প্রসঙ্গঃ ব্যাংকিং ডিপ্লোমা- পক্ষে বিপক্ষে
দিনু প্রামানিকঃ প্রসঙ্গঃ ব্যাংকিং ডিপ্লোমা- পক্ষে বিপক্ষে – ব্যাংক কর্মকর্তাদের পদোন্নতির নতুন শর্ত ব্যাংকিং ডিপ্লোমা। বাংলাদেশ ব্যাংক এর সার্কূলার অনুযায়ী, ব্যাংক কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নীতিমালায় নতুন শর্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। ব্যাংক কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে হলে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আর এই নীতিমালা জারীর পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে বিপক্ষে চলছে নানা ধরণের আলোচনা সমালোচনা। যারা ইতিমধ্যে পাশ করছে তারা বলছে এটা ভাল। আর যারা আজ অবধি পাশ করতে পারি নাই তারা বিভিন্ন যুক্তি সামনে দাঁড় করাচ্ছেন। এমনকি ব্যাংকারদের সংগঠন ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ব্যাংকারদের পদোন্নতিতে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পাশ বাধ্যতামূলক চান না।
আরও দেখুন:
◾ ব্যাংকারদের ডিপ্লোমা এ মুহূর্তে কতটা জরুরি?
প্রকৃতপক্ষে এ বিষয়ে আমার লেখার কোন ইচ্ছা ছিল না। কারণ এটা বড় বড় মাথার বিষয়। তাছাড়া আমিও ব্যাংকার আর ব্যাংকিং ইন্ড্রাষ্ট্রিতে কর্মরত সকল ব্যাংকার আমার মতই সহযোদ্ধা যারা সকাল নয়টা- সাড়ে নয়টা থেকে এক নাগাড়ে রাত সাতটা আটটা পযর্ন্ত বিরামহীনভাবে মাথার উপর পাহাড় সমান টার্গেট নিয়ে কাজ করে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
ব্যাংকিং ডিপ্লোমা’র প্রয়োজনীয়তা কি! আদৌও এই ব্যাংকিং ডিপ্লোমা প্রয়োজনীয়তা আছে কি! এ প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নতুন জারিকৃত নির্দেশনায় বলা হয়, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাংকিং খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এই খাতে মৌলিক ব্যাংকিং জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির আবশ্যকতা অনস্বীকার্য।
ব্যাংকিং আইন ও নিয়মাচার অনুশীলন সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার একটি মানদণ্ড হলো ‘দ্য ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (আইবিবি)’ কর্তৃক পরিচালিত দুই পর্বের (জেএআইবিবি ও ডিএআইবিবি) ব্যাংকিং ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন যা প্রতি বছর ছয় মাস অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার পাঠ্যক্রম ব্যাংকিং বিষয়ক যাবতীয় তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক জ্ঞান অন্তর্ভুক্তপূর্বক প্রণীত হয়। যেখানে জেএআইবিবি পরীক্ষায় ব্যাংকিং সম্পর্কিত প্রাথমিক ও মৌলিক জ্ঞান এবং ডিএআইবিবি পরীক্ষায় উচ্চতর ব্যাংকিং জ্ঞান ও দক্ষতা যাচাই করা হয়।
উল্লেখ্য, জেএআইবিবি ও ডিএআইবিবি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ব্যাংকিং ডিপ্লোমা সনদ প্রদান করে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিনিয়র অফিসার অথবা সমতুল্য পদের পরবর্তী সব পদে পদোন্নতির যোগ্যতার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ব্যাংকিং ডিপ্লোমা উভয় পর্ব পাশ বাধ্যতামূলক করা হলো। তবে, ব্যাংকিং কার্যক্রমে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয় যেমনঃ ডাক্তার, প্রকৌশলী (পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, তড়িকৗশল ও আইটি প্রফেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা) এবং প্রচার-প্রকাশনা পদে নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না।
এই নির্দেশনা ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এর মাধ্যমে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর জারি করা বিআরপডি ১৮ নির্দেশনা রহিত করা হলো। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অতপরঃ এ কথাটি অনস্বীকার্য যে, ব্যাংক খাত বা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত করে এমন বিশেষায়িত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও পেশাগত দক্ষতার কোন বিকল্প নেই।
