অর্থনীতি

যেভাবে এলো বাজেটের ধারণা

বাজেট আসার আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় বাজেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। একেক খাতে একেকজনের হাজারো উপদেশ বা সুপারিশ। কিন্তু কীভাবে এসেছে বা কবে থেকে শুরু হয়েছে এই বাজেট প্রক্রিয়া, সেটি বেশ মজার।

‘বাজেট’ শব্দটির উৎপত্তি হলো ‘বোগেটি’ শব্দ থেকে। এটি একটি গ্রিক শব্দ। যার অর্থ মানিব্যাগ, যেখানে টাকা রাখা যায়। এর একটি হিসাবও রাখার দরকার হয়। এ পদ্ধতি প্রথম আবিষ্কৃত হয় গ্রিকদের সময়। পরে এটি প্রতিষ্ঠানিক রূপ পায় ব্রিটেনে।

ইতিহাসের পাতায় তাকালে দেখা যাবে এর উৎপত্তি হয়েছে আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগে। ১৭২০ সালে ব্রিটেনের পার্লামেন্টে প্রথম জাতীয় বাজেট ও রাজস্বনীতি উত্থাপন করেন স্যার রবার্ট ওয়ালপোল।

তিনি ১৭১১ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ জয়েন্ট স্টক কোম্পানি সাউথ সি বাবলির তহবিলের উপাচার্য ছিলেন। সরকারি এ কোম্পানিটির শেয়ারে ধস নামলে জনগণের মনোবল ও বিশ্বাস ফিরে পেতে তিনি প্রথম বাজেট তৈরি করেন। এতে শেয়ারহোল্ডারদের বড় ভর্তুকি দেওয়া হয়। এর ১৩ বছর পর ওয়ালপোল সরকারের করের বোঝা কমাতে তার রাজস্ব পরিকল্পনায় বিভিন্ন ধরনের পণ্য যেমন ওয়াইন, তামাকের ওপর আবগারি শুল্ক ধার্য করার প্রস্তাব করেন।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

এতে সাধারণ জনগণ এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে যে, উইগ পিয়ার উইলিয়াম ‘দ্য বাজেট ওপেন অর এন আনসার টু এ প্যামফ্লেট’ নামে একটি প্যামফ্লেটই লিখে ফেলেন। সেবারই প্রথম সরকারের রাজস্বনীতিতে বাজেট শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। পরে কর ধার্যের পরিকল্পনাটি ধীরে ধীরে বাতিল করা হয়।

আঠারো শতকের প্রথম দিকে বাজেটের বার্ষিক অ্যাকাউন্টে পণ্যের ওপর শুল্ক ধার্য শুরু হয় এবং ১৭৬০ সালের মধ্যে বাজেট বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়ে। এরপর থেকে এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হতে শুরু করে। ১৭৬৪ সালে গ্রেট ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সে বাজেটে অধিবেশনে জর্জ গ্রিনভিল স্ট্যাম্প আইনের কথা বলেন।

যুক্তরাজ্য শুরুতে বসন্তকালে বাজেট দেওয়া হতো। এ দিনটিকে তারা বাজেট দিবস হিসেবে মনে করত। কারণ জনগণের কাছ থেকে ভূমি রাজস্ব আদায় করা হতো এপ্রিল মাসে এবং বেশিরভাগ অর্থ আসত কৃষি খাত থেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও প্রতি অর্থবছরে বাজেট প্রণয়ন করা হয়। তবে এ দেশের বাজেটের অন্যতম সমস্যা হলো এতে খরচের ব্যাপারে তেমন কোনো পরিষ্কার ধারণা থাকে না। বাংলাদেশের বাজেটের খরচের দিকটি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক দুর্বল। বাজেটে করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স ধার্যের হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স যেখানে আমেরিকায় ১৫ ও ভারতে ২৩ শতাংশের কম, সেখানে বাংলাদেশে এ হার ২৫ থেকে ৪৫ শতাংশ।

আবার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফা বণ্টনের পর বণ্টিত মুনাফার ওপর আবার কর দিতে হয়, যা তাদের শেয়ারবাজারে আসতে নিরুৎসাহিত করে। সরকার যদি আসন্ন বাজেটে করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স ৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশে নিয়ে আসে তাহলে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ারবাজারের সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে করে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও শক্তিশালী হবে।

আধুনিক শিল্প অর্থনীতিতে সরকারের অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া পরিচালনায় প্রধান ও মুখ্য ভূমিকা পালন করে এ বাজেট। এ বছর ৪৬তম বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এটি হবে তার পেশকৃত ১১তম বাজেট। বাংলাদেশের প্রথম বাজেট পেশ করেছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button