চল্লিশ বছরে ইসলামী ব্যাংকঃ শীর্ষে উঠার পিছনের কথা
মুহাম্মদ শামসুজ্জামানঃ প্রতিবছরের ৩০শে মার্চ “ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড” এর জন্য কেবল ক্যালেন্ডারের একটি তারিখই নয় বরং এ তারিখটি এলে ব্যাংকের সাথে যুক্ত মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, গ্রাহক ও শুভানুধ্যায়ীদের আনন্দবোধ হয়, অন্তর থেকে দোয়া আসে। ১৯৮৩ সালের এদিনে ব্যাংকটি দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার প্রথম রিবামুক্ত ব্যাংক হিসাবে কার্যক্রম শুরু করে। আজ তার চল্লিশ বছরে পদার্পন।
ইসলামে চল্লিশের গুরুত্ব রয়েছে। নবী-এ-কারীম (সাঃ) ৪০ বছর বয়সে নবুওত প্রাপ্ত হন। মূসা (আঃ) সিনাই পাহাড়ে “তাওরাত” আনতে গিয়ে ৪০ দিন ছিলেন। হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি লাগাতার চল্লিশ দিন জামাতের সাথে তাকবীর উলার সাথে নামায পড়বে। তার জন্য দু’টি মুক্তির খোশখবরী রয়েছে। একটি হল জাহান্নাম থেকে মুক্তি আরেকটি হল মুনাফিকী থেকে মুক্তি। কুরআনে আল্লাহ চল্লিশ বছরে পৌছলে বান্দাকে একটি দোয়ার নির্দেশ দিয়েছেন-
وَوَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡہِ اِحۡسٰنًا ؕ حَمَلَتۡہُ اُمُّہٗ کُرۡہًا وَّوَضَعَتۡہُ کُرۡہًا ؕ وَحَمۡلُہٗ وَفِصٰلُہٗ ثَلٰثُوۡنَ شَہۡرًا ؕ حَتّٰۤی اِذَا بَلَغَ اَشُدَّہٗ وَبَلَغَ اَرۡبَعِیۡنَ سَنَۃً ۙ قَالَ رَبِّ اَوۡزِعۡنِیۡۤ اَنۡ اَشۡکُرَ نِعۡمَتَکَ الَّتِیۡۤ اَنۡعَمۡتَ عَلَیَّ وَعَلٰی وَالِدَیَّ وَاَنۡ اَعۡمَلَ صَالِحًا تَرۡضٰہُ وَاَصۡلِحۡ لِیۡ فِیۡ ذُرِّیَّتِیۡ ۚؕ اِنِّیۡ تُبۡتُ اِلَیۡکَ وَاِنِّیۡ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ
আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সঙ্গে এবং প্রসব করে কষ্টের সঙ্গে, তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়াতে লাগে ত্রিশ মাস, ক্রমে সে যখন পূর্ণ শক্তিপ্রাপ্ত হয় এবং চল্লিশ বৎসরে উপনীত হয় তখন বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও, যাতে আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি তুমি যে অনুগ্রহ করেছ, তার জন্যে এবং যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর; আমার জন্যে আমার সন্তান-সন্ততিদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমারই অভিমুখী হলাম এবং আমি অবশ্যই আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (আল আহ্কাফ – ১৫)
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
১৯৬৩ সালে মিসরের মিটগামার গ্রামে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আহমাদ আল নাজ্জার ক্ষুদ্র জমা ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগের ভিত্তিতে বিশ্বের প্রথম ইসলামী ব্যাংক কায়েম করেন। সে ধারায় এক দশকের মধ্যে বিভিন্ন দেশে কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। সত্তর দশকে দুবাই ইসলামী ব্যাংক, কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস, বাহরাইন ইসলামী ব্যাংক ও কাতার ইসলামী ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলি কায়েম হয়। বাংলাদেশেও প্রাকটিক্যালী চিন্তার সূচনা সেখান থেকে। ইসলামী ইকোনোমিকস রিসার্চ ব্যুরো ও বাংলাদেশ ইসলামিক ব্যাংকার্স এসোসিয়েশান মূখ্য ভূমিকা পালন করে। সরকারী পর্যায়েও তখনকার সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নৈতিক ও লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়। ব্যক্তি পর্যায়েও কয়েকজন আত্মোৎসর্গীকৃত ব্যক্তি এর পিছনে সার্বক্ষণিক সময় দেন, দেশ বিদেশে মূলধন যোগাড়ে যোগাযোগ করেন। সকলের সম্মিলিত আন্তরিক চেষ্টায় ১৯৮৩ সালের ১২ আগস্ট ইসলামী ব্যাংক মতিঝিলে প্রথম শাখা খোলার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
