ইসলামী অর্থনীতি কী?
ইসলামী অর্থনীতি সমাজের সব মানুষের চাহিদা মেটানো ও রাষ্টীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন ও সুদৃঢ়করণ, গতিশীলতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সর্বোপরি এ ব্যবস্থার মধ্যে আল্লাহর রহমত ও বরকত বিদ্যমান। ফলে সার্বিক দিক থেকে কল্যাণকর হয়। ইসলামী অর্থব্যবস্থা মানুষ মানুষের জন্য এ মহাসত্যকে সামনে রেখে তার যাবতীয় ব্যবস্থা নির্ধারণ করেছে। মানব কল্যাণই ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। সুতরাং ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।
Definition of Islamic Economics (ইসলামী অর্থনীতির সংজ্ঞা)
ইসলামী কৃষ্টি ও তামাদ্দুন সমৃদ্ধ যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাই ইসলামী অর্থনীতি।
ইসলামী অর্থনীতির সংজ্ঞায় শাহ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন-
ইসলামী অর্থনীতি বলতে ওই অর্থনীতিকেই বোঝায় যার আদর্শ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কর্মপদ্ধতি এবং পরিনাম ফল ইসলামী আকীদা মোতাবিকই নির্ধারিত হয়।[১]
ডঃ এস এম হাসানউজ্জামানের বলেন-
Islamic Economics is the knowledge and application of Injunctions and rules of the Shariah that prevent injustice in the acquisition and disposal of material resources in order to provide satisfaction to human beings and enable them to perform their obligations to Allah and the society.[২]
অর্থাৎ ইসলামী অর্থনীতি হচ্ছে শরিয়াহর বিধি-নিষেধ সম্বন্ধীয় জ্ঞান ও তার প্রয়োগ যা বস্তুগত সম্পদ আহরণ ও বিতরণের ক্ষেত্রে অবিচার প্রতিরোধে সমর্থ যেন এর ফলে মানবমন্ডলীর সন্তুষ্টি বিধান করা যায়। ফলে আল্লাহ ও সমাজের প্রতি তারা দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সক্ষম হবে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী অর্থনীতিবীদ ডঃ এম উমর চাপরা বলেন-
Islamic Economics is that branch of knowledge which helps realize human well-being and allocation and distribution of scarce resources in conformity with Islamic teachings without unduly curbing individual freedom for creating continued macro-economic and ecological imbalances.[৩]
অর্থাৎ ইসলামী অর্থনীতি জ্ঞানের সেই শাখা যা ইসলামের শিক্ষার সাথে সঙ্গতি রেখে দুষ্প্রাপ্য সম্পদের বন্টন ও বরাদ্দের মাধ্যমে এবং ব্যক্তির স্বাধীনতা অযথা খর্ব ও সামষ্টিক অর্থনীতি এবং পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি না করে মানবকল্যাণ অর্জনে সহায়তা করে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল হামিদ ইসলামী অর্থনীতির সংজ্ঞায় বলেন-
ইসলামী অর্থনীতি হলো ইসলামী বিধানের সেই অংশ যা প্রক্রিয়া হিসেবে দ্রব্য ও সেবার সামগ্রী উৎপাদন, বন্টন ও ভোগের প্রসঙ্গে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক আচরণকে সমন্বিতভাবে অধ্যয়ন করে।[৪]
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ডঃ এম নেজাতুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন-
Islamic economics is the Muslim thinkers response to the economic challenges of their times.[৫]
অর্থাৎ ইসলামী অর্থনীতি সমকালীন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মুসলিম চিন্তাবিদদের জবাব।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
