‘টাকা’ শব্দের উৎপত্তি ও বাংলাদেশে টাকার ইতিহাস
আক্ষরিক অর্থেই টাকা আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাস্তব জীবনে জন্ম থেকে মৃত্যু টাকার ব্যবহার থাকবেই। টাকা ছাড়া জীবন যেন অনেকটাই অচল। তুমি একটা পেন্সিল কিনতে চাও, তোমার একটা আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে অথবা বাইরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবছো–যা–ই করতে যাওনা কেন, তার জন্য টাকা দরকার। অর্থের প্রত্যক্ষ রূপ হলো টাকা বা নোট।
টাকা একটি মুদ্রার নাম। মুদ্রা আসলে বিনিময়ের একটা মাধ্যম। একেক দেশের মুদ্রার একেক রকম নাম। যেমন কারো নাম কদু, কারো মধু। কিন্তু দুজনেরই আসল পরিচয় তারা মানুষ। তেমনই টাকা, ডলার, রুপি, দিনার, ইয়েন, রিঙ্গিত, ইউয়ান, ইউরো–সবই হচ্ছে মুদ্রা।
কিন্তু একটা সময় ছিল যখন টাকা ছিল না। তখনও কিন্তু মানুষের বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হতো। তাহলে তখন তারা কীভাবে তাদের ওই চাহিদা মেটাত? সেই প্রাচীনকাল থেকে মানুষ টাকা লেনদেনের মাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে এবং বিভিন্ন উপায়ে এর ব্যবহার শুরু করে।
কখনো বা গাছের পাতা দিয়ে, আবার কখনো বা তামার তৈরি ধাতব খণ্ড দিয়ে লেনদেন করেছে। ধীরে ধীরে সভ্যতা আর দক্ষতার উন্নয়নে আজ কারখানায় তৈরি কাগজ খণ্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে এর নাম ভিন্ন ভিন্ন হলেও কাজ কিন্তু একই। তো আমাদের দেশে এই টাকা কোথা থেকে এলো, কেমন করে এলো কিংবা টাকার নোটগুলোর অজানা কথা গুলো নিশ্চয়ই আপনাদের ভাবায়। চলুন আজ জেনে নেই টাকা কী! বাংলাদেশে টাকার ইতিহাস সম্পর্কে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
‘টাকা’ শব্দের উৎপত্তি
ভাষাবিদগণের মতে, সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভুত ‘টাকা’ শব্দটি। সংস্কৃত শব্দ ‘টঙ্ক’, যার অর্থ রৌপ্য মুদ্রা, থেকে এসেছে টাকা। আগে যেকোনো ধরনের মুদ্রা বা ধাতব মুদ্রা বুঝাতে টাকা শব্দটির প্রচলন ছিল।
বঙ্গ রাজ্যে সবসময় টাকা শব্দটি যেকোনো মুদ্রা বা ধাতব মুদ্রাকে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। ১৪ শতাব্দীতে ইবনে বতুতা লক্ষ্য করেছিলেন যে বাংলা সালতানাতের লোকজন, সোনা এবং রূপার ধাতবকে দিনার না বলে “টাকা” বলতো। বাংলা ভাষার একটি অংশ হিসেবে বাঙালিরা সব ধরনের কারেন্সি বা নোট বা মূলধন বোঝাতে ‘টাকা’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে।
বাংলাদেশে টাকার ইতিহাস
টাকা (মুদ্রা প্রতীক: ৳; ব্যাংক কোড: BDT) হল বাংলাদেশের মুদ্রা। বাংলাদেশের জন্ম ১৯৭১ সালে হলেও শুরুটা ছিল ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে। তখন দেশে পাকিস্তান রুপির প্রচলন ছিল, যেটিকে কাগজে–কলমে টাকাও বলা হতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা বেসরকারিভাবে পাকিস্তানি টাকার একপাশে ‘বাংলা দেশ’ এবং অপর পাশে ‘Bangla Desh’ লেখা রাবার স্ট্যাম্প ব্যবহার করতেন।
১৯৭১ সালের ৮ জুন পাকিস্তান সরকার এই রাবার স্ট্যাম্প যুক্ত টাকাকে অবৈধ এবং মূল্যহীন ঘোষণা করে। জানা যায় এরপরেও ১৯৭৩ সালের ৩রা মার্চ পর্যন্ত এই রাবার স্ট্যাম্পযুক্ত পাকিস্তানি টাকা চলেছিল সারা দেশে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে নতুন মুদ্রা প্রচলনের ঘোষণা দেয়া হয়। তাতে সময় লেগেছিল তিন মাসের মতো। তাই ঐ সময়ে পাকিস্তানি রুপিই ব্যবহৃত হতো। ১৯৭২ সালের ৪ঠা মার্চ বাংলাদেশি কারেন্সিকে ‘টাকা’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়।
নিজস্ব কাগুজে মুদ্রার আবির্ভাব
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর কিছু দিন পাকিস্তানি ১ রুপি প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ৪ঠা মার্চ বাংলাদেশী ১ টাকার নোট ইস্যু হয়। ১৯৭৩ সালের ২রা মার্চ প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক সম্বলিত ১ টাকার নোট ইস্যু হয়।এরপর ১৯৭৩ সালের ১৮ই ডিসেম্বর পুনরায় আরেকটি ১ টাকার নোট ইস্যু হয় এবং ১৯৭৯ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর “রয়েল বেঙ্গল টাইগার“-এর জলছাপ সম্বলিত ১ টাকার নোট ইস্যু হয়। এভাবেই বাংলাদেশে টাকার প্রচলন ঘটে।