আয়কর

অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট করবেন কিভাবে?

অনলাইনে টিন/ টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট করা এখন খুবই সহজ। আপনি চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী বা অন্য যে পেশাতেই থাকুন না কেন, টিন/ টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট আপনার জন্য আবশ্যক। অনেকেই আমার কথায় অবাক হবেন। অনেকে হয়তো দ্বিমতও পোষণ করতে পারেন। কিন্তু অবাক করার মত হলেও এটা সত্য যে, ইনকাম আছে এমন যে কোন ব্যক্তির জন্যই এই সার্টিফিকেট প্রযোজ্য।

টিন/ টিআইএন (TIN) এর পূণরূপ হলো ট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নম্বর (Taxpayer Identification Numbers)। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় করদাতা শনাক্তকরণ সংখ্যা। আমরা এটা সবাই জানি যে, দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ইনকাম আছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে ইনকামের একটি নির্দিষ্ট অংশ সরকারকে ট্যাক্স হিসাবে প্রদান করতে হয়। এটাকে ইনকাম ট্যাক্স বলা হয়। ইনকাম ট্যাক্স পরিশোধ করতে হলে ট্যাক্স প্রদানকারী ব্যক্তির অবশ্যই একটি টিন/ টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট থাকতে হবে। আর সেটি এখন অনলাইনেই করা যায়।

আরোও দেখুনঃ টিন সার্টিফিকেট কেন প্রয়োজন হয়?

বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রত্যেক করদাতাকে আলাদাভাবে শনাক্তকরণের জন্য অনলাইনে ট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নম্বর বিতরণের ব্যবস্থা চালু করেছে। সফলভাবে নিবন্ধকৃতরা একটি ১২ সংখ্যার ট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নম্বর লাভ করে যা পরবর্তীতে সারাজীবনের জন্য ঐ ব্যক্তির ট্যাক্স প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়। একজন ব্যক্তি একবারই নিবন্ধন করতে পারবেন।

টিন/ টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট নিবন্ধন সম্পন্ন হলে ১২ ডিজিটের টিন/ টিআইএন (TIN) নম্বরটি সম্বলিত একটি সার্টিফিকেট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিতে হয়, যাকে টিন/ টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট বলে। এই সনদটিই বিভিন্ন দপ্তরে প্রয়োজনে ট্যাক্সপেয়ার রেজিষ্ট্রেশনের প্রমাণপত্র হিসেবে জমা দিতে হয়। আপনি চাকুরীজীবি হলে কোম্পানীতে এই সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। আবার, ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। এই ট্রেড লাইসেন্স নিতে হলেও টিন/ টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। তাই, চলুন জেনে নিই কিভাবে খুব সহজেই অনলাইন থেকে টিন/ টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

প্রথম ধাপ: রেজিষ্ট্রেশন-
কাজটির জন্য অবশ্যই আপনার একটি ইন্টারনেট সংযোগ আছে এমন কম্পিউটারের প্রয়োজন হবে। মোবাইল থেকেও করতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে বিষয়টা একটু কঠিন মনে হতে পারে। তো যাই হোক, প্রথমেই আপনাকে এর জন্য বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ইনকাম ট্যাক্সপেয়ার পোর্টাল ভিজিট করতে হবে।

ওয়েবসাইটে থাকা রেজিষ্ট্রেশন বাটনটিতে ক্লিক করার পর সেখানে আপনাকে কিছু তথ্য দিয়ে একটি ইউজার অ্যাকাউন্ট তৈরী করতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করছি-
ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড: রেজিষ্ট্রেশন পরবর্তীতে লগইন করার জন্য এই দুইটি তথ্যের প্রয়োজন হয়। যথাযথভাবে এবং সহজে মনে রাখতে পারবেন এমন ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো হবে। কারণ, কোন কারণে আপনি আপনার টিন/ টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেললে পরবর্তীতে এই অ্যাকাউন্টে লগইন করে পুনরায় সেটি ডাউনলোড করা সম্ভব।
সিকিউরিটি কোয়েশ্চেন: আপনি সহজে মনে রাখতে পারেন এবং সহজেই উত্তর দিতে পারবেন এমন প্রশ্ন নির্বাচন করে উত্তরটাও সহজভাবে লিখুন। আপনি যদি কোন কারণে ইউজার আইডি বা পাসওয়ার্ড ভুলে যান, তবে সেটি পুনরূদ্ধারের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
কান্ট্রি সিলেক্ট: ডিভল্টভাবেই বাংলাদেশ সিলেক্ট করা থাকবে। পরিবর্তন করার কোন প্রয়োজন নেই।
মোবাইল নম্বর: আপনার সচল এবং পূর্বে কোন টিন/ টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট রেজিষ্ট্রেশনের কাজে ব্যবহার হয়নি এমন একটি মোবাইল নম্বর প্রদান করুন।
ইমেইল এড্রেস: আপনার ইমেইলটি নির্ভুলভাবে লিখুন।

আরোও দেখুনঃ টিন থাকলেই কি রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক?

