড, স্টক এক্সচেঞ্জ সিকিউরিটি কোম্পানি, আন্ডাররাইটারগণ, পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপক এবং বীমা কোম্পানিসমূহ। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সে দেশের মূলধন বাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ প্রতিযোগী ব্যবহারকারীদের মধ্যে দক্ষভাবে মূলধন সঞ্চালন ও বণ্টনের মাধ্যমে মূলধন বাজার তার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পাদন করে।
মুগল রাজত্বকালে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলায় মূলধন বাজারের গোড়াপত্তন হয়। সীমিত আকারে হলেও সপ্তদশ শতাব্দী ব্যাপী মুগলদের সুবা বাংলায় অর্থ ও মূলধন বাজার কার্যক্রম সংঘটিত হতো। কেননা, মুগল আমলের বাংলাদেশ বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় মোটামুটিভাবে উন্নত ছিল। ইতিহাসবিদদের মতে, নবাবী আমলের বাংলা ছিল অর্থসংস্থানের দিক থেকে সহজ, ব্যয় সম্পাদনে অনেক ধরনের কর থেকে মুক্ত এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের এখতিয়ার সম্পর্কে সচেতন। এখানকার অধিবাসীরা কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল, সামাজিক শান্তি ও সম্পদের প্রাচুর্যসহ মোটামুটি আরামেই ছিল।
সমৃদ্ধ নবাবী বাংলা ছিল ইউরোপীয় বিভিন্ন জাতির নিকট আকর্ষণীয় বিনিয়োগের স্থান। নানাবিধ কৃষি ও শিল্প পণ্য বিশেষত কাঁচা রেশম ও কাপড় উৎপাদন এবং সেসব পণ্য ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানিতে নবাবী বাংলা বিশেষভাবে সক্রিয় ছিল। বিভিন্ন এশীয় ও ইউরোপীয় বণিকরা বিশেষত ইংরেজ ও ডাচ কোম্পানিগুলি এ রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যপকভাবে জড়িত ছিল। এ সকল কোম্পানি রপ্তানিদ্রব্যসমূহ ক্রয়ে অর্থ বিনিয়োগ করত এবং সেগুলির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় উৎপাদকদেরকে ঋণ প্রদান করত। স্থানীয় কৃষক ও কারিগরদের উৎপাদন প্রক্রিয়া স্থানীয় ও বিদেশি মানি লেন্ডার এবং মার্চেন্টগণ কর্তৃক সরবরাহকৃত ঋণের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু এ সকল উৎস হতে গৃহীত ঋণের সুদের হার ছিল অত্যধিক বেশি।
১৭২০-২১ সময়কালে বাংলাদেশে ইংরেজ কোম্পানিসমূহের ঋণের পরিমাণ ছিল ২.৪ মিলিয়ন রুপি। ডাচ কোম্পানিগুলিও স্থানীয় মূলধন বাজার হতে ঋণ গ্রহণ করত। ১৭২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাশিমবাজার মার্চেন্টদের নিকট ডাচ কোম্পানিগুলির ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১.৫ মিলিয়ন রুপি এবং ১৭৫৪ সালে বাংলাদেশে তাদের গৃহীত মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ২.৮৩ মিলিয়ন রুপি। সে সময় জগৎশেঠ ছিলেন ইউরোপীয় কোম্পানিদের প্রধান পাওনাদার। ফরাসি এবং অসটেন্ড কোম্পানিগুলি স্থানীয় অর্থ বাজার থেকে ব্যাপকভাবে ঋণ গ্রহণ করত। তারা স্থানীয় সররফ (Sarrafs) এবং মার্চেন্টদের নিকট হতেও ঋণ গ্রহণ করত। ১৭৫৫ হতে ১৭৫৭ সালের মধ্যে হাউজ অব জগৎশশেঠ-এর নিকট ডাচ কোম্পানিদের ঋণ ছিল ২.৩৯ মিলিয়ন রুপি। ১৭৫৭ সালের মার্চ মাসে চন্দননগরের পতনের সময় জগৎশেঠের নিকট ফরাসিদের ঋণের পরিমাণ ছিল ১.৫ মিলিয়ন রুপি।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
সপ্তদশ শতকে বাংলাদেশের মূলধন বাজারে কখনও কখনও তহবিলের দুষ্প্রাপ্যতা দেখা দিত। সে সময় তহবিলের প্রাপ্যতা নির্ভর করত আগ্রা এবং বাংলাদেশের মূলধন বাজারের সুদের হারের ওপর। কেননা, আগ্রাতে বিনিময় ও সুদের হার বেশি হলে স্থানীয় সররফ ও মার্চেন্টগণ বাংলার পরিবর্তে আগ্রায় তহবিল স্থানান্তর ও বিনিয়োগ করত। সপ্তদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রদান এবং বাণিজ্য অর্থসংস্থানে ব্যাপৃত ছিল। ব্যবসায়ী ও মার্কেন্টাইল কমিউনিটির কার্যক্রম বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ অঞ্চলে অর্থের প্রচলন-গতি বৃদ্ধি পায় যা এ অঞ্চলে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও ব্যাংকিং ব্যবসায়ের দ্রুত উন্নতি ঘটায়। সাধারণত মানি লেন্ডার ও মানি চেঞ্জার, গ্রামীণ মার্চেন্ট বা মহাজন এবং দোকানদারগণ ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাত এবং প্রয়োজনে সে সময়কার শাসকগণকে সতল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করত। দেশীয় ব্যাংকারগণ ব্যাংক ড্রাফট ও হুন্ডি ইস্যু এবং বাট্টাকরণের সাথেও সম্পৃক্ত ছিল। এ সকল দেশীয় ব্যাংকারগণ সরকার বা শাসকগণ ছাড়া ব্যক্তিগত ঋণগ্রহীতাদেরকেও ঋণ প্রদান করত। এ সকল ঋণ প্রদান করা হতো পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে। কোন প্রকার দলিল বা সাক্ষী ছাড়াই দেশীয় ব্যাংকারগণ ঋণ প্রদান করত। এছাড়া জমি-বন্ধকী ঋণসহ স্বর্ণ বা মূল্যবান সম্পদ গচ্ছিত রেখেও ঋণ প্রদান করা হতো।
