আগামীর ডিজিটাল ব্যাংকিং
ছোট একটা উদাহরণ। আমি ২০১৭ সালে একটি ব্যাংকে ঋণের আবেদন করি। একদিন পরে ব্যাংকের প্রতিনিধি আমার বেতনের ডকুমেন্ট ভেরিফাই করতে আমার অফিসে আসে। এরপর একজন যুক্তিসংগত ব্যক্তিগত জামানত প্রদান সাপেক্ষে সাতদিনের মাথায় আমার ঋনের টাকা আমার হাতে তুলে দেয়। এমনকি ক্রেডিট কার্ড ও দিয়ে দেয় দুইটা। এরই মধ্যে তারা আমার একাউন্ট ওপেনিং থেকে যাবতীয় কাজ সম্পাদন করে ফেলে। তারপর থেকে অদ্যাবধি ব্যাংকটির কোন শাখায় আমাকে যেতে হয়নি। ছোট খাটো পেমেন্টগুলি Cash Deposit Machine (CDM) এ জমা দেই। ডেবিট ইনস্ট্রাকশনের মাধ্যমে তারা আমার ঋনের কিস্তি কেটে নিচ্ছে আমার ব্যাংকের একাউন্ট থেকে প্রতিমাসে। আবার যখন, রাত দিন বলে কথা নাই, ইচ্ছে হয় কল সেন্টারের ১৬২… নাম্বারে ফোন দেই। জানতে চাই ক্রেডিট কার্ডের বিল, একাউন্ট ব্যালেন্স, ঋনের বকেয়া এমন অসংখ্য তথ্য।
চিন্তা করুন ২০১০ সালের আগের কথা। ঠিক একই ব্যাংকিং সেবাগুলি নিতে চাইলে একজন গ্রাহককে কি পরিমান বিড়ম্বনা পোহাতে হতো আর সময়ের অপব্যয়তো হতোই। আর ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার মতসুখ! এভাবেই মহা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে দেশের ব্যাংকিং খাত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মহাউৎকর্ষ সাধনের সাথে সমান তাল রেখেই এগিয়ে চলছে FinTech (Financial Technology)। নানা প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংকিং সেবাকে জনগনের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে, কাস্টমার বান্ধব প্রযুক্তি আর কাস্টমাইজড সেবা নিয়ে কাজ করে চলছে অনেক আধুনিক ব্যাংকসমুহ।
ডিজিটাল কারেন্সি ব্যাপকভাবে সাড়া পেয়েছে আমাদের অর্থনীতিতে। এই শহরের অনেক মানুষের পকেটে আছে বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড। ফিজিক্যালি কেউ নগদ টাকা নিয়ে ঘুরছে না। শপিং সেন্টার, শপিংমল, অনলাইন মার্কেটপ্লেসে POS এ একটা ঘষার মাধ্যমে ব্যাংকিং ট্রানজেকশন নিমিষেই সম্পাদন করে নিচ্ছি। ঘরে বসেই মোবাইল রিচার্জ, টিকেট ক্রয়, হোটেল বুকিং, অসংখ্য কেনাকাটা নির্বিঘ্নে সম্ভব হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে যেকোন ব্যাংকে টাকা পাঠানো যাচ্ছে। নিমিষেই পরিশোধ করা যাচ্ছে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অসংখ্য ইউটিলিটি বিল। RTGS, PSB, BEFTN, BACH এর মাধ্যমে সম্পাদন হচ্ছে অসংখ্য লেনদেন দুর্বার গতি।
ম্যানুয়াল ব্যাংকিং এর দিন শেষ। এক সময় শুনতাম হিসাব ক্লোজিং এর দিন ব্যাংকাররা কুপি জ্বালিয়ে সারারাত কাজ করতো। তিন-চারদিন ধরে তারা এই মহাযজ্ঞ চালিয়ে যেত। কিন্তু দিন পালটে গ্যাছে। মিরাকল ঘটেছে ব্যাংকিং খাতে। Temenos, Flora Banking, Bexi Bank, Finnacle, eIBS এমন অস্যংখ্য Core Banking Software (CBS) ম্যানুয়াল যুগকে প্রতিস্থাপন করেছে Automated System এর মাধ্যমে। এখন ক্লোজিং মানেই পরের দিন Bank Holiday। আহা কি সুখ! ভাবা যায়। এই দিন বউ বাচ্চা নিয়ে ঘুড়তে যায় সবাই।