ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার কোথায় কোথায় জরুরী-৩
মুহাম্মদ শামসুজ্জামানঃ ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার কোথায় কোথায় জরুরী – পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য হলো বিনিয়োগ কার্যক্রমের মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলের কৃষি ও অকৃষি খাত সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থান ও আয়বর্ধক খাতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনিয়োগ প্রদান, বিনিয়োগ কার্যক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মহিলাদের সরাসরি উৎপাদনে সম্পৃক্তকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার বিস্তার, দৈনন্দিন জীবনমান, প্রান্তিক চাষী, ভূমিহীন, দরিদ্র ও শ্রমজীবী নারী ও পুরুষকে ধীরে ধীরে স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য অব্যাহত বিনিয়োগ সহায়তা প্রদান এবং মহাজনি ও চড়া সুদে টাকা লগ্নি ইত্যাদি শোষণমূলক ব্যবস্থার অবসান ঘটানো।
ইসলামী ব্যাংকের আরডিএস নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ প্রকল্পের অধীনে গ্রাহকরা বিনা জামানতে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫০ হাজার (বিশেষ ক্ষেত্রে ৩ লাখ) টাকার বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। মৎস্য চাষ, কৃষি যন্ত্রপাতি, সেচ যন্ত্রপাতি, প্রাণিসম্পদ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন, নার্সারি ও উদ্যানভিত্তিক বাণিজ্যিক উৎপাদন, গ্রামীণ পরিবহন, গ্রামীণ বেকার যুবক এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থান এবং আয়ের উৎপাদক কার্যক্রমের জন্য বিনিয়োগ প্রদান করে থাকে। তাছাড়া পল্লী আবাসনের জন্য এ প্রকল্পের আওতায় এইচপিএসএমের মাধ্যমে বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করা হয়। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের শিক্ষা সেবা এবং নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও মেডিকেয়ার সুবিধা প্রদান করা। পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র, ভূমিহীন, শ্রমজীবী ও গরিব চাষীদের সংঘবদ্ধ করে তাদের মধ্যে পুঁজি বিনিয়োগ, নৈতিক, ধর্মীয় ও নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট কাজে প্রযুক্তিজ্ঞান ও দক্ষতা লাভে সহায়তা বা উৎসাহিত করা। গ্রামীণ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাতে ইসলামী ব্যাংকের আরডিএস প্রকল্প সরাসরি ভূমিকা রাখছে। আরডিএসের ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কার্যক্রম পল্লী অঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলের বস্তি এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। শহরাঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনা এবং গ্রামাঞ্চলে বিপুল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামী ব্যাংক প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে, যা দেশের দারিদ্র্য নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
আরও দেখুন:
◾ ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার কোথায় কোথায় জরুরী-২
