ক্রেডিট কার্ড

ক্রেডিট কার্ডে জরিমানা নয়

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটের মধ্যে নির্ধারিত তারিখে ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ না করলে তার কাছ থেকে জরিমানা বা বাড়তি চার্জ নিতে পারবে না ব্যাংক। এরই মধ্যে কোনো ব্যাংক চার্জ আরোপ করে থাকলে গ্রাহককে তা ফেরত দিতে হবে। শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া গাড়ি, বাড়ি, ব্যবসাসহ অন্যসব ঋণের মতো ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহককেও আগামী জুন পর্যন্ত খেলাপি করা যাবে না। শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ। এই সুদহার ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

ব্যাংকাররা জানান, প্রতিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে বিল পরিশোধের নির্দিষ্ট একটি সময়সীমা নির্ধারিত আছে। কোনো গ্রাহক ওই সময়ের মধ্যে নূ্যনতম বিল পরিশোধ না করলে তাকে নির্দিষ্ট অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়। এ ছাড়া অপরিশোধিত বিলের ওপর নির্ধারিত হারে সুদ আরোপ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুন পর্যন্ত কাউকে খেলাপি না করার নির্দেশনা দিলেও জরিমানা বিষয়ে কিছু বলেনি। যে কারণে কোনো কোনো ব্যাংক জরিমানা আরোপ নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে। অবশ্য অনেক ব্যাংক এরই মধ্যে কোনো ধরনের জরিমানা আরোপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও সাধারণ ছুটির কারণে লোকবল কম থাকায় এসব নির্দেশনা কার্যকর বা গ্রাহকদের জানাতে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফরাহ মো. নাছের বলেন, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধ না করলেও খেলাপি না দেখানোর নির্দেশনা সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। আর ক্রেডিট কার্ডের বিল না দিলেও জরিমানা না করার বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। এরই মধ্যে কোনো ব্যাংক জরিমানা আরোপ করলে তা ফেরত দিতে বলা হতে পারে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটের মধ্যে জানুয়ারি থেকে আগামী জুন পর্যন্ত কেউ ঋণের কিস্তি না দিলে তাকে খেলাপি না করার বিষয়ে গত ১৯ মার্চ সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কিছু বিভাগ ছাড়া সব বন্ধ রাখা হয়। অনেক শাখাও এখন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ সময়ে খোলা রাখা শাখা থেকে নগদ জমা, উত্তোলন, পে-অর্ডার ইস্যুসহ সীমিত আকারে কিছু লেনদেন চলছে।

যে কারণে অনেক ইচ্ছা বা টাকা থাকলেও তার নির্ধারিত শাখায় গিয়ে হয়তো ক্রেডিট কার্ড বা অন্য যে কোনো বিল পরিশোধ করতে পারছেন না। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো নির্দেশনা না দিলেও অধিকাংশ ব্যাংক নিজ থেকে বিল পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও অন্যসব মাসের মতো বিল পরিশোধের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহকদের এসএমএস পাঠানো হচ্ছে।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, ব্যাংক টাকা পাবে, সেটা তো চাইবেই। পারলে ব্যাংকের টাকা দিয়ে দেওয়া ভালো। তবে কেউ না দিলে আগামী জুন পর্যন্ত তাকে খেলাপি করা হবে না। নৈতিক কারণে জরিমানাও আরোপ করা হবে না। তিনি জানান, ব্যাংক এশিয়ায় প্রতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করতে হয়। তবে সেটা বাড়িয়ে ৮ তারিখ করা হয়েছে। অধিকাংশ ব্যাংক এভাবে সময় বাড়িয়েছে।

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসাইন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাত গ্রাহকদের পাশে থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে আগামী জুন পর্যন্ত কাউকে খেলাপি করা হবে না। লকডাউনের এ সময়ে কেউ হয়তো শাখায় আসতে পারছেন না, কারও আয় কমে গেছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলো এরই মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধিসহ সব বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়ে গ্রাহকদের শিগগিরই জানাবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে লোকবল কম থাকায় এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ডসহ যে কোনো ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ছয় মাস পার হলেই তিনি খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হন। যে কোনো একটি ব্যাংকের খেলাপি হলে তিনি নতুন করে অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড নিতে পারেন না। এমনকি এলসিও খুলতে পারেন না। অবশ্য সাধারণ ছুটির এ সময়ে নতুন ঋণ, ক্রেডিট কার্ডসহ সব ধরনের কার্ড ইস্যু, চেক বই প্রদানসহ ব্যাংকগুলোর অনেক ধরনের সেবা বন্ধ রয়েছে।

ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের যে পদ্ধতি, সেখানে কখনোই জরিমানার বিধান ছিল না; এখনও হবে না। কেউ যথাসময়ে বিল না দিলে শুধু নিয়মিতভাবে সুদ আরোপ করা হবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে যার ঋণ যে অবস্থায় আছে, সেটাই থাকবে।

এক প্রশ্নের জবাবে দেশের সর্ববৃহৎ এটিএম সেবাদাতা এ প্রতিষ্ঠানের এমডি বলেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এটিএম বুথগুলোতে লেনদেন এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা হওয়ায় এই দু-এক দিন আবার লেনদেন বেড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button