সোনালী ব্যাংক এর ক্রেডিট কার্ড সমাচার
প্রণব চৌধুরীঃ ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড খুবই জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। ক্রেডিট কার্ড হলো একধরনের প্লাস্টিক মানি এবং এক ধরনের ঋণ ব্যবস্থা যাতে ব্যাংক, কার্ডের মাধ্যমে এর ব্যবহারকারীকে একটি নির্দিষ্ট লিমিট এর মধ্যে ঋণ প্রদান করে এবং কার্ডধারী ব্যক্তি ঐ সীমার মধ্যে শুধুমাত্র ঐ কার্ডটি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটা সহ নগদ উত্তোলন করে তার দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে পারেন। ফলে গ্রাহককে নগদ টাকা পকেটে নিয়ে ঘুরতে হয়না। শুধুমাত্র ঐ কার্ডটি পকেটে থাকলেই হয়ে গেল। তো কারা কিভাবে পাবেন সোনালী ব্যাংকের এই ক্রেডিট কার্ড? চলুন চট করে জেনে নেইঃ
কারা এই ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন?
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এ সঞ্চয়ী/ চলতি হিসাব থাকা সাপেক্ষে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও ব্যবসায়ীবৃন্দ, সরকারী স্কুল, কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/ কর্মকর্তা এবং সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা যাদের বেতন ভাতা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর শাখা থেকে বিতরণ করা হয় এবং যাদের বেতন ভাতা থেকে ক্রেডিট কার্ডের টাকা আদায় সম্ভব, আমাদের ব্যাংকের ডিপোজিট স্কীমসমূহ/ এফডিআর/ ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডধারী, এ ব্যাংকে সঞ্চয়ী/ চলতি হিসাব থাকা সাপেক্ষে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, শাখায় পরিচালতি রপ্তানীকারকের Exporter Retention Quota (ERQ) হিসাবের স্থিতির বিপরীতে, এ ব্যাংক থেকে অবসর গ্রহণকারী নির্বাহী/ কর্মকর্তা এবং সরকারী স্কুল, কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/ কর্মকর্তা ও সরকারী/ আধা-সরকারী/ স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হতে অবসরপ্রাপ্ত (যাদের পেনশন এ ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়ে থাকে) কর্মকর্তাবৃন্দ এই ঋণ নেয়ার জন্য বিবেচিত হতে পারবেন।
উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও বিশেষ বিবেচনায় কোন ব্যক্তিকে ক্রেডিট কার্ড ইস্যুর ক্ষমতা আমাদের মাননীয় এমডি স্যারের উপর ন্যস্ত আছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, সকল ক্রেডিট কার্ড আবেদনকারীর এ ব্যাংকে সঞ্চয়ী/ চলতি হিসাব এবং Valid e-TIN Certificate অবশ্যই থাকতে হবে।
কার ক্রেডিট লিমিট কত টাকা?
সরকারী স্কুল, কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/ কর্মকর্তা এবং সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নির্বাহী বা কর্মকর্তার/ পেনশনভোগীদের সর্বোচ্চ ৬ মাসের মূল বেতন/ ৬ মাসের মাসিক পেনশন এর সমপরিমাণ টাকা লিমিট হিসেবে; এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ২.২৫ লক্ষ টাকা লিমিট হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া ERQ হিসাবের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হিসাবের স্থিতি লিয়েন করা সাপেক্ষে তাৎক্ষণিক স্থিতির সর্বোচ্চ ৮০% যা সর্বোচ্চ ২৫.০০ লক্ষ টাকার বেশি নয় এবং আমাদের ব্যাংকের ডিপোজিট স্কীমসমূহ/ এফডিআর/ ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডধারীদের স্থিতি লিয়েন করে তাৎক্ষণিক স্থিতির সর্বোচ্চ ৮০% পর্যন্ত। এখানে উল্লেখ্য যে, উল্লেখিত সকল ক্ষেত্রেই বৈদেশিক মুদ্রা এনডোর্স করার সুবিধা রয়েছে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
ক্রেডিট কার্ড এর ধরনঃ
জানা হলো লিমিট সম্পর্কে। এবার জানব ক্রেডিট কার্ড এর ধরন সম্পর্কে। আমাদের সোনালী ব্যাংক ৩ ধরনের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে থাকেঃ
১. ৮.০০ লক্ষ টাকা ও তদুর্ধ্ব ক্রেডিট লিমিটধারীদের জন্য Visa Credit Platinum Card
২. ৪.০০ লক্ষ টাকা থেকে ৮.০০ লক্ষ টাকার নিচে পর্যন্ত ক্রেডিট লিমিটধারীদের জন্য Visa Credit Gold Card
৩. ৪.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট লিমিটধারীদের জন্য Visa Credit Silver Card.
