বিবিধ

শিফটিং ডিউটি এখন সম‌য়ের দাবি!

শিফটিং ডিউটি এখন সম‌য়ের দাবি! আজ থেকে ১৩৩ বছর আগে আট ঘন্টার কাজের দাবীতে আর্বিভাব মে দিবস। সেই থেকে আন্তর্জাতিকভাবে চালু হয়ে গেছে আট ঘন্টা শ্রম বিক্রি করা। এটা শুধু গায়ে গতরে খাটা শ্রমিকদের জন্য নয়, সব ধরনের শ্রমিকদের জন্য। বিজ্ঞানী হোক, বুদ্ধিজীবি হোক, বিমানচালক হোক, কর্পোরেট অফিসার হোক, রিক্সা চালক হোক, যে কোনো কাজ করা প্রতিটি সক্ষম মানুষই শ্রমিক।

১৩৩ বছর আগে আট ঘন্টা খেটে একজন শ্রমিক যে পরিমান উৎপাদন করত, এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার চেয়ে হাজার হাজার গুন বেশি উৎপাদ করে। তাহলে এই সুপার প্রযুক্তির যুগে আট ঘন্টা শ্রম দেয়া কতটা যৌক্তিক?

আরও দেখুন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সার্কুলার

দিনে আট ঘন্টা আপনি খেতে পারেন না, আট ঘন্টা পান করতে পারেন না, আট ঘন্টা হাঁটতে পারেন না, আট ঘন্টা ছবি দেখতে পারেন না, আট ঘন্টা প্রেম করতে পারেন না। অথচ আট ঘন্টা ধরে আপনাকে কাজ করতে হচ্ছে! এত কাজ করতে হয় বলে মানুষ নিজের মতো করে অসুখী এবং অন্যকে এত অসুখী করে তুলছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

এখনকার সময়ে মানুষের জীবনযাত্রা বেশ জটিল এবং প্রযুক্তির কল্যাণে এবং ভেজাল খেয়ে গায়ে গতরে অশক্ত। শ্রম ঘন্টা যদি কম হতো মানুষ নি‌জের স্বা‌স্থ্য রক্ষায় সময় দি‌তে পারত। জীবন আরও উপভোগ্য হতো। তারা নিজেকে,পরিবারকে ও সমাজকে সময় দিতে পারত। স্বাস্থ্য ও প্রাণ-প্রাচুর্যে তাদের জীবন থাকত ভরপুর। জীবন-জীবিকার তাগিতে এত উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে-রোগ শোকে ভুগতে হতো না। রস-কষহীন যন্ত্র বা অনুভুতিহীন-নির্লিপ্ত মানুষ হয়ে উঠত না। তাদের দেহে সত্যিকারের প্রাণ থাকত।

হয়তো মানুষ ধীরে ধীরে আগাতো। অনেকে হয়তো বলবে- ‘মানুষ আট ঘন্টা কাজ করে বলে সভ্যতা এই পর্যায়ে এসেছে।’ এসে হয়েছেটা কী? সমস্যা কমেছে? লাখ লাখ মানুষ তার তার জায়গা থেকে সমস্যা সমাধানের কাজ করছে। কিন্তু নতুন নতুন সমস্যা আবার সৃষ্টি হচ্ছে। এটা প্রাচীন প্রাণী হাইড্রার মতো। যার একটা মাথা কাটলে দশটা মাথা গজায়।

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘দুর্দান্ত গতিতে চলাকেই য়ুরোপে উন্নতি কহে আমরাও তাহাকে উন্নতি বলিতে শিখিয়াছি। কিন্তু যে চলা পদে পদে থামার দ্বারা নিয়মিত নহে, তাহাকে উন্নতি বলা যায় না। যে ছন্দে যতি নাই, তাহা ছন্দই নহে।’

আজ অর্থ থাকলেও আমরা অসুখী। তাই এখন ভেবে দেখার সময় হয়েছে- শুধু আর্থিক উন্নতি এবং মালিক পক্ষের দ্রুত অর্থের পাহাড় গড়তে গিয়ে আমরা আমাদের আত্মিক, সামাজিক ও আনন্দময় জীবন হারিয়ে ফেলব নাকি পরিপূর্ণাঙ্গ জীবন চাইব? আমার বিশ্বাস শ্রমঘন্টা আট ঘন্টার পরিবর্তে ছয় ঘন্টা করে ‘শিফটিং ডিউটি’ হলে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেত! জীবন হতো আরও সুখী, আরও আনন্দময়!

আমাদের দেশ যেহেতু একটা উন্নয়নশীল দেশ, শুধু ছয় ঘন্টা খাটলে আমরা এই মুহূর্তে অন্য জাতি থেকে পিছিয়ে পড়ব। সেই ক্ষেত্রে আমরা কল-কারখানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৬ ঘন্টা করে শিফটিং ডিউটি চালু করতে পারি। সকাল ৮ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এক শিফট, ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আরেক শিফট। এ‌তে ব্যক্তি পর্যায়ে শ্রমঘণ্টা হয়‌তো কমবে কিন্তু মোট শ্রমঘণ্টা বাড়বে।