ব্যাংর্কাস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন বাংলাদেশের মতে যথাযথ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পর বিভিন্ন ব্যাংকের জুনিয়র বা সিনিয়র কমর্কতা নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের অরিয়েনটেশন দেওয়ার পর মৌলিক প্রশিক্ষণ ও বিআইবিএম থেকে এক মাস ধরে ফাউন্ডেশন কোর্স সম্পন্ন করার পর কর্মকর্তাদের তাদের ব্যাংকের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এ কাজ শেখার সুযোগ দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক কর্মকর্তাই নিদিষ্ঠ কাজ করার সুযোগ পায়। এরপরও ব্যবস্থাপনা ইউনিট প্রয়োজনে কর্মকর্তাদের নিদিষ্ট ডিপার্টমেন্ট এ দক্ষ করতে নিজস্ব প্রশিক্ষণ একাডেমী বা প্রয়োজনে বিআইবিএম এ নিদিষ্ঠ কোর্স প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকেন। ব্যাংকের নিজস্ব প্রশিক্ষণ একাডেমী এবং বিআইবিএম এ নিদিষ্ঠ কোর্স প্রশিক্ষণের যথাযথ মূল্যায়ন করে থাকেন। প্রতিটি পদোন্নতি নিদিষ্ঠ নির্ণায়ক এবং দক্ষতার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদশে ব্যাংক কর্তৃক পদোন্নতি বিষয়ক সার্কূলার জারীর পর থেকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা নিয়ে ব্যাংকিং জগতে দুপক্ষের দু’রকম মতভেদ দেখা যাচ্ছে। একপক্ষ ব্যাংকারদের মাঝে যেমন উদ্বেগ, উত্তেজনা, হতাশা বা কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়তে দেখা যাচ্ছে তেমনি অন্যপক্ষে আনন্দ উদ্দীপনা করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই ব্যাংকিং ডিপ্লোমা এর সাথে এমবিএ, বিএমবিএ, অনার্স, মাষ্টার্স, পিএইচডি এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে কথা বলছে।
মূলতঃ ব্যাংকিং একটা পেশা। আর ব্যাংকিং ডিপ্লোমা হলো ব্যাংকিং পেশায় নিয়োজিত ব্যাংকারদের ডিপ্লোমা। এই ডিপ্লোমা ব্যাংকার ছাড়া অন্য কোন পেশার কেঊ করতে পারবে না। পিএইচডি, মাষ্ঠার্স ডিগ্রীধারী লক্ষ লক্ষ আছে কিন্ত পেশাজীবি এ ডিগ্রী কয়জনের আছে। কাজেই এ ডিগ্রীর মূল্যায়ন অধিকতর গুরুত্ববহ হওয়া ঊচিত। তা নয়! বরং এ ডিগ্রী অর্জন বা ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা বিষয়ে অনেকের মাঝেই উদাসীনতা বা অবহেলা বা শৈথিল্যতা দেখা যায়।
আধুনিককরণ বা অন্য কিছু যাই বলা হোক না কেন, আমার মনে হয় ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষায় পাশ না করার একমাত্র কারণ ঊদাসীনতা। আমরা ব্যাংকারগণ নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার প্রথমদিকেই যদি ডিপ্লোমা পাশের বিষয়ে মনোযোগী হয় তাহলে এ ডিগ্রী অর্জন মোটেই কঠিন কিছু না। ব্যাংকিং ডিপ্লোমা শুধু পদোন্নতি নয় বরং এই ডিপ্লোমা অর্জনের জন্য ব্যাংকারদের মধ্যে অধিকতর আগ্রহ, ঊৎসাহ, ঊদ্দীপনা, স্বীকৃতি বা বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনামূলক নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন থেকে করা উচিত।
অতএব এই ডিগ্রী অর্জনে হতাশা বা ভীতিকর সৃষ্টি না হোক বরং ব্যাংকারদের জন্য ব্যাংকিং ডিপ্লোমা হয়ে উঠুক আনন্দময়। তাছাড়া অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের জন্য ব্যাংকিং ডিপ্লোমা কঠিন কিছুই হবে না কারণ ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার পাঠ্যক্রম ব্যাংকিং বিষয়ক যাবতীয় তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক জ্ঞান অন্তর্ভুক্তপূর্বক প্রণীত হয়। ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার পাঠ্যক্রম অনুযায়ী রচিত গাইড বইগুলি ভাল করে পড়ালেখা করে পরীক্ষা দিলেই পাশ করা সহজ।
তাছাড়া পরীক্ষার আগে ইন্সটিটিউট কর্তৃক পরীক্ষা এবং পাঠ্যক্রম অনুযায়ী অভিজ্ঞ ব্যাংকার দ্বারা ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। টার্গেট আর পরিশ্রমের পাশাপাশি ব্যাংকারদেরকেও ব্যাংকিং সম্পর্কিত কিছু বই পড়া উচিত। আর এই পড়াশোনা ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার জন্যও হতে পারে। সঙ্গতকারণে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা কোন হতাশা নয় বরং নতুন উদ্দীপনা নিয়ে প্রত্যেক ব্যাংকার হয়ে উঠুক ব্যাংকিং ডিপ্লোমাধারী। কঠিন বা ভীতি নয়, আনন্দের সাথে আগ্রহ নিয়ে বিষয়টিকে আমরা সবাই গ্রহণ করি। ব্যাংকিং পেশাটাকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করি ব্যাংকিং ডিপ্লোমা সবাই করি। নিজেকে ব্যাংকার হিসেবে গর্ববোধ করি।
দিনু প্রামানিক, লেখক ও ব্যাংকার।