আয়কর ব্যবস্থার ফাঁক ফোকর নিয়ে কি আয়কর বিভাগ ভাবে না?
মুহাম্মদ শামসুজ্জামানঃ একটা পরিবার বা সংসার চালানোর জন্য যেমন পরিবারের কর্তা বা উপার্জনশীল সদস্যদেরকে খরচ দিতে হয় ঠিক তেমনি একটা দেশ বা রাষ্ট্র চালানোর জন্য দেশের জনগণকে খরচ দিতে হয়। রাষ্ট্রের সকল জনসাধারনের স্বার্থে রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে প্রদত্ত বাধ্যতামূলক অর্থ হল আয়কর। আয়কর হচ্ছে সরকারি রাজস্ব বা আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
আয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট বাৎসরিক আয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আযকর রিটার্ন। আয়কর রিটানের কাঠামে আয়কর বিধি দ্বারা নির্দিষ্ট করা আছে। আয়কর আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কতৃর্ক নির্ধারিত ফরমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যাদের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন রয়েছে তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। সেটি না করলে জরিমানা করার বিধান রয়েছে। তবে, রিটার্ন দাখিল করলেই যে আয়কর দিতে হবে তা নয়। কারো আয় যদি করযোগ্য না হয় তাহলে কর দেবার প্রয়োজন নেই, শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে। আয়কর রিটার্ন দাখিল করা জটিল কোন বিষয় নয়। তবে কিছু বিষয়ে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তা না হলে আইনগত ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইনকাম ট্যাক্স আইন অনুযায়ী যেসব আয়, করের আওতায় পড়ে তার মধ্যে চাকরি থেকে পাওয়া বেতন, ব্যবসা থেকে আয়, বাড়িভাড়া থেকে পাওয়া অর্থ, কোন সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তর ফলে প্রাপ্ত অর্থ, জামানতের সুদ (সঞ্চয়পত্র, বন্ড, ব্যাংকের সুদ ইত্যাদি), কৃষি হতে আয়। আর আছে ‘অন্যান্য’ যার মধ্যে পড়তে পারে অনেক কিছু। আপনার ব্যক্তিগত আয়, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, ডিবেঞ্চার এবং অন্যান্য স্থাবর সম্পদের বিবরণ আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। যদি আপনি কোন সম্পদের বিবরণ রিটার্নে তুলে না ধরেন, তাহলে সেটি বৈধ থাকবে না এবং আপনি আইনগত ঝামেলায় পড়েতে পারেন।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
অন্যদের বিষয়ে আমার মন্তব্য নেই তবে চাকুরীজীবীগণের আয়কর না দিয়ে উপায় নেই এবং তাদের আয় গোপন করারও কোন সূযোগ নেই। নিয়োগ কর্তৃপক্ষ স্বপ্রণোদিত হয়েই প্রতিমাসের বেতন ভাতা থেকে অগ্রিম আয়কর কর্তন করে রাখেন। আয়কর বিভাগে দাখিল করা বেতন বিবরণীতে তার আয় হুবহু সাবমিশন করা হয়।
সম্প্রতি বাজেটোত্তর এক বক্তৃতায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী “ঢাকায় যাদের জমি ও ফ্লাট আছে, তারা সবাই কালো টাকার মালিক” বলে মন্তব্য করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি ব্যাপক আলোচিত হওয়ায় অর্থ মন্ত্রনালয়মর জনসংযোগ বিভাগ ব্যাখ্যা প্রদান করে। তাদের ভাষ্যে, সংবাদ শিরোনামকে অতি আকর্ষনীয় করার তাগিদে কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও দৈনিক পত্রিকার অনলাইন সংস্করনে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের অংশবিশেষ “ঢাকায় যাদের জমি ও ফ্ল্যাট আছে সবাই ‘কালো টাকার মালিক’: অর্থমন্ত্রী” ব্যবহার করায় একটি অনাকাংঙ্খিত বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