১৮১৩ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একাধারে বাংলাদেশের শাসনভার এবং ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর অপরাপর ব্রিটিশ কোম্পানিগুলিকে ব্যাপকহারে বাংলাদেশে আগমন ও ব্যবসা-বাণিজ্য করার অবাধ সুযোগ দেওয়া হয়। ফলে ব্রিটেনের ব্যক্তিখাতের ব্যবসায়ী ও কলকাতা-ভিত্তিক মার্চেন্টগণের যৌথ মালিকানায় বাংলাদেশ অঞ্চলে অনেকগুলি এজেন্সি হাউজ গড়ে ওঠে এবং এ সকল এজেন্সি হাউজের সহায়তায় উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হতে থাকে। কিন্তু এ সকল এজেন্সি হাউজ ও প্রাইভেট ট্রেডার্সদের পর্যাপ্ত মূলধন এবং কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা ছিল না। ফলে বাংলায় বিনিয়োগের জন্য ব্রিটেন থেকে প্রচুর মূলধন ও কারিগরি দক্ষতা আমদানি করতে হয়। অপরদিকে প্রাইভেট ট্রেডার্স, এজেন্সি হাউজ এবং নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলি স্থানীয় উৎস হতে প্রচুর পরিমাণে ঋণ গ্রহণ শুরু করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক কাগজি চিঠা বা বন্ড ইস্যুর ফলে অর্থ স্থানান্তর সহজতর হয়। এদিকে ১৮৫৪ সালে বাংলাদেশের রেলওয়ে খাতে ব্রিটেনের প্রচুর বিনিয়োগের ফলে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি তহবিলের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় মানি-লেন্ডার এবং জমিদারগণও নীল চাষিদেরকে ঋণ প্রদান শুরু করে। ১৮৫০ সাল হতে ব্রিটিশ ভারতের ব্যাংকগুলি স্বল্পমেয়াদি ঋণদানের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি ঋন প্রদান শুরু করে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৫০ হতে ১৮৯৪ সালের মধ্যে বাংলা অঞ্চলে ১৭টি লোন অফিস গড়ে ওঠে। এর সাথে ১৮৯৬ সাল হতে ১৯৪২ সালের মধ্যে ১৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মূলধন বাজার আরও দৃঢ় এবং শক্তিশালী হয়।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারত বিভক্তির মধ্য দিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম। ফলে পাকিস্তান উত্তরাধিকারসূত্রে ভারতের নিকট থেকে বিভিন্ন প্রকার দেশি ও বিদেশি ব্যাংকের ৬৩১টি শাখাসমেত একটি ব্যাংকিং ও ক্রেডিট কাঠামো লাভ করে। এ সকল ব্যাংক অফিসসমূহের অধিকাংশের হেড কোয়ার্টার ছিল ভারতে। ফলে বিভক্তির ৬ মাসের মধ্যে ৪৩৬টি ব্যাংক অফিস/শাখা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪৮ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ভারত বিভাগ চুক্তির অধীনে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া একইসঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব পালন করে। ১৯৪৮ সালে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি পাকিস্তানের আর্থিক খাত সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। প্রচলিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং কার্যাবলিসহ দেশের ব্যাংকিং ও ক্রেডিট সিস্টেম গঠন এবং শক্তিশালীকরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানকে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ক্রেডিট প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং ও ঋণব্যবস্থা সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ১৯৪৭ সাল হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য ও হাউজিং খাতে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির চাহিদা পূরণার্থে গোটা পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।
৪০টি স্বদেশী কোম্পানিসহ মোট ৮০টি কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত দেশের ইন্সুরেন্স খাত পাকিস্তানের মূলধন বাজারে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সরবরাহে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। জীবন বীমা পাকিস্তানে মূলধন গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৪ সালের শেষ নাগাদ দেশের মূলধন বাজারে বীমা খাতের বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮৬.৮১ মিলিয়ন রুপি। পাকিস্তানের মূলধন বাজারের প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক, ডাক জীবন বীমা, প্রতিরক্ষা সঞ্চয় পত্র ও প্রাইজ বন্ড, ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কর্পোরেশন অব পাকিস্তান, কৃষি-শিল্প-হাউজিং খাতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তথা কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, শিল্প উন্নয়ন ব্যাংক, পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেডিট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন এবং হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন, বীমা কোম্পানি এবং স্টক এক্সচেঞ্জসমূহ।