অনুমোদিত ৫০০ মিলিয়ন টাকা এবং পরিশোধিত ৬৭.৫০ মিলিয়ন টাকা মূলধন নিয়ে ইসলামী ব্যাংক যাত্রা শুরু করেছিল যা ১৫ নভেম্বর ২০২১ অন্তে অনুমোদিত ২০,০০০ মিলিয়ন ও পরিশোধিত ১৬০৯৯.৯১ মিলিয়ন টাকায় পৌছে। বর্তমান শেয়ার সংখ্যা ১৬০৯.৯৯ মিলিয়ন যার ৪২.৩৬% বিদেশী, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক। ব্যাংকের নেটওয়ার্ক সারাদেশ বিস্তৃত। ৩৮৪ টি শাখা, ২২১টি উপশাখা এবং ২৬৪০টি এজেন্ট আউটলেট রয়েছে। আমানতের পরিমাণ জানুয়ারী ২০২২ শেষে এক লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা। সাধারণ বিনিয়োগের পরিমাণ এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে এক কোটি ৫৯ লাখ। এটি এখন যুগপৎ “কোটি গ্রাহক ও লক্ষ কোটি টাকা আমানতের ব্যাংক” এক বিরল স্বীকৃতি যা বাংলাদেশের আর কোন ব্যাংকের নেই।
ইসলামী ব্যাংকের পরিসংখ্যানগত সাফল্য ও স্বীকৃতি অনেক, এমনকি আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং পরিমন্ডলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এর দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে রয়েছে উপর্যুপরি শ্রেষ্ঠত্বের সনদ। দেশের ব্যাংক ইন্ডাষ্ট্রিতে ইসলামী ব্যাংক এখন এক অনন্য মাত্রায়। শিল্প, কৃষি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, গ্রামীন সেবাসহ জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগ অবদান এখন এই ব্যাংকের থলিতে। গার্মেন্টস ও রেমিট্যান্স থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আহরনে ইসলামী ব্যাংক বরাবরই প্রথম। সর্বাধিক আয়কর পরিশোধেও প্রথম স্থান এই ব্যাংকের।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছে অনেক ব্যাংক। চলতি বছর স্ট্যান্ডার্ড ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক শরিয়াহ ব্যাংকে রূপান্তর হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক রয়েছে। এর বাইরে প্রচলিত ধারার ৯টি ব্যাংকের ৪০টি ইসলামী শাখা এবং ১৩টি ব্যাংকের ১৯৪টি ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো রয়েছে। মুনাফা, রেমিট্যান্স, আমদানি-রপ্তানি ব্যবসাসহ অন্যসব দিক থেকেই প্রচলিত ধারার ব্যাংকের তুলনায় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি বেশি। শরিয়াহ ব্যাংকিংয়ে রূপান্তর বিষয়ে সমস্যাক্রান্ত বেসিক ব্যাংক বলছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো থাকলেও সরকারি মালিকানাধীন পূর্ণাঙ্গ কোনো ইসলামী ব্যাংক নেই। এমন প্রেক্ষাপটে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বেসিক ব্যাংক পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করতে চায়।
বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের সাফল্য কি শরিয়াহ আঁকড়ে ধরায় নাকি ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতায়? আমি বলবো, দুটোই সমানভাবে সমন্বিত হয়েছে ইসলামী ব্যাংকে। এর নিয়োগ প্রক্রিয়া, পদোন্নতি ও পোস্টিং, বিনিয়োগ গ্রাহক বাছাই ও বিনিয়োগ প্রদান স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে দেখা হয়। তারপরও মানবীয় দুর্বলতাহেতু যে কোন অভিযোগ কোথাও পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমি হলপ করে বলতে পারি, এখনো ইসলামী ব্যাংকের সামান্য পিয়ন ম্যাসেঞ্জাররাও যে পরিমাণ ডেডিকেশান ও আন্তরিকতা দিয়ে ব্যাংকটাকে ভালোবাসে সম্ভবতঃ পরিবারকেও ততটা নয়। বলাবাহুল্য সে তুলনায় এখানে কর্মচারী কর্মকর্তাদের তুলনামূলক বেতন ভাতা অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে কম। একটি প্রতিষ্ঠানের জনশক্তি যখন এইমানে পৌছে সাফল্য তখন আপনিতেই ধরা দেয়।
শরীয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমস্ত ফিকাহর “স্কুল অব থট” কে সামনে রেখে প্রস্তাবনা ও সিদ্ধান্ত প্রদানে ইসলামী ব্যাংকের শরিয়া বোর্ডের মতামত সর্বোচ্চ গুরুত্ব বহন করে। অতি সম্প্রতি “মেয়াদী আমানত” থেকে নেয়া কর্জের ক্ষেত্রে শরীয়ার সিদ্ধান্ত তাদের স্বাধীন মতামতকে আবারও প্রতিষ্ঠা করেছে। ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের বহু প্রস্তাবনা শরীয়া সদস্যগণের আপত্তির কারণে নাকচ হয়েছে। সবখানেই কাজ করলে কিছু ভুল ও সীমাবদ্ধতা থাকে, এখানে তার ব্যতিক্রম প্রত্যাশা করা এবং হুট করে কোন মন্তব্য করা সমীচীন নয়।
প্রোডাক্ট ইনোভেশানে ইসলামী ব্যাংক সবসময় এগিয়ে। মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনকে সামনে রেখে ডিপোজিট ও ইনভেস্টমেন্ট প্রোডাক্টগুলো ডিজাইন করা হয়, এর মুডাস অপারেন্ডি বর্ণনা করা হয় এবং শরীয়ার চূড়ান্ত অনাপত্তির সাপেক্ষে লঞ্চিং করা হয়। অন্যান্য ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে আমার জানা নেই।
ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম সফল একটি প্রকল্প হলো, প্রচলিত ক্ষুদ্রঋণের বিকল্প হিসাবে ‘পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প’ (Rural Development Scheme)। যার মাধ্যমে তারা লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের কাছে পৌঁছে গেছে। তাদের মাধ্যমে আমি কয়েকটি দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি।
যেমন পর্দা লংঘনের অজুহাতে গ্রামীন মহিলারা কোন আর্থিক কর্মকান্ড যুক্ত হতেন না। তারা আজ হিজাব পরিহিতা অবস্থায় বাইরে আসছে, ব্যবসা করছে। তারা এখন নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে সূদমুক্ত জীবন যাপনের চেষ্টা করছে। এটা একটা বিশাল ব্যাপার। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, অন্যান্য এনজিওগুলি যেভাবে ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছে, তাতে তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তারা কিস্তি পরিশোধের জন্য কারো ঘরের চাল খুলে নিচ্ছে, কারো অলংকার ছিনিয়ে নিচ্ছে, এমনকি অনেক মহিলা আত্মহত্যা করছে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের ক্ষুদ্র বিনিয়োগের ব্যাপারে আজ পর্যন্ত এরূপ কোন রিপোর্ট আমাদের জানা নেই।
