‘ডলারের দাম বেশি নিচ্ছে ব্যাংক’-এর তদন্ত চায় ব্যাংকগুলো
বিবিসি বাংলাঃ বাংলাদেশে ইউএস ডলার রেট নিয়ে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন কারসাজির যে অভিযোগ তুলেছেন সেটির তদন্ত চেয়েছে ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন।
গত বুধবার (০৭ জুন, ২০২৩) অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামের এক অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি ডলার রেট নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তোলেন। সে অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “ব্যাংকগুলো ঠিকই ১১৪-১১৫ টাকা নিচ্ছে, যে যেভাবে পারে নিচ্ছে, লুটের মালের মতো। কোন ইন্সটিটিউশন নাই।”
আরও দেখুন:
◾ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডিদের বিদেশ গমনের তথ্য জানানোর নির্দেশ
এতে করে পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়ছেন বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারির দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
অন্যদিকে ব্যাংকগুলো এ অভিযোগ অস্বীকার করছে। একাধিক ব্যাংক জানিয়েছে, নিজেদের ইচ্ছেমতো ডলারের দাম বাড়ানোর কোন সুযোগ নাই।
ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও সিটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী মাসরুর আরেফিন বলেন, তারাও চান কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা তদন্ত করুক।
“উনি (এফবিসিসিআই সভাপতি) যেহেতু এটা বলেছেন তার মানে কোন ব্যাংক হয়তো করছে, এখন এটা সেন্ট্রাল ব্যাংক তদন্ত করুক। আমরা এবিবির তরফ থেকে সেন্ট্রাল ব্যাংকের তদন্ত আহবান করছি,” বলেন মি. আরেফিন।
বাংলাদেশে ব্যাংকগুলো ডলার সংগ্রহ করে রেমিট্যান্স এবং এক্সপোর্ট থেকে। এক্ষেত্রে ডলারের দাম সুনির্দিষ্ট করে দেয় বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বাফেদা। এটি ব্যাংকগুলোরই একটি সংগঠন। অভিযোগ আছে তারা অনেক সময় ইচ্ছেমতো ডলারের দাম নির্ধারণ করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে এক্ষেত্রে খুব শক্ত ভূমিকা নিতে দেখা যায় না।
তাদের বেঁধে দেয়া ডলারের সর্বশেষ মূল্য অনুযায়ী ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স-এর বিপরীতে দেবে ডলার প্রতি সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। আর রপ্তানি ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের মূল্য হবে ১০৭ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এই দামে ডলার ক্রয়ের পর সেটি বিক্রি করার সময় ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ এক টাকা বেশি রাখতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে বিভিন্ন ব্যাংকে ডলারের দামে যে তারতম্য হয় তার কারণ হচ্ছে, কারো কাছে ‘এক্সপোর্ট প্রসিডিউর’ বেশি থাকে, আবার কারো কাছে রেমিট্যান্স বেশি থাকে। ফলে ডলারের বিক্রয় মূল্য একেক রকম হয়। কিন্তু সেটা কোনভাবেই ১০৯ টাকা ৫০ পয়সার বেশি হওয়ার কথা নয়।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন ব্যাংক সেটি মানছে না। “আমি ইমপোর্ট বেজড ব্যবসা করি। ব্যাংক কি করছে এলসির টাকা ছাড়ের সময় ডলারের বিপরীতে কারো কাছ থেকে নিচ্ছে ১০৮, ১১০ টাকা আবার ১১২ টাকাও নিচ্ছে। এ সময় যখন ক্রাইসিস তখন ব্যাংক সুযোগ নিচ্ছে।” বলেন এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন।
সভাপতির বক্তব্যকে সমর্থন করে তিনি বলেন, “সব ব্যাংক এলসি দিচ্ছে না। কিন্তু কিছু ব্যাংক যারা দিচ্ছে তারা একেক জন একেক টাকা নিচ্ছে। তাহলে তারা লুট করছে। উনি ঠিকই বলেছেন।” বলেন মি. হাবিবুল্লাহ। আর এ কারণে একই পণ্যের দু’রকম দাম হচ্ছে, যা অনৈতিক ব্যবসা প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করছে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
কিন্তু এমন অভিযোগ মানতে নারাজ সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন। “এটা তো অসম্ভব বিষয়, প্রশ্নই আসেনা। আমরা যে দামে কিনি, এক্সপোর্ট ও রেমিট্যান্স এগুলোর প্রাইস ফিক্সড করা। এগুলো হাই রেটে কিনবো আবার হায়ার রেটে বেচবো কিভাবে। আমার মাথায় আসেনা উনি কিভাবে বললেন?”
