মোহাইমিনের শুভংকরের ফাঁকি ও ইসলামী ব্যাংকিং: ৬ষ্ট পর্ব
মুহাম্মদ শামসুজ্জামানঃ “ইসলামি ব্যাংকগুলো কিভাবে ঋণ দেয়” এই শিরোনাম মোহাইমিন তার কিতাবের পৃষ্ঠা ২১-২২ এ ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ পদ্ধতির বিশদ লিখেছেন।
Quote
একটি প্রচলিত ব্যাংক যখন ঋণ দেয় তার আগে সে গ্রাহকের থেকে সব ধরনের কাগজপত্র জমা চায়, যেমন- আয়-রোজগারের হিসেব, ট্যাক্সের বিবরণ, সম্পত্তির হিসেব ইত্যাদি। এই কাগজপত্রগুলো দেখে ব্যাংক গ্রাহকের ঋণ গ্রহণযোগ্যতা যাচাই-বাছাই করে। তারপর, জামানতের (সম্পত্তির) বিপরীতে ঋণ ইস্যু করে। এতটুকুন পর্যন্ত একটি ইসলামি ব্যাংক এবং একটি প্রচলিত ব্যাংকের নীতি একই। ঋণ অনুমোদনের পর যখন টাকা দেওয়ার সময় আসে, একটি প্রচলিত ব্যাংক গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে টাকাটা পাঠিয়ে দেয়, তারপরে সে শর্ত জুড়ে দেয়, “সুদে আসলে এই টাকা দ্বিগুণ করে আমাকে ফেরত দেবেন। আপনাকে পাঁচ বছর সময় দিলাম।”
ঠিক একই উদ্দেশ্যে ইসলামি ব্যাংকগুলোর কাছে আপনি যখন ঋণ নিতে যান, তখন তারা বলবে, ঋণের টাকায় কী করবেন, জানতে পারি?” আপনি হয়তো বলবেন, “ব্যবসা করব; কিংবা, দোকানে নতুন মাল-পত্র তুলব ইত্যাদি। ইসলামি ব্যাংকগুলো তখন বলবে, “আপনার ব্যবসা করতে যত প্রকার মাল-পত্র লাগে আমি সব কিনে দিচ্ছি। কিন্তু শর্ত হচ্ছে দ্বিগুণ দামে? আমার থেকে কিনতে হবে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে টাকাটা ফেরত দিতে কাছে।
মোদ্দাকথায়, আপনি যখন ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে প্রচলিত ব্যাংকের কাছে যান, তারা আপনার অ্যাকাউন্টে ৫০ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে পাঁচ বছরে ১ কোটি টাকা ফেরত চাইবে (বছরে ২০ লক্ষ টাকা করে) এবং আপনি যখন একটি ইসলামি ব্যাংকের কাছে যান, তারা আপনার কাছে ৫০ লক্ষ টাকার পণ্য ১ কোটি টাকায় বিক্রি করবে। তারপর পাঁচ বছরের মধ্যে ১ কোটি টাকা ফেরত চাইবে (বছরে ২০ লক্ষ টাকা করে)। সুচিন্তিত পাঠক মনে মনে ভাবতে পারেন, সামান্য কিছু নিয়ম-কানুনের কারসাজি ছাড়া এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য কী?
Unquote
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
জী, মোহাইমিন আপনাকে তো প্রাইমারী স্কুলের বাচ্চাদের মতো বুঝাতে পারবোনা কারণ আপনি বেশ জ্ঞানী মানুষ। প্রথমতঃ কোন ইসলামী ব্যাকই তার ফান্ড ডেপ্লয়মেন্টকে ৠণ নামে অভিহিত করেনা। সুদভিত্তিক ব্যাংকে যা “ক্রেডিট”, ”লোন” বা “এডভান্স” ইসলামী ব্যাংকগুলোতে তা “বিনিয়োগ” নামে প্রচলিত। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের Guideline for conducting Islamic Banking 2009 এর প্রথম পরিচ্ছদেই শব্দ ব্যাখ্যাটি আপনার জন্য উদ্ধৃত করে দিলাম।
f. “Investment” means any such modes of financing which Islamic Bank Company does in accordance with principles of Shariah or as per the Shariah approved modes like Mudaraba, Musharaka, Bai-Murabaha, Bai-Muajjal, Istisna, Lease, Hire-purchase under Shirkatul Melk, etc.
