বিশেষ কলাম

​​​​​ইসলামী ব্যাংক কার ব্যাংক?

মো: মোসলেহ উদ্দিনঃ ​​​​​ইসলামী ব্যাংক কার ব্যাংক? বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর বর্তমানে বড়ই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের ক্যাপিটাল মার্কেট বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মানি মার্কেট ভাল কখনো ভাল থাকতে পারে না তাই আরেকবার প্রমাণিত হলো। শেয়ার বাজারের লুটপাটের পাঠ চুকিয়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীকে পথে বসানোর পর লুটেরা শ্রেণীর লোলুপ দৃষ্টি পরে ব্যাংকিং সেক্টরের উপর। সু‌যো‌গের অপব্যবহার করে শুরু হয় নিত্য নতুন কায়দায় ব্যাংকের টাকা লোপাটের মহোৎসব।

দেশের সবচেয়ে বড় রাস্ট্রায়ত্ব ব্যাংকটির ইতোপূর্বে ফাস হওয়া হলমার্ক, তৎপরবর্তি বিসমিল্লাহ গ্রুপের ক্যালেংকারি কিংবা সাম্প্রতিক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাসিক ব্যাংকের ফাস হওয়া ঋণ ক্যালেংকারির ঘটনাকে ব্যাংক ডাকাতির ডিজিটাল রূপ বলেই ধরে নেয়া যায়। এসব ঘটনাকে বিজ্ঞজনেরা অনুরূপ অগনিত ঘটনার যতকিঞ্চিত বলেই মনে করেন। এর বাইরে অপরাপর ব্যাংক সমুহও যে খুব ভাল নেই তা বুঝা যায় ব্যবসায়ী কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললেই। এক সময় ব্যাংক সমুহ ব্যবসায়িক চাহিদা মোতাবেক ঋণ দিতে পারতো না আমানতের অভাবে।

আরও দেখুন:
ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার কোথায় কোথায় জরুরী-৩

এইতো গত বছরও অনেক ব্যাংক তাদের অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখার স্বার্থে অনেক ক্ষেত্রে অযৌক্তিক রেটে আমানত নিতো জনসাধারণের নিকট থেকে। তবে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের অভাবে সেই আমানত লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করতে না পারায় তা আবার বোঝা হয়ে দাড়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক গুলোর জন্যই। যার ফলে এ বছরের শুরুতেই আবার ব্যাংক গুলো আমানতের উপর দেয় মুনাফা/সূদের হার শতকরা ৪ ভাগেরও বেশী কমাতে বাধ্য হলেও ব্যাংক গুলোর অতিরিক্ত/অবিনিয়োগকৃত আমানতের পরিমাণে কান হেরফের হয়নি। অতিরিক্ত/অবিনিয়োগকৃত আমানতের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর দ্রুতগতিতে বাড়া খেলাপি/শ্রেণিকৃত ঋণ প্রবণতা একরকম বোঝার উপর লোহার আটি হিসাবেই দেখা দিয়েছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

দেশের শেয়ার মার্কেট যখন কোমায় এবং মানি মার্কেট যখন ঝিমায় তখনো দেশের একটি মাত্র ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ধ্রুব তারা হয়ে এমন কি বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সীমান ছাড়িয়ে জ্যোতি ছড়াচ্ছে সারা দুনিয়ায়। বৃটেনের প্রাচীনতম ম্যাগাজিন “দি ব্যাংকার” এর বাৎসরিক জরিপে দুনিয়া সেরা হাজার ব্যাংকের তালিকায় ২০১২ সালে একমাত্র ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ হতে তালিকাভূক্ত হয়ে দেশের মুখ বিশ্বের দরবারে উজ্জল করতে পেরেছে। মোট চারটি প্যারামিটারে রেন্কিং এ Performance ক্যাটাগরিতে ১৭তম, Return on Asset এ ৭০তম, Return on Capital ৮৬৮তম এবং Tier 1 Capital এ ১০০০তম স্থান অধিকার করে। দেশে ব্যাংকিং ইতিহাসে এমন অর্জন কি আছে আরো কোন ব্যাংকের? দেশের মোট আমানতের ৭.৭ % বিনিয়োগের ৮.৭ % আমদানী বানিজ্যের ১২% রফতানী বাণিজ্যের ১১% এবং বৈদেশিক রেমিটেন্সের ৩০% নিয়ন্ত্রণকারী এ ব্যাংকটিই হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। গত বছর মার্চে ব্যাংকটি সাফল্যের পথচলায় ত্রিশ বছর পূণ করেছে।