আরও দেখুন:
◾ ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধার মেয়াদ বাড়ল
উল্লেখ্য যে, মাননীয় অর্থমন্ত্রী ১৫ জুন, ২০২২ (বুধবার) অর্থনৈতিক ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাজধানীর গুলশান এলাকায় জমির যে দাম দেখিয়ে নিবন্ধন করা হয়, জমির প্রকৃত দাম তার চেয়েও বেশি। কিন্তু বেশি দামে তো নিবন্ধন করানো যায় না, প্রতিটি মৌজার জন্য দাম ঠিক করে দেওয়া আছে, এর বেশি দামে নিবন্ধন করা যাবে না। সুতরাং কালো টাকা তো সেখানেই সৃষ্টি হচ্ছে; কে কালো টাকার বাইরে আছে।
একই প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, হয়ত যে ফ্ল্যাট দুই কোটি টাকায় নিবন্ধিত হচ্ছে, সেই ফ্ল্যাটের প্রকৃত দাম হয়ত ১০ কোটি টাকা। ফলে সরকার বাড়তি নিবন্ধন মাশুল পাচ্ছে না। এখানেই কালো টাকা সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়গুলো সবাইকে বুঝতে হবে। ঢাকা শহরে যাঁর জায়গা আছে কিংবা যে ব্যক্তি জায়গা কিনেছেন, শুধু তিনিই বলতে পারবেন, কত টাকায় নিবন্ধন হয়েছে এবং জমির প্রকৃত বাজারদর কত? সুতরাং ঢাকা শহরে যাঁদের জমি বা ফ্ল্যাট আছে, তাঁরা সবাই এক অর্থে ‘কালো টাকার মালিক’। তবে এ পরিস্থিতির জন্য আমাদের বিদ্যমান ‘সিস্টেম’ বা ব্যবস্থা দায়ী।
নিঃসন্দেহে এটি একটি অকপট সত্য কথা। আমার বা আমাদের মানে করদাতাগণের কোন দ্বিমত নেই। কিন্ত এর জন্য কি করদাতা দায়ী? বরং সব করদাতা চায় জমি বেচাকেনায় প্রকৃত দরই লিখা হোক। করদাতা কষ্টে জমানো টাকার সাথে ব্যক্তিগত বা ব্যাংক ৠণ নিয়ে জমি ফ্লাট কিনে। জমি কিনলেই সে কালো টাকার মালিক-এমন ধারনা সুধারনা নয়, সত্যও নয়। ট্যাক্স রিটার্ণ ফরমেও জমির মূল্য বলতে যে মূল্যে জমি রেজিষ্ট্রি হবে তাই লিখতে হয়। এ সূযোগটি তো সরকারই দিয়ে রেখেছে।
এলাকাভিত্তিক মৌজা রেটে কোথাও জমি বেচাকেনা হয়না। সুতরাং হয় সরকার জমির স্থানীয় বাজার দর জন প্রতিনিধি দিয়ে যাচাই করে নির্ধারন করতে পারে নতুবা সরকার সময়ে সময়ে তা পুনর্মূল্যায়নও করতে পারে। ট্যাক্সের হার কমিয়ে জমি বা ফ্লাটমূল্য ঠিক করা হোক, তাতে করের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে কালো টাকাও আর এই খাতে বিনিয়োগ হবেনা।
দ্বিতীয়তঃ সম্পদ মূল্য সকল সময় একই রকম থাকেনা। একবার কোন সম্পদ অর্জিত হলে সেটা কন্টিনিউ করলে তো অবচয় বা Value Depreciate করে। আবার বিক্রয় করলে Value Appreciate করে। সেটা বাড়ী হোক বা গাড়ী। আয়কর রিটার্নে এর কোন প্রতিফলন নেই। সম্পদমূল্য কত বছর পর পর পুণঃনির্ধারন হবে বা অবচায়িত হবে তার কোন ব্যাখ্যা আয়কর বিধিতে নেই।
আমরা প্রতি বছর বাজেট বক্তৃতায় শুনি আয়করের পরিধি বিস্তৃত হবে, করযোগ্য লোকের সবাই কর দেয়না। কিন্ত বাস্তবতা হলো, করদাতাদের উপরই করের বোঝা বিস্তৃত হয়। গাড়ী থাকলেই প্রতি বছর অগ্রিম আয়কর দিতে হয়। দু’টি থাকলে আরো বেশী কর। কিন্ত একাধিক বাড়ী থাকলে অতিরিক্ত কোন কর নেই। বাড়ী বাড়ী পরিদর্শন করে করদাতা সনাক্ত বা নতুন করযোগ্য ব্যক্তি অনুসন্ধানের কোন ব্যবস্থা নেই। এটা যখন জানেনই যে ঢাকা শহরের বাড়ীওয়ালারা কালো টাকার মালিক তাহলে প্রত্যেক বাড়ী বা ফ্লাট মালিকের জন্য ই-টিন ধরে ধরে রিটার্ন নেয়া হোক, থলের বিড়াল তখনই বেরিয়ে আসবে।