সর্বশেষ নিচে থাকা ক্যাপচা কোডটি পূরণ করে রেজিষ্টার বাটনে ক্লিক করুন। ক্লিক করার সাথে সাথে আপনাকে অন্য একটি পেজে নিয়ে যাওয়া হবে এবং একটি অ্যাক্টিভেশন কোড চাইবে। রেজিষ্ট্রেশনের সময় আপনি যেই মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করেছেন সেই নম্বরেই অ্যাক্টিভেশন কোড পাঠানো হয়। মোবাইলের ম্যাসেজ থেকে কোডটি দেখে টাইপ করে অ্যাক্টিভেট বাটনে ক্লিক করুন।

দ্বিতীয় ধাপ: লগইন এবং ক্যটাগরী নির্বাচন-
সঠিকভাবে রেজিষ্ট্রেশন করা হয়ে গেলে ওয়েবসাইটের লগইন বাটনে ক্লিক করে আপনার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করুন। ওয়েলকাম পেজে টিন রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য একটি বাটন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করে রেজিষ্ট্রেশনের আবেদন শুরু করুন।

এই ধাপে আপনাকে আপনার পেশা ও অবস্থান সংক্রান্ত কিছু তথ্য দিতে হবে। আপনি কি ধরনের পেশায় আছেন, তাছাড়া আপনি কোন জেলার কোন থানায় অবস্থান করছেন, এসব তথ্য দেওয়ার পর পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য নেক্সট বাটনে ক্লিক করুন।

তৃতীয় ধাপ: আবেদন ফরম পূরণ-
এবার আপনার সামনে মূল আবেদনের পেজটি এসে হাজির হবে। এই নির্ধারিত ফরমটিই আপনাকে পূরণ করতে হবে সঠিক ও নিভূল তথ্য দিয়ে। কোন তথ্য ভুল দিলে সার্টিফিকেট পাবেন না, এমনটি ফরমটিও সাবমিট করতে পারবেন না। ফরমটি পূরণের সময় অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রটি কাছে রাখুন। চলুন ফরমটিতে কি কি তথ্য দিতে হবে তা সংক্ষেপে জেনে নিই-
করদাতার নাম: আপনার নাম জাতীয় পরিচয়পত্রে যেভাবে আছে হুবহু একইভাবে লিখুন।
লিঙ্গ: রেডিও বাটন থেকে মেল অথবা ফিমেল নির্বাচন করুন।
জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর: আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নির্ভূলভাবে নম্বরটি লিখুন।
জন্ম তারিখ: জাতীয় পরিচয়পত্রে যে জন্ম তারিখ দেওয়া আছে সেটিই নির্বাচন করুন। অন্যথায় সার্টিফিকেট আসবে না।
পিতা, মাতা, স্বামী/ স্ত্রীর নাম: পরের ৩টি ঘরে পিতার নাম, মাতার নাম ও বিবাহিত হয়ে থাকলে স্বামী/ স্ত্রীর নাম লিখুন। অবিবাহিত হলে ঘরটি ফাঁকা রেখে দিন। বাবা মায়ের নামের বানানের ক্ষেত্রে কোন বাধ্য-বাধকতা নেই, তবে নির্ভুলভাবে লেখাটাই উত্তম।
বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা: এরপর ফরমের একদম নিচের অংশে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা প্রদান করে গো টু নেক্সট বাটনে ক্লিক করুন।

এ পর্যায়ে আপনার প্রদানকৃত সকল তথ্য আপনাকে মিলিয়ে দেখার জন্য প্রিভিউ করা হবে। তথ্য নির্ভুল হয়ে থাকলে পেজের নিচের দিকে সকল তথ্য সঠিক হয়েছে মর্মে ইংরেজিতে একটি অঙ্গীকারনামা রয়েছে এবং তার পাশেই একটি ছোট বক্স রয়েছে। বক্সটিতে ক্লিক করে সাবমিট অ্যাপ্লিকেশন বাটনে ক্লিক করুন।

আরোও দেখুনঃ কিভাবে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করা যায়?

এটি হচ্ছে আবেদনের সর্বশেষ পর্যায়। আপনি সাবমিট অ্যাপ্লিকেশন বাটনে ক্লিক করার পর আপনার দেওয়া সকল তথ্য জাতীয় পরিচয় পত্রের সার্ভারে সংরক্ষিত তথ্যের সাথে মিলিয়ে দেখবে এবং তথ্য সঠিক হলে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি সম্বলিত একটি পেজ চলে আসবে যেখানে বলা হবে যে আপনার টিন/ টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট অ্যাপ্লিকেশন সফল হয়েছে।

এবার পেজটির নিচে থাকার ভিউ সার্টিফিকেট বাটনে ক্লিক করলে আপনার টিন/ টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেটটি আপনাকে দেখানো হবে। আপনি চাইলে সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন এবং পরবর্তীতে যে কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। অনলাইনে টিন/ টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট করার প্রক্রিয়াটি আশা করি আপনার কাছে সহজ ও সাবলীল হয়েছে এবং আপনি ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন।

একটি মন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button