ইসলামী ব্যাংকিং এর পথিকৃত এম আযীযুল হক এর ইন্তেকাল
নূরুল ইসলাম খলিফাঃ বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা যে কজনের হাত দিয়ে শুরু হয়েছিল এম আযীযুল হক ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। মহামারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। সর্বশেষ তিনি বেসরকারি পূবালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ঢাকায় তার কোনও জানাজা হবে না। তার লাশ কিশোরগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে জানাজার নামাজের পর দাফন করা হবে।
এম আযীযুল হক বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং খাতের অন্যতম পথিকৃত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সুদীর্ঘ ৬২ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এ ব্যাংকার ১৯৫৮ সালে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে পাকিস্তানের হাবিব ব্যাংকে যোগদানের মাধ্যমে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং ইসলামিক ফাইন্যান্স ও ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৫ সালে সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড অব ইসলামিক ব্যাংকস্ অব বাংলাদেশ প্রবর্তিত মর্যাদাপূর্ণ ‘অ্যানুয়াল ইসলামিক ব্যাংকিং অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন।
তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর প্রথম এমডি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ইসলামিক থ্যট এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ১৯৮১ সালের ২৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফে অনুষ্ঠিত “সুদবিহীন ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা” শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
আজিজুল হক ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বতন্ত্র পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তার মৃত্যুতে পূবালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড সহ বেশ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক-এর পরিচালনা পর্ষদ এবং সকল স্তরের নির্বাহী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
‘বন্ধ হলো চিরতরে যে দুটি আঁখি’
জনাব নূরুল ইসলাম খলিফা, সাবেক ডিএমডি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও সাবেক প্রিন্সিপাল, ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড জনাব এম আযীযুল হক সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেছেন এভাবে, এম আযীযুল হক, না দেখেই যাকে ভালবেসেছিলাম। ৮০-৮১ সালে জাতীয় দৈনিকে তিনি প্রবন্ধ লিখতেন ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে, সোনালী ব্যাংক ষ্টাফ কলেজের প্রিন্সিপ্যাল হিসেবে। আমি তখন অগ্রণী ব্যাংকের তরুণ অফিসার। ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রচন্ডভাবে উৎসাহী আমি সে সমস্ত লেখা খুঁজে খুঁজে পড়তাম; আর স্বপ্ন দেখতাম বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা চালু হবে সেই সোনালী দিনের! অবশেষে তার সাথে সাক্ষাত হলো ১৯৮৫ সালে আইবিটিআরএ-র ক্লাসরুমে দেওয়ান মঞ্জিলে।
আরও দেখুন:
◾ নতুন সফরে পাল তুলে দাও হে মাঝি সিন্দাবাদ
এরপরে একটানা প্রায় ত্রিশ বছর একত্রে পথ চলা। প্রিয় সেই মানুষটির স্বপ্ন জড়ানো চোখ দুটি নিমিলিত হলো চিরকালের জন্য! (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রাব্বুল আলামীন! আমরা সাক্ষী দিচ্ছি, তোমার এ বান্দাহ জঘন্যতম হারাম সুদের উচ্ছেদে এক অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ছিলেন। ছিলেন তোমার বিধানের আলোকে এক সুষম ও ইনসাফপূর্ণ অর্থ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার এক অগ্র সেনানী। ভুল ত্রুটি হয়েই যেতে পারে। তাকে মাফ করে তোমার রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দাও! পৃথিবীর যে প্রান্তেই খালেস ইসলামী ব্যাংকিং আন্দোলন আছে বা হবে, তার একটা বিনিময় তুমি তার জন্য বরাদ্দ দিও। তাকে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদায় রেখো! তার সারাজীবনের স্বপ্ন বাংলাদেশে একটি পরিপূর্ণ ইসলামী ব্যাংকিং চালু করে দিও!
লেখকঃ নূরুল ইসলাম খলিফা, সাবেক ডিএমডি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ও সাবেক প্রিন্সিপাল, ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।