মি. আরেফিন তার দাবির পক্ষে বলেন, কেউ যদি বেশি দামে কেনে তাহলে তাকে সেটা কাগজে দেখাতে হবে, যা সম্ভব নয়। আবার অতিরিক্ত টাকা ক্যাশ দিতে হবে, কিন্তু সেটার এন্ট্রি দেয়ার কোন উপায় নেই ব্যাংকের কাছে। এটা বিশাল পরিমাণ টাকা আর এ টাকা কোথায় রাখবেন এমন প্রশ্নও করেন তিনি। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময় এটি পর্যবেক্ষণ করছে বলেন মি. আরেফিন।
যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস বলেন, দেশে অর্থনৈতিক যে সংকট তৈরি হয়েছে ব্যাংকাররা সে পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। “মেইন জিনিস আমাদের সিচুয়েশন। মানুষ অনেক সময় সিচুয়েশনের উপর রাগ না করে কোন একটা জিনিসের উপর রাগ কর।, এখানে ব্যাংকারদের তো আসলে কোন দোষ নাই।”
“তারা এক টাকার জিনিস দেড় টাকায় বিক্রি করবে, কিন্তু যদি দুই টাকায় বেচে তাহলে ক্রেতা আসবে না। আবার ব্যাংক দুই টাকার জিনিস দেড় টাকায় বেচবে না। কারণ ব্যাংককে প্রফিট করতেই হবে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. ইলিয়াস। এক্ষেত্রে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির দায় তিনি ব্যবসায়ীদের উপরই দেন।
“এখানে ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের ব্যাপার আছে। ফরেন কারেন্সি ব্যাংকের নিজস্ব প্রডাক্ট না। ব্যাংক যে রেটে পায় সে রেট অফার করে। উনারা কিনলে তারপর ব্যাংক বিক্রি করে। উনারা বেশি রেটে কেন কিনছেন? ব্যাংকের কাছে ডলার থাকলে তারা যদি ১০৮ টাকার উপরে না কেনে তাহলে ব্যাংকগুলোকে বাধ্য হয়ে বিক্রি করতে হবে।”
মি. ইলিয়াস বলেন “যখন ডিমান্ড তৈরি হয় কাস্টমার সাইড থেকে তখনই আমরা কিনি। এটা একটা সার্ভিস। এখানে আমাদের বেশি নেয়ার সুযোগ নাই।” তবে বর্তমানের রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের ভারসাম্য ঠিক থাকছে না বলে মনে করেন যমুনা ব্যাংকের এই কর্তা। এক্ষেত্রে ডলারের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
“রেমিট্যান্সের পরিমাণ যদি কমে যায় তাহলে আমরা ডলারের যে রেট ঠিক করেছি তার সাথে এটা সাংঘর্ষিক। তার মানে আমরা সঠিক প্রাইস দিচ্ছি না। ফলে ডিমান্ড-সাপ্লাই রিকয়ারমেন্ট ঠিক থাকছে না।”
সামনে আইএমএফের চাপে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তখন ডলার মার্কেট উন্মুক্ত হয়ে যাবার একটা সম্ভাবনা দেখছেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকও বলছে কোন ব্যাংক বেশি দামে ডলার বেচা-কেনা করলে ব্যবস্থা নেবে তারা। কিন্তু মি. ইলিয়াসের মত এই জিনিসগুলো তখনই হয় যখন ‘সিস্টেমের বাইরে’ কিছু ঘটে।
সোর্সঃ বিবিসি বাংলা