সেক্যুলার অর্থ ব্যবস্থার নেতিবাচক প্রভাব-২
পুঁজিবাজারে ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনের ট্র্যাজেডি হচ্ছে, কতিপয় পুঁজিপতির লাগামহীন স্বার্থসিদ্ধির ও সূযোগ দানের বিনিময়ে সমাজের সিংহভাগ মানুষের অধিকতর সুযোগ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রাখা। এতে করে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ ও স্বার্থপরতার আবির্ভাব, প্রচলন ও প্রসার পারিবারিক ঐতিহ্য ও শৃঙ্খলাকে দূর্বল করে দেয়, যার ফলে বিবাহ বন্ধনের বাইরে যৌন অনাচার সৃষ্টি হয়। নারীরা তখন ভোগ্য পণ্যের মত ব্যবহৃত হতে থাকে। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই প্রতারণামূলক যৌন অনাচারে লিপ্ত হয়। এভাবে পরিবার প্রথা বিলুপ্ত হতে থাকে। সমষ্টিগত বন্ধন ও ঐতিহ্যের শিকল থেকে মানুষকে মুক্তির নামে একটি উশৃঙ্খল, উলঙ্গ ও যৌনবাদী সমাজের জন্ম দেয়। এ সমস্ত কারণে পশ্চিমা দুনিয়া সামাজিক মানুষের পরিবর্তে বর্তমানে চক্ষু লজ্জাহীন রোবট মানুষে পরিণত হয়।
পশ্চিমা জগত ও প্রতীচ্যের ভোগবাদী সমাজ বাহ্যিকভাবে যত সাফাই গাক না কেন, ভিতরে ভিতরে তুষের আগুনের মত জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে; তা আর বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। এদের সমাজে কিশোরী গর্ভপাত, পিতৃহীন, অপরাধী ও মাদকাসক্ত, অলংঘনীয় বেকারত্ব ও হতাশার দুষ্টচক্রে নিপতিত হয়ে তিলে তিলে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি বণী আদম। চাকচিক্যময় সমাজ ব্যবস্থায় হয়তোবা তা বুঝার উপায় নেই। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার অনিবার্য পরিণতি হলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্দশা লাঘবে চরম ব্যর্থতা। আর এর প্রতিক্রিয়ায় সমাজবাদী অর্থ ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছিল। এ ব্যবস্থাও প্রবল ধর্মনিরপেক্ষ আবহে লালিত ও এদের দৃষ্টিভঙ্গিও পুজিবাদের মতই ধর্মনিরপেক্ষ বরং এক ধাপ এগিয়ে কট্টর নাস্তিক্য ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত। এ ব্যবস্থা ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার আয় ও সম্পদের অসম বন্টনের দুষ্ট চক্রকে দায়ী করে একটি নিয়ন্ত্রণমূলক উৎপাদন বন্টনের কথা বলে থাকে।
সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থার উৎস মূল হলো মার্কসবাদ। মার্কসবাদ মূলত বিভিন্ন নাস্তিক্য মতবাদের সমন্বিত মতবাদ। এগুলো হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ ও মুক্ত চিন্তা, হেগেলের দ্বান্দিক বস্তুবাদ, ফুয়েরবাকের বস্তুবাদ, মিচেলের শ্রেণি সংগ্রাম তত্ত্ব ও এ্যডাম স্মিথের অর্থনৈতিক দর্শন। কার্লমার্কস ধর্মনিরপেক্ষ তথা নাস্তিক্যবাদী ধ্যান-ধারণার উন্মেষ ঘটান। এই দর্শনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ধর্মের সমালোচনাই সকল সমালোচনার ভিত্তি। মার্কস শ্রেণি বিচ্যুতি, শোষণ, শ্রেণি সংগ্রাম, মজুরি দাসত্ব ও অর্থনৈতিক নির্ণয়বাদের প্রবর্তন করেন, তবে তার সমস্ত চিন্তাধারা অবোধগম্য ও অস্পষ্টতায় ভরা।
পুঁজিবাদের মত এখানেও এক শ্রেনির সুবিধাবাদী, ধনিক-বনিক, বুর্জোয়া শ্রেনির উন্মেষ ঘটে অবলীলাক্রমে। বরং ক্ষেত্র বিশেষে তা আরও জঘন্যভাবে প্রকাশ পায়। মার্কস ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যমূলক মানব প্রকৃতিকে তথা মানব চরিত্রের অন্তর্নিহিত নিজস্ব বৈশিষ্ট্যকে অস্বীকারের মাধ্যমে ব্যক্তির অফুরন্ত মেধা, মনন ও কর্মশক্তিকে ম্লান করে দিতে প্রয়াস পায়। তার এই মতবাদকে নরম্যান গ্যারাস অগ্রাহ্য করেন। মার্কসের এ ধারণা তারই বস্তুবাদী ধারণার তাত্ত্বিক বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অপরপক্ষে, তার এলিনেশন সম্পর্কিত ধারণাটি অন্যভাবে চিত্রিত হয়েছে। এ সমস্ত ব্যাখা মার্কসীয় মতবাদের অস্পষ্টতা ও অসামঞ্জস্যতা আরও প্রকট করে তোলে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