তবে বিভিন্ন রিপোর্টিং এ অভিন্নতার কারণে সুদভিত্তিক ব্যাংকগুলো যেখানে ৠণ তথ্য বিবরণী দিবে ষেখানে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ তথ্য জানাবে।
আরেকটি বিষয় হলো, এখানে কোন গ্রাহকই মুখে যাই বলুক, অফিসিয়ালী কোন ইসলামী ব্যাংকের কাছে লোন বা ক্রেডিটের দরখাস্ত করেনা বরং তারা বিনিয়োগ চেয়ে আবেদন করে। সব বিনিয়োগের জন্যই যে ব্যাংক গ্রাহকের কাছে কাগজপত্র চায়, তাও নয়। কিছু কাগজপত্র যেমন গ্রাহকের পরিচিতির জন্য ভোটার আইডি, ব্যবসার জন্য হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, করধারী হলে eTIN ও রিটার্ণ দাখিলের প্রমাণ-এগুলো দেশীয় আইনে বাধ্যতামূলেক। কোন বিনিয়োগের বিপরীতে যদি অতিরিক্ত জামানত থাকে তবে বাড়তি দলিলাদির প্রয়োজন হয়। জানামতে, ইসলামী ব্যাংকের কয়েক লক্ষ বিনিয়োগ গ্রাহক আছেন যাদের কোন জামানত নেই। তিনি বলেছেন, প্রচলিত ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক এইটুকু পর্যন্ত একই। তবে কি ভিন্নতা তিনি আশা করছেন, বোধগম্য নয়।
আরও দেখুন:
✓ মোহাইমিনের শুভংকরের ফাঁকি ও ইসলামী ব্যাংকিং: ৫ম পর্ব
ইসলামী ব্যাংক ও কনভেনশানাল ব্যাংকের মধ্যে বিনিয়োগ ও লোনের কোন পার্থক্য তিনি খুঁজে পাননি। গাণিতিক হিসাব কনভেনশানাল ব্যাংকের জন্য প্রযোজ্য হলেও হতে পারে কিন্ত ইসলামী ব্যাংকের মূল কনসেপ্ট হলো গ্রাহক ও ব্যাংকের মাঝখানে মালামালের অস্তিত্ব থাকা শর্ত। ইসলামী ব্যাংক কোন হাইপোথিকেটেড বস্তর ব্যবসা করেনা। This is always Assets based. দৃশ্যমান বস্ত বিরাজমান হবে, বাজারে বেচাকেনা হবে এবং তা বিনিময় যোগ্য হবে। বিনিয়োগে অংশীদারিত্বের নীতি লাভ-লোকসান অংশীদারি পদ্ধতির ব্যবসায়ে ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ই লাভ-লোকসানে অংশ নেয়। এ ধরনের কারবারে ব্যাংক ও গ্রাহকের সাফল্য বা ব্যর্থতা এক সুতোয় গাঁথা। ফলে গ্রাহক ও ব্যাংকের মধ্যে একাত্মতা সৃষ্টি হয়। এটি ইসলামী ব্যাংকিংয়ের একটি উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য। টাকার কারবার নয়-পণ্যের ব্যবসা ইসলামী ব্যাংক অংশীদারি পদ্ধতি ছাড়াও মুরাবাহা, বায়-ই-মুয়াজ্জল, বায়-ই-সালাম, ইজারা, ভাড়ায় ক্রয় ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে। ইসলামী ব্যাংক টাকা লগ্নি করে না। পণ্যের বেচাকেনা কিংবা ইজারা পদ্ধতিতে এসব বিনিয়োগ পরিচালনা করে। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় কিংবা দ্রব্যের ভাড়ার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ব্যবসায়িক লাভরূপে গণ্য। আমি আগেও বলেছি, ইসলামী ব্যাংকের ব্যবসা তিনটি প্রধান মোডে হয়ে থাকে। বাই,শিরকত ও ইজারা। বাই মোডের রয়েছে কয়েকটি ম্যাকানিজম।
১) বাই মুরাবাহা:
