আয়করের রিটার্ন দাখিল করার নিয়ম
আয়করের রিটার্ন দাখিল করা নিয়ে যারা খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্থ আছেন, কি করবেন বুঝতে পারছেন না তাদেরকে একটুখানি সহায়তা করার জন্য সামান্য কিছু নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করছি।
আয়কর কিংবা আয়কর রিটার্ন বলতে আসলে আমরা কি বুঝি?
কোন ব্যক্তি বা সত্ত্বার আয় বা লভ্যাংশের উপর প্রদেয় যে কর, তাই আয়কর। আর একজন করদাতার বার্ষিক আয়ের তথ্যাদি নির্ধারিত ফরমের মাধ্যমে আয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করার একটি মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন।
আয়কর রিটার্ন কাদেরকে দাখিল করতে হবে সেটা অনেকেই জানেন। তারপরেও যারা নতুন করদাতা কিংবা ভুলবশত গেল অর্থ বছরে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি বা করতে পারেননি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি।
ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন। |
সাধারণভাবে কোন ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতার আয় যদি বছরে ৩,০০,০০০/-টাকার বেশি হয় তবে তাকে অবশ্যই রিটার্ন দাখিল করতে হবে। মহিলা এবং ৬৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের ক্ষেত্রে এই আয় সীমা ৩,৫০,০০০/-, প্রতিবন্ধী করদাতাদের ক্ষেত্রে বছরে ৪,০০,০০০/- এবং গেজেটভূক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের ক্ষেত্রে এই আয়সীমা ৪,৭৫,০০০/- টাকা।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
সরকারী চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে হিসাবটি আরো সহজ। আয় বছরের যেকোন সময় যদি আপনার মূল বেতন ১৬,০০০/- বা তদুর্ধ্ব হয়ে থাকে তবে অবশ্যই আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
অর্থাৎ নিয়মানুযায়ী যাদের বেসিক ১৬,০০০/- টাকা বা তদুর্ধ্ব তাদের সবাইকে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এখানে মনে রাখতে হবে যে রিটার্ন দাখিল করা আর ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর পরিশোধ করা দুটি এক জিনিস নয়। উপরোক্ত বেসিক এর আওতাধীন সবাইকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে এটা সত্য কিন্তু তাদের আয় যদি করসীমা অতিক্রম না করে তাহলে আয়ের উপর আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে না, শুধুমাত্র রিটার্ন দাখিল করলেই চলবে। আয় যদি করসীমা অতিক্রম করে তাহলেই কেবল আয়কর দিতে হবে। রিটার্ন দাখিল করার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে আপনার নামে একটি E-TIN করে ফেলা। E-TIN করতে পোস্টের শেষাংশে দেয়া লিংকটি ফলো করুন।
ব্যাংক বা বিভিন্ন সরকারী/ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে ETIN ধারী সকলেই স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় হতে প্রেরিত TDS (Tax Deducted at Source) এর কপি পেয়ে যাবার কথা। সার্কুলার অনুযায়ী আপনার আপনার বেতন হতে প্রতি মাসে (জুলাই/১৯ হতে জুন/২০ পর্যন্ত) নির্ধারিত হারে যে সোর্স ট্যাক্স অব ইনকাম ট্যাক্স কাটা হয়েছে তা আপনার TDS স্ট্যাটমেন্ট এ শো করবে যাতে দেখা যাবে কত নং চালানের মাধ্যমে আপনার ঐ সোর্স ট্যাক্স ব্যাংক কর্তৃক জমা প্রদান করা হয়েছে।
যেমন- যাদেরকে সর্বনিম্ন আয়কর অর্থাৎ ৩,০০০/- থেকে ৫,০০০/- (এলাকাভেদে, অর্থাৎ ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য ৫,০০০/-, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য ৪,০০০/- এবং সিটি কর্পোরেশন এর বাইরের অন্য যে কোন এলাকার জন্য ৩,০০০/- টাকা) দিতে হচ্ছে তাদের টাকা ইতোমধ্যেই প্রতি মাসের বেতন (গত জুলাই/১৯ হতে জুন/২০ পর্যন্ত) হতে কাটা হয়ে যাবার কথা এবং আপনার বেতন হতে কর্তিত ঐ সোর্স ট্যাক্স অব ইনকাম ট্যাক্স আপনার ব্যাংক/ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সাবমিটও করা হয়ে গেছে (যদি কর্তিত টাকা আপনার রিটার্ন দাখিলের জন্য পূরণকৃত বিবরণীতে হিসাবকৃত আয়করের টাকার থেকে কম হয় তবে সেই অবশিষ্ট টাকা আলাদা চালান ফরম/ পে-অর্ডার/ ব্যাংক ড্রাফট এর মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক কিংবা অন্যান্য ব্যাংকের নির্ধারিত শাখায় জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে)।