অব্যাহত সাফল্যের পথে চলা এ ব্যাংকটির সাথে আমানতকারী এবং বিনিয়োগ গ্রহিতা হিসাবে যারা তিরিশ বছর পূর্ণ করেছেন এবং যারা পরে যোগ দিয়েছেন তাদের কাউকে কোনদিন ভাবতে হয়নি কিংবা প্রশ্ন তুলতে হয়নি ব্যাংকটি কার? ব্যাংকের জাত পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠার ঘটনাটি একেবারে নতুন যেমন নয় নয় তেমনি অতি পুরাতনও। এর আগে ২০০৫ সালে সারাদেশে জেএমবির একযোগে ৫০০ স্থানে বোমা ফাটানোর পর জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমানের গ্রেফতারস্থল সিলেটের সূর্যদিঘল বাড়ীতে অপরাপর কয়েকটি ব্যাংকের চেক বইয়ের সাথে ইসলামী ব্যাংকের কোন শাখার একটি বই পাওয়া এবং অপর এক নেতা সাইদুর রহমানের ব্যাংক হিসাব ইসলামী ব্যাংকে থাকাকে কেন্দ্র করেই মূলত: তখন ইসলামী ব্যাংকের উপর জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ আনা হয়। আর সাথে সাথে মিডিয়ায় একপেশে প্রচারণায় ব্যাংকটিকে কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে একে বন্দ্ধের দাবী উঠানো হয়। সবচেয়ে ঝাকিটা লাগে যখন ঢাকার কোন শাখা থেকে ঢাকার বাইরের কোন শাখায় জেএমবি সংশ্লিষ্টতায় অভিযুক্ত জনৈক সাইদুর রহমানের একাউন্টে ৮টি টিটির মাধ্যমে ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা পাঠানোর ঘটনাকে জঙ্গি অর্থায়ন হিসাবে ধরে ইসলামী ব্যাংককে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

যতদুর মনে পড়ে একই কারণে তখন জনতা ব্যাংকের উপর আরো বেশী পরিমা্ণ টাকা জরিমানা করলেও এ নিয়ে মিডিয়া ততটাই নীরব থাকে যতটা সরব ছিল ইসলামী ব্যাংকের ব্যাপারে। পরে মিডিয়ার অব্যাহত সুড়সুড়িতে প্রবাভিত কিছু লোক দু‘একটি শাখায় যেয়ে ভীড় করে এবং দ্রুত ব্যাংক হিসাব বন্দ্ধ করে তাদের আমানত উঠানো শুরু করে। তবে এ প্রবণতা খু্ব তাড়াতাড়িই বন্দ্ধ হয়ে যায় এবং সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করে। যদিও অতি উৎসাহী কিছু মিডিয়া তাদের অপপ্রচার অব্যাহত রাখে। এ প্রসঙ্গে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান জনাব শাহ আব্দুল হান্নানের একটি মন্তব্য খুবই প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় উল্লেখ করতে চাই। তিনি কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাব মুক্তমঞ্চে ইসলামী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখা আয়োজিত এক গ্রাহক সমাবেশে বলেছিলেন “ ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ সংঘবদ্ধ অপপ্রচার হয়েছে অন্য কোন ব্যাংকের ব্যাপারে অনুরূপ অপপ্রচার হলে বাংলাদেশের তো বটেই পৃথিবীর যে কোন দেশের যে কোন ব্যাংক বন্দ্ধ হয়ে যাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল।”

এ অপপ্রচারের ব্যাপকতা ধীরে ধীরে কমে এলেও একবারে কিন্তু বন্দ্ধ হয়নি। চলে মাঝে মধ্যেই বিষেদগার অপ্রাসঙ্গিক খোচানি এবং মিথ্যাচার। এতোসব বিরূপ প্রচারণা যাদেরকে ভীত এবং বিভ্রান্ত করতে সেই জনগণই কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের কাছে ভিড়েছে আরো বেশী। যার প্রমাণ হিসাবে একটি পরিসংখ্যানই যথেস্ট। আর তা হলো ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটি ২০০০ সাল পযর্ন্ত ১৭ বছরে মোট আমানত সংগ্রহ করে ৩২০০ কোটি টাকা। আর সবচেয়ে বৈরিতার এক যুগ ২০০১ থেকে ২০১২ এর মধো ব্যাংকের মোট আমানত পৌছায় ৪২০০০ কোটি টাকায়। শুধু কি তাই এই বছর রেকর্ড সংখ্যক ১৯ লক্ষ নতুন গ্রাহক ব্যাংকে হিসাব খোলেন। সবচেয়ে প্রতিকূলতার বছর ২০১৩ সালে তা দাড়ায় ৪৭০০০ কোটি টাকার উপরে। ২০১৪ সালে ৫০০০০ কোটি টাকার আমানতের Land Mark ছাড়িয়ে ব্যাংকটি এখন লক্ষ্ কোটি আমানতের সুবিশাল টার্গেটে এগিয়ে চলেছে।