মুরাবাহা হলো নির্ধারিত ও সম্মত লাভের ভিত্তিতে পণ্য বিক্রি। এই লাভ বিক্রয় মূল্যের হারাহারি হতে পারে কিংবা তা ‘থোক’ (Lump sum) হতে পারে। কেনার ওয়াদা ছাড়া এ লেনদেন সম্পন্ন হলে তা হবে একটি সাধারণ মুরাবাহা চুক্তি। কোন আগ্রহী ব্যক্তি কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পণ্য কেনার জন্য আগাম পেশ করা ওয়াদাপত্রের ভিত্তিতে এ লেনদেন হলে তা ব্যাংকিং মুরাবাহা হিসেবে গণ্য হবে। এরূপ লেনদেনের প্রকৃত ক্রয়মূল্যের সাথে সাধারণ খরচাদি আলাদাভাবে উল্লেখ থাকায় এ চুক্তি স্বচ্ছতানির্ভর আস্থাভিত্তিক চুক্তিসমূহের পর্যায়ভুক্ত।
Murabaha is selling a commodity as per the purchasing price with a defined and agreed profit mark-up. This mark-up may be a percentage of the selling price or a lump sum. This transaction may be concluded either without a prior promise to buy, in which case it is called an ordinary Murabaha, or with a prior promise to buy submitted by a person interested in acquiring goods through the institution, in which case it is called a “banking Murabaha” i.e. Murabaha to the purchase orderer. This transaction is one of the trust-based contracts that depends on transparency as to the actual purchasing price or cost price in addition to common expenses. – Shariah Standards (PDF). Bahrain: Accounting and Auditing Organization for Islamic Financial Institutions (AAOIFI)
২) বাই মুয়াজ্জাল (বাকিতে বিক্রি):
এর মানে হলো, নির্ধারিত সময়ে দাম পরিশোধ করার শর্তে বাকিতে বিক্রি। অর্থাৎ ভবিষ্যতে নির্ধারিত সময়ে একসঙ্গে বা কিস্তিতে সম্মত মূল্য পরিশোধের শর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরিয়ত অনুমোদিত পণ্য বিক্রি করাকে বাই মুয়াজ্জাল বলা হয়। বাই মুয়াজ্জালের বৈশিষ্ট্য হলো, নির্ধারিত দামে বাকিতে বিক্রি করা হয়। পণ্য ক্রয় করে মালিকানা লাভ করে বিক্রি করতে হবে। বাই মুয়াজ্জাল চুক্তির সময় পণ্যের অস্তিত্ব থাকতে হবে এবং তা ক্রয়যোগ্য হতে হবে। ব্যাংক (বিক্রেতা) পণ্যের দাম ও তার মুনাফা গ্রাহককে বলতে বাধ্য নয়। হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত ব্যাংককে পণ্যের ঝুঁকি বহন করতে হয়।
Bai-Muajjal means sale for which payment is made at a future fixed date or within a fixed period. In short, it is a sale on Credit. Bai-Muajjal may be defined as a contract between a Buyer and a Seller under which the Seller sells certain specific goods permissible under Islamic Shari‘ah and Law of the land) to the Buyer at an agreed fixed price payable at a fixed future date in lump sum or within a fixed period by fixed instalments. The seller may also sell the goods purchased by him as per order and specification of the Buyer.
