অর্থনীতি

করোনা ভাইরাস (COVID-19) এবং আরেকটি বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার হাতছানি

আইএমএফ (IMF) এর তথ্য ও গবেষণা অনুযায়ী প্রতি দশকে একবার আমরা বিশ্ব আর্থিক মন্দার সম্মুখীন হই। আমরা যদি একটু পিছনে ফিরে দেখি গত ৫০ বছরে প্রতি দশকে কোনো-না-কোনোভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা এসেছে। প্রতিটি আর্থিক মন্দাই পুরো বিশ্বের অর্থনীতির উপর ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যাকে ‘ব্ল্যাক সোয়ান ইভেন্ট’ নামেও ডাকা হয়। সর্বশেষ ২০০৮ সালের “গ্রেট রিসেসন (Great Recession)” এ আমরা তার ভয়াবহ চিত্র দেখেছি। ইউ.এস.এ এর হাউসিং মার্কেট সম্পূর্ণভাবে কলাপ্স হওয়ার কারণে হঠাৎ করে সারা বিশ্বের স্টকমার্কেট ক্রাশ করে। দীর্ঘ ১৮ মাস এর প্রভাব বজায় থাকার পর বিশ্ববাজারে স্টক মার্কেট এর দর পতন হয় প্রায় ৫৬%। শুধু ইউ.এস.এ তেই বেকারত্বের হার বেড়ে গিয়ে দাড়ায় ১০%।

অনেক বড় বড় কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায় যেমন- ল্যেমেন এন্ড ব্রাদার্স, বিয়ার স্টিয়ার্নস। ব্যাংকিং ও ফিনান্সিয়াল ইন্ড্রাস্টিতে প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। সব মিলিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষের জন্যই বেশ চ্যালেঞ্জিং একটা সময় বলে গণ্য করা হয় এই বিশ্ব আর্থিক মন্দাকে। আর্থিক মন্দার একটা সাইকেল আছে যা ৮ থেকে ১০ বছর পর পর আসে। আগস্ট ২০১৯ এ ‘ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর বিজনেস ইকোনমিক্স’ (NABE) তাদের অর্থনীতিবিদদের নিয়ে বেশ বড় আকারে একটা ইকোনমিক সার্ভে করে যেখানে ৭২% বিশেষজ্ঞই বলে যে অবশ্যই ২০২১ সালের মধ্যে আরেকটি বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা আমরা মোকাবেলা করতে যাচ্ছি। জাতিসংঘের ট্রেড বডি “UNCTAD” The Gurdian পত্রিকায় একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সেপ্টেম্বর ২০১৯ এ যাতে বলা হয় ২০২০ এর শেষ পর্যায়ে বিশ্ব আর্থিক মন্দা শুরু হয়ে যাবে।

এই তথ্য উপাত্ত গুলো বিশ্লেষণ করে এবং পেন্ডামিক (PENDAMIC) COVID -19 এর কারনে উদ্ভূত বর্তমান বিশ্বের অচল অবস্থা দেখে আমরা ধারনা করতে পারি যে আরেকটি আর্থিক মন্দা হয়তো আমাদের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।
ভাইরাসের ধরন: Zoonotic ধরনের ভাইরাস যা পশু-মানুষ বা মানুষ-মানুষে স্থানান্তরিত হয়।
উৎপত্তি স্থল: উহান, হুবেই প্রদেশের রাজধানী, চায়না।
ছড়ানোর মাধ্যম: কাশি, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট, ভ্রমণ, করমর্দন, ভাইরাসযুক্ত বস্তু ধরা এবং হাত না ধুয়ে নাক, মুখ, চোখ স্পর্শ করা।

যেখানে ভাইরাসের উৎপত্তি সেখানেই বিশ্ব অর্থনীতির নির্ভরশীলতা
চায়না আজ সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি হাব বা সাপ্লাই চেইন হিসেবে কাজ করে। আমাদের দেশের শুধু পোশাক শিল্পের কথাই যদি বলি, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে যে পোশাকগুলো তৈরি হয় তার সুতা, বোতাম, স্টিকার কোথা থেকে আসে?- বেশিরভাগই চায়না থেকে। ইলেকট্রনিক্স পণ্য যেমন টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি আমাদের এখানে শুধুমাত্র অ্যাসেম্বল হয় যার সব গুরুত্বপূর্ণ পার্টস চায়না থেকেই আসে। অ্যাপেলের বেশিরভাগ প্রোডাকশন চায়নাতে হয় যা এখন বন্ধ। তার পাশাপাশি জেনারেল মোটরস, হোন্ডা যারা বিশ্বের অন্যতম বড় কার ম্যানুফ্যাকচারার এবং যাদের প্লান্ট রয়েছে উহানে যেখানে এই করোনা ভাইরাস এর সূত্রপাত। তাদের প্রোডাকশন বন্ধ রয়েছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ইকোনমিক ইন্টারডিপেন্ডেন্সি (Economic Inter-dependency)
ইউরোপের দেশ জার্মানী যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ডের গাড়িগুলো তৈরি হয় যেমন মার্সিডিজ-বেঞ্জ (Mercedes-Benz), বিএমডব্লিউ (BMW), অডি (Audi) ইত্যাদি কিন্তু সেই গাড়ির টায়ারগুলো চায়না থেকে আসে। চায়না লকডাউন, এই মুহূর্তে জার্মান যতই গাড়ি তৈরি করুক টায়ার না থাকলে তো আর গাড়ি চলেনা। গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে পৃথিবীর প্রায় দেশ অর্থনৈতিকভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল যাকে বলা হয় ইকোনমিক ইন্টারডিপেন্ডেন্সি (Economic Inter-dependency)। করোনা ভাইরাসের কারনে সারা বিশ্বের প্রডাকশন চেইন মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিগত দুই দশকে চায়না বিশ্ব বাজারে অনেক বড় নির্ভরতার জায়গায় চলে গিয়েছে। এখন চায়নার অর্থনীতির ক্ষতি হওয়া মানে সারা বিশ্বের অর্থনীতির ক্ষতি হওয়া। চায়না এমন একটি দেশ যারা সবচেয়ে বেশি এক্সপোর্ট করে আবার তাদের ইমপোর্ট করার ভলিয়ম ও অনেক। চায়না নিজেদের বিশাল জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর জন্য অনেক বিশাল ভলিয়মে আমদানিও করে থাকে বিভিন্ন দেশ থেকে। চায়না পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উৎপাদনকারী দেশ। তারা ক্রুড অয়েল (খনিজ তেল) আমদানিতে টপ কান্ট্রি। আমরা যদি বিশ্বের ট্যুরিজম ব্যবসার কথা বলি সেখানেও চাইনিজ ট্রাভেলার্স হচ্ছে সবার উপরে। ২০১৮ সালে সারাবিশ্বে চাইনিজ ট্রাভেলার্সদের ওভারসিস ট্রিপ এর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫০ মিলিয়ন যা বিশ্ব ট্যুরিজম ইন্ড্রাস্ট্রিতে যোগ করেছে প্রায় ২৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আলিবাবা
আলিবাবা চায়নার মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম মেজর কোম্পানি যারা এক ব্রিফিং এ বলেছে করোনাভাইরাসের কারণে সাপ্লাই চেইন একেবারে ভেঙে গেছে এবং চায়নার ভিতরের লোকাল ডিমান্ডও অপ্রত্যাশিতভাবে কমে গিয়েছে। যদি এই অবস্থা দ্রুত সমাধান না হয় তাহলে চায়না অনেক বড় আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়ে যাবে। উল্লেখ্য আলিবাবার হেডকোয়ার্টার হাংঝো (Hangzhou) তে অবস্থিত যেটি চায়নার বড় শহর গুলোর মধ্যে একটা। বর্তমানে লকডাউন করে রাখা হয়েছে পুরো শহরটিকে এবং যার ইকনোমিক অ্যাক্টিভিটি এখন অলমোস্ট জিরো।

সত্তর থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনিতির বিভিন্ন ইভেন্টে একটা বিখ্যাত লাইন প্রায়ই শোনা যেত “When U.S.A sneezes, the world catches a cold” অর্থাৎ- “ইউএসএ শুধু হাঁচি দিলেই সারা বিশ্বের সর্দি লেগে যায়”। এটা অর্থনীতির ভাষা। কারন ইউএসএ এত বড় অর্থনীতির দেশ যা সারা বিশ্বের জিডিপির প্রায় ২৫% বা এক চথুর্তাংশ। সেজন্য সেখানে ছোট একটা ইস্যু তৈরি হলেও তার প্রভাব সারা দুনিয়ায় পরে। যদিও আমরা জানি নমিনাল জিডিপির হিসাব অনুযায়ী চায়না ইউএস এর মত এত বড় ইকোনোমি নয় কিন্তু অলমোস্ট ইউএসএ’র মতই হয়ে গিয়েছে বর্তমানে তাদের অবদান প্রায় ১৯% বিশ্ব জিডিপিতে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় চায়নার ইকনোমি ক্ষতিগ্রস্থ হবার সাথে সাথে আমাদের গ্লোবাল ইকনোমিতে তার প্রভাব পড়বে মারাত্নকভাবে।

