ফিনটেক

সাইবার হামলা থেকে রক্ষার্থে ব্যক্তিগত পর্যায়ে করণীয়

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাইবার-আক্রমণের (Cyber Attack) সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় বড় ধরনের সাইবার হামলার প্রস্তুতির ঘটনা ধরা পড়েছে। সাইবার অপরাধ তদন্তে সরকারের বিশেষায়িত সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের (বিডিসার্ট) পর্যবেক্ষণে বিষয়টি জানা যায়। ইতোমধ্যেই হামলার প্রস্তুতির কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ‘কাসাব্লাঙ্কা’ গ্রুপের গত কয়েক দিনের হামলার চিত্রে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ তিনটি ব্যাংক ও একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে। এ ছাড়া করোনা-বিডি ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটেও কয়েক দফা হামলা চালিয়ে এসব ওয়েবসাইটের অনুলিপি তৈরির চেষ্টা হয়েছে। তারা সফল না হলেও এই চেষ্টাকে আরও বড় হামলার প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আক্রমণকারীরা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি গুরুত্বপূর্ন সাইটগুলো হ্যাক (Hack) করার জন্য সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Social Engineering) অথবা ফিশিং (Phishing) কৌশল অবলম্বন করছে। ফিশিং (Phishing) আক্রমণ হলো ইমেইল বা অন্য কোনও যােগাযােগ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সম্পাদিত একটি সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং আক্রমণ। এই আক্রমণগুলো কাউকে একটি ক্ষতিকারক লিঙ্কে ক্লিক করতে, একটি ক্ষতিকারক সংযুক্তি ডাউনলােড করতে, সেনসিটিভ তথ্য শেয়ার করতে বা অন্য কোনও ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

এমতাবস্থায়, সকল ধরনের সাইবার হামলা থেকে বাঁচতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সকল ব্যাংকের গ্রাহকদেরকে নিম্নোক্ত বিষয়াবলীতে খেয়াল রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরােধ করা যাচ্ছে-
১) অপরিচিত কোন ফোন কল আসলে সাবধানতার সাথে তা রিসিভ করা এবং আপনার ব্যক্তিগত কোন বিষয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে চলুন।
২) অজানা কোন ইমেইল, এসএমএস বা মেসেজ পেলে তার ভেতর থাকা কোন ধরনের লিংকে ক্লিক না করা এবং রিপ্লাই না দেয়া।
৩) সন্দেহজনক ইমেইল, ইমেইলের সংযুক্তি, ইমেইল পপ আপ মেসেজ সতর্কতার সাথে খোলা, তবে না খোলাই ভাল।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

৪) ভুল বানান কিংবা দূর্বোধ্য মেসেজ যুক্ত ইমেইল সতর্কতার সাথে খুলবেন।
৫) যদি আপনি আপনার ব্যাংক হিসাব, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কিত কোন সন্দেহজনক ইমেইল পান যা আপনার কাছে ব্যাংক থেকে পাঠানো নয় বলে মনে হয়, অনুগ্রহ করে এতে সাড়া দেবেন না বা কোনও লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। এমতাবস্থায় আপনার ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ার বা নিকটস্থ শাখাকে অবহিত করুন।
৬) আপনার ইমেইল, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কার্ড ইত্যাদির ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড বা পিন কারও সাথে শেয়ার করবেন না।

৭) আপনার ব্যবহৃত ওয়েব ব্রাউজার (Google Chrome, Mozilla Firefox, Internet Explorer) ইত্যাদির লেটেস্ট ভার্সন ইনস্টল করুন এবং সময় মতো তা আপডেট করুন।
৮) অপরিচিত ব্যক্তির সাথে অনলাইনে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। মনে রাখবেন বিশ্বে যত সাইবার হামলা ঘটেছে তার পূর্বে হ্যাকাররা বন্ধুত্ব করে তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে কিংবা ব্যক্তিগত লোভ দেখিয়ে গুরুত্বপূর্ন তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে।
৯) মান সম্মত এন্টি ভাইরাস ব্যবহার করুন। অনেকেই ক্রাক ফাইল বা সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন। এগুলো আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ন। হ্যাকাররা এই পদ্ধতিতে তথ্য হাতিয়ে নেয়।

১০) নিজের ডেস্কটপ বা মোবাইলে পাসওয়ার্ড সম্বলিত কোন ফাইল না রাখা এবং ব্রাউজারে নিজের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড সমূহ সেভ করে না রাখা।
১১) কোন অবস্থাতেই সহজ পাসওয়ার্ড যেমন- নিজের নাম, জন্ম তারিখ ও সাল ইত্যাদি না দেয়া। সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার আপনাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
১২) এছাড়া আপনার ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদির তথ্য বা ইউজার আইডি অথবা পাসওয়ার্ড অন্যের মোবাইলে বা পিসিতে ব্যবহার না করা। এতে করে সহজেই আপনার তথ্য যে কেউ জেনে যেতে পারে।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্ভাব্য সাইবার হামলা থেকে রক্ষায় প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিতে দেশের সকল ব্যাংকগুলোকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনা মেনে প্রতিটি ব্যাংকের IT টিম কাস্টমারের তথ্য সংরক্ষন এবং সাইবার হামলা থেকে রক্ষা করার জন্য সার্বক্ষনিক কাজ করে যাচ্ছে। সকলের সচেতনতা এবং সহযােগীতা এই ধরনের সাইবার হামলা বা তথ্য চুরি থেকে ব্যাংক গ্রাহক ও ব্যাংকগুলোকে অধিক নিরাপত্তা দিতে পারে।

এছাড়া বিশেষজ্ঞরা দেশের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর কম্পিউটার ও সার্ভার ব্যবস্থার পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহক সেবার নেটওয়ার্ক, ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button