ক্রেডিট কার্ডে সুদচার্জ নিয়ে বিভ্রান্তি-ক্ষোভ
ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া বিলের বিপরীতে সুদচার্জ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এই বিভ্রান্তি বকেয়া বিলের ওপর সরল সুদচার্জ নিয়ে, যেটির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। ফলে চলমান করোনা-দুর্যোগ পরিস্থিতির মধ্যেও প্রতি মাসে এই সুদচার্জ করে গ্রাহককে তা পরিশোধের তাগাদা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্রে অভিযোগ করেও সমাধান পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছেও মিলছে না কোনো সদুত্তর। তাই সার্কুলার স্পষ্টীকরণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এ ছাড়া এপ্রিল-মে মাসের সব ধরনের ঋণের সুদ স্থগিত রাখার নির্দেশনা ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য প্রযোজ্য হবে কি না, সেটি নিয়েও অন্ধকারে রয়েছেন অনেকে।
ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন। |
করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকরা সঠিক সময়ে বিল জমা দিতে পারছেন না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গ্রাহকদের স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে করোনা-পরবর্তী দুটি সার্কুলার জারি করা হয়। গত ৪ এপ্রিল এ সংক্রান্ত প্রথম সার্কুলারে বলা হয়েছিল, ১৫ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডের বিল জমা দিতে দেরি হলে এর জন্য জরিমানা ও অতিরিক্ত চার্জ বা ফি যে নামেই অভিহিত হোক, তা নেওয়া যাবে না।
যদি কোনো ব্যাংক এ ধরনের কিছু নিয়ে থাকে, তাহলে তা ফেরত দিতে হবে। এরপর গত ১৫ এপ্রিল আরেক সার্কুলার জারি করে বলা হয়, ১৫ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডের বিলের ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে কোনো সুদ আরোপ করা যাবে না। ওই নির্দেশনার পর বকেয়া বিলের বিপরীতে বিলম্ব ফি ও চক্রবৃদ্ধি সুদ আরোপ বন্ধ হলেও নিয়মিত সরল সুদচার্জ অব্যাহত রেখেছে ব্যাংকগুলো।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকরা বলছেন, করোনার কারণে যথাসময়ে বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ সংক্রান্ত দুটি সার্কুলার জারি করে সব ধরনের বিলম্ব ফি ও চক্রবৃদ্ধি সুদ আরোপ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাহলে বকেয়া বিলের জন্য নিয়মিত সুদচার্জ কেন করা হবে। এটি নৈতিকতার পরিপন্থী।
কারণ ক্রেডিট কার্ডে যথাসময়ে বিল পরিশোধ করলে নিয়মিত সুদচার্জের কোনো খড়্গ নেই। আর এই সুবিধার কারণেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে মানুষ। কিন্তু অন্য সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে যথাসময়ে বিল পরিশোধ করলেও সুদচার্জ না করার কোনো সুযোগ নেই।
দুটি বেসরকারি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন পঙ্কজ কুমার নামের একজন গ্রাহক। তিনি বলেন, ‘গত মাসে একটি ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ডে বিল ছিল ৩৫ হাজার ৫৯১ টাকার মতো। এর বিপরীতে পেমেন্টে আমি ৯ হাজার ৯৫০ টাকার মতো কম পরিশোধ করি। এই ৯ হাজার ৯৫০ টাকার বিপরীতে ব্যাংকটি এক হাজার ৪৪০ টাকা সুদচার্জ করেছে। অন্যদিকে আরেকটি ব্যাংকে আমার ক্রেডিট কার্ডের বিদেশি মুদ্রার অংশে লিমিট অতিক্রম করায় ওভারডিউ নামে একটি চার্জ কর্তন করেছে।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক আবু ফরাহ মো. নাছের বলেন, ‘করোনার কারণে ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের বকেয়া বিলের বিলম্ব ফি ও চক্রবৃদ্ধি সুদ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনার আওতায় সরল সুদচার্জ করতে পারবে না এমনটি বলা হয়নি। তবে এপ্রিল ও মে মাসের সব ধরনের ঋণের সুদ স্থগিতের যে সিদ্ধান্ত তা ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। এটি নিয়ে অন্ধকারে থাকার কোনো কারণ নেই।’