ফেব্রুয়ারী মাসে শাহবাগের অবস্থান নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চ নামের সংগঠন এবার সরব হয় যুদ্ধাপরাধের মামালায় বিচারাধীন অভিযুক্তদের ফাসীর দাবি নিয়ে। তাদের নানা দাবীর সাথে এক পর্য়ায়ে যুক্ত হয় ইসলামী ব্যাংক বন্দ্ধের দাবী। কারণ ‘ই’ তে যে ইসলামী ব্যাংক হয় তাই ‘‘তুই রাজাকার” বাণে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। একই সাথে মিডিয়ায় চালানো হয় সিন্ডিকেটেড প্রপাগান্ডা। শাহাবাগের গালিগালাজের লাইভ শো‘র পাশাপাশি বিশেষ রিপোর্ট, টক শো তো চলে রাতদিন। তাতেও ফল খুব একটা হচ্ছে না দেখে এবার কৌশল পাল্টে ফেলা। এবার আর কথায় নয় জোর করেই বন্দ্ধ করার কাজে হাত দেয় কিছু লোক। শুরু হয় রাস্তার পাশে থাকা ব্যাংকের বুথ এবং কিছু কিছু শাখা কার্য়ালয় আক্রমণ, ভাংচুর অগ্নি সংযোগ ইত্যাদি।

প্রতিটি ঘটনার পরপরই শাহবাগে ঘোষনা আসে “ভাইসব এই মাত্র খবর এলো অমুখ যায়গায় ইসলামী ব্যাংকের বুথে আগুণ দেয়া হয়েছে, শাখায় আক্রমণ হয়ে” ইত্যাদি। তখন উপস্থিত শ্রোতাদের সোল্লাসে চিৎকার বিজয় হয়েছে বিজয় হয়েছে ইত্যাদি। মাঠের অবস্থা এই তখন পুলিশকে এসব ধ্বংসাত্নক কাজ না রুখে বরং ঢাকার কোন এক শাখার শাখা প্রধানকে আটক করা হয় যখন তিনি থানায় যান তার শাখার ভাংচুরের শিকার এটিএম বুথের ব্যাপারে জিডি করতে। আর সাথে সাথে মিডিয়ায় তা ফলাও করে প্রচার শুরু হয় যে রাজনৈতিক সন্ত্রাসে অর্থ যোগানের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের অমুক অমুক গ্রেফতার। সাধারণ জনমনে ভিতি আর বিরূপ মনোভাব তৈরীতে এর চেয়ে আর মোক্ষম পদক্ষেপ কী হতে পারে? এবারকার প্রচারণায় দূর্বল চিত্তের অতি অল্প মানুষ কিছু সময়ের জন্য কিছূটা বিভ্রান্ত হলেও ধীরে ধীরে তা আবার কেটে যায়। শাখায় শাখায় বিপূল সংখক গ্রাহক দলে দলে এসে ব্যাংকের প্রতি তাদের সংহতির জানান দিয়ে যান।

দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার অভিভাবকত্ব এবং নিয়ন্ত্রণের ভার যাদের উপর দেশের সেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের রহস্যজনক ভূমিকা জাতি আরেকবার প্রত্যক্ষ করেছে অবাক বিস্ময়ে। দেশের বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত দেশের সেরা ব্যাংকটির বিরুদ্ধে রাতদিন অপপ্রচার চলছে, বুথে হামলা করা হচ্ছে, আগুণ দেয়া হচ্ছে, ক্ষতি করা হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ। এমন সময়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর নিরবতা কাদিয়েছে দেশের কোটি কোটি মানুষকে। এটি জনগণের নিকট ভালভাবে যায়নি। তাছাড়া নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সহযোগিতা চেয়ে করা ইসলামী ব্যাংকের লিখিত আবেদন অনুযায়ি সময় মত ব্যবস্থা নেয়া গেলে নৈরাজ্যের উত্তাপ আরো কম হতো।

