পেনশনার সঞ্চয়পত্র কী? কিভাবে কিনবেন পেনশনার সঞ্চয়পত্র
মধ্যবিত্ত জীবনে সাধ আর সাধ্যের টানাপোড়েন লেগেই থাকে। এর মধ্যেই তিল তিল করে জমা হয় কিছু সঞ্চয়। কখনো সম্পদ বিক্রির টাকা, কখনো পেনশন, এফডিআর অথবা প্রবাসী স্বজনের পাঠানো অর্থে আসে কিছু বিনিয়োগের সুযোগ ও সুবিধা। কিন্তু বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া তো সহজ ব্যাপার নয়। পদে পদে ঝক্কি, লোকসান কিংবা প্রতারণার ঝুঁকি লেগেই আছে। তাই অনেকেই এ ঝুঁকি নিতে চান না। মুনাফা কম হলেও হন্যে হয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র খুঁজতে থাকেন। তাদের জন্য পেনশনার সঞ্চয়পত্র হতে পারে আদর্শ বিকল্প একটি বিনিয়োগ। আপনাদের জন্য পেনশনার সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-
পেনশনার সঞ্চয়পত্র
পাঁচ বছর মেয়াদী এই সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে সুদ পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হারে। আর মেয়াদ পূর্তির আগে নগদায়ন করলে প্রথম বছর শেষে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ ও চতুর্থ বছর শেষে ১১ দশমিক শতাংশ হারে সুদ বা মুনাফা পাওয়া যায়।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রের বিক্রয় কেন্দ্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল শাখা অফিস, সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের অধীন ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো অফিস এবং সারাদেশে ডাকঘরে সঞ্চয়পত্র কিনতে পাওয়া যায়।
যারা ক্রয় করতে পারবেন
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত, আধা- স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী, সুপ্রীম কোর্টেরঅবসরপ্রাপ্ত মাননীয় বিচারপতিগণ, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকুরীজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী/স্ত্রী/সন্তান।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা ও মেয়াদ
❏ পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনার গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ পরিমাণঃ চাইলেই যে কোনো পরিমাণ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না। সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেবল একক নামে কেনা যায়। এই সঞ্চয়পত্রের অনুমোদিত সর্বোচ্চ সীমা যথাক্রমে ৫০ লাখ টাকা।
❏ পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনার সর্বনিম্ন সীমাঃ ৫০ হাজার টাকা।
❏ পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদঃ ৫ বছর।
❏ মূল্যমানঃ ৫০,০০০ টাকা; ১,০০,০০০ টাকা; ২,০০,০০০ টাকা; ৫,০০,০০০ টাকা এবং ১০,০০,০০০ টাকা।
❏ আবেদন ফরমঃ পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ফরম পেতে ক্লিক করুন এখানে
প্রয়ােজনীয় কাগজপত্র
❏ ক্রেতার জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি।
❏ ক্রেতার ই টিন সার্টিফিকেটের ফটোকপি (এক লাখ টাকার উপরে হলে)।
❏ ক্রেতার ছবি দুই (০২) কপি।
❏ নমিনীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
❏ নমিনীর দুই কপি ছবি (ক্রেতা কর্তৃক সত্যায়িত)।
❏ যে চেকের মাধ্যমে বিনিয়ােগের টাকা দিবেন সেটি ও তার ফটোকপি।
মুনাফার হার ও উৎসে কর
❏ মুনাফার হার- ১১.৭৬% (মেয়াদান্তে)।
❏ ১ লক্ষ টাকায় প্রতি ৩ মাসে প্রদেয় মুনাফা সর্বমােট বিনিয়ােগ ৫ লাখ টাকার কম হলে ২৯৪০/= ও উৎসে কর কর্তন ৫%।
❏ বিনিয়ােগের পরিমাণ ৫ (পাঁচ) লাখ টাকার বেশি হলে প্রতি ৩ মাসে প্রদেয় মুনাফা ২৬৪৬/= ও উৎসে কর কর্তন ১০%।
এছাড়া পেনশনার সঞ্চয়পত্রের বছরভিত্তিক মুনাফার হার নিম্নোক্ত ছক মোতাবেক প্রদেয় হইবেঃ
ছক–১: পেনশনার সঞ্চয়পত্রের বছরভিত্তিক প্রদেয় মুনাফার হার | |
নগদায়নকাল | মুনাফার হার |
১ম বছরান্তে | ৯.৭০% |
২য় বছরান্তে | ১০.১৫% |
৩য় বছরান্তে | ১০.৬৫% |
