ইসলামী ব্যাংকিং

ব্যাংক আমানতের সুদ বা বাণিজ্যিক সুদ কি জায়েজ-২

মুহাম্মদ শামসুজ্জামানঃ ব্যাংক আমানতের সুদ বা বাণিজ্যিক সুদ কি জায়েজ? তানতাভীর ফতোয়া ও ইসলামী ব্যাংকিং: দ্বিতীয় কিস্তি – ফতোয়া হলো বিধান ও সমাধান, যা কোনো ঘটনা বা অবস্থার প্রেক্ষিতে ইসলামী শরীয়তের দলীলের আলোকে মুফতি বা ইসলামী আইন-বিশেষজ্ঞ প্রদান করে থাকেন। এটা বিসেষজ্ঞ মতামত যার ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যখন কোন ব্যক্তি সরাসরি কুরআন ও হাদিস কিংবা ফিকহের আলোকে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান বের করতে অপারগ হন তখন তিনি মুফতীর কাছে এই বিষয়ের সমাধান চান। এটিকে ইসলামের পরিভাষায় ইসতিফতা (আরবিকে:اِسْتِفْتَاء) বলে। মুফতি তখন ইসলামী শরিআতের আলোকে সমস্যাটির সমাধান জানিয়ে দেন। এই সমাধান প্রদান করাকে ইসলামের পরিভাষায় ইফতা বলে এবং প্রদত্ত সমাধান বা বিধানটিকে ফতোয়া বলে। ফতোয়ার বিপরীতেও মতামত চলে। ইজমা বা বহুমতের সিদ্ধান্ত কোন সিংগেল ফতোয়ার চেয়েও শক্তিশালী।

ব্যাংক আমানতে আমানতকারীকে ব্যাংক যে বিনিময় দেয় তাকে ব্যাংকগুলো সুদ নামেই দেয়, এখানো কোন লুকোচুরি নেই। তানতাভীর ফতোয়ার সংগে একমত পোষণ করেছেন এমন একজন জমহুর ইসলামিক স্কলারও নেই বরং সমস্ত মুসলিম উম্মাহ ও ফকীহদণের ইজমা হলো ব্যাংকে আমানতকারীদের দেওয়া সুদ অকাট্যভাবে হারাম। শরীয়াহ বিশেষজ্ঞগণ এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ঋণ, বানিজ্যিক ঋণ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাহায্য-এরকম কোন বিভাজন করেননি।

আরও দেখুন:
ব্যাংক আমানতের সুদ বা বাণিজ্যিক সুদ কি জায়েজ-১

ফতোয়াটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, প্রশ্নকর্তা উল্লেখ করেননি যে ব্যাংক ওয়াকালার ভিত্তিতে তহবিল গ্রহণ করে কিনা? যেখানে কাউন্সিল সদস্যরা এটিকে সাধারণ আমানত বলে ধরে নিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, এটি AIECB এর প্রকৃতি এবং পদ্ধতি নির্দিষ্ট করেনি যে এটি একটি ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠান নাকি একটি প্রচলিত প্রতিষ্ঠান। এর আমানতকারী কারা এবং এটি তাদের তহবিল কোথায় বিনিয়োগ করে? তাই, কাউন্সিলের উচিত ছিল মতামত গঠনের আগে প্রশ্নকর্তার কাছ থেকে আরও তথ্য চাওয়া। তদ্ব্যতীত, যেখানে প্রশ্নটি একটি নির্দিষ্ট ব্যাংকের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কাউন্সিল কর্তৃক প্রদত্ত মতামতটি সাধারণভাবে সমস্ত ব্যাংককে অন্তর্ভুক্ত করে, তাদের গঠন এবং কার্যক্রমের প্রকৃতি ইসলামী বা প্রচলিত নির্বিশেষে বিবেচনায় না নিয়েই মতামত প্রদান করে যা সুস্পষ্টভাবে ইনসাফের খেলাপ। আমার জ্ঞান ও গবেষণা অনুযায়ী, মিশরের কোনো প্রচলিত ব্যাংক ওয়াকালার ভিত্তিতে কাজ করে না। একটি ইসলামী ব্যাংকের কাঠামো প্রচলিত ব্যাংকের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটি প্রচলিত ব্যাংক একদিকে তার আমানতকারীদের কাছ থেকে তহবিল গ্রহীতা এবং অন্যদিকে গ্রাহকদের অন্য সেটের কাছে ঋণদাতা। এটি ঋণগ্রহীতাদের কাছে পূর্বনির্ধারিত সুদ চার্জ করে মুনাফা অর্জন করে এবং আমানতকারীদের কম হারে অর্থ প্রদান করে, বাকিটা তার নেট উপার্জন।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

