ক্রেডিট কার্ড ঠিক আছে কিনা যেভাবে বুঝবেন
আপনার ক্রেডিট কার্ড যদি কিছু সময়ের জন্যও আপনার চোখের আড়াল হয় তবে সে সময়ের মধ্যেও আপনার ক্রেডিট অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যেতে পারে। যদি ক্লোনিং (Cloning) এর মাধ্যমে আপনার ক্রেডিট কার্ড চুরি করা হয় তাহলে জানবেন, আপনার কার্ডের সিকিউরিটি বেশি কঠোর ছিল না। কারণ আজকাল ক্রেডিট কার্ড ডাকাতদের বেশি ছলচাতুরী করতে হয় না; শুধু একটু মাথা খাঁটিয়ে কাজ করলেই হয়। কারণ কাজটা অত্যাধিক সহজ যা আপনার কল্পনার বাহিরে। নিচে ক্রেডিট কার্ড ফ্রড হওয়ার কিছু সম্ভাব্য কারণ বলা হলো-
১) ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যার (Malicious Software)
যদি কারো ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করতে গিয়ে হ্যাকারের অথবা হ্যাকার টিমের ডেটা শেষ হয়ে যায় তবে তারা ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যার ব্যবহার করে ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানটিতে সংরক্ষিত সকল ক্রেডিট কার্ডের যাবতীয় তথ্য বের করে ফেলে। এটা ই-কমার্স ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে; যেটার মাধ্যমে অ্যাসলে ম্যাডিশন (Ashley Madison) ডেটা লিক হয়েছিল।
জানেন হয়ত, ২০১৫ সালের ৪ অগাস্ট মালয়েশিয়াতে একটি ডেটা প্রকাশ করা হয়েছিল যেখানে ক্রেডিট কার্ডের সকল হিসাবের বিস্তারিত ছিল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে ৩২ মিলিয়ন মানুষকে একটি প্রিমিয়াম সাইটে লগইন করানো হয়েছিল। যেই ওয়েবসাইটের সাহায্যে অবিবাহিতরা তাদের পছন্দমত জীবনসঙ্গী বাছাই করতে পারবেন। এর মাধ্যমে গত ৭ বছরের যোগ্য ক্রেডিট কার্ড ও এগুলোর পেমেন্ট লেনদেন ডিটেইলও পাওয়া যায়। এতেও হ্যাকাররা ক্ষান্ত হয়েছিল না; তারা চেয়েছিল সকল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তাদের ফাইল হ্যাক করতে যার মাধ্যমে এ ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের কার্ড নম্বর, কার্ডের এক্সপাইয়ার ডেট এবং সিকিউরিটি কোড জানা সম্ভব। যদি তারা এই কাজে সফল হত তাহলে কি হতে পারতো একবার ভেবে দেখেছেন? স্বাভাবিক ভাবেই এই তথ্যগুলো বিক্রি করে দেওয়া হত এবং এ তথ্যগুলো যারা কিনে তারা হচ্ছে, ডুপ্লিকেট ক্রেডিট কার্ড তৈরিকারক। এই ডুপ্লিকেট ক্রেডিট কার্ড তৈরিকারকরা নতুন কিন্তু ফেইক ক্রেডিট কার্ড তৈরি করত যা দেখতে একদম আসল ক্রেডিট কার্ডের মত। এরপর এরা এই কার্ডগুলোর মাধ্যমে ক্রিমিনালদের কাছ থেকে টাকা আদান-প্রদান করত।
এই মারাত্মক বিপত্তি কীভাবে এড়ানো যায় তা ভাবছেন তো? এই বিপত্তি এড়ানোর কিছু উপায় আছে যা নিচে তুলে ধরা হলো-
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
আপনার ফোনে মোবাইল এলার্ট চালু রাখুন। যেন আপনার হিসাবে অস্বাভাবিক কোন কর্মকাণ্ড বা টাকা আদান-প্রদান হলে আপনি তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারেন। আপনার ব্যক্তিগত রেফারেন্সে নিজের সকল লেনদেন ট্র্যাক করুন। এরপর আপনার ব্যক্তিগত রেকর্ড ও ব্যাংকের রেকর্ড মিলিয়ে দেখুন, সব ঠিকঠাক আছে কিনা। একই সাথে, আপনি টাকা আদান-প্রদানের জন্য যে জয়েন সাইট ব্যবহার করেন সেইটা নিরাপদ কিনা তা একবার যাচাই-বাছাই করে দেখুন।
২) কার্ড স্কিমার (Card Skimmer)