আমার জানা মতে, এরকম অবস্থায় ইসলামী ব্যাংক তাদের কিস্তির সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়, কারো প্রাপ্য মওকূফ করে অথবা তাকে দান করে দায়মুক্ত হতে সাহায্য করে। এমনকি নিজেদের সাদাকা জাকাত থেকেও সাহায্য করতে শুনেছি। ফলে ইসলামী ব্যাংক যে সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। হয়তো এর অনেক সমালোচনাও রয়েছে। তবে আমরা এর মধ্যে যতটুকু কল্যাণকর পাব তার প্রশংসা করব এবং এগুলি যদি বৃদ্ধি পায় তাহ’লে আমরা খুশী হব। উল্লেখ্য যে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডই কেবল এক্ষেত্রে কাজ করছে। অন্য ইসলামী ব্যাংকগুলি এখনো শুরু করেনি। অথচ শত শত এনজিও এখন এই ক্ষুদ্র্ঋণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এর মোকাবেলায় ইসলামী ব্যাংক কতটুকুই বা করবে।
পৃথক আইন ছাড়া বাংলাদেশে কীভাবে চলছে ইসলামি ধারার ব্যাংক? বাংলাদেশে ব্যাংক, কোম্পানি পরিচালনার জন্য ২০০৯ সালে একটি গাইডলাইন তৈরী করে। এর মধ্যে শরিয়ার রেফারেন্স দেয়া হয়েছে। কিন্তু দেশে ইসলামি ব্যাংক আইন- নামে কোন আইন নেই। দেশের পুঁজি বাজারে ইসলামি ব্যাংক কীভাবে অংশে নেবে এবং ইসলামি সুকুক বন্ড সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন সার্কুলারে বলা আছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা ইসলামিক ব্যাংক উইন্ডো ইউনিট রয়েছে তারা ইসলামিক ব্যাংকের কার্যক্রম দেখভাল করে। তারা ইসলামী ব্যাংকগুলোর শরীয়াহ সংক্রান্ত বিষয়গুলোর কোন দিক নির্দেশনা দেয় না এবং এর জন্য যে শরীয়াহ বিশেষজ্ঞ দরকার, তাও তাদের নেই।
ইরান, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ায় ইসলামী ব্যাংকিং ও তাকাফুল বা ইসলামী ইনস্যুরেন্স নামে পৃথক পূর্ণাংগ আইন চালু আছে।
ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ে অভিজ্ঞ অনেকের অভিমত, স্বতন্ত্র আইনের অভাবে কিছু ইসলামী ব্যাংক মূলতঃ কিছুটা শরিয়াভিত্তিক এবং কিছুটা গাইডলাইন থেকে নিয়ম-নীতি নিয়ে মিশ্রভাবে ব্যাংক পরিচালনা করছে। এজন্য ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য একটা কার্যকর ও সুনির্দিষ্ট আইন দরকার, যাতে করে কোন অনাকাংখিত পরিস্থিতি তৈরি হলে সেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যায়। তাদের মতে, ইসলামী ব্যাংকগুলো সম্মলিত হয়ে সরকারের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করা এখন সময়ের দাবী।
চল্লিশ বছরে ব্যাংক অনেক বড়, কেউ বলেন ম্যাগা ব্যাংক এ পরিনত হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংগনে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে প্রমাণ করেছে। এটাও সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করেছে- ইসলাম কেবলই একটি ধর্মের নাম নয়, এটি একটি পূর্ণাংগ জীবন ব্যবস্থা, ব্যাংক তার অর্থ ব্যবস্থার একটি অংগমাত্র। চল্লিশ বছরে ব্যাংক কুড়ি হাজার জনশক্তি, দেড় কোটি গ্রাহক, সাড়ে তিন কোটি সুবিধাভোগীর ব্যাংক হয়েছে। এসবে তৃপ্ত জাগতেই পারে। কিন্ত এসবই গাণিতিক মূল্যায়ন। আমাদের সিরিয়াসলি এখন গুণগত মূল্যায়নও যুগপৎ জরুরী। পেশাগতভাবে আমাদের জনশক্তি কতটা মোটিভেটেড ও ডেডিকেটেড, কতটা আধুনিক প্রযুক্তনির্ভর পেশাগত জ্ঞানে তারা পারংগম, সবক্ষেত্রে কি আমরা ইনসাফ ও আদল এর মডেল হতে পেরেছি, ব্যক্তিগত জীবনে তারা কতটা ইসলামী চরিত্র ধারন করে আর কে কতটা আমরা দীনের বিষয়ে আমানতদার?বিষয়গুলো কারো কাছে একান্তই আপেক্ষিক বা সম্পর্কহীন মনে হতে পারে কিন্ত মোটেও তা নয়।
কুরআনে হারামের যে কয়টি আয়াত আমরা ইসলামী ব্যাংকের কারণে মুখস্ত করেছি শেষ করার আগে তাই quote করলাম। ভেবে দেখুন তো-সুদ বর্জনের কার্যক্রম আর জীবনভর বন্দেগী দু’টো কি পৃথক কিছু নাকি সমান্তরাল ও সমান?
اَلَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوۡمُوۡنَ اِلَّا کَمَا یَقُوۡمُ الَّذِیۡ یَتَخَبَّطُہُ الشَّیۡطٰنُ مِنَ الۡمَسِّ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ قَالُوۡۤا اِنَّمَا الۡبَیۡعُ مِثۡلُ الرِّبٰوا ۘ وَاَحَلَّ اللّٰہُ الۡبَیۡعَ وَحَرَّمَ الرِّبٰوا ؕ فَمَنۡ جَآءَہٗ مَوۡعِظَۃٌ مِّنۡ رَّبِّہٖ فَانۡتَہٰی فَلَہٗ مَا سَلَفَ ؕ وَاَمۡرُہٗۤ اِلَی اللّٰہِ ؕ وَمَنۡ عَادَ فَاُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ ہُمۡ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ
যারা সুদ খায়, (কিয়ামতের দিন) তারা সেই ব্যক্তির মত উঠবে, শয়তান যাকে স্পর্শ দ্বারা পাগল বানিয়ে দিয়েছে। এটা এজন্য হবে যে, তারা বলেছিল, ‘ব্যবসাও তো সুদেরই মত। তো এরূপ লোক জাহান্নামী হবে। তারা তাতেই সর্বদা থাকবে। (আল বাকারা – ২৭৫)
یَمۡحَقُ اللّٰہُ الرِّبٰوا وَیُرۡبِی الصَّدَقٰتِ ؕ وَاللّٰہُ لَا یُحِبُّ کُلَّ کَفَّارٍ اَثِیۡمٍ
আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-সদাকাকে বর্ধিত করেন। আর আল্লাহ এমন প্রতিটি লোককে অপছন্দ করেন যে নাশোকর, পাপিষ্ঠ। (আল বাকারা – ২৭৬)
اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَاَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتَوُا الزَّکٰوۃَ لَہُمۡ اَجۡرُہُمۡ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ ۚ وَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡہِمۡ وَلَا ہُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ
(হা) যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে, সালাত কায়েম করে যাকাত দেয়, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান। তাদের কোনও ভয় থাকবে না এবং তারা কোনও দুঃখও পাবে না। (আল বাকারা – ২৭৭)
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَذَرُوۡا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা যদি প্রকৃত মুমিন হয়ে থাক, তবে সুদের যে অংশই (কারও কাছে) অবশিষ্ট রয়ে গেছে, তা ছেড়ে দাও। (আল বাকারা – ২৭৮)
فَاِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلُوۡا فَاۡذَنُوۡا بِحَرۡبٍ مِّنَ اللّٰہِ وَرَسُوۡلِہٖ ۚ وَاِنۡ تُبۡتُمۡ فَلَکُمۡ رُءُوۡسُ اَمۡوَالِکُمۡ ۚ لَا تَظۡلِمُوۡنَ وَلَا تُظۡلَمُوۡنَ
তবুও যদি তোমরা (তা) না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষথেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও। আর তোমরা যদি (সুদ থেকে) তাওবা কর, তবে তোমাদের মূল পুঁজি তোমাদের প্রাপ্য। তোমরাও (কারও প্রতি) জুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও জুলুম করা হবে না। (আল বাকারা – ২৭৯)
আজ শ্রদ্ধাভরে শ্মরণ করি পীর আব্দুল জব্বার রহ. আবদুর রাজ্জাক লস্কর, কমো. আতাউর রহমান, শাহ আব্দুল হান্নান ও আজিজুল হক স্যার সহ মরহুম সকল স্পনসর, ডাইরেক্টর ও এক্সিকিউটিভগণকে। আল্লাহ উনাদের ত্যাগ ও কুরবানীকে কবুল করুন ও জান্নাতের উঁচু মাকামে উনাদের স্থান দিন। চল্লিশ বছরে পদার্পণের এ শুভ ক্ষণে সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।