এখন আপনার কাজ কেবল এনবিআর অফিসে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সমেত পূরণকৃত রিটার্নটা দাখিল করা। তবে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে TDS স্ট্যাটমেন্ট কেবল মাত্র আপনার বেতন এবং বেতন সম্পর্কিত আনুষাঙ্গিক বিষয়াদির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। এর বাইরেও আপনার আরো সম্পত্তি, আয় ইত্যাদি থাকতে পারে। রিটার্ন দাখিল করার সময় আপনাকে অবশ্যই ওইসব সম্পত্তির বিবরণও দেখাতে হবে।
আপনি চাইলে নিজে নিজেই রিটার্ন ফরমটি ফিলাপ করতে পারবেন। আর প্রয়োজন মনে করলে আপনি একজন ভালো আয়কর আইনজীবীর সহায়তা নিতে পারেন। এছাড়া, এনবিআর অফিসে গিয়েও এনবিআর অফিসারের সহায়তায় আপনি ফরমটি ফিলাপ করে নিতে পারেন।
মনে রাখবেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন আপনাকে অবশ্যই দাখিল করতে হবে এবং এটা বাধ্যতামূলক। অন্যথায় আপনাকে নানামুখি জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে যা পরবর্তীতে আইনী জটিলতার রূপ নিবে। খেলাপী করদাতাকে নির্দিষ্ট হারে জরিমানা আরোপ করারও বিধান আছে। এক্ষেত্রে করদাতাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগদানের লক্ষ্যে আবশ্যিকভাবে ধারা-১৩০ মোতাবেক নোটিশ প্রদান সাপেক্ষে খেলাপী করদাতার সর্বশেষ আরোপিত আয়করের ১০% অথবা কমপক্ষে ১০০০ টাকা ও পরবর্তী প্রতি খেলাপী দিবসের জন্য ৫০ টাকা হারে জরিমানা (ক্ষেত্রে বিশেষে সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর ধার্যকৃত করের ৫০% বা ১০০০/- দুটির মধ্যে যেটি বেশি!) আরোপ করার বিধান আছে।
তবে যদি আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করা আপনার জন্য খুব বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে থাকে তাহলেও খুব একটা দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। সেক্ষত্রে আপনি উপ কর কমিশনারের কাছে নির্ধারিত ফরমে নিদিষ্ট কারণ উল্লেখপূর্বক সময় বাড়ানোর আবেদন করে সময় বাড়িয়ে নিতে পারবেন। তবে চেষ্টা করবেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রিটার্ন দাখিল করে ফেলতে।
আর মনে রাখবেন, আপনার ই-টিআইএন করার সময় ট্যাক্স জোন হিসেবে যে এলাকা বাছাই করেছিলেন সেই জোনে গিয়েই আপনাকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
এবার আসুন এক নজরে রিটার্ন ফরম IT-11GA এর বিভিন্ন পৃষ্ঠাগুলো সম্পর্কে একটুখানি জেনে নেই
১ম পৃষ্ঠাঃ এই পাতা আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাদি যেমন নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, ইটিআইএন নং, মোবাইল নং, জন্ম তারিখ ইত্যাদি দিয়ে পূরণ করতে হবে।
২য় পৃষ্ঠাঃ ১ নং ক্রমিকের বেতনাদির তথ্যসহ ১২, ১৩, ১৪, ১৫ ১৬ (ক) নং ক্রমিকের তথ্যাদি আপনার টিডিএস বিবরণীতে পাবেন। আর যদি আপনার অন্যান্য কোন উৎস হতে আয় থাকে তবে সেগুলো উল্লেখপূর্বক হিসাবায়ন করে পূরণ করুন। ১৮ নং ক্রমিকের তথ্য পৃষ্ঠা নং-৩ পূরণ করার পর পাবেন।
৩য় পৃষ্ঠাঃ আপনার টিডিএস স্ট্যাটমেন্ট থেকে তথ্য নিয়ে পূরণ করুন।
৪র্থ পৃষ্ঠাঃ আপনার জিপিএফ/ সিপিএফ ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত তথ্যাদি এখানে প্রদান করুন। সেই সাথে রিটার্ন এর সাথে প্রদানকৃত কাগদপত্র/ দলিলাদির বিবরণ উল্লেখ করুন।
৫ম ও ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠাঃ বেতন ভাতাদি ছাড়া আপনার অন্যান্য সম্পত্তি, আয়, ঋণ, ব্যয় ইত্যাদির তথ্যাদি পেশ করুন এবং প্রয়োজনীয় হিসাবায়ন করুন।
৭ম পৃষ্ঠাঃ আপনার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনযাত্রার ব্যয় সম্পর্কিত তথ্যাদি এখানে প্রদান করুন। ব্যস আপনার কাজ তো শেষ!