অবশ্য প্রত্যেকটা ক্রিয়ারই একটি সমপরিমাণ প্রতিক্রিয়া থাকে। ইসলামী ব্যাংকের বুথ এবং শাখা আক্রান্তের ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব যেই আইন শৃংখলা বাহিনীর তাদের নিরবতার জবাব আবার দিয়েছে জনগণই। অপরাপর কিছু ব্যাংক বুথে জনতার পাল্টা আক্রমনই সম্ভবত: ফ্যাসিবাদি মহলের ধ্বংসাত্নক এবং ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতা বন্দ্ধে লাগসই পদক্ষেপ ছিলো। কারণ এর পরই ক্যাবিনেট মিটিং এ সিদ্ধান্তের খবর পত্র পত্রিকায় আসে এবং জাতি জানতে পারে “ইসলামী ব্যাংকে হাত দিবে না সরকার”। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে সবকিছু। ধন্যবাদ জনগণ ধন্যবাদ সরকার।

অবস্থা যখন এই তখন একটু তলিয়েই দেখা যাক না ইসলামী ব্যাংকের কী এমন গোপন রহস্য যা তাকে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের সুনামির মুখেও হিমালয় সম দৃঢ়তায় মাথা উচু রাখতে শক্তি যুগিয়েছে বারবার। কী কারণে হুজুগে প্রবণ বলে কথিত এ জাতি ঠান্ডা মাথায় নাহক দাবীর নীরব জবাব দিয়েছ্। তা যদি দেখতেই হয় তাহলে চলে যেতে হবে আবারো ত্রিশ বছর পেছনে যখন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। দেখা যায় ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের মাঝে কেউই বড় মাপের ব্যবসায়ী ছিলেন না। আর তা্ই কেউ ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে ব্যাংকে আসেন নি। তারা এসেছেন আল্লাহ তায়ালার হারাম ঘোষিত সুদি ব্যাংক ব্যবস্থার যাতাকল থেকে জাতিকে মুক্ত করত। আর তাই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আগে পবিত্র কাবা শরীফেল গিলাফ ধরে শপথ নিয়ে উদ্যোক্তারা মহান আল্লাহর কাছে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছিলেন একটি সুদমুক্ত এবং কল্যাণমুখী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে। আর তাই শুরু থেকেই সততা ও ইনসাফ ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রতিশ্রুতিশীল মনোভাবের কারণে এক ব্যতিক্রমধর্মী যাত্রা লক্ষ্য করা যায়। বিগত ত্রিশ বছরে অনেক ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী ব্যক্তির পরিবতন হলেও নীতির ক্ষেত্রে কোন আপোষ হয়নি কোন পযায়েই।

ব্যাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ সদস্যদের যোগ্যতার ধারে কাছেও অন্যকোন ব্যাংক আছে বলে মনে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, এফসিএ, পিএইচডি ডিগ্রিধারী, প্রকৌশলী ও ব্যারিস্টার সমন্বিত এবং ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনীতি বিষয়ে দেশী বিদেশী উচ্চ শিক্ষিতদের নিয়ে গঠিত পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব যিনি পালন করেন তিনিও উচ্চ শিক্ষিত এবং বিদগ্দ্ধ মননশীল ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ মানের নিরপেক্ষতা বজায় রাখায় কেবলমাত্র যোগ্য লোকদেরই চাকুরী হয় এই ব্যাংকে। ব্যাংকের মোট জনশক্তি বর্তমানে ১৩০০০ হাজার প্রায়। বিগত ৩১ বছরে এমন একটি ঘটনাও পাওয়া যাবে না যেখানে অবৈধ লেনদেন/তদবিরের মাধ্যমে কারো চাকুরী হয়েছে ইসলামী ব্যাংকে। প্রমোশন, ট্রান্সফার সকল ক্ষেত্রেই সচ্ছতা, জবাব দিহিতা এবং ন্যায়নিষ্টতা নিশ্চিত করা হয়। ফলে সভাবতই কর্মী সাধারণ ব্যাংকের প্রতি নিবেদিত থেকে গ্রাহক সেবা প্রদান করে ব্যবসা উন্নয়ন করে থাকেন।

ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন তিনিও একজন অত্যন্ত উচুমানের ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোক। কর্পারেট লীডারশিপ বলতে যা বুঝায় তার সবটুকুই আছে তার মাঝে। তার যোগ্য নেতৃত্বে ইসলামী নীতি আদর্শ ঠিক রেখে ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজে আন্তর্জাতিক মানের কর্পোরেট কালচার উন্নয়নে তিনি যুগপৎভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

