এজেন্ট ব্যাংকিং কি? এজেন্ট ব্যাংকিং এর সুবিধাসমূহ
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিতদের সেবা দিতে ২০১৩ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করা হয়। গ্রামাঞ্চলের মানুষকে সেবা দেওয়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মূল লক্ষ্য। ব্যাংকের শাখা নেই এসব এলাকায় নিজস্ব বিক্রয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এমন ব্যক্তি ব্যাংকের এজেন্ট হতে পারেন। কোনো ধরনের বাড়তি চার্জ ছাড়া এ সেবা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিং এ কোনোভাবেই গ্রাহক যেন প্রতারিত না হন, সে জন্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগের আগে অবশ্যই তার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা, বিশ্বস্ততা ও সততার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথমে শুধু পল্লী এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং এর অনুমোদন দেওয়া হলেও পরে পৌর ও শহরাঞ্চলেও এজেন্ট ব্যাংকিং করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এজেন্ট ব্যাংকিং কি?
বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করার লক্ষ্যে, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতকে গ্রাহকের কাছে সহজ/হাতের কাছে এবং ব্যাংকিং সময়ের পরেও ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সর্ব সাধারণের কাছে ব্যাংকিং চ্যানেল সম্প্রসারিত করছে এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
প্রতিনিয়ত বাড়ছে গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমাণ। ফলে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ বেসরকারি ব্যাংকগুলো যেখানে তাদের শাখা চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে জনপ্রিয় হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। কারণ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ব্যাংকগুলোর তেমন খরচ নেই। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকের এজেন্টকেই সব খরচ বহন করতে হয়। এ জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২০টি তফসিলি ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি ব্যাংক মাঠপর্যায়ে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এজেন্ট ব্যাংকিং শুরুর পর অল্প সময়েই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ লাখ। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বেশি প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ জীবনে। এটা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির একটা সোপান। সব ব্যাংকের শাখা প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেই। এসব অঞ্চলে মানুষ ব্যাংকিং সেবার আওতার বাইরে রয়ে গেছে। সেখানে ব্যাংকের আউটলেট খুলে মানুষের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যেতে পারে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং। এই ব্যাংকিংয়ের সর্বোচ্চ ২৯ শতাংশ গ্রাহক ছোট ব্যবসায়ী। এর পরই দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন গৃহিণীরা, যার পরিমাণ ১৮ শতাংশ। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মোট গ্রাহকের ৩ শতাংশ দিনমজুর এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকে হিসাব খুলেছেন। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ২৯ শতাংশ গ্রাহক ছোট ব্যবসায়ী। এ ছাড়া মোট গ্রাহকের ৭ শতাংশ কৃষক। বিআইবিএমের প্রতিবেদনে বলা হয়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ১৫ শতাংশ গ্রাহক সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ও ৭ শতাংশ গ্রাহক শিক্ষার্থী।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
বাংলাদেশ ব্যাংক-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে রেমিট্যান্স সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও এজেন্ট ব্যাংকিং অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। মার্চ পর্যন্ত ১৬ ব্যাংকের ৪ হাজার ৯০৫টি আউটলেটের মাধ্যমে গ্রাহকদের ২ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা রেমিট্যান্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে বিতরণকৃত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা এবং শহরাঞ্চলে বিতরণকৃত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৭৮ কোটি টাকা। ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে খোলা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা প্রায় ছয় গুণ বেশি। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ছয়টি ব্যাংক গ্রাহকদের ১২২ কোটি টাকার ঋণও দিয়েছে।
এজেন্ট ব্যাংকিং এর সংজ্ঞা
এজেন্ট ব্যাংকিং হলো একটি বৈধ এজেন্সি চুক্তির অধীনে এজেন্টদের নিয়োগ দানের মাধ্যমে জনগণ এবং গ্রাহকদের সীমিত স্কেলে ব্যাংকিং এবং আর্থিক সেবা প্রদান।
Agent Banking এর সংজ্ঞায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে-
Agent Banking means providing limited scale banking and financial services to the underserved population through engaged agents under a valid agency agreement, rather than a teller/ cashier. It is the owner of an outlet who conducts banking transactions on behalf of a bank.
