বিবিধ

পাওনা টাকা আদায়ের আইনগত পদ্ধতি

পাওনা টাকা আদায়েরর জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতির সাহায্য নেয়া যেতে পারে। প্রথমত স্থানীয়ভাবে সালিশের মাধ্যমে পাওনা টাকা আদায় করার চেষ্টা করা যেতে পারে। যেসব অঞ্চলে সালিশি প্রথা বিজ্ঞজনদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় এবং যেখানকার অধিবাসীরা শান্তিপ্রিয় ও যুক্তিবোধসম্পন্ন, তারা এই উপায়ে এরকম বিরোধের নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করে থাকে। এতে মামলা-মোকদ্দমার মতো দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়ানো যায়। স্থানীয় বিজ্ঞজনরা সালিশে বসে ন্যায়ানুগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যদিয়ে পাওনাদারকে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে।

পাওনা টাকা আদায়ের আরেকটি উপায় আদালতে মামলা-মোকদ্দমা চালানো। ফৌজদারি ও দেওয়ানি এই দুই প্রকার আইনেই পাওনা টাকা আদায়ের বেশকিছু প্রতিকার পাওয়া যায়। পাওনা টাকা ফেরত না দিলে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় আদালতেই আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেভাবে টাকা উদ্ধার করা যেতে পারে-
১) উভয় পক্ষের মধ্যে আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে;
২) ফৌজদারী আদালতে গচ্ছিত চেকের বিরুদ্ধে মামলা করে;
৩) দেওয়ানী আদালতে মানি স্যুট এর মাধ্যমে;
৪) অর্থ ঋণ আদালতে ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে মামলা করে।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

১) আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে টাকা উদ্ধার
পাওনাদার দেনাদারের মধ্যে আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে টাকা উদ্ধার করা সম্ভব। এক্ষেত্রে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিগণের মধ্যস্থতায় এই আপোষ মিমাংসা হতে পারে। এক্ষেত্রে টাকার লেন-দেনের সময় উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ বা নির্দিষ্ট ফোরাম এই ধরণের আপোষ মিমাংসার ব্যবস্থা করতে পারেন। তবে সালিশী শেষে উভয়পক্ষের মধ্যে মিমাংসিত বিষয়গুলো লিখিত হওয়া অনিবার্য্য এবং সেখানে পক্ষগণ ও উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের স্বাক্ষর থাকা লাভনীয়। অন্যথায়, যেকোন পক্ষ অলিখিত সালিশীপত্রের অবৈধ বা অসুাদু ফল গ্রহণের চেষ্টা করতে পারেন।

২) ফৌজদারী আদালতে চেকের মামলার মাধ্যমে টাকা উদ্ধার
ব্যবসায়িক লেনেদেন পরিচালনা কালে বিক্রেতা বা ঋণদাতা ক্রেতা বা ঋণ গ্রহীতার নিজের হিসাবের নিজ স্বাক্ষরিত চেক জামানত হিসেবে রাখতে পারেন বা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্রেতা বা ঋণ গ্রহীতা গৃহীত টাকা পরিশোধে জন্য চেক প্রদান করে থাকেন। এক্ষেত্রে চেকের ৬ (ছয়) মাস মেয়াদ থাকাকালীন সময়ে ঋণ দাতা বা পন্য বিক্রেতা প্রদেয় চেকটি নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট এ্যাক্ট, ১৮৮১ অনুসারে নিম্নলিখিত উপায়ে টাকা উদ্ধার করতে পারেন-
ক) চেকের মেয়াদকালীন সময়ে চেকটি নগদায়নের জন্য ব্যাংক উপস্থাপন করবেন;
খ) চেকটি ডিসঅনার হওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে আইনজীবির মাধ্যমে ঋণগ্রহীতা বা চেক দাতার বরাবরে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করতে হবে। তবে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, চেক তিন বার ডিসঅনার করতে হবে। এটা সঠিক নয়। একবার ডিসঅনার করলেই লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করা যাবে।
গ) লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণের ৬০ দিনের মধ্যে মামলা করতে হবে। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন ব্যক্তি ও কোম্পানীর ক্ষেত্রে চেকের মামলা ভিন্ন উপায়ে দায়ের করতে হবে। অন্যথায়, বিজ্ঞ আদালত বিচারের পর্যায়ে মামলা আইনগত ত্রুটির কারণে খারিজ করে দিতে পারে।
ফৌজদারী আদালতের পাশাপাশি একজন পাওনাদার দেওয়ানী আদালতে নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। তবে দেওয়ানী আদালতের চেয়ে ফৌজদারী আদালতে মামলা করা যথাপোযুক্ত।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

৩) দেওয়ানী আদালতে মানি স্যুট এর মাধ্যমে
নেগোশিয়েব ইন্সট্রুমেন্ট ব্যতীত ব্যবসায়ী লেনদেনের সময় ক্রেতার বা ঋণ গ্রহীতার স্বাক্ষরিত স্বাক্ষরিত অন্যান্য কাগজপত্র দাখিলের মাধ্যমে দেওয়ানী আদালতে টাকা আদায়ের মামলা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পাওনাদার পাওনা টাকার উপর ২.৫% হারে এডভেলোরেম তৎসহ ১৫% ভ্যাট কোর্ট ফি প্রদান করে মামলা করতে পারেন। এক্ষেত্রে কোর্ট ফি সর্বদা অফেরতযোগ্য বটে। পরবর্তীতে পাওনাদার দেওয়ানী আদালতে ডিক্রী পেলে উক্ত ডিক্রী কার্যকরের মাধ্যমে টাকা উদ্ধার করতে পারেন।

৪) অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে
অর্থঋণ আদালতে মামলা করার অধিকার একমাত্র ব্যাংক ও নন ব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশনগুলোর। অর্থ ঋণ আইনের ১২ ধারা মোতাবেক ঋণ গ্রহনের সময় জামানত হিসেবে গচ্ছিত স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের পর বিক্রীত টাকা সমন্বয় শেষে বক্রী টাকা নিয়ে মামলা করতে পারেন। এক্ষেত্রে ২.৫% হারে এ্যাডভেলোরেম কোর্ট ফি প্রদানপূর্বক মামলা করা যাবে। পরবর্তীতে পাওনাদার ডিক্রী পেলে উক্ত ডিক্রী কার্যকরের মাধ্যমে টাকা উদ্ধার করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button