মুরাবাহা ও বাই মুআজ্জালে গুণগত তেমন প্রভেদ নেই।তবে মুরাবাহা ডিলে বিক্রয়মূল্য স্থির করতে ক্রয়মূল্যের সাথে মালামাল গ্রাহকের হাতে তুলে দেয়া পর্যন্ত পরিবহন খরচ, গুদাম ভাড়া, ঝুঁকিজনিত ইনস্যুরেন্স খরচ ও সম্মত মূনাফা প্রকাশ করা জরুরী। চুক্তিতেও তা উল্লেখ থাকা বাঞ্চনীয়। কিন্ত বাই মুআজ্জালে কেবলমাত্র বিক্রয়মূল্যই বলা হয়। বাই মুআজ্জালে মালামাল গ্রাহকের কব্জায় রাখা হয়, মুরাবাহাতে ব্যাংকের কব্জায় থাকে তবে কারখানার কাঁচামাল জাতীয় অতি জরুরী পণ্য টিআর ভিত্তিতে গ্রাহকের কব্জায়ও দেয়ার বিধান রয়েছে। মুরাবাহা নগদ বা বাকীতে হলেও বাই মুআজ্জাল Always Deferred Payment বিলম্বে পরিশোধ্য। মুরাবাহা বা বাই মুআজ্জাল ম্যাকানিজম দুটোই সাধারনতঃ একবার ব্যবহারে নিঃশেষ হয় এমন দ্রব্য বেচাকেনায় ব্যবহৃত হয়। যেমন,খাদ্যবস্ত, বস্ত্র, মেডিসিন ইত্যাদি। এটি প্রাকটিচ, শরীয়ার বাধ্যবাধকতা নয়। আর সেসব বস্ত একাধিকবার এবং দীর্ঘকালব্যাপী ব্যবহার হয় যেমন কারখানার যন্ত্রাদি, বাড়ীঘর, যানবাহন ইত্যাদি শিরকত মোডে বিনিয়োগ হয়। সুতরাং মুরাবাহা ও বাই মুআজ্জাল বিনিয়োগ সীমা সর্বোচ্চ এক বছরের হয়, শিরকত বা ইজারায় তা পনেরো, কুড়ি বছরও হতে পারে।
৩) বাইয়ে সালাম বা অগ্রিম বিক্রয়:
সালাম হলো পণ্যের আগাম ক্রয়-বিক্রয়। এটি সাধারণত কৃষিক্ষেত্র ও কুটিরশিল্পে বিনিয়োগের বেলায় ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে সরবরাহের শর্তে এবং তাৎক্ষণিক সম্মত মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরিয়ত অনুমোদিত পণ্য অগ্রিম বিক্রি করাকে বাই সালাম বলা হয়। বাই সালামের বৈশিষ্ট্য হলো, অগ্রিম ক্রয়, আগে দাম পরে পণ্য। পণ্যের দাম চুক্তির সময় দিতে হয়। এই পদ্ধতিতে অর্থায়নের সময় পণ্যের অস্তিত্ব থাকতে পারবে না। পণ্যের নাম, বিবরণ, পরিমাণ, গুণাগুণ, আকার ও দাম সুস্পষ্টভাবে চুক্তিতে উল্লেখ থাকতে হয়। সরবরাহের সময় ও স্থান আগে থেকে জানা থাকতে হবে। পণ্য পরিমাণযোগ্য, ওজনযোগ্য, গণনাযোগ্য ও পরিমাপযোগ্য হতে হবে।
Bai-Salam may be defined as a contract between a Buyer and a Seller under which the Seller sells in advance the certain commodity (ies)/product(s) permissible under Islamic Shari‘ah and the law of the land to the Buyer at an agreed price payable on execution of the said contract and the commodity (ies)/product(s) is/are delivered as per specification, size, quality, quantity at a future time in a particular place.
In other words, Bai-Salam is a sale whereby the seller undertakes to supply some specific Commodity (ies) /Product(s) to the buyer at a future time in exchange of an advanced price fully paid on the spot. Here the price is paid in cash, but the delivery of the goods is deferred.
