ঋণখেলাপির ব্যাংক-বিমার পরিচালক হওয়া কাম্য নয়
খেলাপিরা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হলে এ খাতে অনিয়ম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পরিগ্রহ করার আশঙ্কা থাকে। আইন অনুযায়ী দেশে ইচ্ছাকৃত খেলাপি কোনো ব্যাংক কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না।
ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন গত মে মাসে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। এতে সবাই আশা করেছেন দেশে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হওয়ার প্রবণতা কমবে। শুধু তা-ই নয়, ওই সময় বলা হয়েছে ইচ্ছাকৃত খেলাপির ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আথিক প্রতিষ্ঠানের পদ পাবেন না। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হয়েছেন, তারা বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন না। তাদের গাড়ি-বাড়ি নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্স করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে সরকার। ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো সম্মাননা পাবেন না কিংবা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার যোগ্য বলেও বিবেচিত হবেন না। এমনকি পেশাজীবী, ব্যবসায়িক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক সংগঠনের কোনো পদেও থাকতে পারবেন না তারা।
দৈবদুর্বিপাকে যারা খেলাপি হবেন, তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা’র নতুন সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। যিনি নিজের বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নামে-বেনামে বা অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা পরিশোধ করবেন না, তিনিই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি।
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওই তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর পাঁচ বছর না যাওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। এই আইনটি যথারীতি পরিপালিত হলে দেশে আর্থিক খাতে অনিয়ম হওয়ারই কথা নয়। কিন্তু তা হচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অগোচরে হচ্ছে, সেটি বলারও সুযোগ নেই। কেননা এখন কোনো তথ্য লুকানো যায় না। সবই তাৎক্ষণিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানানো হয় এবং জানানো যায়।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
সম্প্রতি শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘খেলাপি হয়েও বিমা কোম্পানির পরিচালক শেখ ডানিয়াল’। খবরে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ ডানিয়াল চলতি বছরের শুরুর দিকে খেলাপি হয়েছেন পদ্মা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায়। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মিরেজ এগ্রো কমপ্লেক্সের নামে নেয়া কৃষিঋণ পরিশোধ না করায় খেলাপি হয়ে পড়ে। সুদাসলে এ ঋণ ৩৮ কোটি টাকা হয়েছে। আর এ পাওনা আদায়ে গত ২৯ আগস্ট পদ্মা ব্যাংক চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে।
শেখ মোহাম্মদ ডানিয়াল বিমা খাতের আরেক কোম্পানি রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান।
আরও দেখুন:
◾ জোর করে চাকরি ছাড়ানোর বিষয়ে সিটি ব্যাংকের ব্যাখ্যা
◾ ব্যাংকারদের চাকরি সুরক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ
◾ ৩৩১৩ ব্যাংকার ১৯ মাসে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন
আমরা এত দিন ধরে বলে আসছি, খেলাপি ঋণ এড়াতে নিয়মিত তদারকি করা হোক। কিন্তু এখন দেখছি খেলাপি হয়েও একাধিক বিমা প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের মর্যাদায় রয়েছেন! নিয়মিত তদারকি করে ব্যবস্থা নিলে একজন খেলাপি বিমা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারতেন না। শুধু আইন পাস করে লাভ নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও দায়িত্বশীল হতে হবে।
সোর্সঃ শেয়ার বিজ