গোটা পাকিস্তানে ২টি নিবন্ধিত স্টক এক্সচেঞ্জ ছিল। এদের একটি ছিল করাচিতে এবং অপরটি পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায়। এছাড়া লাহোর এবং অন্যান্য স্থানেও সংগঠিত আকারে কিছু পুঁজির লেনদেন হতো। প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৯ সনে প্রতিষ্ঠিত করাচি স্টক এক্সচেঞ্জই ছিল পাকিস্তানের সক্রিয় স্টক এক্সচেঞ্জ। এটি ছিল গিল্ট-এজেড সিকিউরিটি এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিসমূহের ইকুইটি শেয়ার ইস্যু করার জন্য একমাত্র মার্কেট। অপরদিকে ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ নামে দ্বিতীয় স্টক এক্সচেঞ্জটি ১৯৫৪ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৫৬ সালে এটি ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীকালে ১৯৬২ সালের ২৩ জুন তারিখে এর নাম পরিবর্তন করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লি. নাম দেওয়া হয়।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ উত্তরাধিকারসূত্রে পাকিস্তানের নিকট হতে একটি দুর্বল মূলধন বাজার লাভ করে এবং উক্ত মূলধন বাজারের প্রতিষ্ঠানগুলি ছিল ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ১,১৩০টি শাখা, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লি., সমবায় ব্যাংক লি. এবং ১৯৫৮ হতে ১৯৭১ সালের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় ১০টি বীমা কোম্পানি। ১৯৭৬ সালে ১৩৭.৫২ মিলিয়ন টাকা পরিশোধিত মূলধনসমেত ৯টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি নিয়ে কার্যক্রম শুরু করার পূর্বপর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম স্থগিত ছিল। একই সময়ে অর্থাৎ ১৯৭৬ সালে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা এবং কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের মূলধন বাজারে কিছুটা গতি সঞ্চারিত হয়।
দেশে দ্রুত শিল্পায়ন, সুসংহত ও সক্রিয় মূলধন বাজার উন্নয়ন, বিশেষত সিকিউরিটি বাজার উন্নয়নের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয় আইসিবির ওপর। উপর্যুক্ত কার্যাবলির সাথে সাথে আইসিবি বর্তমানে শেয়ারের পাবলিক ইস্যু অবলেখন এবং প্রয়োজনবোধে অবলিখনের বিপরীতে অগ্রাধিকার খাতে ব্রিজিং লোন সুবিধা প্রদান করছে। এটি শেয়ার, ডিবেঞ্চার ও বন্ড অবলেখন এবং ক্রয়-বিক্রয়ে অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া বিনিয়োগ হিসাব ব্যবস্থাপনা, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও ইউনিট ফান্ড ব্যবস্থাপনা এবং স্টক এক্সচেঞ্জ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ আইসিবির নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে। আশির দশকের মাঝামাঝি ন্যাশনাল ক্রেডিট লি. এবং বাংলাদেশ কমার্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি. নামক ২টি প্রতিষ্ঠানকে মূলধন বাজার কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অনুমতি প্রদান করা হলেও তাদের কার্যক্রম খুবই সীমিত ছিল। ক্রটিপূর্ণ বাজার ও অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির কারণে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মূলধন বাজারের কার্যক্রম এবং বাজারের উন্নয়ন অতীব মন্থর ছিল। সে সময় শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের দীর্ঘ ও মধ্যমমেয়াদি তহবিলের সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করেছে দেশের বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ। তারা সরকার কর্তৃক নির্দেশিত তুলনামূলকভাবে কম হার সুদে শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি তহবিলের যোগান দিত। এ সকল উন্নয়ন বা বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক, বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন এবং ক্ষুদ্রশিল্পে সরাসরি বা বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের কনসোর্টিয়াম-এর মাধ্যমে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করত। অপরদিকে আবাসিক ভবন/বাড়ি নির্মাণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন। সরকার ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নিকট হতে প্রাপ্ত অর্থ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট হতে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের বিনিয়োগযোগ্য তহবিল গঠন করে। অপরদিকে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকও জমি এবং কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য দীর্ঘ ও মধ্য মেয়াদি ঋণ প্রদান করে।