এর পজেটিভ দিকগুলো ভাবা যাক-
১. দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে, বেকারত্ব কমবে।
২. কল-কারখানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ও সেবা বাড়বে। মুনাফাও বাড়বে।
৩. একজন শ্রমিক টানা ৮ ঘন্টা ক্ষেত্র বিশেষে ১০ ঘন্টা শ্রম দিলে সে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, বিভিন্ন রোগে ভোগে। ফলে জাতীয় স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ে। ধীরে ধীরে পুরো জাতি একটা অথর্ব-পঙ্গু জাতিতে পরিনত হবার আশংকা থাকে। শিফটিং ডিউটি এ আশংকা থেকে মুক্তি দেবে।

৪. আমাদের দেশের পরিবারগুলোর গঠন এমন যে, একজনের উপর ৬-৭ জন নির্ভরশীল। শিফটিং ডিউটির মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়লে পরিবারের সদ্য যুবক ছেলেটিও নিজের পায়ে দাড়াতে পারবে। এতে পরিবারের কর্তার উপর চাপ কম পড়বে।
৫. অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে এখন যে কোন পণ্য ও সেবার উৎপাদন হাজার হাজার গুণ বেশি। ফলস্বরূপ এখন সব কোম্পানির কাছে পণ্য ও সেবা আছে। এগুলো বিক্রি করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু পরিবারের শুধু একজন ‘ইনকাম মেম্বার’ তার আয় দিয়ে কত আর পণ্য ও সেবা কিনবে?তার ক্রয় ক্ষমতা কম। কিন্তু সমা‌জের বেশি লোক উপার্জন করলে বেশি পণ্য ও সেবা বিক্রয় হওয়া সম্ভব।

৬. আজকাল প্রায়ই শোনা যায়- বাবা-মা ছেলে-মেয়েদেরকে সময় দিতে পারে না। এজন্য ছেলে-মেয়েরা উচ্ছন্নে যায়। শিফটিং ডিউটি চালু হলে বাবা-মা ছেলে-মেয়েদেরকে মানুষ করতে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারবে। এমনকি মা যদি কর্মজীবি হয়, পর্যায়ক্রমে বাবা-মা ছেলে-মেয়েদেরকে দেখা-শোনা করতে পারবে। দিবা কেন্দ্র বা শুধু কাজের বুয়ার হাতে ছেলে-মেয়েদেরকে ছেড়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না। এমনকি এতে বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজনও কমে যাবে।
৭. পুঁজিবাদের মূল চালিকা শক্তি হলো-ভোগ। ৬ ঘন্টা করে শিফটিং ডিউটি চালু হলে– বাকী সময়ে ওয়ার্কারদের কেনাকাটা, ভ্রমন, অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নেয়া ইত্যাদি বাড়বে এবং অর্থনৈতিক চাকা আরও সচল হবে।

৮. আট ঘণ্টা শ্রমে শুভঙ্করের ফাঁকিও আছে। খুব কম লোক‌কেই দেখা যায় টানা আট ঘণ্টা পূর্ণ মনোযোগ ও উদ্যমের সাথে কাজ করতে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশির ভাগ কর্মী শেষের দিকে ধীরগতিতে কাজ ক‌রে, কলিগের সাথে বেহুদা আলাপে সময় নষ্ঠ ক‌রে কিংবা নানা উ‌সিলায় আজ‌কের কাজ আগামী দি‌নের জন্য ফে‌লে রা‌খে। যেখানে একজন যুবক কাজের অভাবে দ্বা‌রে দ্বা‌রে ঘুরছে, সেখানে একজন কাজ পেয়ে সময় নষ্ট করছে! একে জাতীয় শ্রমঘণ্টার অপচয় ছাড়া কি বলা যায়? য‌দি স্ট্রং মনিটরিংয়ের মাধ্যমে কর্মীদের টানা ছয় ঘণ্টা কাজ করানো ‌যায়, তাহ‌লে‌ তার কাজের প্রডাক্টিভিটি আট ঘন্টার প্রডাক্টিভিটির সমান বা বেশি হ‌বে। শ্রম ঘন্টার অপচয়ও রোধ হ‌বে।

৯. যেহেতু আমাদের ভূমি কম, এই স্বল্প ভূমি আমাদেরকে প্রোপার ইউজ করতে হবে। জায়গা স্বল্পতার কারণে ঢাকা শহর যেমন উপরের দিকে বাড়ছে, তেমনি উৎপাদন ও‌ সেবা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত কল-কারখানা, হাসপাতাল, স্কুল বা কর্পোরেট অফিস নির্মাণ করার জন্য জায়গা খুঁ‌জে বেড়ানোর দরকার নেই। এতে চাষাবাদ ও বসবাসের জায়গা কমে। বরং এগু‌লো ম‌ধ্যে দু‌’শিফ‌টে কাজ চালিয়ে উৎপাদন বাড়ানো উচিত। তাতে এদের Proper এবং Incentive ইউজ হবে।

১০. ইতোমধ্যে যেসব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, কলকারখানা শিফটিং ডিউটি চালু করেছে তারা এর সুফল পাচ্ছে। একই প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা ব্যবহার ক‌রে বেশি পরিমানে সেবা এবং পন্য উৎপাদন করতে পারছে।

পরিশেষে বলা যায়, এককভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কলকারখানা শিফটিং ডিউটি চালু করে খুব একটা লাভবান হবে না। এজন্য দরকার সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা। আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের জাতীয় উন্নয়নের কৌশল হবে-শিফটিং ডিউটি। সর্বাঙ্গিন মঙ্গল হোক মেহনতি মানুষের!

কার্টেসিঃ এ. এস. রিপন, ব্যাংকার- এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button