অর্থাৎ- এজেন্ট ব্যাংকিং এর অর্থ হল টেলার বা ক্যাশিয়ারের পরিবর্তে কোন সংস্থার সাথে বৈধ চুক্তির অধীনে সীমিত স্কেলে ব্যাংকিং ও আর্থিক পরিষেবাগুলো এজেন্টের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে প্রদান করা। এটি একটি ব্যাংকের পক্ষে ব্যাংকের লেনদেন পরিচালনা করে এমন একটি আউটলেটের মালিক।
এজেন্ট ব্যাংকিং এর কাজের সুযোগ
ব্যাংকিং সেবা বাড়াতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এজেন্ট ব্যাংকিং। এজেন্ট ব্যাংকিং হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত একটি নতুন ব্যাংকিং ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বৈধ এজেন্সি চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগকৃত এজেন্টের মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হয়। যেসব এলাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা নেই, সেখানে এর মাধ্যমে সেবা দেওয়া হয় ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিতদের। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য করা হয় এজেন্ট ব্যাংকিং, বিশেষ করে স্কুল, পথশিশু, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিক, চর এলাকা ও দ্বীপবাসীর কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। ফলে সেই নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের জন্য বাড়ছে কাজের সুযোগ। বৃদ্ধি পাচ্ছে কর্মসংস্থান, কমছে বেকারত্বের হার।
এজেন্ট ব্যাংকিং এর সুবিধা
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, জামানত তুলনামূলকভাবে কম লাগে। অল্প জায়গায় করা যায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম পরিচালনা। লোকবল কম লাগে।
এজেন্ট ব্যাংকিং এর সেবাসমূহ
বিশ্বব্যাপী এজেন্ট ব্যাংকিংকে একটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য খুচরা ব্যাংকিং হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এই চ্যানেলকে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছানোর পাশাপাশি বর্তমান ব্যাংক গ্রাহককে বিশেষ করে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন স্থানে আর্থিক সেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শাখা নেই এমন অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকরা বিভিন্ন ধরনের হিসাব খোলা, ক্ষুদ্র ও কৃষিঋণ নিতে ও কিস্তি সংগ্রহ, নগদ জমা ও উত্তোলন করতে পারবেন। নিম্নে এজেন্ট ব্যাংকিং এর সেবাগুলো তুলে ধরা হলো-
১) একাউন্ট খোলা (সেভিং একাউন্ট, কারেন্ট একাউন্ট, ডিপিএস, এফডিআর ইত্যাদি)
২) টাকা জমা (কোর ব্যাংকিং এবং এজেন্ট ব্যাংকিং)
৩) টাকা উত্তোলন (কোর ব্যাংকিং এবং এজেন্ট ব্যাংকিং)
৪) বৈদেশিক রেমিটেন্স প্রদান
৫) ইউটিলিটি বিল পরিশোধ (বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিল)
৬) ব্যাংকের যে কোনো অ্যাকাউন্টে তহবিল স্থানান্তর
৭) ইএফটিএনের মাধ্যমে অন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে তহবিল স্থানান্তর
৮) অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স জানা
৯) ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা
১০) ক্লিয়ারিং চেক পেমেন্ট
১১) ঋণের আবেদন গ্রহণ, বিতরণ ও কিস্তি সংগ্রহ
১২) সরকারের বিভিন্ন ভাতা বিতরণ
১৩) চেক বই প্রদান
১৪) ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড সুবিধা
১৫) বীমা প্রিমিয়াম সংগ্রহ
১৬) সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা প্রোগ্রামের অধীনে নগদ অর্থ প্রদানসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত যে কোনো ধরনের ব্যাংকিং সেবা নেওয়া যাবে।
কারা এজেন্ট হতে পারবে
কোম্পানি আইনের আওতায় অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান, আইটিভিত্তিক আর্থিক সেবা দিতে সক্ষম এ রকম প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানির প্রতিনিধি, ফার্মেসির মালিক, পেট্রল পাম্প কিংবা গ্যাস স্টেশনের মালিক, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অফিস, এমআর এর অধীনে অনুমোদন পাওয়া এনজিও, কো-অপারেটিভ সোসাইটির অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কুরিয়ার, ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র এজেন্ট হতে পারবে।
কারা এজেন্ট হতে পারবে না
ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত, আদালত থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি, সাজা হওয়ার পর তিন বছর পর্যন্ত জেল, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়নের দায়ে অভিযুক্ত, ঋণ খেলাপি, আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত, অন্য ব্যাংকের বিদ্যমান এজেন্ট ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি থাকলে এজেন্ট হতে পারবে না।
এজেন্ট ব্যাংকিং এর চুক্তি বাতিল
অনেক কারণে এজেন্ট ব্যাংকিং এর চুক্তি বাতিল হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে– এজেন্ট তার কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিলে; আদালত কর্তৃক এজেন্টের ব্যবসা বন্ধ হলে; এজেন্ট ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে তিন মাসের মধ্যে আবার চালু না করলে; ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া মালিকানা কিংবা ঠিকানা পরিবর্তন করলে; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অমান্য করলে; ভুল তথ্য দিলে; এজেন্ট হওয়ার অনুপযুক্ত ব্যক্তির কাছে আংশিক মালিকানা হস্তান্তর করলে।
এজেন্ট ব্যাংকিং এর প্রশিক্ষণ
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের জন্য চার থেকে পাঁচ দিন ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তবে ব্যাংকভেদে প্রশিক্ষণের সময়সীমা কমবেশি হতে পারে।
এজেন্ট ব্যাংকিং এর আয়
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মোট লেনদেনের ওপর আয় নির্ভর করে। যত বেশি লেনদেন হবে, তত বেশি কমিশন পাওয়া যাবে। যত বেশি হিসাব খুলতে পারবেন তত বেশি কমিশন পাবেন, এছাড়া যত বেশি রেমিট্যান্স পেমেন্ট দিতে পারবেন তত বেশি কমিশন পাবেন।
বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংক কি ২০১৭ সালে চালু হয়? আপনাদের প্রথম লাইনেই তো এই খবরকে প্রশ্নের সম্মুখীন করলো…
২০১৩ সাল থেকে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হয়।