তদুপরি, তহবিল গ্রহণ করার সময়, প্রচলিত ব্যাংক আমানতকারীদের কাছে ঋণী হিসাবে বিবেচিত হয়, যেখানে উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার সময় এটি তাদের বইতে ঋণদাতা হিসাবে স্বীকৃত হয়। অন্য কথায়, একটি প্রচলিত ব্যাংক তহবিলের মালিক হয় যখন এটি ঋণদাতার ভূমিকা পালন করে। বিপরীতে, একটি ইসলামী ব্যাংক তার আমানতকারীদের সাথে এবং উদ্যোক্তাদের সাথে অংশীদার হয়, উভয় প্রান্তে লাভ এবং ক্ষতি ভাগ করে নেয়। তহবিল গ্রহণ করার সময়, ইসলামী ব্যাংকের ক্ষমতা তার গ্রাহকদের জন্য একজন মুদারেব বা তহবিল ব্যবস্থাপকের, গ্রাহকরা সেখানে সাহেব আল মাল। অন্যদিকে, উদ্যোক্তাদের সাথে তহবিল শরিকানা করার সময়, ব্যাংকের ভূমিকা একজন বিনিয়োগকারীর এবং তহবিলের মালিক হিসাবে নয়। এখানে, ইসলামী ব্যাংক তহবিলের ভাল ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট প্রণোদনা ছাড়াও প্রশাসনিক ও পরিচালন ব্যয় মেটাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ রেখে আমানতকারীদের কাছে এই ধরনের বিনিয়োগ কার্যক্রম থেকে লাভের অংশ বন্টনের জন্য দায়বদ্ধ। আর একারণেই ইসলামি ব্যাংকগুলি প্রচলিত ব্যাংকগুলির প্রস্তাবিত হারের তুলনায় আমানতকারীদের কাছে ঐতিহাসিকভাবে বেশি মুনাফা বিতরণের কারণ হয়েছে।

একটি ইসলামী ব্যাংকে আমানতকারীদের দেওয়া তহবিল একটি আমানত বা ট্রাস্ট হিসাবে বিবেচিত হয় এবং যদি ব্যাংকের প্রকৃত ক্ষতি হয় তবে আমানতকারীদের অবশ্যই তা ব্যাংকের সাথে ভাগ করে নিতে হবে। যদি ইসলামী ব্যাংকের অবহেলার ফলে ক্ষতি হয়, তাহলে আমানতকারীরা দায়ী থাকবে না এবং তাদের সম্পূর্ণ বিনিয়োগের পরিমাণ ফেরত পাওয়ার যোগ্য হবে। ঝুঁকির এই উপাদানটি একটি প্রচলিত ব্যাংকে অনুপস্থিত যেখানে আমানতকারীরা ব্যাংকের লোকসান ভাগাভাগি করতে আগ্রহী নয় এবং ব্যাংকের দ্বারা তাদের তহবিল স্থাপনের ফলাফল নির্বিশেষে বিনিয়োগকৃত পরিমাণের সাথে একটি পূর্ব-সম্মত রিটার্ন আশা করে। একইভাবে, সুদভিত্তিক ব্যাংক ঋণগ্রহীতাদের সাথে লোকসান ভাগ করে না এবং চক্রবৃদ্ধি সুদের সাথে ধার দেওয়া সম্পূর্ণ পরিমাণ পুনরুদ্ধারের আশা করে।

ইসলামী ব্যাংকে আইনি লেনদেনগুলি প্রতিনিধিত্ব করবে যেখানে ব্যাংক পণ্য, যানবাহন, নৌযান, বিমান, সম্পত্তি এবং শরিয়া দ্বারা অনুমোদিত নয় এমন অন্য কোন পণ্য বা সম্পদ ক্রয়, বিক্রয়, মালিকানা এবং লিজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এটি সাধারণ জ্ঞান যে প্রচলিত ব্যাংকগুলি পণ্যগুলির সাথে লেনদেনের ধারণার বিরুদ্ধে এবং শুধুমাত্র নথিগুলির সাথে লেনদেনের মধ্যে নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখার উপর জোর দেয়৷ যেমন, ইসলামী ব্যাংকের মতন, তারা পণ্য ও সম্পদের লেনদেনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার অধিকারী নয়। পণ্যের সাথে সুদভিত্তিক ব্যাংকের প্রত্যক্ষ কোন যোগাযোগ থাকেনা, গ্রাহক তার চাহিদামত নগদ টাকা পেয়ে যায়। পক্ষান্তরে ইসলামী ব্যাংকিং এর মূলকথাই হলো পণ্য। বলা হয়, Islamic Banks deal with real assets not with bubble. অস্তিত্বহীন পণের কারবার ইসলামী ব্যাংকসমূহ করে না।

