বিবিধব্যাংক গ্রাহক

উত্তরাধিকার সনদ কী? উত্তরাধিকার সনদ কীভাবে নেবেন

উত্তরাধিকার সনদ হচ্ছে এমন একটি সনদপত্র বা প্রমানপত্র যা মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশগণ তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির অংশহারের বর্ণনা করে। কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ব্যাংক একাউন্টের অর্থ নিয়ে যদি উত্তরাধিকারদের মধ্যে কোনো বিরোধ তৈরি হয় কিংবা ব্যাংক হিসাবের নমিনি না থাকে, তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উত্তরাধিকার সনদ দাবি করে থাকে। আদালত থেকে এই সনদ সংগ্রহ করতে হয়।

উত্তরাধিকারী সনদ যারা পাবেন
মৃত ব্যক্তি যদি মুসলিম হন, তাহলে মুসলিম আইন অনুযায়ী তাঁর রেখে যাওয়া টাকার ভাগ হবে। মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা এ টাকার মালিক হবেন। মুসলিম আইনে যেভাবে সম্পত্তি ভাগ হওয়ার কথা বলা আছে, ঠিক সেভাবেই এ রেখে যাওয়া টাকার ভাগ হবে। কোনো উত্তরাধিকারীকে অন্য উত্তরাধিকারীরা বঞ্চিত করতে পারবেন না। আইন অনুযায়ী এ টাকাও একটি সম্পত্তি। এর ভাগ-বাঁটোয়ারাও হবে জমিজমার মতো। তাই এ বিষয়ে কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয়। অন্য ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও নিজ নিজ পারিবারিক আইন অনুযায়ী টাকার ভাগ হবে।

নমিনি করা থাকলে
হিসাবধারী যদি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের কোনো নমিনি করে দিয়ে থাকেন, তাহলে সেই নমিনি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। এত দিন ধরা হতো, মৃত ব্যক্তির মনোনীত নমিনিই টাকার মালিক হবেন। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগ এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সঞ্চয়পত্রের অ্যাকাউন্টধারী মারা গেলে ওই অ্যাকাউন্টের টাকা নমিনির পরিবর্তে হিসাবধারীর উত্তরাধিকারী পাবেন বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমদে চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ। এ-সংক্রান্ত মামলার আইনজীবীদের বক্তব্য মতে, হাইকোর্ট বিভাগের এ রায়ের ফলে সঞ্চয়ের টাকা নমিনি মাত্র উত্তোলন করতে পারবেন। তবে ওই টাকার মালিক নমিনি হবেন না। মালিক হবেন অ্যাকাউন্টধারীর উত্তরাধিকারী।

উত্তরাধিকারী সনদের ব্যাপ্তি
সাকসেশন বা উত্তরাধিকার সার্টিফিকেট মূলতঃ মৃত ব্যক্তির ব্যাংকে জমানো টাকা উত্তোলন, প্রতিজ্ঞাপত্র, ষ্টক, সরকারের জন্য কোন জামানত, কোম্পানীর শেয়ার, ডিবেঞ্চার, রয়্যালিটির সর্বোপরি মৃত ব্যক্তির অর্থ সংক্রান্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। তবে, ব্যবস্থাপনাপত্র বা প্রবেট দ্বারা উদ্ভুত কোন দেনা বা জামানতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। সাকসেশন অ্যাক্ট ১৯৭৫ এর ধার ৩৭০-৩৮৯ এ সাকসেশন সার্টিফিকেট এর ব্যাপারে বলা আছে। আইনে সাকসেশন সার্টিফিকেট গ্রহনের জন্য আবেদনের কোন সময়সীমা নির্দিষ্ট করা নেই। উল্লেখ্য যে, উত্তরাধিকারী সনদ শুধুমাত্র বাংলাদেশে ব্যবহারের উপযােগী। তবে বিদেশে কার্যকারিতার ক্ষেত্রে কোর্ট ফি আইন অনুসারে নির্দিষ্ট পরিমাণ কোর্ট ফি প্রদান সাপেক্ষে নির্দিষ্ট ফরম-এ সনদ গ্রহণ করতে হবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

কাজেই উত্তরাধিকার সনদ হচ্ছে কোনো মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশ কতজন এবং মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া অর্থ কে কতটুকু পাবেন, সে সম্পর্কে আদালত থেকে জারি করা একটি সনদ। সাধারণত কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকাররা অর্থ উত্তোলন করতে গেলে এই সনদের প্রয়োজন পড়ে। উত্তরাধিকার সনদে আদালত মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া অর্থ থেকে কে কতটুকু পাবেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে দেয়।