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধার মাধ্যমে দুই চার ক্লিকেই সম্পাদন হচ্ছে লেনদেন। প্রত্যন্ত গ্রামের প্রান্তিক কৃষক হালচাষের ফাকেই জানতে পারছে তার কাছে টাকা এসেছে। সন্তানের বৃত্তির টাকা এক নিমিষেই পেয়ে যাচ্ছে পিতামাতা। Centralized সিস্টেমে, RM ভিত্তিক Sales Model এর আওতায় অনেক ব্যাংকের সেলস কর্মকর্তারা ও সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তারা ব্যাংকিং সেবা প্রদানের জন্যে প্রস্তুত হয়ে আছে। তাদের এই নেটওয়ার্ক সারাদেশে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা প্রদান ও সেবা প্রদানের প্রত্যয় নিয়ে সদা প্রস্তুত।
এবার আসি এরো একটু Advanced Digitization এর দিকে। বর্তমান বা আসন্ন সময়গুলি হবে পুরোপুরি প্রযুক্তি নির্ভর। যেহেতু Mobile Phone এখন মানবজীবনের অন্যতম অনুসংগ তাই আধুনিক ব্যাংকিং হবে বড় অংশে মোবাইল ভিত্তিক। গুগলের মাধ্যমে মানুষের সার্বিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে। স্যাটেলাইট ইউজ করে জনসংখ্যার উপস্থিতি কোথায় বেশি সেদিকে ব্যাংকগুলি মানবসম্পদকে নিয়োজিত করবে। CPV এর পরিবর্তে মোবাইল নাম্বার ও গুগল ম্যাপ দিয়ে একজন মানুষের প্রাত্যহিক অবস্থান নির্ণয় করা যাবে। গুগল ম্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে কোন কোন কোন শপিংপল, শপিংসেন্টার, পর্যটন কেন্দ্রে বেশি বেশি যাচ্ছে, কোন কোন হোটেল রেস্টুরেন্টে বেশি বেশি খেতে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যাবে মানুষ কোন দিকে ঝুকে পড়ছে, কোন কোন পন্যের মার্কেট ট্রেন্ড ভাল। ইন্ডাস্ট্রি এনালাইসিসও এখান থেকেই সম্ভব হবে।
আসল কথায় আসি। ধারনা করা হচ্ছে যে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই ব্যাংকিং খাতে আসবে মহাবিপ্লব,আসবে যুগান্তকারী পরিবর্তন। Artificial Intelligence (AI) ব্যাংকিং কর্মকান্ডের একটা বড় অংশ দখল করে নিবে। ব্যাক অ ফিসের অধিকাংশ কাজ হবে অটোমেটেড এই AI এর মাধ্যমে। এরই সুবাদে ধারনা করা হচ্ছে যে ৩০-৫০% লোক কর্মহীন হয়ে পড়ার ঝুকিতে আছে। AI এর সমকালীন যুগে ব্যাংকিং খাতে দুটি টিম কাজ করবে। এরা হলো-
১। Information Technology Team
২। Sales Team
মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন চ্যাটগ্রুপ, সোশ্যাল মিডিয়া, ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে গ্রাহকরা ঘরে বসেই বিভিন্ন ব্যাংকিং সুবিধা প্রাপ্তির আবেদন করবে। Sales Team তখন দিবে Door Step Service। কাস্টমাইজড সার্ভিস দিতে হবে গ্রাহকদের। ব্যাংকারদের বার্গেইনিং পাওয়ার থাকবে শূন্যের কোটায়। অথবা IVR, Voice Interfaces এর মাধ্যমে গ্রাহকরা ২৪/৭ তাদের সেবা গ্রহনের আবেদন করবে। চাইবে বুলেট গতির সেবা। এভাবে দিন যাবে ব্যাংকিং খাতে আসবে পরিবর্তন আর পরিবর্তন। শতভাগ ডিজিটাল প্লাটফর্ম আর ইনফ্রাস্ট্রাকচার থাকবে এই খাতের।
“তখন আমি বা আপনি ব্যাংকিং খাতের জন্য কতটুকু Relevant থাকবো?” এই খাতে চাকরি চালিয়ে যেতে চাইলে এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে থাকুন আজকে থেকেই। আর অতি কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো আপনাদেরও সময় এসেছে Business Process Re-engineering এর। নইলে আপনারাও মার্কেট Relevant থাকবেন কিনা ভেবে দেখুন!
কার্টেসিঃ শেখ রাজু
ভালো লিখেছেন, সময়ের চাহিদার যোগান নিশ্চিত করতে হবে।