ক্রেডিট কার্ড এর মেয়াদঃ
কার্ড ও ঋণের মেয়াদ ৫ বছর। সন্তোষজনক লেনদেন, চাকরীর মেয়াদ ও গ্যারান্টরের চাকরীর মেয়াদ বিবেচনায় নবায়ন করা যাবে।
আবেদনকারীর বয়স সীমাঃ
সর্বনিম্ন ১৮ বছর, বেতনভুক্তদের ক্ষেত্রে ৫৯ বছর, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ৬০ বছর/ সরকার নির্ধারতি বয়সীমা, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে ৬৫ বছর। উল্লেখিত বয়সসীমা উত্তীর্ণ হওয়া মাত্র ক্রেডিট সুবিধা বাতিল হবে।
আবেদন করতে যা যা লাগবেঃ
ক্রেডিট কার্ড এর আবেদন করার জন্য নিম্নোক্ত কাগজপত্রাদি আবশ্যকঃ
• ঋণের আবেদনপত্র
• আবেদনকারীর সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের ১ কপি সত্যায়িত ছবি
• শাখা/ প্রতিষ্ঠান/ বিভাগীয় প্রধানের সুপারিশ সহ NOC
• বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র/ পাসপোর্টের সত্যায়িত কপি
• বৈধ e-TIN সার্টিফিকেট এর সত্যায়িত কপি
• হালনাগাদ বেতন ভাতার বিবরণী
• লেটার অব অথরিটি (ঋণ পরিশোধে গ্রাহকের বেতন ভাতা, উৎসব বোনাস, উৎসাহ বোনাস, ছুটি নগদায়ন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, আনুতোষিক, পেনশন ইত্যাদি থেকে ঋণের সমুদয় পাওনা আদায় করা যাবে মর্মে ব্যাংকের অনুকূলে ঋণ গ্রহীতা কর্তৃক সাদা কাগজে প্রদত্ত ক্ষমতা অর্পন পত্র)
• লেটার অব গ্যারান্টি
• গৃহীত ঋণ সম্পর্কে আবেদনকারীর ঘোষণা পত্র
• ব্যাংকের নিকট গ্রহণযোগ্য ২ জন ব্যক্তির (আবেদনকারীর ঊর্ধ্বতন) রেফারেন্স এবং ঋণের ঘোষণাপত্র
• সিআইবি রিপোর্ট সংগ্রহকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ফরম
• ঋণ মঞ্জুরীর জন্য শাখার সুপারিশসহ Forwarding
• পেনশনারদের ক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর পেনশন প্রদানকারী শাখা প্রধান কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র
• নমিনী গ্যারান্টর হিসেবে থাকবেন মর্মে অঙ্গীকারনামা
• ডিপোজিট স্কীমের ক্ষেত্রে শাখা ব্যবস্থাপক কর্তৃক লিয়েন মার্কের প্রত্যয়নপত্র, Letter of Lien, F-198, F-195
• ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে Valid Trade License, VAT Certificate, Bank Statement এবং আমাদের ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার বা তদুর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত ব্যক্তিগত গ্যারান্টি, ১টি চেক এর পাতা, Letter of Undertaking ও অন্যান্য প্রযোজ্য ডকুমেন্টসমূহ।
আরও পড়ুন:
◾ সোনালী ব্যাংক ই-সেবা মোবাইল অ্যাপ
◾ সোনালী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং
◾ সোনালী ব্যাংক সরকারি কর্মচারী গৃহ নির্মাণ ঋণ
মনে রাখতে হবে যে, এ ধরনের ঋণের জন্য শাখায় কোন হিসাব খুলতে হবে না। যাবতীয় হিসাবায়ন কেন্দ্রীয়ভাবে কার্ড ডিভিশন কর্তৃক করা হবে।
ক্রেডিট কার্ড এর সুদের হারঃ
ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশের যেকোন ব্যাংকের তুলনায় আমাদের ব্যাংকের সুদ হার সর্বনিম্ন এবং তা মাত্র ১৬% (Daily Product)। মঞ্জুরীকৃত ঋণসীমার ১০০% POS থেকে কেনাকাটা করা যাবে। এটিএম থেকে ৫০% নগদ উত্তোলন করা যাবে। POS এ লেনদেন এর ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মোট লেনদেনকৃত অর্থ পরিশোধ করলে কোন সুদ আরোপ হবে না। এই সীমা সর্বোচ্চ ৫০ দিন। তবে সম্পূর্ন বকেয়া পরিশোধ না করলে Outstanding এর উপর সুদ আরোপ হবে এবং সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত পরবর্তী কেনাকাটায় সুদ আরোপ হবে।)
ক্রেডিট কার্ড এর বাৎসরিক ফিঃ
• Visa Credit Platinum ২৫০০/- + ভ্যাট
• Visa Credit Gold ১৭০০/- + ভ্যাট
• Visa Credit Silver ৮০০/- + ভ্যাট।
তবে যেহেতু ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডধারীদের কার্ডের মাধ্যমে এক ধরনের ঋণ প্রদান করছে সুতরাং ঋণের বিপরীতে টাকা পরিশোধের একটা ব্যাপার চলে আসে। কিভাবে সে টাকা পরিশোধিত হবে? কার্ডগ্রহীতাকে মাসিক ভিত্তিতে ন্যূনতম প্রদেয় হিসেবে টাকা পরিশোধ করতে হবে। এই প্রদেয় টাকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে। সে হিসাবায়নটি নিম্নরূপঃ
• কার্ডধারীর মোট বকেয়ার ৫% অথবা ৫০০ টাকা যেটি বেশি।
ক্রেডিট কার্ড এর EMI সার্ভিসঃ
• নির্দিষ্ট মার্চেন্ট এর থেকে কেনাকাটায় মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬ মাস মেয়াদে কার্যকর হবে
• একাধিক কেনাকাটার ক্ষেত্রেও EMI সার্ভিস প্রযোজ্য হবে
• সর্বনিম্ন ২০,০০০/- পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে।
ক্রেডিট কার্ডের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্যঃ
সবশেষে আমাদের সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর ক্রেডিট কার্ডের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য জেনে নেই চলুন। বাজারে এত ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড থাকতে আপনি কেন আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের প্রতি আকৃষ্ট হবেন? কারণঃ
• ২৪/৭ ঘন্টা সার্ভিস
• কোন হিডেন চার্জ নেই
• অত্যন্ত নিরাপদ
• কেনাকাটায় সর্বোচ্চ ৫০ দিন পর্যন্ত কোন সুদ আরোপ করা হয় না
• বাংলাদেশের যেকোন ব্যাংকের তুলনায় সর্বনিম্ন সুদ হার
• অনলাইনে ভ্যাট, ট্যাক্স প্রদান করা যায়
• ডুয়েল কারেন্সি সুবিধা
• EMI সুবিধা
• মোবাইল ফোন রিচার্জ সুবিধা
• বাংলাদেশের যেকোন এটিএম বুথ থেকে লিমিটের মধ্যে ৫০% নগদ উত্তোলন সুবিধা
• লিমিটের মধ্যে ১০০% POS লেনদেন এর সুবিধা
• POS লেনদেন এর সুবিধা সম্বলিত শপিং আউটলেট, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদিতে ব্যবহার করা যায়
• সোনালী ব্যাংক NPSB এবং Visa এর সদস্য হওয়ায় সকল ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন ও POS এ কেনাকাটা করা যায়
• সাপ্লিমেন্টারী কার্ড ইস্যু করা হয়
• এটিএম বুথ থেকে হিসাব বিবরণী এবং মিনি স্ট্যাটমেন্ট পাওয়া যায়
• পিন নম্বর পরিবর্তন করা যায়
• এক দিনে সর্বোচ্চ ৪ বার কার্ড ব্যবহার করা যায়।
লেখকঃ প্রণব চৌধুরী, ম্যানেজার, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, গোলাপগঞ্জ শাখা, সিলেট।
Gold credit card