ক্রেডিট নম্বর চুরি করার আরেকটি সাধারণ ও সহজ উপায় হচ্ছে, কার্ড স্কিমার। ATM বুথে অথবা কার্ড রিডার মেশিনে একটা ছোট্ট ডিভাইস ঢুকানো হয় যেন আপনি কার্ড সুইপ করলেই কার্ডের যাবতীয় তথ্য হ্যাকাররা রেকর্ড করে নিতে পারে। এক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড হ্যাকার কোন রেস্টুরেন্টের ওয়েটার অথবা পেট্রোল পাম্পের কোন কর্মচারীও হতে পারে। আপনি যখন খাবার পরে বা গাড়িতে পেট্রোল নেওয়ার পরে কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করার জন্য কার্ডটা সুইপ করবেন তখন তারা আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারবে সহজেই।
এই স্কিমিং ডিভাইস এত ক্ষুদ্র ও সূক্ষ্মভাবে ডিজাইন করা থাকে যে, আপনি যদি এই স্কিমার খোঁজার উদ্দেশ্যে কার্ড রিডারটা পর্যবেক্ষণ না করেন তাহলে সেইটা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন।
ATM বুথে যেহেতু ক্যামেরা থাকে সেহেতু সেখানে স্কিমিং চিপ ঢোকানো একটু রিস্কি ও দুঃসাধ্য হয় হ্যাকারদের জন্য। কিন্তু কার্ড রিডারে খুব সহজেই স্কিমিং চিপ ঢোকানো যায়। বলাবাহুল্য, এই স্কিমারের মাধ্যমে আপনার তথ্য কালেক্ট করা খুবই সহজ কারণ এইটা ব্লুটুথের মাধ্যমে তথ্য হ্যাকারের ফোনে ট্র্যান্সফার করে দেয়।
যেভাবে এড়াবেন
ATM বুথের মেশিন এবং কার্ড রিডার ব্যবহারের পূর্বে দেখুন এখানে কোন আলাদা ডিভাইস লাগানো আছে কিনা বা মেশিনটা একটু আলাদা মনে হচ্ছে কিনা।
৩) ফিশিং ইমেইল (Phishing Email)
চোর বা হ্যাকার ইমেইলের মাধ্যমেও আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করতে পারে। ফিশিং ইমেইল দেখে আপনার মনে হবে, কোন বৈধ প্রতিষ্ঠান (যেইটা আপনার খুব পরিচিত) থেকে ইমেইল করা হয়েছে ভ্যারিফিকেশনের জন্য। আপনাকে ইমেইল করার সময় ফিশারস (Phishers) কিছু পরিচিত লোগো ব্যবহার করে যা আপনার মনে কোন সন্দেহের অবকাশই রাখবে না পাছে আপনার বিশ্বাস অর্জন করে নিবে। কারণ তারা এত সুন্দর করে তাদের ইমেইলটা ডিজাইন করে যে, আপনি বুঝতেই পারবেন না তারা মিথ্যাচারের মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য পেতে যাচ্ছে। এবং আপনি যখন আপনার লগইন তথ্য বা আপনার কার্ড নম্বর তাদের দিবেন তখন তৎক্ষণাৎ ফিশারস আপনার সকল ডেটা সংগ্রহ করে নিবে।
আপনি যখন তাদের এটাচমেন্টে ক্লিক করবেন তখন আপনার সকল জরুরী তথ্য তাদের নখদর্পণে চলে যাবে।
যেভাবে এড়াবেন
অযাচিত কোন মেইল (যতই বৈধ প্রতিষ্ঠান থেকে আসুক না কেন) আসলে সেইটা ওপেন করবেন না। আপনি যদি অনলাইনে কাজ করেন তাহলে কাজ শুরু করার আগে সঠিক বা মূল ওয়েবসাইট গিয়ে লগইন করুন। এমনকি আপনি যে ওয়েবসাইটে কাজ করছেন সে ওয়েবসাইটের URL টা সঠিক কিনা সেটাও যাচাই করুন। তবুও যদি আপনার মন খুঁতখুঁত করে তবে সে প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি কথা বলুন। মনে রাখবেন, ব্যাংক কখনও আপনার ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ড, লগইন এড্রেস এবং কোন ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাইবে না। কারণ ব্যাংকের কাছে এসকল তথ্য আগে থেকেই আছে।
৪) মেইল (Mail)
