বিধ্বংসী পুঁজিবাদের বিকল্প কি?
মার্কিন লেখক ও গবেষক বেলেন ফার্নান্দেজ এর একটি লেখার বাংলা অনুবাদ পড়ছিলাম আজকের একটি জাতীয় দৈনিকে যার শিরোনাম ছিল ‘পুঁজিবাদ আমাদের মেরে ফেলছে’। নিবন্ধটিতে আমেরিকান সমাজে পুঁজিবাদের ভয়ংকর নেতিবাচক প্রভাবের কথা বলতে গিয়ে লেখক বলেছেন: ‘অর্থ আর মুনাফা অর্জনের সীমাহীন নেশা এখানকার মানুষের জীবনটাকে এতটাই অস্থির করে তুলেছে যে বহু মানুষের পক্ষে আক্ষরিক অর্থেই এই সমাজ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এর ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকার এই অস্থির ও নির্বান্ধব জীবনকে মেনে নিতে না পারায় সমগ্র দেশের মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবনতা ভায়াবহভাবে বেড়ে গেছে।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, নব্য উদার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষ অর্থের পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্রমাগত একা হয়ে যাচ্ছে। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এই নিষ্ঠুর নি:সঙ্গতা মানুষের জীবনে হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। ———পরিবেশ বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারী দিয়েছেন, পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও ভোগবাদী সমাজ সম্প্রসারণের কারণে পণ্যের অতি ব্যবহার, অপব্যবহার ও বিষক্রিয়া বাড়ছে। এটি গোটা পৃথিবিকে এমন এক ধ্বংসের জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে যেখান থেকে আর ফেরা সম্ভব হবে না। নিবন্ধটির উপসংহার টানা হয়েছে এই বলে, ‘পৃথিবিকে বাঁচাতে হলে এই ধনতান্ত্রিক অস্থির সমাজকে ভাঙতেই হবে। বিশ্বকে জাগতেই হবে।’
আমাদের প্রশ্ন ধনতান্ত্রিক পুঁজিবাদী সমাজ ভেঙে যাবেন কোথায়? তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে? সেখানেও কি মুক্তির উপায় আছে? একই পত্রিকায় অর্থনীতি সংক্রান্ত ‘দূর্নীতির রাশ টানতে হবে’ শির্ষক এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে: ‘চীনে যে ধাঁচের পুঁজিবাদী ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, মার্কিন প্রবাসী চীনা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মিন ঝিন পির মতে, তা হলো ক্রোনি ক্যাপিটালিজম। বাংলা করলে এর অর্থ দাঁড়ায় স্বজনতোষী পুঁজিবাদ। এই ব্যবস্থার বিশেষত্ব হলো, এখানে রাষ্ট্রের কর্মচারী -দালাল- রাজনৈতিক নেতারা সব মিলে মিশে দুর্নীতি করেন। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই দুর্নীতি হয়ে থাকে। সবাই যার কমবেশি ভাগ পেয়ে থাকেন। ব্যাপারটা হলো, আগে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ঘুষ খাওয়ার যুগে অনেক ক্ষেত্রে ঘুষ ছাড়াও সরকারী কার্যালয়ে কাজ করানো যেত। কিন্তু এখন সেটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
মিন ঝিন পি চায়না’স ক্রোনি ক্যাপিটালিজম বইটির ইন বেড উইথ দ্য মাফিয়া অধ্যায়ে বলেছেন, ‘এই যে সংঘবদ্ধ অপরাধ, তার যেমন স্থানীয় সরকারের উপর ক্ষতিকর প্রভাব আছে, তেমনি সংগঠিত অপরাধী চক্র ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে যে যোগসাজশ- রাষ্ট্রের অখন্ডতার ওপর তার প্রভাব আরও অনেক সুদুরপ্রসারী। নিবন্ধটি আপনি পড়ছেন ব্যাংকিং নিউজ বিডি ডটকম-এ। দৃশ্যত এ ধরনের যোগসাজশের কারনে চীনা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলাজনিত ও প্রশাসনিক সক্ষমতা ধ্বংস হচ্ছে।’
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
উদ্ধৃতি বড় করে লাভ কি? পৃথিবির দেশে দেশে আমরা এই নমুনাই তো দেখছি। সুতরাং পুঁজিবাদ কি তথাকথিত সমাজবাদ সকলের চেহারাই উলঙ্গ হয়ে পড়েছে। নীতিহীন এবং ভোগবাদী মানুষ, ক্ষমতা ও সম্পদই যাদের প্রভূ হয়ে যায়, যখন সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্ণধার হয়ে বসে, তখন তার চিত্রটি এমনই হয়। সুতরাং সম্পদের প্রবৃদ্ধি যতই হোক সেটি গোষ্ঠি বিশেষের হাতে চলে যাবে এটি তো স্বতসিদ্ধ কথা। দেড় হাজার বছর আগে এ বিষয়ে মানবজাতিকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং শুধু সম্পদের প্রবৃদ্ধি নয়; সম্পদ ভোগ ব্যবহার, উৎপাদন, বিপণন ও বন্টনের দায়িত্বে যারা থাকে তাদের নৈতিক পরিশুদ্ধি ছাড়া এক্ষেত্রে তেমন কোন ইতর বিশেষ হবে না।
আমাদের কথা তাই খুবই সাদা মাটা এবং পুরাতন। সেটি হচ্ছে মানুষের নৈতিক সংশোধন। আর একমাত্র এক মহা শক্তিমান, সর্বদর্শী ও সর্বজ্ঞাতা প্রভুর কাছে জবাবদিহির ভয় ছাড়া নৈতিক সংশোধনের দ্বিতীয় কোনো রাস্তা নেই। এই সাদা মাটা কথাটি বুঝতে যত দেরী হবে অথবা এটিকে সেকেলে ও প্রগতি বিরোধী চিন্তা বলে মনে করা হবে, মানব সভ্যতাকে তার মাশুল কড়ায় গন্ডায় আদায় করতে হবে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখকঃ নূরুল ইসলাম খলিফা, সাবেক ডিএমডি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও সাবেক প্রিন্সিপাল, ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।