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
রিটার্ন দাখিলের সময় যে সকল কাগজপত্রাদি আপনাকে সংযুক্ত করতে হবে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
✅ নতুন করদাতা হলে, আপনার একটি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি (প্রতিষ্ঠান প্রধান বা প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা বা যেকোন টিআইএনধারী কর্তৃক সত্যায়িত, প্রতি ৫ বছর পর পর ব্যক্তি করদাতাকে তার সত্যায়িত ছবি রিটার্নের সাথে জমা দিতে হবে)
✅ এনআইডি এর কপি;
✅ ই-টিআইএন এর কপি;
✅ টিডিএস স্ট্যাটমেন্ট এর কপি;
✅ অতিরিক্ত কর পরিশোধের সমর্থনে চালান/ পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট এর কপি;
✅ বেতন বিবরণী;
✅ স্যালারি একাউন্টের (আয় বছরের) স্ট্যাটমেন্ট;
✅ আপনার যদি কোন ডিপোজিট স্কীম থেকে থাকে তবে তাদের আয় বছরের স্ট্যাটমেন্ট;
✅ ল্যাপটপ বা কোন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ কিনে যদি রেয়াত দাবী করে থাকেন তবে তার ভাউচার;
✅ আপনার কোন বিনিয়োগ থেকে থাকলে তার স্বপক্ষে দলিলাদি;
✅ অন্যান্য কোন সম্পত্তি থাকলে তার স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট;
✅ গেল আয় বছরে দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ন এর প্রাপ্তি স্বীকার পত্রের কপি।
✅ ই-টিআইএন করতে ক্লিক করুন- এখানে
সকল ব্যক্তি করদাতাদের জন্য আয়কর রিটার্ন ফরম IT-11GA ডাউনলোড করার লিংক নিম্নরূপ
✅ পিডিএফ এ বাংলা ফরম পেতে ক্লিক করুন- এখানে
✅ পিডিএফ এ ইংরেজি ফরম পেতে ক্লিক করুন- এখানে
✅ ওয়ার্ড এ বাংলা ফরম পেতে ক্লিক করুন- এখানে
✅ এক্সেল এ ইংরেজি ফরম পেতে ক্লিক করুন- এখানে
✅ আয়কর রিটার্ন নির্দেশিকা ২০২০-২০২১ পেতে ক্লিক করুন- এখানে
✅ আয়কর পরিপত্র ২০২০-২০২১ পেতে ক্লিক করুন- এখানে
✅ ইনকাম ট্যাক্স ম্যানুয়াল পার্ট-২ পেতে ক্লিক করুন- এখানে
উপরোক্ত তথ্যাদি আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক যা বুঝতে পেরেছে তার ভিত্তিতে লেখা। আমার লেখায় কোন ভুল যদি অভিজ্ঞ কারো চোখে ধরা পরে তাহলে অবশ্যই সংশোধন করে দিবেন তাতে করে অন্যদেরও সহায়তা হবে।
কার্টেসিঃ প্রণব চৌধুরী। (সংশোধিত ও পরিমার্জিত)।