ইসলামী ব্যাংক সেবা দানের ক্ষেত্রে দুইটি নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করে থাকে। এর একটি হলো কল্যাণমুখীতা এবং অপরটি হলো সততার নীতি ও ন্যায় নিষ্টতার নীতি। ফলে ইসলামী ব্যাংকে যে কোন সমাজের এবং কোন মানের মানুষ এসে সেবা গ্রহণ করেন স্বচ্ছন্দে। বিনয়ী ব্যাংকের কমর্কর্তাগণ গ্রাহকদেরকে সেবা যেমন দেন অকৃত্রিম আন্তরিকতায় তেমনি সম্মানও করেন তাদের। ফলে ক্ষীন দেহের মলিন পোশাকের একজন কৃষক/কিষাণী কিংবা দিনমজুরও ইসলামী ব্যাংকে সেবা গ্রহণ করে নিজে সম্মানিত বোধ করেন। যে কৃষক মাটি চিড়ে মাঠে ফসল ফলায় তার মর্যাদা আসলে কোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে নেই। ব্যাংক হিসাব খোলতে এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে তাকে কমিশনভোগি দালালের আশ্রয় নিতে হয়। হাসপাতালে তার ভাল চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। আইনের আশ্রয়ের জন্য আইন ঘরে তার জন্য কোন চেয়ার থাকেনা।

সেই কৃষক কিংবা শ্রমিক যখন ইসলামী ব্যাংকে এসে তার নায্য সেবা সময়মত তখন তার আর আনন্দের সীমা থাকে না। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তপ্ত মরুভুমি, ইউরোপ আমেরিকার হিমশীতল পরিবেশ কিংবা মালয়েশিযার বিপপদসঙ্কুল পাম বাগানে কমর্রত প্রবাসীর পাঠানো টাকার জন্য প্রত্যন্ত গ্রাস থেকে ছুটে আসা প্রবাসীর পিয়জন সে মা, বাবা, ভাইবোন স্ত্রী, পুত্র যেই হোন না কেন তিনিও সেবা পান সযত্ন সহযোগিতায়। কে কতটা শিক্ষিত দেখতে কতটা স্মার্ট এবং কার সামাজে তার অবস্থান কতটা উচু বা নিচু তা বিবেচনায় কখনও সেবা দেয়া হয়না। গ্রাহক হিসাবে তো বটেই মানুষ হিসাবেই প্রত্যেকের সম্মানের যে স্থানটা আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করে দিয়েছেন তার প্রতিই সদা শ্রদ্ধ্যাশীল এই ব্যাংকের প্রত্যেকটা কমর্র্কতা এবং কর্মচারী।

সাধারণ সেবা যেমন হিসাব খোলা, বৈদেশিক রেমিটেন্স গ্রহণ ইত্যাদি তো বটেই বিনিয়োগ বিতরনেও সততা এবং ন্যায় নিষ্টতার নীতিতে সদা অবিচল ইসলামী ব্যাংকের কর্মী সাধারণ। সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই গ্রাহকদের উপর অন্যায় কোন সুবিধা বিনিময়ের চাপ কিংবা চাপের বাহানাও থাকে না।বিনিয়োগ গ্রাহক নির্বাচনে গ্রাহকের প্রকৃত ব্যবসায়িক যোগ্যতা, বিনিয়োগের নিরাপত্তা বাইরে ব্যক্তির দলীয় কিংবা ধর্মীয় পরিচয়কে কখনই বিবেচনায় নেয়া হয় না। বিনিয়োগ অনেুমোদন প্রক্রিয়ায় শাখা অফিস থেকে শুরু করে কোন উর্তধন পর্যায়েও কোন ধরনের অনৈতিক তদবির ও লেনদেনের সুযোগ নেই এবং প্রয়োজন হয় না। এ বিষয়ে একটি বিষয়ের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তা হলো ব্যাংক থেকে যে কোন বাণিজ্যিক ঋণ গ্রহণে পর অনুমেদিত ঋণের টাকার উপর আরো ১০% যোগ করে তার উপর ইন্সুরেন্স করার একটি বিধিবদ্ধ নিয়ম আছে। হিসাব অনুযায়ী গ্রাহকের নিকট আদায়যোগ্য প্রিমিয়ামের উপর প্রাপ্য কমিশনের টাকা (যা মোট প্রিমিয়ামের ৪০-৬০%) বাংলাদেশে কেবল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরাই ফেরত পান যা। ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ প্রস্তাবের কোন প্রসেসিং খরচ নেই।