কাউন্সিল আরও যুক্তি দিয়েছে যে এই ধরনের লেনদেন হালাল যদি উভয় পক্ষই ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট হয়। শরিয়াতে, কোনো ব্যবস্থার প্রতি পক্ষগণের সন্তুষ্টিই কোনো লেনদেনকে হালাল (অনুমতিপ্রাপ্ত) বা হারাম (নিষিদ্ধ) করে না। লেনদেন করা যায় না এমন হারাম বিষয় বা বস্ত আলাদা করার জন্য শরীয়তে স্বীকৃত নীতি রয়েছে। উপরন্তু, শরিয়া তার অনুসারীদেরকে এমন আর্থিক লেনদেন এড়াতে বাধ্য করে যেখানে সামান্য সন্দেহ আছে যে এটি ইসলামী অর্থনৈতিক নীতির পরিপন্থী হতে পারে। উপরোক্ত বিবেচনায়, আইনী লেনদেন সম্পর্কে কাউন্সিলের বোঝাপড়া অস্পষ্ট এবং ধারনাপ্রসূত।

সবচেয়ে ভয়ংকর যে বিষয়টি এই ফতোয়ায় তানতাভী নৈতিকভাবে সমর্থন দিলেন তা হলো ব্যাংকগুলির সূদী কারবারে অর্জিত আয়ে নির্লোভ ও সরলমনা আমানতকারীদের শরীকানা। এক সেকেন্ডের জন্য তার মতামতটিকে হক বলে বিবেচনায় নিলে ইহুদীদের প্রবর্তিত সূদী ব্যবস্থার ভয়াবহ বিপর্যয় ও নির্মমতাকে দোষ দিবার কোন হেতুই আর অবশিষ্ট থাকেনা। আল্লাহ কুরআনে সুদের বিপরীতে ব্যবসাকে এনেছেন। ব্যবসা সর্বদাই ঝুঁকিযুক্ত। লোকেরা এই ঝুঁকি এড়াতে নিরাপদে সূদ খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়। একপক্ষীয় এ সিদ্ধান্তটি আমানতকারীদের জন্য তার মায়াকান্নাই বটে, আরেকপক্ষ, অর্থাৎ ঋণগ্রহীতাদের সাথে যে লেনদেন সেটাকেও তবে বৈধ বলা উচিত।

মুসলিম বিশ্ব তথা অন্যান্য বিভিন্ন দেশের রাজধানী শহরে এ ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন কনফারেন্স ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সে সব সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় যে, ব্যাংকের সূদ নিশ্চিতরূপে হারাম; যার হারাম হওয়াতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিং আব্দুল আযীয ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে ফেব্রু ২১-২৬ ১৯৭৬ জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ইসলামী অর্থনীতির প্রথম সম্মেলনে বিশ্বের তিন শতাধিক ফিক্হ ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ অংশ গ্রহণ করেন। আর্টিক্যাল কন্ট্রিবিউটরদের কয়েকজন যথাক্রমে ড. আনাস যারকা, ড. মানযের কাহাফ, ড. মুহাম্মদ উযাইর, ড. আবু সাউদ, ড. আলী মাহমুদ আল যারহী, ড. উমর চাপড়া, খিরশিদ আহমেদ, ড. নেজাতুল্লাহ সিদ্দিকী, ড. সাবাহ উদ্দিন যাইম। ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং আন্দোলনের এরা সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন।

এর বাইরে ফিকাহ বিশেষজ্ঞগণের মধ্যেও বিভিন্ন সময়ে মত বিনিময় হয়। বিভিন্ন ফিক্হী, ইসলামী ও অর্থনৈতিক কনফারেন্স, সংগঠন ও সেমিনারের মাধ্যমে ব্যাংকের সূদ হারাম হওয়ার ব্যাপারে (গণ্যমান্য) উলামাগণের ইজমা’ (সর্ববাদিসম্মতি) সংঘটিত হবার কয়েকটি ঘটনা উদ্ধৃত করছি। সকলের রায় মতে বলা হয়েছে যে, এটা হল সেই সূদ, যার হারাম হওয়াতে কোন প্রকার সন্দেহ ও দ্বিধা অবশিষ্ট নেই। উক্ত ইজমা ১৯৬৫ সাল থেকে নিয়ে আজও পর্যন্ত অব্যাহত আছে। আমাদের জন্য তিনটি বিশ্বসম্মেলনে সংঘটিত ইজমা’ই যথেষ্টঃ-
(১) মুহাররম ১৩৮৫ হিঃ মুতাবেক মে ১৯৬৫ খ্রিঃ তে মিসরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত ‘ইসলামিক স্টাডিজ একাডেমীর দ্বিতীয় সম্মেলনে সংঘটিত ইজমা’।
(২) ১২-১৯ রজব ১৪০৬ হিঃ তে মক্কা মুকাররমায় অবস্থিত মুসলিম ওয়ালর্ড লীগের ইসলামিক ফিক্হ একাডেমীর ইজমা’।
(৩) ১০-১৬ রবীউসসানী ১৪০৬ হিঃ মুতাবেক ২২-২৮ ডিসেম্বর ১৯৮৫ খ্রিঃ তে অনুষ্ঠিত অরগানাইজেশন অফ ইসলামিক কনফারেন্সের ইসলামিক ফিক্হ একাডেমীর ইজমা’।