৪র্থ বছরান্তে | ১১.২০% |
৫ম বছরান্তে | ১১.৭৬% |
পূর্ণমেয়াদের জন্য ১ (এক) লক্ষ টাকায় প্রতি ৩ (তিন) মাস অন্তর মুনাফার কিস্তি সর্বোচ্চ ১১.৭৬% হারে টাকা ২,৯৪০.০০ (দুই হাজার নয়শত চল্লিশ) মাত্র প্রদেয় হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর কর্তন/লেভী কর্তন হবে। কিন্তু যেক্ষেত্রে মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার পূর্বে বিনিয়োগকৃত টাকা উত্তোলন করা হবে, সেক্ষেত্রে উপরের ছক-১ (পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বছরভিত্তিক প্রদেয় মুনাফার হার)-এ প্রদর্শিত বছরভিত্তিক হারে মুনাফা প্রদেয় হবে এবং অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধিত হয়ে থাকলে উহা মূল টাকা হতে কর্তন কড়ে সমন্বয়পূর্বক অবশিষ্ট মূল টাকা পরিশোধ করতে হবে।
(২) বিভিন্ন মূল্যমানের পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার পরিমাণ নিম্নরুপ হইবে-
ছক–১ (ক): বিভিন্ন মূল্যমানের পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রদেয় মুনাফার পরিমাণ | |
বিনিয়োগের পরিমাণ (টাকায়) | ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রদেয় মুনাফার পরিমাণ (টাকায়) |
(ক) ৫০,০০০.০০ | ১,৪৭০.০০ |
(খ) ১,০০,০০০.০০ | ২,৯৪০.০০ |
(গ) ২,০০,০০০.০০ | ৫,৮৮০.০০ |
(ঘ) ৫,০০,০০০.০০ | ১৪,৭০০.০০ |
(ঙ) ১০,০০,০০০.০০ | ২৯,৪০০.০০ |
ত্রৈমাসিক মুনাফা উত্তোলনের পর ৫ (পাঁচ) বছর মেয়াদ শেষে মূল বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া যাইবে।
(৩) মেয়াদপূর্তির পূর্বে সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করিলে গৃহীত ত্রৈমাসিক মুনাফা কর্তনপূর্বক অবশিষ্ট অর্থ ফেরত দেওয়া হইবে। ১ (এক) লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করিয়া মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়ন করিলে নিম্নোক্ত ছক-১ (খ) মোতাবেক অর্থ ফেরত পাওয়া যাইবে-
ছক–১ (খ): মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়নের ক্ষেত্রে ১ (এক) লক্ষ টাকায় ফেরতযোগ্য টাকার পরিমাণ | |
সময়সীমা | ৩–মাস অন্তর মুনাফা উত্তোলন করিয়া বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত গ্রহণ করিলে প্রাপ্য টাকা |
১ম বৎসর চলাকালীন | ১,০০,০০০ – গৃহীত মুনাফা |
২য় বৎসর চলাকালীন | ১,০৯,৭০০– গৃহীত মুনাফা |
৩য় বৎসর চলাকালীন | ১,২০,৩০০– গৃহীত মুনাফা |
৪র্থ বৎসর চলাকালীন | ১,৩১,৯৫০ – গৃহীত মুনাফা |
৫ম বৎসর চলাকালীন | ১, ৪৪,৮০০ – গৃহীত মুনাফা |
অন্যান্য উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়াবলীঃ
❏ ত্রৈমাসিকভিত্তিতে মুনাফা প্রদেয়;
❏ নমিনী নিয়োগ করা যায়;
❏ হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে ডুপ্লিকেট সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা যায়;
❏ সঞ্চয়পত্র এক স্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যায়;
❏ ক্রয়ের সময় ক্রেতার ২ (দুই) কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি, নমিনী থাকলে প্রত্যেকের ২ (দুই) কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রদান করতে হবে;
❏ ভবিষ্য তহবিলের মঞ্জুরীপত্র এবং প্রাপ্ত আনুতোষিকের মঞ্জুরীপত্র অথবা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পি.এস.সি ফরম-২ পুরণ করে ইস্যু অফিসে দাখিল করতে হবে;
❏ এ সঞ্চয়পত্র শুধুমাত্র ১ (এক)টি অফিস হতে ক্রয় করা যায়। একাধিক অফিস হতে এ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে অথবা ক্রয়সীমা অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে কোন মুনাফা প্রাপ্য হবেন না;
❏ পেনশনার সঞ্চয়পত্র ব্যাংক ঋণের জন্য জামানত/আমানত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না;
❏ ব্যবসা-বানিজ্যে পেনশনার সঞ্চয়পত্র জামানত হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।