সব ধরনের ঋণে ১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দুই মাস সুদ স্থগিত থাকবে—কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা জারি করা হয় গত ৩ মে। কিন্তু কামরুল ইসলাম নামের এক গ্রাহককে তাঁর ব্যাংক গত ৫ মে যে বিল পাঠিয়েছে, তাতে ২০ হাজার ৭৯৬ টাকার সুদচার্জ করা হয়েছে। অন্যদিকে একই গ্রাহককে আরেকটি ব্যাংক গত ২৬ এপ্রিল যে বিল পাঠিয়েছে, তাতে তিন হাজার ৪১১ টাকা সুদচার্জ করেছে।
এ বিষয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে বিলম্ব ফি ও চক্রবৃদ্ধি সুদ কেন মাফ করা হয়েছে, কারণ আমি করোনার কারণে ব্যাংকে যেতে পারছি না। তাহলে আমি মূল বিলের টাকা দিতে ব্যাংকে যাব কিভাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারের অস্পষ্টতার কারণেই আমরা এই বিভ্রান্তিতে পড়ছি।’
সম্প্রতি নিজের ফেসবুক পেজে ক্রেডিট কার্ডের সুদচার্জ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ। তিনি ব্যাংকের নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, গত ২৬ এপ্রিল তাঁকে ওই ব্যাংকটি যে বিল পাঠিয়েছে, তাতে ৫২৫ টাকা সুদচার্জ করা হয়েছে। ওই পোস্টে কয়েকজন গ্রাহক তাঁদের কার্ডে সুদচার্জ করা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এমন একজন গ্রাহক জাহিদ হাসান। ব্যাংক তাঁর কাছে গত ৭ মে যে বিল পাঠিয়েছে, তাতে তিন হাজার ৩৭২ টাকা সুদচার্জ করা হয়েছে।
শহিদুল ইসলাম অপূর্ব নামের আরেক গ্রাহককে বিদেশি খাতের একটি ব্যাংক যে বিল পাঠিয়েছে, তাতে সরল সুদ ও বিলম্ব ফি দুই চার্জই করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ছাড়া হোসাইন মাইনুদ্দিন নামের এক গ্রাহককে গত ২০ এপ্রিল যে বিল দিয়েছে তাঁর ব্যাংক, সেখানে এক হাজার ৪৫৬ টাকা সুদচার্জ করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকের আরেক গ্রাহক জাফর সিদ্দিকীর কাছে গত ২৮ এপ্রিল যে বিল পাঠানো হয়েছে, সেখানেও আট হাজার ১৯৬ টাকা সুদচার্জ করা হয়েছে।
ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটায় ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনা সুদে বিল পরিশোধের সুযোগ থাকে। অর্থাৎ প্রতি ৩০ দিনের খরচের ওপর বিল তৈরি করে ওই বিল পরিশোধের জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধ করলে কোনো সুদ আরোপ করা হয় না। আর এই সময় পার হয়ে গেলে ওই বিলের ওপর সরল হারে সুদ আরোপ করে ব্যাংক। বিল পরিশোধে বিলম্ব হলে এই সুদহার চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। বর্তমানে ব্যাংকভেদে ক্রেডিট কার্ডের সরল সুদের হার সর্বনিম্ন ১৪ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ।
প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংক, ব্যাংকার ও ব্যাংকিং বিষয়ক চলমান খবর বা সমসাময়িক বিষয়ে আপনার লেখা ও মতামত ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ প্রকাশ করতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন- bankingnewsbd@gmail.com আমরা আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে তা প্রকাশ করব। |