ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার কোথায় কোথায় জরুরী-৪
মুহাম্মদ শামসুজ্জামানঃ ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার কোথায় কোথায় জরুরী – ইসলামী ব্যাংক গত সরকারের সময়ে সবচেয়ে বড়ক্ষতি করেছে মতিঝিলে নিজের কেনা জমি ব্যাংকটিকে অবৈধ সুবিধা দিবার প্রতিশ্রুতিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নামমাত্র মূল্যে হাদিয়া দিয়েছে আবার অপ্রয়োজনে ব্যাংকের জন্য বড়ডিলে ভাড়া চুক্তি সম্পাদন করেছে।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি তার প্রধান কার্যালয়ের ভবন তৈরির জন্য রাজধানীর মতিঝিল এলাকার সেনাকল্যাণ ভবনের পাশে ৭০ দশমিক ৮২ শতক জমি কিনেছিল। এখন সেই জমি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকটি। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের খরচ হয়েছে ১১০ কোটি টাকা মাত্র। জমিটি বাংলাদেশ ব্যাংক-সংলগ্ন এবং জমির ঠিকানা ১৯৬, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা। বর্তমানে এই জমির বাজার মূল্য কমপক্ষে ৮০০ কোটি টাকার মতো।
আরও দেখুন:
◾ ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার কোথায় কোথায় জরুরী-৩
বাংলাদেশ ব্যাংক এমন এক সময়ে এই জমি কিনেছিল, যখন সংকটে পড়ে ইসলামী ব্যাংককে প্রতিনিয়ত তারল্য সহায়তা নিতে হয়েছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে নীতি ছাড়ও পেয়েছে ব্যাংকটি। বিশেষ সুবিধার আওতায় তারল্য জোগানও দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তখনকার মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘অনেক আগে থেকেই ইসলামী ব্যাংকের এই জমি কেনা নিয়ে আলোচনা চলছে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। জমি কেনা সম্পন্ন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের বর্ধিত ভবন নির্মাণ হবে এই স্থানে।’
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের জমিটি কিনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎপরতা নতুন ছিল না। অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালেই এ নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। তখন এক রকম দরদামও ঠিক করা হয়েছিল। তবে ইসলামী ব্যাংক তখন জমিটি ছাড়তে রাজি ছিল না। এরপর নানা সময়ে আলোচনা হলেও সায় দেয়নি ব্যাংকটি।
সূত্রগুলো জানায়, আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর পদে যোগ দেওয়ার পরই এ নিয়ে তৎপরতা বাড়ান। এ সময় ব্যাংকটিও নানা সমস্যার মধ্যে পড়ে। ফলে ব্যাংকটির মালিকপক্ষ জমিটি ছেড়ে দিতে বলে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই জমির দলিল সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে ব্যাংকটিকে জমির দাম পরিশোধ করে দিয়েছে।
জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘প্রধান কার্যালয়ের ভবন তৈরির জন্য আমরা জায়গাটি কিনেছিলাম। সেটা প্রায় ২০ বছর আগে। জায়গাটি বাংলাদেশ ব্যাংক-সংলগ্ন। বাংলাদেশ ব্যাংক তা কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করায় তাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। ’সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে যে বাংলাদেশ ব্যাংককে খুশি করতেই এমন বেচাকেনা হয়েছে।
অন্যদিকে এই স্থাপনার বিপরীতে গুলশানের ৯৫ নম্বর সড়কে ১৮ তলা একটি বানিজ্যিক ভবন ভাড়ায় ব্যবহারের জন্য চুক্তি করেছে বলে জানা গিয়েছে যার প্রতি বর্গফুট ২৫০/- টাকা এবং অগ্রিম ভাড়া ৫০৫ কোটি টাকা। ৪১ দিলকুশার বর্তমান ভবনটিও ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব ভবন। এর বাইরেও হেড অফিসের ব্যবহারের জন্য মতিঝিল ও দিলকুশায় আরো বহু ভবন ভাড়ায় ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিজ্ঞজনের মনে করেন শুধু অগ্রিম টাকার অংকে যেখানে মতিঝিলেই একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা যায় সেখানে এই অন্তিম সময়ে ভাড়া চুক্তির নামে আরেকটি অর্থ পাচার নয় তো?
এমন এক সময়ে সম্পদ ও অভিস ভবন ভাড়ার এই চুক্তিটি হলো যখন ব্যাংক সামগ্রিকভাবে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ইসলামী ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি ক্রমাগত কয়েক বছর খারাপ চলছে। এ সময়ে ব্যাংকে যে পরিমাণ আমানত জমা হয়েছে, তারা এর চেয়ে অনেক বেশি ঋণ বিতরণ বা বিনিয়োগ করেছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে থাকা ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি আরও বড় আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ বিবেচনায় ব্যাংকটিকে জামানত ছাড়াই টাকা ধার দিচ্ছে এবং লেনদেন হিসাব চালু রেখেছে। এ কারণেই মূলত নতুন ঋণ দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে ব্যাংকটি। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে ঋণের দেনা ক্রমাগত বৃদ্ধিই পাচ্ছে।
বলাবাহুল্য যে, গুলশানে ইসলামী ব্যাংকের শাখা ব্যতীত আর কোন কার্যক্রম নেই। এমতাবস্থায় মতিঝিলে বাকী সব কার্যক্রম অব্যাহত রেখে গুলশানের এই ভবনের সাথে যোগাযোগ তেমন কোন সুবিধা দিবে বলে মনে হয়না। তদুপরি ব্যাংকের এমন ক্রান্তিকালে এতো উচ্চ ভাড়ায় এমন চুক্তির পিছনে কোন মালিক স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে বলে অভিজ্ঞ ব্যাংকারগণ মনে করেন। ইসলামী ব্যাংকের গত চার দশকের ইতিহাসে এটাই ভবন ভাড়ার সবচেয়ে বড় ডিল।সে হিসাবে বোর্ড মেম্বারগণের সরাসরি ভাড়ার দর যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল কিনা, বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথ অনুমোদন দিয়েছিল কিনা এবং কোন যৌক্তিকতায় এমন উচ্চ ভাড়ায় দীর্ঘ মেয়াদে একটি ৫.৬২ লক্ষ স্কয়ার ফুটের ভবন নিতে হবে তাও দেখা প্রয়োজন বলে অনেকে মনে করেন। পরবর্তী পর্ব আগামীতে আসবে ইনশাআল্লাহ।
লেখকঃ মুহাম্মদ শামসুজ্জামান [সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি]