হুন্ডি রোধে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে কড়াকড়ি
ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশঃ হুন্ডি রোধে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে কারণে গত তিন মাসে দেশে মোবাইল আর্থিক সেবার (MFS) সক্রিয় হিসাবে বড় ধরনের ওঠানামা করেছে।
মূলত চলতি বছরের এপ্রিলে MFS লেনদেনের সক্রিয় হিসাবে ছন্দপতন ঘটে। এরপর মে মাসে ঘটে বড় ধরনের পতন। তবে জুনে তা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছে। এভাবেই গত তিন মাসে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন ওঠানামা করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুনে বাড়লেও এটা সাময়িক। ঈদের কারণে লেনদেন বেড়ে থাকতে পারে। তবে পরবর্তী মাসগুলোতে আবার পতন ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজে হুন্ডি করা হচ্ছে। এতে রেমিটেন্সের পতন থামানো যাচ্ছে না। সে কারণে এমএফএসের ওপর নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী মাসগুলোতে লেনদেন কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিলে সক্রিয় এমএফএস হিসাব ছিল ২ কোটি ৫৫ লাখ, যা মে মাসে ২ কোটি ১৪ লাখে নেমে যায়। সেটি আবার গত জুনে বেড়ে ২ কোটি ৭৪ লাখ হয়েছে। অর্থাৎ মে মাসে ৪১ লাখ সক্রিয় হিসাব কমলেও সেটি জুনে আবার ৬০ লাখ বেড়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমএফএসের মাধ্যমে দেশে অবৈধভাবে প্রবাসী আয় (রেমিটেন্স) আসা ঠেকাতে ও প্রতারণামূলক কাজে এর ব্যবহার বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বেশকিছু কঠোর পদক্ষেপ নেয়। এ কারণে মে মাসে সক্রিয় হিসাব এক ধাক্কায় ২৭ শতাংশ কমে যায়। আর জুনে ছিল রোজার ঈদ।
এ সময়ে আর্থিক লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় নিষ্ক্রিয় অনেক হিসাব নতুন করে ব্যবহৃত হয়েছে, আবার একেবারে ১১ লাখ হিসাবও খোলা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন এমএফএস প্রতিষ্ঠানের ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ অর্থ ছাড়ের কারণেও সক্রিয় হিসাব বেড়েছে।
এমএফএস সেবাদাতা একটি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, ঈদ এলে সক্রিয় এমএফএস হিসাব সংখ্যা সব সময়ই বাড়ে, এবারও তাই হয়েছে। এর আগে প্রতারণার অভিযোগে বেশকিছু সক্রিয় অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে হয়েছে, সেটির প্রভাব মে মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে।
এমএফএসের মাধ্যমে অবৈধভাবে রেমিটেন্স আসা ঠেকাতে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় এমএফএসের লেনদেন সীমা কমিয়ে দেয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, একটি এমএফএস হিসাব থেকে একদিনে এখন সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা অর্থ উত্তোলন করা যায়, এটি আগে ছিল ২৫ হাজার টাকা। আর্থিক লেনদেনের সীমা কমে যাওয়ায় সক্রিয় হিসাব ব্যবহারের প্রবণতা আগের চেয়ে বাড়ছে বলে খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এমএফএসের মাধ্যমে গত জুনে দৈনিক লেনদেন গড়ে এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মে মাসে দৈনিক লেনদেনের গড় পরিমাণ ছিল ৮৪৪ কোটি টাকা, যা গত এপ্রিলে ছিল ৮৩৪ কোটি টাকা। জুনে এমএফএসে মোট আর্থিক লেনদেন হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা, মে মাসে এটি ছিল ২৬ হাজার কোটি টাকা।
সক্রিয় হিসাবের পাশাপাশি জুনে নিবন্ধিত এমএফএস হিসাবের সংখ্যা ১১ লাখ বেড়ে ৫ কোটি ৩৭ লাখ হয়েছে। একই সময়ে মোবাইল ফোনে কর্মীদের বেতন দেয়ার পরিমাণ বেড়েছে ৫৯ শতাংশ। জুনে এমএফএসের মাধ্যমে ৬৬৬ কোটি টাকা বেতন দেয়া হয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ৪১৯ কোটি টাকা।