৪) বাইয়ে ইসতিসনা:
ইসতিসনা মানে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোনো জিনিস নির্মাণ বা উৎপাদন করে দেওয়ার জন্য কোনো দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া। অর্থাৎ ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে বা কিস্তিতে সম্মত মূল্য পরিশোধের শর্তে ক্রেতার আদেশে নির্দিষ্ট পণ্য তৈরি করে বিক্রি করাকে বাই ইসতিসনা বলা হয়। এই লেনদেনে পণ্য অস্তিত্ব লাভ করার আগেই বিক্রি করা হয়। বাই ইসতিসনার বৈশিষ্ট্য হলো, পণ্যের দাম অগ্রিম/এককালীন/কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য। উৎপাদন ব্যয় নির্বাহের জন্য পণ্যের মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করা যায়। উৎপাদনকাজ শুরু হলে চুক্তি বাতিল করা যায় না। পণ্য কোথায়, কিভাবে, কার খরচে সরবরাহ হবে, তা চুক্তিতে উল্লেখ থাকতে হবে। কোনো পক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করলে দায়ী পক্ষের ওপর নির্দিষ্ট জরিমানা আরোপ করা যাবে- এমন শর্ত চুক্তিতে রাখা যাবে। জাহাজ,গাড়ী,ভারী যন্ত্র ইত্যাদি নির্মান ও সরবরাহে এ পদ্ধতিতে বিনিয়োগ হয়ে থাকে।
Istisna’a is a contract between a manufacturer/seller and a buyer under which the manufacturer/seller sells specific product(s) after having manufactured, permissible under Islamic Shariah and Law of theCountry after having manufactured at an agreed price payable in advance or by instalments within a fixed period or on/within a fixed future date on the basis of the order placed by the buyer.
৫) বাইয়ে ইসতিজার:
ইসতিজার অর্থ সময়ে সময়ে বিভিন্ন পরিমাণে পণ্য ক্রয় করা। ইসলামী আইনশাস্ত্রে ‘ইস্তিজারার’ হল একটি চুক্তি যেখানে একজন ক্রেতা বিভিন্ন কিস্তিতে একক চুক্তির অধীনে কিছু ক্রয় করে। যেমন,কেউ ইউনিলিভারের প্রতিবার কোন অফার এবং গ্রহণ বা দর কষাকষির প্রয়োজন নেই কেননা এখানে মালামালের ক্রয়মূল্য নির্ধারিত। যেমন, বাটা, ইউনিলিভার, শাহ সিমেন্ট ইত্যাদি কোন বড় কোম্পানীর ডিলার। চুক্তিটি একটি একক চুক্তি হিসাবে বিবেচিত হবে যেখানে সমস্ত শর্তাবলী চূড়ান্ত করা হয়। “বাই-ইস্তিজারার” এমন একটি ক্রয়-বিক্রয়কে বলা হয় যেখানে একজন ব্যক্তি সরবরাহকারীর কাছ থেকে সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করতে থাকেন এবং কোনো প্রস্তাব (ইজাব) এবং গ্রহণ (কবুল) হয় না এবং তাদের মধ্যে দর কষাকষি হয়। ডেলিভারি তৈরি এবং নেওয়ার প্রতিটি সময় নির্ধারিত থাকে।
The term “Bai-Istijrar” has been derived from Arabic words بيع and جر (Bai and Zarra). The word بيع means to purchase and to sell and the word جر means to hoist, to lift up, pick up, bring up. “Istijrar” (استجرار ) means to purchase goods from time to time in different quantities. In Islamic jurisprudence ‘Istijrar’ is an agreement where a buyer purchases something under a single agreement in different instalments. However, no offer and acceptance or bargain is required each time. The deal will be considered as a single agreement where all terms and conditions are finalized. “Bai-Istijrar” is called such a buying and selling where a person keeps on taking delivery of required commodities part by part from time to time from a supplier and no offer(Ijaab) & acceptance (Qobul) and bargaining between them is taken place each time of making and taking delivery.
