অর্থনীতি

রিকশাওয়ালাও অর্থনীতি বোঝে (রম্য গল্প)

অর্থনীতি একটি জটিল সাবজেক্ট। কখনই ভালো বুঝতাম না। চাহিদা, যোগান, উৎপাদন, ভোগ, সঞ্চয়, দাম, দর, মূল্য, মূল্যষ্ফীতি, মুদ্রা সংকোচন শব্দগুলো বুঝতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলি বারবার।

একদিন ক্লাসে স্যার বললেন, রিকশাওয়ালাও অর্থনীতি বোঝে – চাহিদা বেশি থাকলে রিকশার ভাড়া বাড়াতে হবে আর চাহিদা কম থাকলে ভাড়া কম হলেও খ্যাপ মারতে হবে বেশি সেটা ওদের জানা আছে।

রিকশাওয়ালা! বেচারা পরিশ্রম করে খায় – আমরা মনে করি ওদের পরিশ্রমের আয় ১০০% হালাল। তবে ওদের কিছু কিছু চতুরতা দেখে সেই বিশ্বাসটা ফিকে হয়ে যায়।

একদিন বাড়ি থেকে গাজীপুর আসি, সাথে বৃদ্ধা মা। গাড়ি আমাদের ব্যাংকটার সামনে নামিয়ে দিল। বাসায় ফিরতে রিকশা ডাকলাম। কিন্তু বাহাদুরেরা বিশ টাকার ভাড়া চায় ষাট টাকা। জানতে চাইলাম কেন? ভাড়া বেশি কেন? ওরা জবাব দিল: এমনিই। পোসাইলে যাইবেন, না পোসাইলে না যাইবেন। অগত্যা অনেক বলে কয়ে পঞ্চাশ টাকা ভাড়া দিয়ে বাসায় ফিরলাম।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

বড় বোন ক্যান্সারের রোগি। মাঝে মাঝেই ঢাকায় নিতে হয় মহাখালী জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালে। একদিন যথারীতি হাসপাতাল থেকে ফিরছি। বাইপাস পর্যন্ত গাড়ি ভালভাবে এলেও তারপর যেন গাড়ির আর নড়নচড়ন নাই। সে যেন এক ঐতিহাসিক যানজট! অগত্যা অসুস্হ বোনকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম। রিকশা ডাকলাম। কিন্তু মহারাজারা ত্রিশ টাকার ভাড়া চাচ্ছে একশত টাকা। অসুস্হ বোনকে নিয়ে আর দরকষাকষি করতে চাইলাম না। একশত টাকা দিয়েই বাসায় ফিরলাম।

গাজীপুর চৌরাস্তা শাখায় দুই সহকর্মী একসাথেই যাতায়াত করতাম, একই বাসায় ভাড়া থাকার সুবাদে। অফিস শেষে রাত আটটা বা নয়টায় যখন বাসায় ফিরতাম, ক্লান্তিতে পা যেন চলতো না। মাঝে মাঝে রিকশা ডাকলে পাওয়া যায় না। ওরা বাবুর মতো রিকশায় বসে থাকবে অথচ আমাদের কথায় কর্ণপাত করবে না।

ওরা অন্য কোথাও খ্যাপ মারতে নারাজ। শুধু কিছু নিশাচর নিকৃষ্ট প্রানীর বিভিন্ন অবৈধ্য গন্তব্যে যেতে সহযোগিতা করতে খ্যাপ দিতে চাতক পাখির মতো এদিক ওদিক চায় – এক জোড়া জানোয়ারের খ্যাপ দিলেই ওদের সারা দিনের আয় রোজগার হয়ে যায়।

আমাদের সামনেই ওরা জানোয়ারগুলোকে রিকশায় চড়ায় অথচ আমাদের রিকশায় চড়াবে না। অগত্যা দুই সহকর্মী খেদক্তি করতে করতে হাঁটা দিতাম।

জীবন চলার পথে আরো হাজারো অভিজ্ঞতা রয়েছে সবার…….আপনার যখন প্রয়োজন নেই তখন রিকশাওয়ালারা স্যার যাবেন বলে ডাকবে আর যখন আপনার প্রয়োজন তখন ওদের দুলাভাই বললেও যেতে আগ্রহী নয়। ওরা ন্যায্য ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুন তিনগুন ভাড়া আদায় করতে জানে অর্থনীতি না পড়েই।

ওরা অর্থনীতি জানে বলেই আপনার চাহিদা বেশি দেখলে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় আর আপনার চাহিদা না থাকলে স্যার স্যার করে মুখে ফেনা তুলে ফেলবে……..অবশ্য এদের ব্যতিক্রমও কিছু কিছু রিকশাওয়ালা আছে আমাদের সমাজে।

কার্টেসিঃ বেলাল হোসেন ফকির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button