এলিনেশন প্রক্রিয়ার মূল প্রতিপাদ্য হলো ইউরোপীয়দের শান্তিপূর্ণ সমাজ পরিবর্তনের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে সমাজ বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন সাধন করা। জনগণ কর্তৃক বুর্জোয়াদের উচ্ছেদ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন সকল উৎপাদন-উপকরণের জাতীয়করনের মাধ্যমে প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তনের ধারণা বর্তমান বিশ্বে উদ্ভট হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। উপরন্তু, একটি শ্রেণিকে অবলুপ্ত করে প্রলেতারিয়ান ডিক্টেটরশীপ তথা সর্বহারা শ্রেণির বিজয় সাধনের তথাকথিত ধারণা হালে পানি পায় নি। কেননা উদ্দেশ্য সৎ থাকলেও তার প্রয়োগ-পদ্ধতি, পন্থা ও কৌশল ছিল ভ্রান্ত ও ত্রুটিপূর্ণ।
মার্কস বুর্জোয়া শ্রেণির উচ্ছেদ ও উৎপাদন-উপকরণ রাষ্ট্রীয়করণের কথা বললেও যৌক্তিক বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে এলিনেশন প্রক্রিয়ার অবসান নিশ্চিতকরণ ও তার মাধ্যমে কীভাবে শোষণহীন ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব তা প্রমাণ করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তার এ মতবাদ শেষ পর্যন্ত বলার জন্য বলায় রূপান্তরিত হয়। তিনি দ্বান্দ্বিক দর্শন তথা ধনশালীদের শ্রেণি শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে সে শ্রেণির মানুষকে হত্যা, ধ্বংস ও বলপূর্বক সম্পদ দখলসহ জংলী ও অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করে কীভাবে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব তা প্রমাণ করতে পারেন নি। বরং তার এ মতবাদ সাম্প্রতিক সময়ে অসার প্রমাণিত হয়েছে। বলা বাহুল্য, আধুনিক বিশ্বের যে সকল দেশে মার্কসীয় মতাদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে সব সমাজেও এলিনেশন প্রক্রিয়ায় সমাজ পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হয় নি। পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহ ও খোদ রাশিয়া তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ মতবাদ মানুষের উপর আস্থাহীনতা, স্রষ্টার উপর অবিশ্বাস ও শ্রেণি সংগ্রামের নামে শ্রেণিতে শ্রেণিতে সংঘাত লাগিয়ে দেয়া ছাড়া বড় কিছু অর্জন করতে পেরেছে বলা যাবে না। যার ফলে এ মতবাদের উপর অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
সমাজতন্ত্রে ব্যক্তি মালিকানা ক্ষুন্ন হওয়ায় জনগণ রাষ্ট্রকে ও রাষ্ট্র জনগণকে আড় চোখে দেখতে থাকে। কাজে ফাঁকি ও অমনোযোগী হওয়া নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। বিপ্লবোত্তর সময়ে মার্কসীয় দর্শন তথাকথিত আশার বাণী তথা সম্পদের সুষম ও দক্ষ বন্টন নিশ্চিত করার শ্লোগান মিথ্যায় পর্যবসিত হয়। এখানে পরকালীন জীবনের চিন্তার অভাবের কারণে মানুষ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে ও যন্ত্রমানবে পরিণত হয়, আর মনুষ্যত্বের বিলোপ ঘটে। এই দর্শনের আরো একটি চিন্তাধারা হলো সামাজিক-আর্থিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অনুমান ভিত্তিক ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হওয়া; বিশেষ করে মানব জীবনের অস্থিত্ব, আগমন ও প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব ও প্রত্যাখানের ফলে উৎপাদন, বন্টন, দক্ষতা ও সমতা সৃষ্টির সকল লক্ষ্যই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন। |