ডঃ এম এ মান্নান বলেন-
Islamic economics is a social science which studies economics problems of the people in the light of Quran and Sunnah.[৬]
অর্থাৎ ইসলামী অর্থনীতি হলো একটি সামাজিক বিজ্ঞান যা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে।
ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম পথিকৃৎ প্রফেসর খুরশীদ আহমাদ ইসলামী অর্থনীতির সংজ্ঞায় বলেন-
Islamic economics represents a systematic effort to try to understand the economic problem and man’s behaviour in relation to that problem from an Islamic perspective.[৭]
অর্থাৎ ইসলামী অর্থনীতি হল অর্থনৈতিক সমস্যা ও ঐ সকল সমস্যার প্রেক্ষিতে মানবীয় আচরনকে ইসলামী দৃষ্টিকোণ হতে উপলব্ধি করার এক পদ্ধতিগত প্রয়াস।
প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী ইবনে খালদুন বলেন-
ইসলামী অর্থনীতি হলো জনসাধারনের সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞান।[৮]
মাওলানা হিফযুর রহমান বলেন-
শরীয়তের পরিভাষায় যে বিদ্যা বা জ্ঞানের মাধ্যমে এমন সব উপায় সম্বন্ধে জ্ঞাত হওয়া যায় যার দ্বারা ধন সম্পদ আহরণ ও ব্যিয়ের উপযুক্ত ও সঠিক পন্থা এবং বিনষ্ট হওয়ার প্রকৃত কারণ নির্দেশ করা হয়, তাকে ইসলামী অর্থনীতি বা ইলমুল ইকতিসাদ বলা হয়।[৯]
মাওলানা মোঃ ফজলুর রহমান আশরাফী বলেন-
ইসলামী অর্থনীতি বলতে মানুষের প্রয়োজন অনুসারে উপার্জন, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, মানবিক কল্যাণ সাধন এবং এর ন্যায়বিচারপূর্ণ সঠিক বন্টনের ইসলামসম্মত প্রণালী।[১০]
মুহাম্মদ বিন হাসান তুসী বলেন-
ইসলামী অর্থনীতি হচ্ছে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও বিজ্ঞান।[১১]
মুহাম্মদ আকরাম খান বলেন-
Islamic Economics aims at the study of human falah achieved by organizing the resources of the earth on the basis of co-operation and participation.[১২]
অর্থাৎ সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে জাগতিক সম্পদ সংগঠিত করার মাধ্যমে যে মানব কল্যাণ অর্জন করা যায়, সে সম্পর্কিত জ্ঞানই হচ্ছে ইসলামী অর্থনীতি।
এস এম আবুল কালাম বলেন-
ইসলামী অর্থনীতি একাধারে একটি বিজ্ঞান এবং কলা যার প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে আল্লাহর অনুগত বান্দার দৈনন্দিন জীবন আচার; অর্থাৎ সে কিভাবে আয় করে এবং কিভাবে তা ব্যয় করে থাকে। ইসলামী অর্থনীতি একটি বিজ্ঞান এ অর্থে যে ইহা বস্তুগত উৎপাদন, পণ্য বন্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে বহুবিধ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সন্ধান দেয়।[১৩]
প্রিন্স মুহাম্মদ আল ফয়সল আল সাউদ বলেন-
Islamic Economics is the science of how man usage resources and means of production to study his worldly needs according to a predetermined code given by Allah (SWT) in order to achieve the greatest equity.[১৪]
অর্থাৎ ইসলামী অর্থনীতি হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা আল্লাহ প্রদত্ত নীতিমালার আওতায় সম্পদ ও উৎপাদনের উপকরণ সমূহের ব্যবহার এবং মানুষের পার্থিব চাহিদা মেটানোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রদান করে।
তুরস্কের অর্থনীতিবিদ সাবাহ ইলদিন জাইম বলেন-
ইসলামী অর্থনীতি মানুষকে তার সার্বিক প্রয়োজন মেটানো সহ উচ্চতর আদর্শ সমূহ বাস্তবায়নে সহায়তা করে।[১৫]
