ব্যাংকারদের পেশাজীবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা এবং এর প্রাসঙ্গিকতা
পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের পেশায় বহু মানুষ কর্মরত রয়েছেন। উন্নত কিংবা অনুন্নত সকল দেশের প্রত্যেক পেশাতেই সমস্যা এবং সম্ভাবনা দুটি সমানভাবেই আছে। কর্মরত অবস্থায় তাদের পেশাগত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য তারা সংগঠিত হয়, তারা একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয় তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য। তারা নিজেদের তাগিদ থেকেই সংঘটিত হয়- তাদের কর্মপরিবেশের নিরাপত্তার জন্য, আপন অধিকার রক্ষার জন্য, আদায়ের জন্য, সর্বোপরি নিজের পরিবার ও সমাজ এবং দেশের জন্য।
আমাদের সমাজে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন রয়েছে, যেমন- শিক্ষক সমিতি, চিকিৎসক পরিষদ, আইনজীবী সমিতি, প্রকৌশলী সমিতি, গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন ইত্যাদি। এ সকল পেশাজীবীদের সংগঠন নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তোলে। যেখানে পেশাজীবীদের পক্ষে দর কষাকষি বা বার্গেনিং এজেন্টের ভূমিকা পালন করে পেশাজীবী সংগঠনগুলো।
একটি পেশাজীবী সংগঠনের গুরুত্ব কর্মরত অবস্থায় যেমন রয়েছে, তেমনি কর্ম থেকে অবসর গ্রহণের পরেও এর গুরুত্ব অনেক। একজন কর্মকর্তার আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানে পেশাজীবি সংগঠন বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রচলিত আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন পেশার বৈষম্য ও তীব্র সমস্যাগুলো সমাধানে এসব পেশাজীবী সংগঠনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
সমাজের বিভিন্ন পেশার মধ্যে ব্যাংকার (Banker) একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশার নাম। ব্যাংকার তারাই যারা বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকিং পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। যারা তাদের প্রত্যেকটি কর্মঘন্টা ব্যয় করেন প্রচন্ড মানসিক চাপ ও শারীরিক পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে, দারিদ্রতা দূরীকরণে, জনগণের আর্থিক নিরাপত্তা প্রদানে সকল ব্যাংকারদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে আমাদের দেশে ব্যাংকার পেশাজীবীদের সুসম্মান ও সামাজিক গুরুত্ব সেই অর্থে নেই। আর্থিকভাবে মজবুত সমাজ গঠনে অবদানের কোন প্রকার স্বীকৃতিও নেই। কিছু কিছু ব্যাংকার নিজেই জানেনা তার নিজের অবদানের বিষয়টি। একজন ব্যাংকার রাষ্ট্রের অর্থ ব্যবস্থাপনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। তবুও রাষ্ট্র থেকে যেমন স্বীকৃতি নেই, তেমনি সমাজ থেকেও সে অবহেলিত, নিরীহ।
এর ব্যতিক্রমও কিছু থাকতে পারে আমি সেই বিষয়ে যাচ্ছি না। এমনকি আমরা এক ব্যাংকার আরেক ব্যাংকারকেও সম্মান করতে জানিনা। যে কারণে আমাদের নিজেদের পেশাগত সমস্যা সমাধানে আমরা আজও পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। ব্যাংকার ছাড়া বাংলাদেশের এমন কোন পেশাজীবী নেই যাদের নিজেদের পেশাজীবি সংগঠন নেই।
ব্যাংক মালিকদের সংগঠন রয়েছে, সকল ব্যাংকের এমডিদেরকে নিয়ে একটি সংগঠন রয়েছে। অথচ সরকারি-বেসরকারি মিলে আমরা এত এত ব্যাংক অফিসার আজও পর্যন্ত নিজেদেরকে একটি সংগঠনের আওতায় আনতে পারলাম না। আজ যদি ব্যাংকাররা তাদের নিজেদের ভিতর বিভক্তি ও বিভ্রান্তি দূর করে সকলেই একত্রিত হতে পারে তবে নিজ তথা দেশের জন্য হবে মঙ্গল জনক।
অনেক ব্যাংকাররা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাবে একত্রিত হয়ে হয়তোবা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে বৃহৎ পরিসরে সরকারি-বেসরকারি সকল ব্যাংকারদের নিয়ে একটি কমন পেশাজীবি সংগঠন গঠন করা আজও পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। কেবল ঐ একটি জায়গায় ব্যাংকারদের দুর্বলতা রয়েছে। আসলে ব্যাংকাররা নিজেদের দৈনন্দিন পেশাগত কাজের ভিতর এতটাই নিমগ্ন থাকে যে নির্দিষ্ট কাজের বাইরে অন্য কিছু করার চিন্তার ফুসরত পায়না।
সর্বশেষ অনুমোদিত “বেঙ্গল ব্যাংক” নিয়ে বাংলাদেশে মোট ব্যাংকের সংখ্যা ৫৯টিতে পৌঁছেছে। এরমধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের সংখ্যা ৯টি, বেসরকারি ব্যাংক ৪১টি আর বিদেশী ব্যাংক ৯টি। এ সকল ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন ১ লক্ষ ৭০ হাজারের অধিক নিয়মিত ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর বাইরে রয়েছেন আরো অনেক চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা। একটি নিরপেক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে সকল ব্যাংকের ব্যাংকাররা যদি একক সাধারণ মঞ্চ তৈরি করতে পারেন তবে উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আরো বেশি অবদান রাখতে পারবেন বলে অনেকের মতো আমারও বিশ্বাস।
লেখক: মোঃ কামরুজ্জামান সুমন, ব্যাংকার