সত্তর-এর দশকের শুরুতে উন্নয়ন বা বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নিকট হতে ঋণ গ্রহণে ঋণ-সমমূলধন অনুপাত (Debt-Equity Ratio) অত্যধিক বেশি ছিল। সিকিউরিটিজ মার্কেট না থাকায় সে সময় শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য কোম্পানিগুলিকে ডেট মার্কেট (Debt Market) হতে ঋণ গ্রহণ করতে হতো। শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহ সিকিউরিটিজ মার্কেটকে এড়িয়ে চলত। ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীরাও মূলধন বাজারে তাদের উদ্বৃত্ত তহবিল বিনিয়োগে আগ্রহী ছিল না। শিল্পপতি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানসমূহ হতে ঋণ গ্রহণে অতি আগ্রহী ছিল। কেননা, ঋণ আদায়ের কৌশলসমূহ দুর্বল থাকায় ঋণগ্রহীতা শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধে বিরত থাকত। এভাবে বিপুল পরিমাণ ঋণ মন্দ/ খারাপ ঋণে পরিণত হতে থাকে। কিন্তু আদায়ের জন্য কঠোর কোন ব্যবস্থা না থাকার কারণে খেলাপি ঋণের ভারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মূলধন বাজারে তহবিল প্রবাহ হ্রাস পায়।
বাংলাদেশের বর্তমান মূলধন বাজারের ২টি অংশ রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে সিকিউরিটিজ মার্কেট যার অর্ন্তভুক্ত রয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। অপরটি হচ্ছে নন-সিকিউরিটিজ অংশ। নন-সিকিউরিটিজ অংশে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা, যেমন বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ (৪৫), বিনিয়োগ ব্যাংক ও কোম্পানিসমূহ, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স (২৭), বীমা কোম্পানি (৩৯), বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (৫), পেনশন ফান্ড, ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম, ডাক জীবন বীমা, ডিপোজিট পেনশন স্কিম, এমপ্লয়িজ ইন্সুরেন্স ফান্ড, সিকিউরিটি ডিপোজিটস, গিফট সার্টিফিকেট ডিপোজিট, সানড্রাই ডিপোজিট, উন্নয়ন সারচার্জসমূহ, লিজিং কোম্পানি, অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সমবায় জমি বন্ধকী ব্যাংকসমূহ।
বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট ২৫৮টি এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ১৮৪টি, সর্বমোট ৪৪২টি কোম্পানির শেয়ার ও ডিবেঞ্চার ইকুইটি মার্কেটে ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। একই তারিখ পর্যন্ত উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে মোট ১৮টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড (ডিএসই ৯ এবং সিএসই ৯) এবং ১৮টি ডিবেঞ্চার এর (ডিএসই ১২ এবং সিএসই ৬) ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হয়েছে। উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে ৩০ জুন, ২০০০ তারিখে ৫.২৮ মিলিয়ন টাকা মূল্যের ইউনিট সার্টিফিকেট ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে এবং ঐ তারিখে ঢাকা চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে মোট বাজার মূলধনীকরণের (Market Capitalization) পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮০.৮৬ বিলিয়ন টাকা এবং ৫৩.১২ বিলিয়ন টাকা।
বাংলাদেশের সিকিউরিটিজ মার্কেটের ইন্সট্রুমেন্টগুলি হচ্ছে শেয়ার, ডিবেঞ্চার, আইসিবি ইউনিট সার্টিফিকেট, ওয়েজ আনার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, স্থায়ী আমানতের রসিদ এবং জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের অধীন বিভিন্ন প্রকারের সঞ্চয়পত্র যেমন ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩ বছর মেয়াদী সঞ্চয় সার্টিফিকেট, ৩ বছর মেয়াদি জাতীয় বিনিয়োগ বন্ড, পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, ৮ বছর মেয়াদি প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র এবং ৫ বছর মেয়াদি ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড।
