বিশেষ কলাম

আগামী দিনের ব্যাংকিং কমিশন কেমন হওয়া চাই

জলিল চৌধুরীঃ আগামী দিনের “ব্যাংকিং কমিশন” কেমন হওয়া চাই। ব্যাংকখাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে আগামী দিনের কমিশনের হতে হবে গণমূখী ও জন বান্ধব। ব্যাংকখাতের নৈরাজ্য অনেক দিনের। বলা যায়, সব আমলের ঘরাণার পলিটিক্স এ খাতকে ধ্বংসের শেষ সীমায় নিয়ে গেছে। সেই কাজটি হাতে নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার মর্মে পত্রিকার সংবাদে অবগত। শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে যে একটা কমিশন গঠন করা হবে।

কিন্তু কমিশনে কারা কাজ করবেন, কি হবে এজেন্ডা, আগের কমিশন ও নানা ধরনের কমিটি কি কাজ করলো, কি তার মূল্যায়ন তা কিন্তু কিছুই জানা গেল না। কমিটি বা কমিশন কি কারনে গঠন করা হবে তাও কিন্তু জানা গেল না।দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে গবেষণা সেল বা বিভাগ আছে, আর যে সব ডাটা, তথ্য উপাত্ত তারা রেগুলার বেসিসে সংগ্রহ, এর ভিত্তিতে যে রিপোর্ট তৈরী করে তাই-ই যথেষ্ট বলে মনে করি, ব্যাংকিং কার্যক্রমের উন্নয়ন কল্পে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। কমিশন গঠন প্রয়োজন হয় না। কারণ এ কাজটি করতেতো অর্থের বরাদ্দ লাগবে। যারা এই সেক্টরের গবেষণার জন্য বিধিবদ্ধভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের কাজ যথেষ্ট নয় কেন সেটা আগে দেখা দরকার।

আরও দেখুন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সার্কুলার

দেশে একটা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, বাজেট কার্যক্রম, এডিপি চলমান। আবার রয়েছে রুপকল্প ও ভিশন পেপার। পাশাপাশি সরকারী বেসরকারী অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠানতো নিরলস এ সেক্টর নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছে। আছে দেশ-বিদেশের রোড ম্যাপ (এই রোড ম্যাপ আমি বুঝিনা)। একাডেমিশিয়ানরাও কাজ করছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ব্যাংকিং নামক বিভাগ। আছে ডজন ডজন শিক্ষক-গবেষক ও আর্থিক বিষয়ক মাননীয় বিচারক, আইনজীবী ও জার্নালিষ্ট। কোথায় সমস্যা তাঁরাও বলতে পারবেন। তাঁদের কথাটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে ঠিকাদারী করা কোম্পানিগলোর বা নিজস্ব ঘরানার গবেষকদের কথা নাই বা বললাম। তারা টাকা হলে সবই করে দিতে পারে। কারণ এটা তাদের বিধি সম্মত ব্যবসা।আমাদের দেশে নানা সেক্টর কেন্দ্রীক “ডাটা কুকিং” নামীয় গবেষণার ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। তারাও সব বিষয়ে কম যায় না। বরং বলা যায় অনেকটা এগিয়ে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ব্যাংকখাতের একটা মূল্যায়ন হোক পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম এ খাতের উন্নয়নের জন্য বাধা। তাই অনেক বছর ধরেই ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কথা জনমনে একটা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। জানা যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি কমিশন গঠন করবে। বাংলাদেশের আগামীর ব্যাংকিং কমিশন কেমন হওয়া চাই বা দরকার সে বিষয়ে সবাই আশা করি ভাববে, কথা বলবে এমন কি নজরদারীও রাখবেন। ভাবাটা একধরনের অধিকারও বটে।

ব্যাংক যেন জনগনের ব্যাংকিং হয় সেটাই কাম্য। তবে জনগনের ব্যাংক হতে হলে জনগণের মধ্যে অবস্থানরত নানা শ্রেণির লোকদের জীবন-জীবিকা বিষয়ক আর্থিক কার্যক্রম থাকতে হবে। শ্রমিক, কৃষক, মুঠে মুজুর,কর্মজীবি নারী, নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, শিক্ষার্থী, প্রবাসী, ভাসমান মানুষ সবার জন্যে চাই ব্যাংকিং সুবিধা ও কার্যক্রম।

আধূনিক দূর্নীতির ফোকাল বা কেন্দ্র হলো ব্যাংক ও পুঁজি বাজার। এর মাধ্যমই টাকা পাচারের নেটওয়ার্ক পাওয়ার একমাত্র পথ। আর এ বিষয়টি রোধ করতে হলে দরকার “সিরিয়াস ফ্রড” অফিস নামক একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করে দূর্নীতিকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা। এ ধরনের অফিস বৃটেনে কাজ করে।

ব্যাংকিং কমিশনে কারা কাজ করবেন তা তো বলতে পারি না। তবে যেসব শ্রেণির লোকের কথা উল্লেখ করলাম তাদের প্রতিনিধি হয়তো অতটুকু যাওয়ার সুযোগ পাবেনা তবে অনুরোধ তাদের কষ্টের বিষয়গুলো যারা কাজটি করবেন তারা যেন সোশ্যাল বা পাবলিক অডিট পদ্ধতি ব্যবহার করে সংগ্রহ, সংরক্ষণ, নথিভুক্ত ও সর্বোপরি বিশ্লেষণ করে মূল সমস্যা চিহ্নিত করে একটি প্রয়োগযোগ্য সুপারিশ রাখবেন। এতে হয়তো তাদের জীবন-জীবিকার পরিবর্তন আসতে পারে।

লেখকঃ অধ্যাপক আবদুল জলিল চৌধুরী (জামাল চৌধুরী)। প্রাক্তন অধ্যাপক, পরিচালক (গ্রাজুয়েট ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম) ও মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) পোস্ট গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট- বিআইবিএম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এডজানক্ট প্রফেসর, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button