হ্যাকার আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য মেইলের মাধ্যমে বা কোন ফেইক ইস্পেসিয়াল অফার বা প্রমোশনের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারে। তারা ইমেইলে এমনও বলতে পারে, “আপনি একটি বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন বা অমক কোম্পানি আপনাকে কয়েকদিনের ট্রিপে যাওয়ার অফার দিয়েছে। এই অফারটা গ্রহণ করলে এত টাকা মানি অর্ডার করতে হবে বা আপনার ক্রেডিট কার্ডের নম্বর আমাদের সাথে শেয়ার করতে হবে। আপনি যখনই তাদের কথায় বশীভূত হয়ে ইমেইলের উত্তর দিবেন তখনি তারা আপনার কার্ড হ্যাক করার সুযোগ পেয়ে যাবে।
যেভাবে এড়াবেন
ইমেইলের উত্তর দেওয়ার আগে যে কোম্পানির নামে আপনার কাছে ইমেইল এসেছে সে কোম্পানির সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে সিওর হয়ে নিবেন। এই ছোট কাজটা আপনাকে অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা করবে।
৫) ফোন কল (Phone Call)
কেউ আপনাকে ফোন করেও আপনার কার্ড নম্বর চাইতে পারে। এইটা যদিও এখন খুব পরিচিত একটা বিষয় তবুও অনেকে এই ধোঁকার শিকার হচ্ছে আজও। এই হ্যাকাররা আপনাকে ফোন করে আপনাকে এলার্ট করবে! বলবে, আপনার ক্রেডিট কার্ডে অমক সমস্যা আছে। এত টাকা দিলে আপনার ক্রেডিট কার্ডের এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। এই ধরণের কোন ফোন, ম্যাসেজ বা ইমেইল আসলে কলার (Caller) বা প্রেরকের ব্যাপারে ভালোভাবে জেনে নিন।
যেভাবে এড়াবেন
কাউকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দিবে না। আর আপনার ক্রেডিট কার্ডে কোন সমস্যা থাকলে তা নিজে সমাধান করুন, কারো মাধ্যমে করবেন না।
৬) ম্যালওয়্যার ও স্পাইওয়্যার হ্যাকিং (Malware & Spyware Hacking)
ম্যালওয়্যার একধরণের সফটওয়্যার যা আপনার কম্পিউটার অথবা নেটওয়ার্ককে নষ্ট ও অচল করে দিবে। ম্যালওয়্যার আপনার কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপে তখনই ইন্সটল হয়ে যায় যখন আপনি হ্যাকারদের তৈরি করা ওয়েবসাইটে যাবেন এবং লগইন করার চেষ্টা করবেন।
পক্ষান্তরে, স্পাইওয়্যার এমন একটা সফটওয়্যার যেইটা আপনার খেয়াল বা জ্ঞানের বাহিরে গিয়ে আপনার সকল তথ্য সংগ্রহ করে নিবে। এইটা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য… যেমনঃ ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংকিং ডিটেইল সব তথ্য কালেক্ট করে নিতে পারে।
যেভাবে এড়াবেন
কোন পাবলিক কম্পিউটার বা পাবলিক নেটওয়ার্কে (যেমনঃ রাস্তার পাশের ওয়াইফাই) আপনার ক্রেডিট কার্ড ডিটেইল রাখবেন না অথবা সেখান থেকে আপনার ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে লগইন করবেন না। এবং আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ম্যালওয়্যার ও স্পাইওয়্যার এড়াতে কোন ভালো অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ইন্সটল দিন। এবং যে ওয়েবসাইটটা আপনার ঠিক মনে হচ্ছে না সেখান থেকে কোন কিছু ডাউনলোড দিবেন না।
যেকোনো কারো সাথে ক্রেডিট কার্ড ফ্রডের ঘটনা ঘটতে পারে কিন্তু এই বিপদ থেকে এড়ানোর জন্য আপনি কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারেন যেগুলোর কথা আমি উপরে আলোচনা করেছি। আর হ্যাঁ, আপনার অ্যাকাউন্ট নিয়মিত চেক করবেন এবং কোন কিছু অস্বাভাবিক মনে হলে সাথে সাথে ব্যাংকে যোগাযোগ করবেন।
আশা করি, আপনার আর্থিক তথ্যগুলো আপনার কাছেই থাকবে, আপনি ক্রেডিট কার্ড ফ্রডের শিকার হবেন না।