চায়নার উপর আমাদের নির্ভরশীলতা
বাংলাদেশের আমদানি পণ্যের এক-চতুর্থাংশ চীন থেকে আসে। করোনাভাইরাসের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ার আশঙ্কা আমাদের রপ্তানিমুখী পোশাক খাতে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২১৭ কোটি মার্কিন ডলারের কাঁচামালের বড় অংশই এসেছে চীন থেকে। আবার পোশাক কারখানার যন্ত্রপাতির যন্ত্রাংশের সিংহভাগই আসে চীন থেকে। পোশাক শিল্প ছাড়াও চামড়া ও ওষুধের কাঁচামালও আসে চীন থেকে। আমাদের ইলেকট্রনিক্স ও মোবাইল ইন্ড্রাস্ট্রি চায়নার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। এ ছাড়া রড, ঢেউটিন, সিরামিকস তৈরির কাঁচামালেও চীনের ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে। আমাদের পাটখড়ির ছাই বা চারকোল রপ্তানির একমাত্র বাজার চীন। এক দশক ধরে গড়ে ওঠা এই খাতে যুক্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানায় কয়েক হাজার টন পাটখড়ির ছাই স্তূপ হয়ে আছে। রপ্তানি আদেশ না পাওয়ায় এসব পণ্য চীনে পাঠানো যাচ্ছে না।

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রভাব
প্যান্ডেমিক (Pandemic) শব্দটি এসেছে ল্যাটিন Pandemos থেকে যেখানে Pan =পৃথিবী এবং Demos= মানুষ। তাই সারা বিশ্বে বিপুল সংখ্যক মানুষ যখন কোন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় তখন তাকে বৈশ্বিক মহামারী (Pandemic) বলা হয়। World Health Organization (WHO) ১১ই মার্চ, ২০২০ তারিখে COVID -19 কে প্যানডেমিক ঘোষণা দিয়েছে।

খনিজ তেল (Crude Oil)
ডিসেম্বর ৩১,২০১৯ তারিখে খনিজ তেল (Crude Oil) এর দাম প্রতি ব্যারেল ছিল ৬৬ ডলার। মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে মার্চের মাঝামাঝিতে এসে বিগত ১৮ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে তার দাম প্রায় ৭০% কমে গিয়ে মাত্র ২২ ডলার ব্যারেলে ঠেকেছে। তেলের দাম এরকম অস্বাভাবিক ড্রপ করা থেকেই বোঝা যায় শুধু তেল নয় তার সাথে সব কিছুর ডিমান্ডই আসলে কমে গিয়েছে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে কোন ডিমান্ড নেই সেখানে রপ্তানি হবে কিভাবে? তাই বিশ্ব অর্থনীতিতে এর নেগেটিভ প্রভাব পড়তে বাধ্য। অর্থনীতির একটা টার্ম আছে ইকুইলিব্রিয়াম (Equilibrium)। যখন কোন কিছু ডিমান্ড কমে যায় তখন তার সাপ্লাই ও কমে যায়। আর সাপ্লাই কমে গেলে আউটপুট কমে যায়। আবার আউটপুট কমে গেলে জিডিপি গ্রোথ বাধাগ্রস্ত হবে।

ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি
প্রায় সকল দেশ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস এর উপর রেস্ট্রিকশন করে দিয়েছে। মানুষজন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সেফ থাকার জন্য শপিং, রেস্টুরেন্টে কেনাকাটা থেকে নিজেকে বিরত রাখছে। গ্লোবাল ইকনোমির অনেক বড় একটা অংশ ট্যুরিজম ইন্ড্রাস্ট্রি যার সাথে জড়িত অন্যান্য সেক্টরগুলো হলো– হোটেল, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, এন্টারটেইনমেন্ট এবং এয়ারলাইন্স এর মতো বিগ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি এসবই এখন অচল। অনেক এয়ারলাইন্স ইতোমধ্যে কর্মী ছাটাই শুরু করে দিয়েছে।

অনলাইন শপিং
অনেকেই হয়তো ভাবছেন অনলাইন শপিং এর মাধ্যমে সাপ্লাই চেইন মেনটেন করে আমাদের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেয়া যাবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে অনলাইন শপিং গ্রাউন্ড লেভেলের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আগে গ্রাউন্ড লেভেলে কর্মীদের সহযোগীতা লাগে তারপরেই কেবল অনলাইন শপিং নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব
দেশের রপ্তানীর প্রায় ৮৪% তৈরি পোশাক শিল্প থেকেই যায়। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (BGMEA) এর দেয়া তথ্য মতে এরই মধ্যে ১০৯৭টি গার্মেন্টসের ৯৪ কোটি ৫০ লাখ টি অর্ডার বাতিল করেছে বায়াররা যার আর্থিক পরিমান প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ২১ লক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিক। এটি শুধুমাত্র আমাদের আমদানিকারক বানিজ্যের বস্ত্রশিল্পের চিত্র। করোনা ভাইরাসের কারনে বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতি মারাত্নকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে কেউই জানেনা আগামীকাল কি ঘটতে যাচ্ছে।