উৎপাদনকারী, শ্রমিক, ভোক্তা কিংবা পরিচালকের মধ্যে বিশেষ করে রাষ্ট্র ও জনগণের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি ও আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়, যার ফলে সততা ও দক্ষতার সাথে নিঃস্বার্থভাবে কর্ম পরিচালিত হয় না। মানুষ রাষ্ট্র প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে না। ক্ষমতার অপব্যবহার অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলতে থাকে। সত্যি কথা হলো, জোর-জবরদস্তি করে কিংবা শাস্তি দিয়ে মানুষের চিরন্তন ভোগ ও লিপ্সা উপেক্ষা করা যায় না। অথচ, ধর্ম ও নৈতিক মূল্যবোধ একটি সমাজকে অনেক বেশি পরিশীলিত করে গড়ে তুলতে সক্ষম। এ বিশ্বাসটি এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর মধ্য এশীয় দেশগুলোতে ধর্ম-কর্মের বিদ্যুতগতিতে পুনরুজ্জীবন ও প্রসার মানুষের চিরন্তন আকুতির বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে করা হচ্ছে, যাকে এতদিন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অবদমিত করে রাখা হয়েছিল।
নৈতিক মূল্যবোধের নির্বাসনের ফলে পরষ্পর বিপরীতধর্মী স্বার্থের সমন্বয় নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কেননা আর্থ সামাজিক লক্ষ্য অর্জন ও উৎপাদন উপকরনের বন্টনে ইনসাফ ও সততার দৃষ্টান্ত স্থাপনে চাহিদার সাথে মূল্যবোধের চেতনা অবশ্যম্ভাবীরূপে যুক্ত হতে হবে। সামাজিক জীব হিসাবে মানুষ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-কর্ম ও বিশ্বাসে বিভক্ত আর তা হাজার হাজার বছর ধরে চলমান। হয়তোবা সত্য-মিথ্যা ধর্মের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তথাপি এই ধর্ম বিশ্বাসকে উচ্ছেদ করা কখনও সম্ভব নয়। অথচ পুঁজিবাদের মত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও ঐশী বিধানের কোনো স্থান নেই, বরং এক ধাপ এগিয়ে ওরা ইসলাম ধর্মকে টার্গেট বানিয়ে নিয়েছে ও বলে ধর্ম আফিমের মতই। যার ফলে, জনগণকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। ব্যক্তির সহায় সম্পদ কুক্ষিগত করে রাষ্ট্র সামাজিক বিপ্লব সাধন করবে এটা অবাস্তব ধারণা।
অতএব, ঐশী নির্দেশনার উপর ভিত্তি করে সমাজ ব্যবস্থা নির্মিত নয় এমন সমাজে ব্যক্তি তার স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিতে চাইবে না কোনক্রমেই। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নামে কিছু মানুষের উপর বিশাল জনগোষ্টীর আর্থিক ব্যবস্থা ন্যস্ত করা বিপজ্জনক বলেই ধরে নেওয়া যায়। পুঁজিবাদের মত এখানেও বরং কিছুটা বেশি অদক্ষ ও অসম বন্টন ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়। সোভিয়েত যৌথ খামার ব্যবস্থার করুণ চিত্র দেখলেই তা সহজে অনুমান করা যায়। কর্মক্ষম জনশক্তির এক-তৃতীয়াংশ কৃষি খাতে নিয়োজিত থাকার পরও সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রায়শই খাদ্য ঘাটতির কথা শোনা যায়। আন্তরিকতার অভাব ও অদক্ষতার ফলে উৎপাদনে ধ্বস নামে ও সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৬০-৭০ সালের ৫.২% প্রবৃদ্ধির ধারা বর্তমানে শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। সমাজতান্ত্রিক দেশে মিডিয়া সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এখানকার সব বিষয় সহজে প্রকাশিত হয় না, যার ফলে অনেক কিছু অজানাই থেকে যায়। গণমাধ্যম স্বাধীন না হওয়ায় প্রকৃত অবস্থা কখনও জানা সম্ভব নয়। এতে এক প্রকার গোলকধাঁধার সৃষ্টি হয়। সামাজিক বৈষম্য ও শ্রেণি বিভক্তির ধারা পুঁজিবাদের মত সমাজতান্ত্রিক সমাজেও লক্ষ্যণীয়। শ্রমিক তার ইচ্ছেমত কর্ম শিবির পরিবর্তন করতে পারে না। এমনকি অভিযোগের কোন সুযোগ রাখা হয় নি। রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্র তাই পুঁজিবাদী সমাজ থেকেও অধিকতর নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়ায়। উৎপাদন-উপকরণ হতে শ্রমিক শ্রেণির বিচ্ছিন্নকরণ এখানেও বিদ্যমান। যার ফলে, শোষণের সকল সুযোগ ও বৈশিষ্ট্য চলমান থাকে সর্বদা। এখানে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার মত সমাজের উপরের স্তরের লোকেরাই উচ্চ আয় ও বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। শ্রমিক শ্রেণির সন্তান-সন্ততি শ্রমিক হয়েই বেড়ে উঠে ও সৌভাগ্যের মুখ দেখার সুযোগ নেই। শিক্ষা ব্যবস্থা অবৈতনিক হলেও শ্রমজীবি মানুষের সন্তানদের উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বৈষম্যহীন সমাজের যে স্বপ্ন কার্ল মার্কস দেখেছিলেন, তার সফলতা দেখা গেল না মোটেও। ব্যর্থতার কারণ সুস্পষ্ট। লক্ষ্যের সাথে দর্শন ও কৌশলের কোনো মিল না থাকায় যা হবার তাই হলো। তথাকথিত সর্বহারার একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলো না। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও প্রকৃত গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি ও দমন-নিপীড়নের ফলে সর্বস্তরে হতাশা আরও বেগবান হতে থাকে। সেভিয়েত অর্থনীতিবিদ জর্জ আর্বাতভ বলেন, ‘নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে এলোমেলোভাবে বাজার অর্থনীতির কিছু দিক সংযোজনের চেষ্টা টেলিফোনের খুঁটিতে আঙ্গুর গাছের কলম লাগানোর মতই ব্যর্থ হয়েছে’। বস্তুত আর্থ-সামাজিক পুনর্গঠন ও প্রেরণার ক্ষেত্রে নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে যা পুজিবাদের মত সমাজবাদেও উপেক্ষিত হয়েছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, মুদ্রাস্ফীতি ও শ্রমিক অসন্তোষের যাঁতাকলে নিপিষ্ট হচ্ছে সমাজবাদী দেশগুলো।
বর্তমানে বেকারত্বের ভারে সে সব দেশ নুইয়ে পড়ার উপক্রম। বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের দিক থেকে এ সমস্ত দেশ ভয়াবহ অবস্থায় নিপতিত। বস্তুত প্রচলিত এ সব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অনিবার্য ফলশ্র“তিতে মানুষে মানুষে বৈষম্য চরম আকার ধারণ করল। সব চেয়ে আশ্চর্য্যরে বিষয় হলো সারা দুনিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গুটিকয়েক রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ইচ্ছা অনিচ্ছার বিষয়ে পরিণত হলো। এতেই স্পষ্ট বুঝা যায়, বর্তমান ধারার অথনৈতিক ব্যবস্থা বিশ্ব সংস্থায় কী রকম চরম বৈষম্য ও অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছে। অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলোর মধ্যপ্রাচ্যের জন্য মায়াকান্না আছে। অথচ এশিয়া, আফ্রিকার বিশাল হতদরিদ্র ও অধঃপতিত জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে কোনো ভূমিকা নেই।
সেক্যুলার অর্থনীতির আরেকটি ব্যর্থতা হলো মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে আন্তরিক নয় কিংবা সক্ষম নয় এবং বাস্তব কোনো এজেণ্ডাও নেই। সমৃদ্ধ দেশগুলো এত বেশি সম্পদ পুঞ্জিভূত করে রেখেছে যে বাকি দুনিয়াকে এমনকি নিজ দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে তারা গোলামে পরিণত করেছে। পৃথিবীতে বর্তমানে ২০২টি স্বাধীন রাষ্ট্র রয়েছে। ভ্যাটিকানের মত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ও রাশিয়ার মত বিশাল রাষ্ট্রও রয়েছে। নিবন্ধটি আপনি পড়ছেন ব্যাংকিং নিউজ বিডি ডটকম-এ। রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া ও তাইওয়ানকে বাদ দিলে বাকি প্রায় সবগুলো রাষ্ট্রই তৃতীয় বিশ্বভূক্ত উন্নয়নশীল দেশ।
বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের ওআইসিভূক্ত ৫৭টি রাষ্ট্রের মধ্যে একটিও শিল্পোন্নত রাষ্ট্র নেই। দূর্ভাগ্যের বিষয় সমগ্র মুসলিম বিশ্ব সেক্যুলার অর্থনীতির গ্যারাকলে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। বর্তমান পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ, অর্থাৎ ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ কোনো না কোনভাবে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত। অপরপক্ষে, অনেক ধনী রাষ্ট্র তাদের উদ্বৃত্ত খাদ্য নষ্ট করে অথবা সাগর বক্ষে ফেলে দেয়ার কথাও শোনা যায়। দু’বেলা খাদ্য জোগাড় করতে পারে না এমন লোকের সংখ্যাও কোটি কোটি। (চলবে)
লেখকঃ এম ওসমান গনি: বিশিষ্ট ব্যাংকার, লেখক, গবেষক ও কলামিষ্ট।