ছাত্র-ছাত্রীদের মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান
ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশঃ কতবার আপনি আপনার সন্তানদের সাথে অর্থ নিয়ে আলোচনা করেন? আপনার উত্তর যদি “প্রায়ই নয়” হয়ে থাকে, তবে মনে রাখবেন, আপনি একা নন। বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ‘টি রোই প্রাইস’-এর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, প্রায় ৭২ শতাংশ পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের সাথে আর্থিক ব্যাপারে কথা বলতে অনিচ্ছুক। শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয় এবং মিতব্যয়িতার অভ্যাস, তাদের ভবিষ্যৎ জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শিশুদের সঞ্চয় এবং মিতব্যয়িতা অভ্যাসে উৎসাহিত করার ৬টি উপায় আছে। যেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-
১) নিয়মিত হাত খরচ প্রদান করুন
দৈনন্দিন খরচ মেটানোর জন্য আপনার সন্তানকে হাত খরচ প্রদান করুন। হাত খরচ প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের বয়স এবং খরচের দিক গুলো খেয়াল রাখুন। উদাহরণ স্বরূপ- আপনার সন্তানের বয়স যদি ১০ বছর হয়, তাহলে তাকে প্রতিদিন ১০ টাকা করে দিতে পারেন। টাকার পরিমান অবশ্যই পারিবারিক আর্থিক সক্ষমতার উপর নির্ভর করে এবং এর পরিমাণ তাদের বয়স বাড়ার সাথে সঙ্গতি রেখে বাড়ানো উচিত।
২) অর্থ কোথায় যায় তাদের তা দেখান
যা চোখে দেখা যায় তার দিকে ছোট শিশুরা দ্রুত সাড়া দেয় এবং সাদা কাচের ‘জগ’ পদ্ধতি হচ্ছে শিশুদের অর্থ সঞ্চয় করা শেখানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায়। কাচের জগ যেহেতু স্বচ্ছ, তাই শিশুদের দেখানোর জন্য এটা সবচেয়ে সহজ যে, তারা কি পরিমান অর্থ সঞ্চয় করছে এবং করতে পারে।
তিনটি ‘জগ’ হচ্ছে একটি জনপ্রিয় পদ্ধতিঃ একটি সঞ্চয়ের জন্য, একটি খরচের জন্য এবং একটি দান করার জন্য। পিতা-মাতা তাদের সুবিধামত সেগুলো তালিকাবদ্ধ করতে পারেন, কিন্তু এই তিনটি তালিকায় আপনার সন্তানদের প্রাপ্ত অর্থ বন্টন করা হচ্ছে শিশুদের অর্থ সঞ্চয় এবং মিতব্যায়িতা শেখানোর সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় পদ্ধতি। দান করার জগে অর্থ রাখার মাধ্যমে শিশুদের দানশীলতা শেখানো যায়।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
৩) সঞ্চয় করার জন্য শিশুদের পুরস্কার দিন
“স্কুলের জন্য শপিং” আপনার সন্তানদের চাহিদাগুলি থেকে অপ্রয়োজনীয় চাহিদাগুলি কিভাবে আলাদা করা যায় তা শেখার একটি চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি করে। আপনার সন্তানকে দিয়ে একটি স্কুল শপিং বাজেট তৈরি করুন। বাজেটের যেসব জিনিস সত্যিই প্রয়োজন সে গুলিকে চিহ্নিত করুন। যেসব জিনিসের চাহিদা আছে ‘তবে এখন নয় পরে হলেও চলবে’ সেগুলোকেও চিহ্নিত করুন এবং এ বাজেট বাস্তবায়নের জন্য শিশুকে পুরস্কৃত করুন। একবার যখন আপনি তাদের প্রয়োজন নির্ধারণ করেছেন, তখন বাজেটে ‘এখন নয় পরে’ প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর জন্য কি পরিমাণ অর্থ বেঁচে গেছে তা হিসাব করার জন্য তাকে উৎসাহিত করুন।
এই উদ্বৃত্ত অর্থ শিশুদের সঞ্চয় করতে দেয়ার মাধ্যমে আপনি তাদের পুরস্কৃত করতে পারেন, যদি তারা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস পেয়ে থাকে। যখন আপনি দোকানে কেনাকাটা করেন, আপনার সন্তানদের জানতে দিন যে, সস্তা পণ্য খোঁজা কিংবা তা কিনে অর্থ বাঁচানো সম্ভব। শিশুদের প্রয়োজন এবং চাহিদার মধ্যে পার্থক্য করতে পারার সক্ষমতা তৈরি অর্থ সঞ্চয়ের একটি ভালো কৌশল।
৪) শিশুদেরকে ব্যাংকে নিয়ে যেতে পারেন
সঞ্চয়ের জগ থেকে টাকা সঞ্চয়ী হিসাবে স্থানান্তর করার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়। তাছাড়া আপনার সন্তানের যদি অনেক বছর ধরে সঞ্চিত অর্থ থাকে, তাহলে ঐ সময়ে ব্যাংকে হিসাব খুলে তা জমা করা উচিত। ব্যাংকে সঞ্চিত টাকার উপরে লাভের ধারণা এবং কিভাবে সেই সঞ্চয় ধীরে ধীরে পুঞ্জীভূত হয় তার সাথে পরিচিত হওয়া হচ্ছে একটি ভাল পায়। এজন্য আপনার সন্তানকে ব্যাংকে নিয়ে যেতে পারেন।
৫) অপরিহার্য ব্যয় সম্পর্কে আপনার সন্তানদের সাথে কথা বলুন
আপনার সন্তান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশ করলে, আপনি তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। আপনার সন্তান যদি চাকরি করে, তাদের আয় কোথায় ব্যয় হচ্ছে এবং কেন হচ্ছে তারা তাদের সাথে পর্যালোচনা করুন।
৬) নিজের জন্য আয় করতে সাহায্য করুন
কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন, অর্থের সত্যিকারের মূল্য শেখার সবচেয়ে ভালো উপায়। আপনার সন্তানদের অর্থ উপার্জন করতে উৎসাহিত করুন, সেটা যে কোন ধরনের বৈধ কাজ হোক না কেন। এটি তাদের কাজের বাস্তবিক মূল্য শেখায়। আপনি এটাও বিবেচনা করতে পারেন যে, আপনার সন্তান তার আয়ের অংশ বিনোদনে খরচ করার পরিবর্তে সঞ্চয় করুক।
অর্থ সঞ্চয় এবং মিতব্যয়িতার অভ্যাস শেখা ভালো অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা অন্যান্য দর্শন শেখায়। আপনার সন্তানদের অর্থনৈতিক দক্ষতা শেখানোর সর্বোত্তম পথ হচ্ছে ব্যবহারিক জ্ঞান ও বয়স ভিত্তিক পাঠ, যা তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত চলতে পারে।