স্টক মার্কেট
যেকোন অপ্রত্যাশিত অর্থনৈতিক সঙ্কটে স্টক হোল্ডেরদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ভবিষ্যতে খুব বেশি লোকসানের ভয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের চেইন রিয়েকশন তৈরি হয়। এমন সময়ে সাধারণত বিনিয়োগকারীরা স্টক মার্কেটে তাদের মূলধন রাখাকে ঝুকিপুর্ন মনে করে। বরঞ্চ স্টক মার্কেট থেকে টাকা তুলে নিয়ে ‘সেফ হেভেন’ যেমন গোল্ড, মার্কিন ডলার অথবা জাপানী ইয়েন কিনে রাখে। ১১ই মার্চ বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (WHO) COVID-19 কে প্যানডেমিক ঘোষণা দেয় এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপ ভ্রমণে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করার ঠিক পরের দিন গ্লোবাল স্টক মার্কেটে ১০% দরপতন হয় যাকে Black Thursday নামে আখ্যা দেয়া হয়। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে শুরু হওয়া গ্লোবাল স্টক মার্কেটের দরপতন মার্চের মাঝামাঝিতে এসে ৩৫% এ এসে ঠেকেছে। এবং সামনের দিনগুলিতে দরপতেনের হার আরও বাড়ার সম্ভাবনাটাই বেশ প্রবল। ২০০৮ সালের “গ্রেট রিসেসন (Great Recession)” এর ঠিক ১২ বছর পরে আমরা আবারও আরেকটি গ্রেট স্টক মার্কেট ক্রাশের এর দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়ে আছি।

বাংলাদেশের স্টক মার্কেটে প্রভাব
৮ই মার্চ, ২০২০ রোববার বিকেলে প্রথম বাংলাদেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্য আসে তার পরের দিন সোমবার স্মরণকালের সব থেকে বড় পতন হয় শেয়ারবাজারে। একের পর এক বড় দরপতন হওয়ায় সপ্তাহজুড়ে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে এক সপ্তাহেই শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমেছে। এ নিয়ে টানা চার সপ্তাহের পতনে বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ। আর লেনদেন কমেছে ২৫ শতাংশের ওপরে।

বিশ্ব জিডিপির ওপর প্রভাব
আমাদের বিশ্ব জিডিপিতে করোনা ভাইরাসের কারণে কতটুকু লস হবে এটা অনুমান করা বেশ কঠিন ব্যাপার। ২০১৭ সালে কয়েকজন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ভিক্টোরিয়া ফ্যান (Victoria Y Fan), ডিন জ্যামিসন (Dean T Jamison) এবং লরেন্স সামার্স (Lawrence H Summers) অনুমান করেছিলেন এরকম যদি কোন বৈশ্বিক মহামারী বা আমাদের সামনে আসে তাহলে আমাদের বিশ্ব জিডিপিতে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার অথবা ০.৬% ক্ষতি হতে পারে।

এই সময়ে লাভবান হচ্ছে যারা
COVID-19 উদ্ভুত পরিস্থিতে বিশ্বের মানব সম্প্রদায় আজ অত্যন্ত ঝুকির মুখে দাড়িয়ে। হাজারো মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। এই সময়ে কারা লাভবান হচ্ছে এই কথাটা বলা যদিও ঠিক নয়। কিন্ত কোন সেক্টর কীভাবে কখন লাভবান হয় এটা পর্যালোচনা করাও অর্থিনীতির একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আমরা এখানে অর্থনীতি নিয়েই কথা বলছি।

এই মুহূর্তে জীবানুনাশক উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বেশ লাভবান হচ্ছে যেমন– ডেটল, স্যাভলন, লাইজল ইত্যাদি। স্টক মার্কেটেও তাদের ডিমান্ড বেশি। এমন সময়ে বিনিয়োগকারীরা ফিন্যান্সিয়াল মার্কেট যেমন স্টক মার্কেট, মানি মার্কেট, বন্ড মার্কেট, ফরেন এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি এসব জায়গা থেকে টাকা সরিয়ে ফিজিক্যাল মার্কেটে ইনভেস্ট করে। এর মধ্যে গোল্ড হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের প্রথম পছন্দ। গোল্ডের বাজার এখন বেশ রমরমা। গোল্ডের ডিমান্ড বেশি হবার কারনে দামও বেশ বেড়ে গিয়েছে যা বিগত ৭ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে।

রিশাদ মাহমুদ, লেখক ও ব্যাংকার, রিলেশনশিপ ম্যানেজার, ডিজিটাল ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্ট, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড। [প্রকাশিত এই লেখাটি লেখকের একান্তই নিজস্ব। ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ লেখকের মতাদর্শ ও লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখা ও মতামতের জন্য ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ দায়ী নয়।]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button