বাংলাদেশে মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমোদনপ্রাপ্ত ২৭টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিজিং কোম্পানি অব বাংলাদেশ, উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাঙ্কো ট্রানস ওয়ার্ল্ড (বিডি), মিলেনিয়াম ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, ফিডালিটি এসেটস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ কোম্পানি, রাসপিট সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট, বণিক বাংলাদেশ, গ্রামীণ সিকিউরিটিজ ম্যানেজমেন্ট, সাউথ এশিয়া ক্যাপিটেল, সৌদি-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, প্রাইম ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইসি সিকিউরিটিজ, মার্কেন্টাইল সিকিউরিটিজ, বাংলাদেশ মিউচ্যুয়াল সিকিউরিটিজ, এএএ-কনসালটেন্ট অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার, পাঙ্গচা পার্টনার্স, প্যারামাউন্ট সিকিউরিটিজ, ইকুইটি ভ্যালুয়েশন রিসার্চ অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন, প্রাইম সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এমএফএইচ ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, সেটকম্ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, এবং ইকুইটি পার্টনার্স।
অপরদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এর অধীনে স্থাপিত এবং মূলধন বাজার কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি হচ্ছে ইউনাইটেড লিজিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড লিজিং কোম্পানি অব বাংলাদেশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি অব বাংলাদেশ, সৌদি-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, ফনিক্স লিজিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটেল, উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, দি ইউএই-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, প্রাইম ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাহরাইন-বাংলাদেশ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন, বণিক বাংলাদেশ, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি, ন্যাশনাল হাউজিং ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, মাইডাস ফিন্যান্সিং, ফার্স্ট লিজ ইন্টারন্যাশনাল এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।
যেসব আইন দ্বারা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ ব্যবসায় ও মূলধন বাজার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয়, সেগুলি হচ্ছে ক্যাপিটাল (কন্টিনিউয়্যান্স অব কন্ট্রোল) অ্যাক্ট ১৯৪৭, কোম্পানিজ অ্যাক্ট ১৯৯৪, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস ১৯৮৭, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অ্যাক্ট ১৯৯৩, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (সংশোধিত) অ্যাক্ট ১৯৯৩, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ব্রোকার্স, স্টক ডিলার্স, সাব ব্রোকার্স) রেগুলেশন ১৯৯৪, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ইনসাইডার ট্রেডিং) রেগুলেশন ১৯৯৪, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যান্ড পোর্টফোলিও ম্যানেজার্স) রেগুলেশন ১৯৯৫, ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিংস (আইপিও) রুলস ১৯৯৮, দ্য সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বিল ১৯৯৯, মার্জিন রুলস ১৯৯৯, ট্রাস্ট অ্যাক্ট ১৮৮২ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ডস) রেগুলেশন ১৯৯৪। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জসমূহের কার্যাদি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও আইন রয়েছে। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের সিকিউরিটিজি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন হচ্ছে মূলধন বাজারের সামগ্রিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত রেগুলেটরি সংস্থা। সিকিউরিটিজসমূহে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং গোটা মূলধন বাজারের উন্নয়ন সাধন হচ্ছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রধান কাজ।
আশির দশকের শুরুতে ব্যক্তিখাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও নীতিমালা গ্রহণের পর থেকে দেশের মূলধন বাজারের উন্নয়নের ধারা গতিশীলতা লাভ করে। মূলধন বাজারের মুখ্য অংশগ্রহণকারীরা সরকারের গৃহীত নীতিমালার প্রতি অনুকূল সাড়া প্রদান করে এবং মূলধন বাজার উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের মূলধন বাজারের তথ্যসমূহ ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন-এর ইমার্জিং মার্কেটস ফ্যাক্ট বুক-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তথাপি বাংলাদেশে মূলধন বাজার এখনও নানাপ্রকার অদক্ষতা ও অপূর্ণতায় ভুগছে।
সোর্সঃ বাংলাপিডিয়া