কীভাবে আবেদন করতে হয়?
উত্তরাধিকার সনদ তুলতে হয় জেলা জজ আদালত থেকে। মৃত ব্যক্তির হিসাবের টাকা তোলার জন্য জেলা জজ আদালতে বা জেলা জজের মনোনীত অন্য কোনাে আদালত থেকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এ সনদ তুলতে হয়। ঢাকায় তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতকে এ সনদ- সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তির এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকারীরা প্রত্যেকে কিংবা তাদের পক্ষে যিনি টাকা তুলবেন, তাঁকে আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি দাখিল করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে হলফনামা দিতে হবে, যাতে উল্লেখ থাকবে-

১। আবেদনকারী মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে কী হন?
২। মৃত ব্যক্তির এ টাকা কাউকে দান বা উইল করে যান নি।
৩। উইলের জন্য কোনো প্রবেট বা লেটার অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দরখাস্ত দাখিল করে যান নি।
৪। আবেদনকারীকে অন্য উত্তরাধিকারীরা টাকা তোলার ক্ষমতা দান করেছেন।
৫। আরজিতে মৃত ব্যক্তির টাকার হিসাবের বিবরণ তফসিল আকারে দিতে হবে।
৬। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা চেয়ারম্যান অফিস বা কমিশনারের কাছ থেকে মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। মৃত ব্যক্তিকে যে কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে, সে মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র।
৭। মৃত ব্যক্তি যদি কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে সেখান থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে।
৮। মৃত ব্যক্তি কোন ব্যাংকে কত টাকা রেখে গেছেন, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে একটি সনদ (ব্যালান্স কনফারমেশন লেটার) ওঠাতে হবে এবং আদালতে জমা দিতে হবে।
৯। আদালতে আবেদন করার পর আদালত আবেদনকারীর জবানবন্দি নেবেন এবং সত্যতা যাচাই করবেন। পরবর্তী সময়ে আদালতে নির্দিষ্ট কোর্ট ফি জমা দেয়ার জন্য আদেশ দেবেন। কোর্ট ফি জমা দেয়া হলে পরে সনদ জারি করবেন।

কোর্ট ফি কত লাগবে?
আবেদনকারী ব্যাংক থেকে কত টাকা ওঠানোর জন্য আবেদন করছেন, তার ভিত্তিতে কোর্ট ফি নির্ধারিত হয়। দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে কোনো কোর্ট ফি দিতে হয় না। কিন্তু ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত এক শতাংশ কোর্ট ফি দিতে হয়। আবার এক লাখ এক টাকা থেকে যে কোনো পরিমাণ অর্থের ওপর দুই শতাংশ কোর্ট ফি জমা দিতে হয়।

জেনে রাখুন
উত্তরাধিকার সনদ পেতে দুই থেকে ছয় মাস সময় পর্যন্ত লাগতে পারে। তবে মৃত ব্যক্তি যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার জন্য ব্যাংকে কোনো নমিনি করে দিয়ে থাকেন, তাহলে ওই নমিনির টাকা তোলার জন্য উত্তরাধিকার সনদ দেয়ার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু অনেক ব্যাংকে এ টাকা তোলার জন্য জমা দেয়া লাগতে পারে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর নমিনি কর্তৃক ব্যাংকের অর্থ উত্তোলনের আগের রীতি আর কাজ করবে না। উত্তরাধিকার সনদের প্রয়োজন পড়বে। উত্তরাধিকার সনদ উত্তোলনের জন্য আদালতে কোনো কারণে আবেদন খারিজ হলে জেলা জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিলের সুযোগ রয়েছে।

উত্তরাধিকার সনদ ব্যাংকে দাখিল করার পর ব্যাংক প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর ব্যাংক একাউন্টে আদালতের নির্দেশ অনুসারে বণ্টনকৃত অর্থ জমা করবে। তবে সব উত্তরাধিকারী বা একাধিক উত্তরাধিকারী মিলে যদি কোনো একজন নির্দিষ্ট উত্তরাধিকারীকে পাওয়ার-অব-অ্যাটর্নি প্রদান করে, সে ক্ষেত্রে একজন উত্তরাধিকারী বরাবরও ব্যাংক অন্যদের অর্থ হস্তান্তর করতে পারে।

আরও দেখুন:
ব্যাংকে রেখে যাওয়া মৃত ব্যক্তির আমানত কে পাবে?
ব্যাংক গ্রাহকের মৃত্যুতে উত্তরাধিকারী ও নমিনী কর্তৃক টাকা উত্তোলনের নিয়ম
মৃত ব্যক্তির হিসাবে গচ্ছিত টাকা কে পাবে নমিনী নাকি ওয়ারিশ?
মৃত ব্যক্তির টাকা কে বা কারা পাবেন?
ওয়ারিশ সনদ কেন দরকার এবং কিভাবে তুলতে হয়?

উত্তরাধিকার সনদের আবেদন পত্র
উত্তরাধিকার সনদের পত্রের নমুনা ১ পেতে ক্লিক করুন এখানে
উত্তরাধিকার সনদের আবেদন পত্রের নমুনা ২ পেতে ক্লিক করুন এখানে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button