হুন্ডি কী বা হুন্ডি কাকে বলে? হুন্ডির অপকারিতাসমূহ
শামসুদ্দীন আকন্দঃ হুন্ডি (Hundi) একটি নীতি বহির্ভূত এবং দেশের আইন দ্বারা নিষিদ্ধ অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর ব্যবস্থা। এটি Bill of Exchange বা বিনিময় বিল নামেও পরিচিত। পূর্বে বাণিজ্যিক লেনদেন এবং ঋন আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। এখনও হয়। তবে তা অবৈধভাবে এবং অবৈধ উদ্দেশ্যে।
হুন্ডি কি?
‘হুন্ডি’ (Hundi) শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘হুন্ড’ (Hund) থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ হলো ‘সংগ্রহ করা’। এটি বাণিজ্যিক আদান প্রদান বা ঋণ সংশ্লিষ্ট লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত লিখিত এবং শর্তহীন দলিল, যার মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে নির্দেশিত পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়। এই ব্যবস্থা মুগল আমলে পরিচিত লাভ করলেও কিন্তু ব্রিটিশ আমলে জনপ্রিয়তা পায়। এখনও প্রবাসী চাকুরিজীবীরা একে আড়ালে ব্যবহার করছেন।
Merriam Webster এ বলা হয়েছে-
A negotiable instrument, bill of exchange, or promissory note of India used especially in the internal finance of trade.
অর্থাৎ একটি ইন্ডিয়ান হস্তান্তরযোগ্য দলিল, বিনিময় বিল বা প্রমিজরি নোট যা বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যবহৃত হয়।
Wikipedia তে বলা হয়েছে-
A Hundi is a financial instrument that developed in Medieval India for use in trade and credit transactions.
অর্থাৎ হুন্ডি একটি আর্থিক দলিল যা মধ্যযুগে ভারতে বাণিজ্য ও ক্রেডিট লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা হতো।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
হুন্ডি (Hundi) জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ এর মাধ্যমে কম খরচে এবং প্রত্যন্ত এলাকায় টাকা পাঠানো সম্ভব অনেক ক্ষেত্রে তা ব্যাংক এর চেয়েও দ্রুততর।
হুন্ডির প্রকারভেদ
হুন্ডির অনেক প্রকার রয়েছে। নিম্নে হুন্ডির প্রকারসমূহ তুলে ধরা হলো-
সাহিয়গ হুন্ডি
এই হুন্ডির মাধ্যমে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অন্য এক ব্যবসায়ীর প্রতি তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে অর্থ প্রদান করতে বলা হয়। গুজরাটি ও হিন্দি ভাষায় সাহিয়গ মানে হলো ‘সহযোগিতা করা’। এটি হুন্ডি ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক ভাষা।
দর্শনী হুন্ডি
এটি এমন এক ধরনের হুন্ডি যা দেখামাত্র প্রদেয়। এটি ধারক দ্বারা প্রাপ্তির পরে যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে পেমেন্টের জন্য উপস্থাপন করা আবশ্যক। সুতরাং, এটি একটি চাহিদা বিলের অনুরূপ।
মুদ্দতি হুন্ডি
একটি মুদ্দতি বা মেয়াদি হুন্ডি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে প্রদানযোগ্য। এটি একটি টাইম বিলের অনুরূপ।
নাম-যোগ হুন্ডি
নাম-যোগ হুন্ডি এমন একটি হুন্ডি যার নাম হুন্ডির উপর উল্লেখ করা থাকে শুধুমাত্র তাকেই পেমেন্ট করা হয়। এই ধরনের হুন্ডি অন্য কোনও ব্যক্তির পক্ষে অনুমোদন করা যাবে না।
ফরমান-যোগ হুন্ডি
হুন্ডিতে নির্দেশিত ব্যক্তি বা যার নাম উল্লেখ করা হয়েছে তার জন্য এই ধরনের হুন্ডির অর্থ প্রদান করা যেতে পারে। এই ধরনের হুন্ডির অর্থ পেমেন্ট অর্ডার চেকের অনুরূপ এবং এই ধরনের হুন্ডিতে কোন অনুমোদন প্রয়োজন নেই।
ধানি-যোগ হুন্ডি
যখন হুন্ডির অর্থ হুন্ডি ধারক বা বহনকারীকে প্রদান করা হয়, তখন এটি ধানি-যোগ হুন্ডি নামে পরিচিত। এটি বেয়ারার দলিলের অনুরূপ।
জোখিম হুন্ডি
সাধারনভাবে হুন্ডি শর্তহীন তবে একটি জোখিম হুন্ডি এই শর্তে শর্তাধীন যে, ড্রয়ার শুধুমাত্র নির্দিষ্ট শর্তের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে হুন্ডির অর্থ পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই ধরনের হুন্ডি বিনিময়যোগ্য নয়।
জবাবী হুন্ডি
যদি হুন্ডির মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ স্থানান্তরিত হয় এবং সেটির জন্য অর্থ প্রদানকারী ব্যক্তি কর্তৃক প্রাপ্তি স্বীকার (জবাব) প্রদান করতে হয় তবে সেই হুন্ডি জবাবী হুন্ডি নামে পরিচিত।
খাকা হুন্ডি
এমন এক ধরনের হুন্ডি যা ইতিমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে তা খাকা হুন্ডি নামে পরিচিত।
খতি হুন্ডি
যে হুন্ডিতে কোন ধরনের ত্রুটি আছে বা যে হুন্ডি জালিয়াতি করা হয়েছে তা খতি হুন্ডি নামে পরিচিত।
আরও দেখুন:
◾ প্রবাস থেকে হুন্ডিতে টাকা পাঠানো ও হুন্ডি ব্যবসা কী জায়েজ?
হুন্ডির অপকারিতা
হুন্ডি (Hundi) ব্যাংকিং নিয়ম অনুসরণ করে না বলে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এটি অপরাধ। এর জন্য শুধু বাংলাদেশেই নয়, অনেক দেশেই এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। হুন্ডির অনেক অপকারিতা রয়েছে। যা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
• আয়কর রেয়াত পাওয়া যায় না।
• বৈধ উপার্জন অবৈধ হিসাবে চিহ্নিত হয়।
• বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) কর্তৃক লেনদেন যাচাই হয়।
• প্রবাসী গ্রাহক হিসেবে রাষ্ট্রীয় সুযােগ হতে বঞ্চিত হয়।
• অর্থ পাঠানাে ও অর্থ প্রাপ্তি ঝুকিপূর্ণ হয়।
• ব্যাংকিং সুবিধা বা বিনিয়োগ পাওয়া যায় না।
• বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়, ফলে অর্থনীতির ক্ষতি হয়।
• অবৈধ টাকার মালিকগণ প্রবাসীদের টাকা বিদেশে রেখে সম্পদ পাচার করে।
লেখকঃ মোহাম্মদ শামসুদ্দীন আকন্দ, ব্যাংকার