মনজের কাহফ বলেন-
An Islamic Economics deals with the system where the Islamic laws and institutions prevail and where the majority of its individuals believes in the Islamic ideology and practice as their way of life.[১৬]
অর্থাৎ ইসলামী অর্থনীতি এমন একটি ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করে যেখানে ইসলামী আইন ও প্রতিষ্ঠান সমূহ বিদ্যমান থাকে এবং অধিকাংশ মানুষ ইসলামী আদর্শে বিশ্বাস করে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করে।
অন্যকথায়, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নীতি-পদ্ধতি অনুসরণে সৃষ্টির লালন-পালনের যাবতীয় জাগতিক সম্পদের সামগ্রিক কল্যাণধর্মী ব্যবস্থাপনাই ইসলামী অর্থনীতি।
মোটকথা, ইসলামী অর্থনীতি সমাজে বসবাসকারী ইসলামী ভাবধারায় পরিচালিত মানুষদের অর্থনৈতিক সমস্যা পর্যালোচনা করে। ইহা বিনিময় অযোগ্য জিনিস নিয়েও আলোচনা করে। ইসলামী অর্থনীতির সাথে মূলত নৈতিক মূল্যবোধ ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত।
তথ্যসূত্রঃ
১. ইসলামী অর্থনীতি: নির্বাচিত প্রবন্ধ, শাহ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৬, পৃষ্ঠা ৭
২. Hassanuz Zaman, SM, Definition of Islamic Economics, Journal of Research in Islamic Economics Jeddah, Winter 1984, page 52
৩. Chapra, M. Umer, What is Islamic Economics? Islamic Research and Training Institute, Islamic Development Bank, Jeddah, 1996, page 33
৪. হামিদ, মুহাম্মদ আবদুল, ইসলামী অর্থনীতি: একটি প্রাথমিক বিশ্লেষণ, অনুবাদঃ শাহ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ২০
৫. Siddiqui, M. Nejatullah, History of Islamic Economic Thought, Jeddah, 1992, Page 69
৬. Mannan, Muhammad Abdul, Islamic Economics: Theory and Practice, The Islamic Academy, Cambridge, 1986, Page 18
৭. Ahmed, Khurshid, Nature and Significance of Islamic Economics, Jeddah, 1992 Page 19
৮. ইবনে খালদুন (১৩৩২-১৪০৬) আল মুকাদ্দিমা, ইসলামী অর্থব্যবস্থা, বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটি, নভেম্বর ২০০৪, পৃষ্ঠা ৫
৯. মাওলানা হিফযুর রহমান, ইসলাম কা ইকতিসাদী নিজাম, পৃষ্ঠা ১৭
১০. মাওলানা মোঃ ফজলুর রহমান আশরাফী, ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যাংকিং এর রূপরেখা, পৃষ্ঠা ১৮৫
১১. মুহাম্মদ বিন হাসান তুসী, (১২০১-১২৭৪), আখলাকে নাসিরী, ইসলামী অর্থব্যবস্থা, বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটি, নভেম্বর ২০০৪, পৃষ্ঠা ৪
১২. মুহাম্মদ আকরাম খান, ইসলামী অর্থব্যবস্থা, বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটি, নভেম্বর ২০০৪, পৃষ্ঠা ৫
১৩. এস এম আবুল কালাম, ইসলামী অর্থব্যবস্থা, বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটি, নভেম্বর ২০০৪, পৃষ্ঠা ৫
১৪. প্রিন্স মুহাম্মদ আল ফয়সল আল সাউদ, ইসলামী অর্থব্যবস্থা, বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটি, নভেম্বর ২০০৪, পৃষ্ঠা ৫
১৫. সাবাহ ইলদিন জাইম, ইসলামী অর্থব্যবস্থা, বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটি, নভেম্বর ২০০৪, পৃষ্ঠা ৫
১৬. মনজের কাহফ, ইসলামী অর্থব্যবস্থা, বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটি, নভেম্বর ২০০৪, পৃষ্ঠা ৫