ব্যাংকিং ব্যবসা একটি বাজার ভিত্তিক ব্যবসা। এখানে ইসলামী ব্যাংক একা কোন স্বাধীন প্লেয়ার নয়।দেশের ও নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মাচার তাকে মেনে চলতে হয়। কাজেই পণ্য বেচাকেনায় গ্রাহকের সাথে ব্যাংকের বিক্রয়মূল্য বাজারের চলমান মূল্যহারের কমবেশী হলে স্বাভাবিকভাবেই বাজার প্রভাবিত বা সোজা কথায় অস্থিতিশীল হতে পারে। তাই লাভের হার বাজারের সাথে সামন্জস্যতা রক্ষা করেই স্থির করতে হয়। এর মধ্যে সুদের কোন আলামত আবিস্কার করা বোকামিই বৈ কিছু নয়। আমরা বাজার থেকে প্রতিদিন যে গৃহাস্থলী পণ্য ক্রয় করি তার মধ্যে তো সুদ আবিস্কার করি না।
মনে রাখা আবশ্যক ক্রয় বিক্রয় সংক্রান্ত যে কোন আর্থিক লেনদেন ইসলামী বিধান মতে হালাল হবার জন্য শর্ত চারটি-ইজাব বা প্রস্তাবনা,কবুল বা প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন, ক্রেতা বিক্রয়কার মধ্যে লিখিত বা মৌখিক চুক্তি এবং চুক্তিতে সাক্ষীর উপস্থিতি। কুরআনের আয়াতটি দেখুন-
হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন একে অন্যের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের জন্যে ঋণের কারবার কর তখন তা লিখে রেখ; তোমাদের মধ্যে কোন লেখক যেন ন্যায্যভাবে লিখে দেয়; লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। যেমন আল্লাহ্ তাকে শিক্ষা দিয়েছেন, সুতরাং সে যেন লিখে এবং ঋণগ্রহীতা যেন লেখার বিষয়বস্তু বলে দেয় এবং তার প্রতিপালক আল্লাহ্কে ভয় করে, আর এর কিছু যেন না কমায়; কিন্তু ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ বা দুর্বল হয় বা লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে না পারে তবে যেন তার অভিভাবক ন্যায্যভাবে লেখার বিষয়বস্তু বলে দেয়। সাক্ষীদের মধ্যে যাদের ওপর তোমরা রাযী তাদের মধ্যে দু’জন পুরুষ সাক্ষী রাখবে, যদি দু’জন পুরুষ না থাকে তবে একজন পুরুষ ও দু’জন স্ত্রীলোক; স্ত্রীলোকদের মধ্যে একজন ভুল করলে তাদের একজন অপরজনকে স্মরণ করিয়ে দিবে। সাক্ষীগণকে যখন ডাকা হবে তখন তারা যেন অস্বীকার না করে। এটা ছোট হোক বা বড় হোক, মেয়াদসহ লিখতে তোমরা কোনরূপ বিরক্ত হয়ো না। আল্লাহর নিকট এটা ন্যায্যতর ও প্রমাণের জন্যে দৃঢ়তর এবং তোমাদের মধ্যে সন্দেহ উদ্রেক না হওয়ার নিকটতর; কিন্তু তোমরা পরস্পর যে ব্যবসায় নগদ আদান-প্রদান কর তা তোমরা না লিখলে কোন দোষ নেই। তোমরা যখন পরস্পরের মধ্যে বেচাকেনা কর তখন সাক্ষী রেখ, লেখক এবং সাক্ষী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যদি তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত কর তবে তা তোমাদের জন্যে পাপ। তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে অবহিত। (সূরা বাকারা,২৮৪)
ইসলামী ব্যাংকের বাইয়া মোডের উপরে বর্ণিত পাঁচটি ম্যাকানিজমের কোনটিতে তিনি পেলেন, দশ বছরের জন্য বিনিয়োগ মন্জুরী দিয়ে দ্বিগুণ টাকা দাবী করা হয়? এটি সম্পূর্ণ তার স্বপ্ন পাওয়া তত্ত্বই বটে। তিনি কি বাংলাদেশে ইসলামী পদ্ধতির ব্যাংকে কোন বিশেষ গ্রাহকের কেস গবেষণা করেছেন, না তিনি নিজে গ্রাহক সেজে পরীক্ষা করেছেন? আজগুবিরও সীমা থাকে, এখানে তিনি যা বলছেন তা শুধু মিথ্যা প্রলাপই নয় বরং তার অনুর্বর মস্তিষ্কের বিকলাঙ্গ চিন্তার প্রতিফলন।
Reference:
1) Usmani, Taqi: An Introduction to Islamic Finance
2) মোহাম্মদ আবদুল মান্নান: (২০১৩) ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা