ব্যাংকের ‘লাভের গুড় পিঁপড়া খায়’
কিছু লাভের আশায় সাধারণ মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রাখে। কিন্তু ব্যাংকগুলো এখন আমানতের ওপর বার্ষিক যে হারে মুনাফা দিচ্ছে, তা মূল্যস্ফীতি হারের চেয়েও কম। এর সঙ্গে যোগ হয় সরকারের উৎস কর, আবগারি শুল্কসহ ব্যাংকের নানা খাতের চার্জ। এখন টাকা ব্যাংকে রাখলে লাভ পকেটে ঢোকা তো দূরের কথা, মূল টাকাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ সরকার ও ব্যাংকের নানা রকম চার্জের চাপে পড়ে আমানতকারীর মুনাফা আরো কমছে। যেন লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাওয়ার মতো অবস্থা! অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এটা মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। এর ফলে সাধারণ মানুষ সঞ্চয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে। মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে নিরুৎসাহ হলে আমানত চলে যেতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ খাতে। এতে কমবে বিনিয়োগ। আর বিনিয়োগ কমলে জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কমে যাবে কর্মসংস্থান।
বেসরকারি বিনিয়োগে ছন্দ ফেরাতে গত ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণে ৯ শতাংশ সুদ বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের পাশাপাশি সরকারি আমানতের সুদও ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। নিউজটি আপনি পড়ছেন ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ-এ। তবে ব্যক্তি আমানতের সুদ নির্ধারণের ক্ষমতা রাখা হয়েছে ব্যাংকগুলোর হাতেই। কিন্তু ৯ শতাংশ সুদ বাস্তবায়নের স্বার্থে ফেব্রুয়ারি থেকেই ব্যক্তি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। এরপর সব ব্যাংকই তাদের আমানতের সুদ কমাতে শুরু করে।
এতে সার্বিক ব্যাংকিং খাতে আমানতের গড় সুদ কমতে কমতে এখন ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত আগস্টে আমানতের গড় সুদহার নেমে আসে ৪.৯৫ শতাংশে। অথচ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেও যা ছিল ৫.৭০ শতাংশ। ফলে মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে আমানতের সুদ কমেছে পৌনে ১ শতাংশ। অর্থাৎ এখন ১০০ টাকা জমা রাখলে বছর শেষে মিলছে গড়ে ১০৪ টাকা ৯৫ পয়সা। এদিকে পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫.৯৭ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকার পণ্য ও সেবা কিনতে ভোক্তাকে ব্যয় করতে হয়েছে ১০৫ টাকা ৯৭ পয়সা। বর্তমানে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার আরো বেশি। সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৬.৫০ শতাংশ। সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বর শেষে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫.৬৯ শতাংশ। এর মানে ব্যাংকে আমানত রেখে একজন গ্রাহক যে সুদ বা মুনাফা পাচ্ছেন, তা মূল্যস্ফীতি খেয়ে ফেলছে। শুধু মুনাফাই নয়, বছর শেষে আসল টাকাও কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাধারণ মানুষ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একটু লাভের আশায় ব্যাংকে টাকা রাখেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাঁদের সঞ্চয়ের প্রকৃত মূল্য কমে যাচ্ছে। এটা মোটেও ভালো হচ্ছে না। কারণ আমানতের সুদ কমে যাওয়ায় তাঁরাই বেশি নিরুৎসাহ হবেন। এতে বিনিয়োগ ঝুঁকিগ্রস্ত খাতে চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি শেয়ারবাজারে ঝুঁকেও পড়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে ওয়ালটনের শেয়ারের জন্য লোকজন খুবই আগ্রহ দেখিয়েছেন। এতে ওয়ালটনের শেয়ারও অতি মূল্যায়ন হয়ে পড়েছে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন। |
মহামারি করোনায় মানুষের আয় কমেছে। অনেক মানুষ বেকারও হয়েছেন। কিন্তু বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও যাতায়াত ব্যয়, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের চার্জ এগুলোর কিছুই কমেনি। আবার চাল, ডালসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামও এখন চড়া। এর ওপর করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বাজারে টাকার জোগান বাড়ানোর ফলে জিনিসপত্রের দাম আরো বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের শঙ্কা, করোনার প্রভাব মোকাবেলা করতে টাকার জোগান বাড়ানোর ফলে জিনিসপত্রের দামের স্থিতিশীলতায় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এতে বেড়ে যেতে পারে মূল্যস্ফীতির হার।
সম্প্রতি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ ত্রৈমাসিক (এপ্রিল-জুন) প্রতিবেদনে এই শঙ্কার কথা বলা হয়। এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) গতি বাড়ানো এবং বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখতে নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে নজরদারি বাড়ানোর সুপারিশও করেছে আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, এখন আমানতের বিপরীতে যে সুদ পাওয়া যাচ্ছে তা মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনায় কম। এর মানে প্রকৃত মুনাফা বলে কিছু থাকছে না। সামনে মূল্যস্ফীতির এই হার আরো বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর করতে গিয়েই ব্যাংকগুলো আমানতের মুনাফা কমিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়প্রবণতা কমবে। তা ছাড়া যে কারণে ঋণ ও আমানতের সুদ কমেছে, সেই বেসরকারি বিনিয়োগই বাড়ছে না। আর বিনিয়োগ না বাড়লে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কোনো গ্রাহক বাণিজ্যিক ব্যাংকে আমানত হিসাবে টাকা জমা রাখলে বছর শেষে যে মুনাফা দেওয়া হবে, তার ওপর উৎস কর কেটে নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে আমানতের বিপরীতে বছরে একবার আবগারি শুল্কও কাটা হয়। জানা যায়, ব্যাংকের কোনো গ্রাহকের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকলে তাঁর আমানতের মুনাফা থেকে ১০ শতাংশ এবং টিআইএন না থাকলে ১৫ শতাংশ হারে উৎস কর কেটে রাখা হয়। নিউজটি আপনি পড়ছেন ব্যাংকিং নিউজ বিডি ডটকম-এ। শুধু উৎস করই নয়, সঞ্চয়ী গ্রাহকের হিসাব থেকে কাটা হয় আবগারি শুল্কও। চলতি অর্থবছরে ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকলে তার ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
এখন এক লাখ এক টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে আমানত হলে অ্যাকাউন্টধারীকে ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। পাঁচ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা, ১০ লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত আমানত স্থিতির ব্যাংক হিসাবের ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন হাজার টাকা করা হয়েছে। এক কোটি টাকার বেশি থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতির ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ কোটি টাকার বেশি স্থিতির ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আমানতে আবগারি শুল্ক ও উৎস কর কাটার ফলে অনেকে ব্যাংকে টাকা রাখতে নিরুৎসাহ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।