যেহেতু উপরোল্লেখিত কনফারেন্সসমূহে প্রায় একই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, সেহেতু আমরা কেবল কায়রোতে অনুষ্ঠিত ইসলামিক স্টাডিজ একাডেমীর দ্বিতীয় কনফারেন্সে গৃহীত সিদ্ধান্তাবলীর খসড়া এখানে নকল করাকে যথেষ্ট মনে করছি। উল্লেখ্য যে, উক্ত কনফারেন্সে ৩৫টি দেশের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছিলেন।

মুহররম ১৩৮৫ হিঃ মুতাবেক মে ১৯৬৫ খ্রিঃ তে অনুষ্ঠিত ইসলামিক স্টাডিজ একাডেমীর দ্বিতীয় কনফারেন্সে গৃহীত সিদ্ধান্তাবলীঃ
১. যে কোন প্রকারের ঋণের উপর ইনটারেষ্ট নেওয়া হল হারাম সূদ নেওয়ার অন্তর্ভুক্ত। তাতে সে ঋণ ব্যক্তিগত অভাবপূরণের উদ্দেশ্যে নেওয়া হোক অথবা বাণিজ্যিক প্রয়োজনে নেওয়া হোক; কোন পার্থক্য নেই। কারণ, কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট উক্তিসমূহ উভয় প্রকারেরই ঋণভিত্তিক সূদকে হারাম নিরূপণ করেছে। আমানতও এক প্রকারের ঋণ যা ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রোডাক্টের নামে গ্রহন করে।
২. সূদ চাহে স্বল্প পরিমাণের হোক অথবা অধিক পরিমাণের; সর্বাবস্থায় তা হারাম। আয়াতে উল্লিখিত ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে (দ্বিগুণ-চতুর্গুণ) সূদ ভক্ষণ করো না’ এর সঠিক মর্মার্থ তাই।
৩. ঋণের উপর সূদ গ্রহণ করা হারাম। কোন প্রকারের প্রয়োজন এবং কোন প্রকারেরই অবস্থা ও পরিস্থিতিতে তা জায়েয হতে পারে না। অনুরূপ ঋণের উপর সূদ দেওয়াও হারাম। তবে সূদী ঋণ (বা লোন) গ্রহণের গোনাহ কেবল তখনই ক্ষমার্হ হবে, যখন কেউ সূদ বিনা ঋণ কোথাও না পাবে। আল্লাহ উত্তম জানেন। সেক্ষেত্রে কেবল নিরুপায় অবস্থায় বাধ্য হয়েই তা গ্রহণ করলে তা মাফযোগ্য। অবশ্য নিরুপায় অবস্থা নির্ধারণ করাটা প্রত্যেকের দ্বীনদারী অনুভব-সাপেক্ষ।
৪. কারেন্ট একাউন্ট ও এল সি খোলা, চেক ও ড্রাফ্ট ভাঙ্গানো এবং দেশের ভিতরে বিল অফ্ এক্সচেঞ্জ (হুন্ডি)র যে কারবার ব্যাংক বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীর সাথে করে থাকে—তা জায়েয। পরন্তু এসব সেবার উপর ব্যাংক যে ফী গ্রহণ করে—তা সূদ নয়।
৫. স্থায়ী আমানত (FIXED DEPOSIT) সূদবিশিষ্ট। এল সি খোলা এবং সূদ ভিত্তিক ঋণ বা লোন দেওয়া ইত্যাদি কারবার সূদী ও হারাম কারবার।

মিসরের (প্রধান) মূফতী ব্যাংকের সূদ হালাল হওয়ার ব্যাপারে ফতোয়া দিয়েছিলেন। এর প্রতিবাদে আযহার ইউনিভার্সিটির উলামাবৃন্দ কিছুদিন পরেই মক্কা মুকার্রামায় সমবেত হয়ে একটি জ্ঞানগর্ভ বিবৃতি প্রচার করেন।

লেখকঃ মুহাম্মদ শামসুজ্জামান, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি (আইবিবিপিএলসি)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button