আরডিএস ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৬৪টি জেলার ৩২ হাজার ৬৩৮টি গ্রামে ব্যাংকের ৩৩৭টি শাখা ও ১৭টি উপশাখা মিলিয়ে মোট ৪১ হাজার ৪৯২টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সদস্য সংগঠিত করে ক্ষুদ্র আর্থিক সেবায় এনেছে প্রায় ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৪৩ পরিবারকে। যার মধ্যে ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৮৯২ জন সরাসরি আরডিএস থেকে বিনিয়োগ নিয়েছেন, যার মধ্যে ৯২ শতাংশ নারী। বর্তমানে এ প্রকল্পের বিনিয়োগ স্থিতি ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত, জামানতবিহীন ঋণগ্রহীতাদের পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস, দুর্নীতিমুক্ত ঋণ বিতরণ ও আদায় ব্যবস্থার ফলে আদায়ের এ উচ্চ হার বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকের নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আরডিএসের এ বিনিয়োগ কার্যক্রম আরো ১০-১২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
এত দ্রুত এই প্কল্পটি এত বিস্তৃত ও বর্ধিত হবে সম্ভবতঃ ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষও তা ভাবেন নি। তাহলে এটাকে BRAC এর মতো আলাদা সাবসিডিআরী সংগঠন হিসাবে গড়ে তুলতে পারতেন। বাংলাদেশে যুগপৎ ব্যাংক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগ একসাথে কারোই নেই এবং কোন বানিজ্যিক ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে না। কেননা এর যে ব্যয় তা মূনাফা থেকে উঠে আসে না। সাবসিডিয়ারী হলে তার বেতন কাঠামো, পদ সোপান ও প্রমোশান ক্রাইটেরিয়া ভিন্ন হতো এবং তাতে কোন আপত্তি উঠতো না। কিন্ত ইসলামী ব্যাংকে শুরু থেকেই এটি মূল ব্যাংকের সাথে একীভূত এবং মূল ব্যাংকের জনশক্তিই তা পরিচালনা করে। মজার ব্যাপার হলো, এটি ব্যাংকের ভিতরে যেন আরেকটি ব্যাংক যার বেতন কাঠামো, পদ সোপান ও প্রমোশান ক্রাইটেরিয়া ব্যাংকের চেয়ে আলাদা। একই যোগ্যতায় ব্যাংকের লেটারেল এন্ট্রির লোকেরা বেতন তুলেন ২৮,০০০/- টাকা এবং কনফারমেশান হলে তুলেন ৩৯,০০০/- সেখানে আরডিএসের লোকেরা একই সময়ে পান যথাক্রমে ২০,০০০/- টাকা ও ২২,২০০/- টাকা।
এরপর তাদের সি. ফিল্ড অফিসার হলে মূলধারার ব্যাংকে সি. অফিসার হিসাবে আত্তীকরনের সূযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি আরডিএস থেকে আরডিএসে প্রমোশানের হারও নিন্মতম পর্যায়ে নিয়ে আসা হয় ফলে মাঠ পর্যায়ে এমন বহু অফিসার আছেন যারা গত এক দশকেও প্রমোশানের মুখ দেখেননি। এক সময় এরা গৃহনির্মাণ বিনিয়োগ সুবিধা পেতো, তাও বিনা নোটিশে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের অধীন অনেক সামাজিক কল্যাণমূখী কার্যক্রম যেমন- বৃক্ষরোপণ, শিক্ষাবৃত্তি ইত্যাদি এখন হ্রাস করতে করতে প্রায় বন্ধই আছে।
একটি প্রসংগ উল্লেখ না করলেই নয় যে বঞ্ছিত লোকজন সুবিচার পাবার আশায় উপায় না পেয়ে আদালতের শরনাপন্ন হয়, রিট ফাইল হয় এবং নিয়ম মতে শুনানী শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক এর বেঞ্চ আদালত গত ২২ নভেম্বর, ২০২৩ আরডিএস জনবলের বেতন কাঠামো বিআরপিডি ০২ তারিখ ২০ জানুয়ারী ২০২২ অনুসরনের নির্দেশ প্রদান করেন। সার্কুলার অনুযায়ী প্রবেশন পিরিয়ডে তাদের নূন্যতম বেতন ২৮,০০০/- এবং কনফার্মেশন এর পরে বেতন ৩৯,০০০/- দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে অথচ তাদেরকে বর্তমানে দেয়া হচ্ছে প্রবেশন পিরিয়ডে বিশ হাজার এবং কনফার্মেশন এর পর ২২,২০০/- এতোদিনেও আদালতের এ সিদ্ধান্ত ব্যাংক কার্যকর করতে পারেনি অথবা ইচ্ছা করেই তা করে নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় আশাকরি ব্যাংক অবিলম্বে তা কার্যকর করতে বাধ্য হবে।
অদূর ভবিষ্যতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আরডিএস কে পৃথক সাবসিডিআরী করে পরিচালনা করলে এর বিস্তৃত কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রনে তার বাঞ্চিত লক্ষ্য অর্জনে আরো এগিয়ে যাবে। চতুর্থ পর্ব আগামীকাল ইনশাআল্লাহ।
লেখকঃ মুহাম্মদ শামসুজ্জামান [সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি]