ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ ও মুনাফা
সুদ শব্দটি ফারসী বা উর্দু শব্দ থেকে এসেছে। সুদ এর আরবী রিবা। রিবা শব্দের অর্থ হলো আধিক্য, প্রবৃদ্ধি, চড়া বা বিকাশ ও অতিরিক্ত। ইংরেজিতে একে Usury, Interest, Interest of Loan, Premium for the use of money বলা হয়। অনেক সময় বাংলায় একে কুসীদ বলা হয়ে থাকে। ঋণের ক্ষেত্রে ঋণের আসলের উপর ঋণের শর্তানুসারে অতিরিক্ত নেয়া বা দেয়াই হল সূদ।
Interest is the premium paid by the borrower to the lender along with principal amount as a condition for the loan. Which is prefixed, and hence there is no uncertainty on the part of either the givers or the takers of loans.
মোটকথা, ঋণের আসলের উপর ঋণের শর্ত হিসাবে ধার্যকৃত যেকোন অতিরিক্ত যার কোন বিনিময় মূল্য দেয়া হয় না এবং যার সাথে কারবারের ফলাফল সম্পৃক্ত নয়, তাই সূদ।
সূদ এর নির্ধারক উপাদান তিনটি– সময়, সুদের হারও মূলধনের পরিমাণ। সুদের ভিত্তি হলো ঋণ। এর বেলায় ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি প্রযোজ্য নয়। সুদ একটি স্থির ব্যয় হিসেবে বিবেচিত হয় বলে অনিবার্যভাবে দাম স্তরের বৃদ্ধি ঘটায়। সুদ বিনাশ্রমে অর্জিত এবং এর কোন বিনিময় মূল্য নেই। ইসলামে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
প্রকারভেদঃ
রিবা দুই প্রকার– রিবা আন–নাসিয়া ও রিবা আল ফাদল।
১. রিরা আন–নাসিয়াঃ
নাসিয়া শব্দের মূল অর্থ হল ‘নাসায়া’। যার আভিধানিক অর্থ প্রতীক্ষা, স্থগিত, বিলম্ব এবং পারিভাষিক অর্থে ঐ মেয়াদকালকে নাসায়া বলা হয় যে মেয়াদের জন্য ঋণদাতা অতিরিক্ত অর্খ আদায় করে। সুতরাং রিবা নাসিয়া হচ্ছে ঋণের উপর সময়ের প্রেক্ষিতে ধার্যকৃত অতিরিক্ত অর্থ বা পণ্য। সময়ের কারণে নাসিয়া। অর্থাৎ নির্দিষ্ট মেয়াদের বিপরীতে শরীয়াহ সম্মত কোন রুপ বিনিময় ছাড়া চুক্তির শর্ত মোতাবেক যে অতিরিক্ত অর্থ বা মাল প্রদান বা গ্রহন করা হয়, তাই রিরা আন–নাসিয়া।
২. রিবা আল ফাদলঃ
ফদল অর্থ গুণ, ভাল, উত্তম। ফদল সমজাতীয় জিনিসের কমবেশী পরিমাণের বিনিময় বুঝায়। এটি সমজাতীয় দ্রব্য হাতে হাতে বিনিময়ের ক্ষেত্রে উদ্বভ হয়ে থাকে। কোন দ্রব্যের সাথে একই জাতীয় দ্রব্যের বেশী পরিমাণ বিনিময় করা হলে দ্রব্যের অতিরিক্ত পরিমাণকে বিরা ফদল বলা হয়। গুণের কারণে ফদল। অর্থাৎ একই জাতীয় পণ্যের কম পরিমাণের সাথে বেশি পরিমাণ হাতে হাতে বিনিময় করা হলে পণ্যের অতিরিক্ত পরিমাণ রিবা আল ফাদল হিসেবে গন্য হবে।
সুদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াতঃ
প্রথম আয়াত সূরা রূম–৩৯: وَمَآ ءَاتَيْتُم مِّن رِّبًا لِّيَرْبُوَا۟ فِىٓ أَمْوَٰلِ ٱلنَّاسِ فَلَا يَرْبُوا۟ عِندَ ٱللَّهِ ۖ وَمَآ ءَاتَيْتُم مِّن زَكَوٰةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ ٱللَّهِ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُضْعِفُونَ অর্থঃ মানুষের ধনে তোমাদের ধন বৃদ্ধি পাবে এ উদ্দেশ্যে তোমরা সুদে যা দিয়ে থাক আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ধন সম্পদ বৃদ্ধি করে না। কিন্তু তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যাকাত দিয়ে থাকে তাদেরই ধন–সম্পদ বৃদ্ধি পায়।তারাই সম্পদশালী।
প্রথম আয়াতের ১১ বছর পর দ্বিতীয় আয়াত হিসাবে সুরা আলে ইমরানের ১৩০ নং-يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَأْكُلُوا۟ ٱلرِّبَوٰٓا۟ أَضْعَٰفًا مُّضَٰعَفَةً ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্র বৃদ্ধি হারে সুদ খেয়না এবং আল্লাহকে ভয় কর। আশা করা যায় তোমরা কল্যাণ লাভ করবে।
অতপর সুদ চুড়ান্ত ভাবে সুদ নিয়িদ্ধ করা হয় সূরা বাকারার ২৭৫ নং আয়াত থেকে পর পর কয়েকটি আয়াতের মাধ্যমে দ্বিতীয় আয়াতের প্রায় ৮ বছর পর এআয়াতগুলো নাযিল হয়।
সূরা বাকারা–২৭৫ নং আয়াতঃ ٱلَّذِينَ يَأْكُلُونَ ٱلرِّبَوٰا۟ لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ ٱلَّذِى يَتَخَبَّطُهُ ٱلشَّيْطَٰنُ مِنَ ٱلْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوٓا۟ إِنَّمَا ٱلْبَيْعُ مِثْلُ ٱلرِّبَوٰا۟ ۗ وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلْبَيْعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰا۟ ۚ فَمَن جَآءَهُۥ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِۦ فَٱنتَهَىٰ فَلَهُۥ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُو۟لَٰٓئِكَ أَصْحَٰبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ অর্থঃ যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হয় সেই লোকটির মতো যাকে শয়তান স্পর্ষ করে পাগল করে দিয়েছে। তাদের এই অবস্থায় উপনিত হওয়ার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলে ব্যবসাতো সুদেরই মতো। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। কাজেই যে ব্যক্তির কাছে তার রবের পক্ষ থেকে এই নসীহত পৌছে যায় এবং ভবিষ্যতে সুদখোরী থেকে সে বিরত হয় সেক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়েছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই এবং এ ব্যাপারটি আল্লাহর কাছে সোপর্দ হয়ে গেছে। আর এই নির্দেশের পরও যে ব্যক্তি আবার এই কাজ করে, সে জাহান্নামের অধিবাসী।
আয়াত–২৭৬– يَمْحَقُ ٱللَّهُ ٱلرِّبَوٰا۟ وَيُرْبِى ٱلصَّدَقَٰتِ ۗ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ অর্থঃ আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বৃদ্ধি করেন আর তিনি কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালোবাসেন না।
আয়াত–২৭৮–يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَذَرُوا۟ مَا بَقِىَ مِنَ ٱلرِّبَوٰٓا۟ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও যদি তোমরা সত্যিই বিশ্বাসী হয়ে থাক।
সুদ সম্পর্কে হাদিসঃ
১। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সঃ) সুদ দাতা ও সুদ গ্রহিতা উভয়ের উপর অভিশাপ (লানত) দিয়েছেন”। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ)।
২। সাহাবী জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সঃ) সুদ দাতা, সুদ গ্রহিতা, সুদের চুক্তিপত্র সম্পাদনকারী, সাক্ষী–সকলের উপর অভিশাপ (লানত) দিয়েছেন এবং বলেছেন তারা সকলে সমান অপরাধী”। (মুসলিম)
৩। সাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “তোমরা সাতটি নিশ্চিত ধ্বংসকারী বিষয় থেকে আত্মরক্ষা করবে”। তার মধ্যে তৃতীয়টি হলো সুদ খাওয়া। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী)
৪। সাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “কবিরা গুনাহ্ সাত প্রকার। তন্মধ্যে তৃতীয়টি হলো সুদ খাওয়া। (মাসনাদে বাজ্জারে)
৫। হযরত আওন বিন আবি জুহাইফা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, “রাসুলুল্লাহ (সঃ) সুদখোর ও সুদ প্রদানকারীর উপর লানত দিয়েছেন। (বুখারী, আবু দাউদ)
৬। সাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, চার শ্রেনীর লোকের জন্য আল্লাহ তায়ালা এই ফয়সলা দিয়েছেন যে, তিনি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না আর না সেখানকার কোন নিয়ামতের স্বাদ তারা আস্বাদন করবে। তারা হলো (১) মদ্যপানে আসক্ত, (২) সুদখোর, (৩) এতিমের সম্পদ আত্মসাৎকারী এবং (৪) পিতা–মাতার অবাধ্য সন্তান। (হাকেম)
৭। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন সুদের ৭৩ টি স্তর রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা নিন্মস্তরের অপরাধের পরিমাণ হলো মায়ের সাথে জেনায় (ব্যাভিচারে) লিপ্ত হওয়ার সমান”। (ইবনে মাজাহ, বায়হাকী, হাকেম)
সুদ সম্পর্কীয় গুনাহকে মায়ের সাথে জেনার সঙ্গে তুলনা বিষয়ক হাদিস অত্যন্ত মাশহুর বা সুপরিচিত। বহু সাহাবী এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) (বায়হাকী), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) (তাবরানী), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) (বায়হাকী), হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) (ইবনে মাজাহ, বায়হাকী)।
৮। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সঃ) বলেছেন, “সুদী খাতে কোনো মানুষ যদি এক দিরহামও গ্রহন করে, তাহলে তার অপরাধ ইসলাম গ্রহনের পর মুসলিম থাকা অবস্থায় ৩৩ বার ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে মারাত্মক”। (তাবরানী)
একই ধরনের হাদীস বর্ণনা করেছেন–হযরত কা’বুল আহবার (রাঃ) (মাসনাদে আহমদ), আব্দুল্লাহ বিন হানজালা (রাঃ) ওহুদ শহীদ (মাসনাদে আহমদ), হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) (বায়হাকী), আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) (তাবরানী)।
৯। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু আওফা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “সুদভিত্তিক মুদ্রা ব্যবসায়ীদের জাহান্নামের খবর পৌঁছে দিও”। (তাবরানী)
১০। হযরত আউফ বিন মালেক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “তুমি এমন গুনাহ্ থেকে সর্বদাই আত্মরক্ষা করবে যা কিছুতেই ক্ষমা করা হবে না”। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি হলো, “সুদখোর। যে ব্যক্তি সুদ খায়, সে হাশরের ময়দানে দিক–বিদিক জ্ঞানশূণ্য মাতাল অবস্থায় উত্থিত হবে। (তাবরানী)
১১। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “অবশ্য অবশ্যই মানুষ এমন এক যুগে পৌঁছবে যখন তাদের মধ্যে এমন একজন লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না–যে সুদী কারবারের সাথে (প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো না কোনো উপায়ে) জড়িত থাকবে না। যদি কোনো লোক সুদের পরশ থেকে আত্মরক্ষা করতে চায়, তার জন্য তা হবে অসম্ভব প্রয়াস”। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
১২। হয়রত ইব্ন মাসুদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর নবী (সঃ) সুদখোর, সুদ প্রদানকারী, সুদ প্রদানকারীর সাথী এবং সুদ চুক্তি লেখককে অভিশাপ দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
১৩। হযরত আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কারো জন্যে কোন সুপারিশ করল আর এজন্য সুপারিশ প্রাপ্ত ব্যক্তি তাকে কোন হাদিয়া দিল এবং তা গ্রহন করল তবে নিঃসন্দেহে সে সুদের দরজা সমূহের একটি বড় দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। (আবু দাউদ)
সুদের আর্থ–সামাজিক ফলাফলঃ
সুদ ঈমান ও নৈতিকতা ধ্বংসকারী, নৈতিকতা বিরোধী আয়, বৈষম্যপূর্ণ মুনাফা সৃষ্টিকারী, দ্রব্যমূল্য বর্ধক, অন্যায়ভাবে অসংখ্য বার মুনাফা অর্জনে সহায়তাকারী, বিনিময়নীতি পরিপন্থী, বিনিময় বৈষম্য সৃষ্টিকারী, অযৌক্তিক বিনিময়, বিনিয়োগ প্রতিবন্ধক, মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টিকারী, মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী, জনস্বার্থ বিরোধী, এতে জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বর্জিত, গরীবের স্বার্থ উপেক্ষিত, সৎ চরিত্রের প্রতিবন্ধক, বিবেক–বিবেচনার পরিপন্থী, খারাপ চরিত্রের ফলশ্রুতি, মহৎ গুণাবলী হ্রাস কারক, দুশ্চিন্তার উদ্রেক, অত্যাচারমূলক ব্যবস্থা মূলমন্ত্র, শান্তি ও স্বস্তি পরিপন্থী, শোষকগোষ্ঠীর উদ্ভব, হিংসা–বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী, সামাজিক অবক্ষয়ের বাহন, দরিদ্রতার পৃষ্টপোষক, শোষকদের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টিকারী, কৃপণতার জনক, বেকারত্ব বর্ধক, কর্মবিমুখতা সৃষ্টিকারী, শ্রমিক শ্রেণীর বঞ্চিত হওয়া, ধন–সম্পদ ঘাটতি হওয়া, ধন–সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য, উৎপাদনে অন্তরায় সৃষ্টিকারী, শ্রমজীবীদের শ্রমে অনিহা সৃষ্টিকারী, শ্রমিকের মজুরি হ্রাসকারী। মোটকথা সুদপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম উপাদান হিসেবে পরিগণিত।
সুদের কুফলঃ
নিচে সূদের কুফল আলোচনা করা হলঃ
ক. ধর্মীয় কুফলঃ
নিচে সূদের ধর্মীয় কারণ সমূহ আলোচনা করা হল–
১. আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা
২. আখেরাতের ভয়ঙ্কর পরিনতি
৩. আল্লাহর পক্ষ থেকে যুদ্ধ ঘোষণা
৪. ভয়াবহ পাপ
৫. জান্নাত লাভে ব্যর্থতা
খ. নৈতিক কুফলঃ
নিচে সূদের নৈতিক কুফল সমূহ আলোচনা করা হল–
১. নৈতিকতা ধংস করে
২. বিবেকহীন মানুষ তৈরি করে
৩. সমাজে ঘৃণা ও বিদ্বেষের জন্ম দেয়
গ. সামাজিক কুফলঃ
নিচে সূদের সামাজিক কুফল সমূহ আলোচনা করা হল–
১. জুলুমের সৃষ্টি করে
২. শোষক শ্রেনীর উদ্ভব ঘটায়
৩. কৃপণতার জন্ম দেয়
৪. দারিদ্রতার জন্ম দেয়
৫. সামাজিক অবক্ষয় তৈরি করে
ঘ. অর্থনৈতিক কুফলঃ
নিচে সূদের অর্থনৈতিক কুফল সমূহ আলোচনা করা হল–
১. বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
২. অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে।
৩. অর্থনৈতিক অস্থিশীলতা তৈরি করে।
৪. সম্পদ হ্রাস পায়।
৫. সম্পদ বন্টনে বৈষম্য সৃষ্টি হয়।
৬. কর্মবিমুখতা তৈরি করে।
৭. মূলধনে স্থবিরতা আসে।
৮. দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।
৯. মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করে।
১০. বেকারত্ব সৃষ্টি করে।
ঙ. রাজনৈতিক কুফলঃ
নিচে সূদের রাজনৈতিক কুফল সমূহ আলোচনা করা হল–
১. সমাজে পুঁজিপতির উদ্ভব ঘটে। ফলে ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে তাদের অবস্থান হয়ে ওঠে শক্তিশালী।
২. সুদের কারণে দেশে অর্থনৈতিক বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতাও তৈরি হয়।
৩. সুদ একটি জাতিকে পরনির্ভরশীল করে তোলে।
৪. বৈদেশিক ঋণের বোঝা বাড়িয়ে দেয়।
৫. উন্নত দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোর উপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার করে।
মুনাফাঃ
মুনাফা আরবী শব্দ, বাংলায় একে লাভ এবং ইংরেজিতে Profit বলে। আর ইসলামী অর্থনীতিতে মোট আয় হতে মোট উৎপাদন খরচ হিসাবে কেবল খাজনা ও শ্রমের মজুরী বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাকে মুনাফা বলে।
উৎপাদন কিংবা ক্রয়–বিক্রয়ের ফলে অথবা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মূলধন বিনিয়োগের ফলশ্রুতিতে মূলধনের অতিরিক্ত উপার্জিত অর্থ বা সম্পদকে মুনাফা বলে। এক্ষেত্রে ক্ষতি হবার ঝুঁকি প্রযোজ্য। সুদ যেখানে বিনাশ্রমে অর্জিত হয় সেখানে মুনাফার জন্য মূলধন ছাড়াও শ্রম, বুদ্ধি ও দক্ষতা বিনিয়োগ করতে হয়। মূলত মুনাফা বিনিয়োগের দ্বার খুলে দেয় এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করে। পারস্পরিক সম্মতিতে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে মুনাফা নির্ধারণ করা হয় বলে এটা ইনসাফের বাহন। আর ইসলামে মুনাফা অনুমোদিত একটি উত্তম জীবিকা হিসেবে গণ্য।
Profit is the difference between the value of production and the cost of production. It is post-determined, and hence its amount is not known until the activity is done. It is a residual income and not contractual or certain.
লেখকঃ মোহাম্মদ শামসুদ্দীন আকন্দ, ব্যাংকার।
Very informative
Thanks