কল্যাণমুখিতার একটি বিশেষ দিক হলো ইসলামী ব্যাংক বিনিয়োগ বিতরণে দেশ ও মানব কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেয়। দেশীয় আইন ও শরীয়ত নিষিদ্ধ/অপছন্দনীয় কোন খাতে বিনিয়োগ করে না ইসলামী ব্যাংক। গত তিরিশি বছরে ইসলামী ব্যাংক তামাক/তামাকজাত পণ্যে এক পয়সাও বিনিয়োগ না করে এর কল্যাণমুখী নীতি অনুসরণের ধারা অব্যাহত রেখেছে।

অবশ্য ব্যাংকটির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আনা হয় যে এ ব্যাংক থেকে কোন বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠি লাভবান হচ্ছে। অন্য কথায় ব্যাংকটি বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের অর্থায়নের উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি পুরোপুরি একটি অনায্য এবং অযৌক্তিক অপবাদই বলতে হবে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে। দূর্ভাগ্য বশত: এ বিষয়ে কখনই ব্যাংক কতৃপক্ষকে কোন প্রকার আত্নপক্ষ সর্থনের সুযোগ না দিয়েই চলে প্রচারণা। টিভি টকশো তে চরম বিরোধ ভাবাপন্ন কিছু লোক এন অনেকটা ফরমায়েশী ধাচের কিছু কথা বারবার বলানো হয় যাতে মানুষ বিশ্বাস করে আর কি। কোন রিপোর্ট করার ক্ষেত্রেই হোক আর টকশোতে অভিযোগ করার ক্ষেত্রেই হোক অভিযুক্তের বক্তব্য প্রচার নূন্যতম নৈতিকতার মধ্যে পড়লেও এক্ষেত্রে তা মোটেই করা হয় না।

তবে ব্যাংকিং বিষয়ে যতটুকু ধারণা আমার আছে তাতে দেখা যায় ব্যাংকে যারা টাকা জমা রাখেন তারা তাদের প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে আবার টাকা উঠিয়েও নেন। গত ৩০ বছরে এমন প্রমাণ কি কেউ দিতে পারবে যে ইসলামী ব্যাংকে জমাকৃত টাকা চাহিবামাত্র দেয়া হয়নি। আসলে গ্রাহকের জমাকৃত টাকা ইচ্ছা করলেই কোন রাজনৈতিক দলতো দুরের কথা কোন ভিক্ষুককে দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ ব্যাংকিং ব্যবস্থা এমন ভাবেই সুনিয়ন্ত্রিত যাতে দৈনন্দিন লেনদেনের পর পাই পাই হিসাব মিলি্য়েই ব্যাংকের কমর্কতা কর্মচারীদের ব্যাংক ত্যাগ করতে হয়। কাজেই আমানতকারী কোন টাকা এমনিতে চাইলেই কেউ কাউকে দিয়ে দিতে পারে না। অবশ্য আরেকটি সুযোগ থাকে ব্যাংক থেকে টাকা বের করার। তা হলো কোন গ্রাহককে ঋণ/বিনিয়োগ হিসাবে টাকা দেওয়া। এক্ষেত্রেও অবশ্য পালনীয় বিধিবিধান আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। নিয়মের সম্পূর্ণ ব্যত্যয় ঘটিয়ে ব্যাংকের ইতিহাসে ব্যাংক থেকে টাকা লোপাটের সবচেয়ে বড় ঘটনা হলমার্ক কেলেংকারী।

এ ঘটনায় সরকারের প্রভাবশালী মহলের যোগসাজস যেমন তেমনি ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্তাবধানগত দূর্বলতা। তা না হলে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাকের ডগায় এতবড় হরিলুটের ঘটনা ঘটতো না। বেপরোয়া সরকারী ঋণ ব্যাপক অনিয়মের কারণে অনুরূপ হাজারো সমস্যার বেড়াজালে অপরাপরা রাষ্ট্রায়ত্ব এবং প্রাইভেট ব্যাংকগুলোরও এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। অনিয়মের বড় বড় ঘটনার পর কিছুদিনের জন্য মিডিয়া বেশ সরব থাকলেও এখন পুরোপুরি নীরব। এত বড় ঘটনার পরও কিন্তু সোনালী ব্যাংক বন্দ্ধের দাবী উঠেনি কোন মহল থেকেই। এমনকি টাকা আদায়ের কোন গরজও যেই সোনালী ব্যাংকের নেই তা প্রমাণিত হয় টাকা আদায়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোন মামলা না করার ঘটনা থেকে। যার গেলো টাকা তারই যেখানে সবার আগে মামলা করার কথা সেখানে সোনালী ব্যাংক নিজে মামলা না করে দুদক দিয়ে মামলা করিয়ে কি আসলে হাসিল করতে চাইছে তা বুঝার জন্য আর বেশী সময় অপেক্ষা হয়ত করতে হবে না জাতিকে। ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ যাবৎ এমন কোন ঘটনার নজির নেই যেখানে অনিয়ম করে কোন গ্রাহককে ব্যাংকের টাকা লোপটের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।

আরেকটি অভিযোগ করা হচ্ছে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে তা হলো ব্যাংকটির মুনাফার অংশ বিশেষ নিয়ম ভেঙে বিশেষ কাউকে দেয়া হচ্ছে কিনা। যেমনটি মাননীয় হোম মিনিস্টার আসাদুজ্জামান কামাল বলেছেন। এ আগেও অনুরূপ কথাবার্তা এসব পদে সমাসীনরা বার বার বলেছেন। তবে কথার স্টাইলটা এমন ছিলো যা থেকে মনে হতে পারে ইসলামী ব্যাংক বুঝি গত একত্রিশ বছরে এবারই ১ম হিসাব জমা দিয়েছে।

মৌলবাদের অর্থনীতির প্রবক্তা ড. আবুল বারকাতের গবেষণায় এমনি তত্ত্ব বের করার চেষ্ঠা করেছেন যে ইসলামী ব্যাংক মৌলবাদী অর্থনীতির অংশ এবং এর আহরিত মুনাফার সিংহ ভাগরই বেনিফিশিয়ারী তার ভাষায় বিশেষ কোন মৌলবাদী গোষ্ঠী। ব্যাংকের মুনাফার অংশ কিভাবে কোন খাতে দেয়া যাবে তা নির্ধারিত আছে বিধিবদ্ধ আইনে। আইন অনুযায়ী পরিচালন মুনাফার ৪২.৫০% সরকারী কোষাগারে প্রদান করে বাকী মুনাফার টাকা থেকে প্রভিশন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঞ্চিতি রাখার পর যা থাকে তা হোল্ডারদেরকে ডেভিডেন্ট আকারে প্রদান করা হয়। এসব বিধিবদ্ধ খাতের বাইরে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোন ব্যক্তি বা দলকে মুনাফার টাকা প্রদানের সুযোগ কখনো ছিলনা এবং এখনও নেই।

এ বিষয়ে বিশদ বিবরণ জানার প্রয়োজন বোধ করলে ব্যাংকের বাৎসরিক প্রতিবেদন (available at: www.islamibankbd.com) থেকে যে কোন সময় জানতে পারা যায়। তা ছাড়া ছাপানো কপিও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারী অনেক দফতরেই ব্যাংক জমা দিয়ে থাকে নিয়মিত। আবার যে কউ ব্যাংকের নিকট চাইলেও পেতে পারেন বিনামূল্যে। সেখান থেকেও পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব। কাজেই মাননীয় কিংবা অধ্যাপক আবুল বারাকাতের অভিযোগের পেছনে যে এক ধরনের ক্লাইমেক্স তৈরীর বদমতলব থাকে তা বুঝতে কাউকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক হওয়া লাগবে না।

জনাব আবুল বারাকাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক বর্তমানে তিনি জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদে সমাসীন। নিছক আক্রোশ বশত: স্বকপোল কল্পিত অভিযোগ একটি ব্যাংকের উপর চাপিয়ে এর সাথে আমানত, বিনিয়োগ, বৈদেশিক রেমিটেন্স গ্রাহক এবং শেয়ার হোল্ডার হিসাবে সম্পৃক্ত কোটি মানুষের প্রিয় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এক অন্যায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। অথচ যেই ব্যাংকের তিনি চেয়ারম্যান সেই জনতা ব্যাংকের টাকা হরিলুটের যেসব খবর গণমাধ্যমে আসছে তার দায় দায়িত্বের ব্যাপারে তিনি কোন ভূমিকায় আছেন তা কি জনগণ জানতে পারবে কখনও। যুদ্ধটি তিনি বন্দ্ধ করবেন কিনা সেটা তার ব্যাপার হলেও জনগণ যে তাদের কথায় কান দিচ্ছে না তা কিন্তু আরেকবার প্রমাণিত হলো। সেই ফেব্রুয়ারীতে যখন গণজাগরণ মঞ্চ ব্যাংক বন্দ্ধের দাবীতে সরব সে মাসেও নতুন এক লক্ষ লোক একাউন্ট খোলে ইসলামী ব্যাংকের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন নীরবেই।

ইসলামী ব্যাংক বিশ্বাস করে শুধুমাত্র শহুরে ধনিক শ্রেণীকে আরো ধনী করলেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে না। প্রকৃত এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য শহর গ্রামের বৈষম্য কমাতে তাই ব্যাংকটি মফস্বলের সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে সেবা দিতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়েও শাখা খোলে থাকে। যা অপরাপর প্রাইভেট ব্যাংক গুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ব্যতিক্রমি বৈশিষ্ঠের পরিচায়ক। ১৯৯৫ সাল থেকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থিক জীবন মান উন্নয়নে পরিচালিত ব্যাংকের পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প (আরডিএস) সেবার আওতায় ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত, দারিদ্র পীড়িত ৮ লক্ষ পরিবার সংযুক্ত থেকে নিজেদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এনজিও সুদের যাতাকলে পিষ্ট গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প মুনাফায় ইসলামী ব্যাংকের সূদমুক্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম সংশ্লিষ্ঠ জনপদের মানুষের নিকট আজ উন্নয়নের বাতিঘর।

ব্যাংকিং ব্যবসা কার্যক্রমের পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংক শুর থেকেই সামাজিক দায়বদ্ধতা কাজের অংশ হিসাবে নানামুখী কাযক্রম শুরু করে। দূ:স্থ অসহায় মানুষকে আর্থিক অনুদান, শিক্ষাবৃত্তি, দূ:স্থ নারী পূণর্বাসন ইত্যাদি। সূলভে মানসম্মত স্বাস্থসেবা প্রদানের প্রত্যয়ে গড়ে তোলা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল দেশের কোন বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা এবং চমৎকার পরিচালনার নজির বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি আর নেই। ছাড়া ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (রাজশাহী), ইসলামী ব্যাংক টেকনিক্যাল ইনিস্টিটিউট, ইসলামী ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ সব মানুষের প্রতিষ্ঠান হিসাবেই কাযক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সাংবাৎসরিক বৃক্ষরোপন, প্রাকৃতিক দূর্যোগে আক্রান্তদের মানবিক সহায়তা, শীতার্থ মানুষকে শীতবস্র প্রদান, রমজান মাসে দরিদ্র রোজাদারদের জন্য খা্দ ও আর্থিক সহায়তার তোহফা উল্লেখযোগ্য। যেখানে বিশেষ একটি ব্যাংকের তাদের একযুগের ব্যয়কে বাৎসরিক বাজেট দেখিয়ে সারা দেশে বিলর্বোড প্রচারণায় মেতে উঠেছে সেখানে ব্যাংকিং খাতে সিএসআর কার্যক্রমের পাইওনিয়ার এই ব্যাংকটি বরাবরই প্রচারবিমুখ থেকেছে এসব কার্যক্রমের ব্যাপারে।

ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পক্ষের সেবামূলক মনোভাব, নির্বাহী/কর্মকর্তা/কর্মচারীদের আন্তরিক এবং নিবেদিত প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে দেশের আপামর জনসাধারণের সাথে ব্যাংকটির সম্পৃক্ততায় এর আমানতের ভিত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উপাদানে কঠিন কনক্রিটের মানে উন্নীত। ব্যাংকটির এই আমানতের বড় অংশিদার দেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ আবেগে নয় চলেন বাস্তবতা বিবেচনায়। সহজ প্রবেশাধিকার, স্বচ্ছন্দ সেবা প্রাপ্তি, সহযোগিতামূলক আচরণই এ ব্যাংকটির সাধারণ গ্রহণযোগ্যতার অন্যতম কারণ বলেই আজ এ ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা দিনদিন বেড়েই চলছ। এ নিখাদ আস্থার কারনেই আজ শ্রেণী পেশা নির্বিশেষ সমাজের সকল স্তরের মানুষ মনে করে “ইসলামী ব্যাংক আমার ব্যাংক”। কাজেই আক্রোশ কিংবা বিদ্বেষ নয় মানুষের আস্থা অর্জনে ইসলামী ব্যাংকের নীতি অন্যরাও অনুসরণ করলে উপকৃত হতে পারে।

লেখকঃ মো: মোসলেহ উদ্দিন, ব্যাংকার ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button