ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে এগিয়ে রাখবে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা
ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে এগিয়ে রাখবে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা – Banking Diploma ব্যাংকারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। যা ব্যাংকারদের ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। ব্যাংকারদের প্রমোশনে এর ভূমিকা অনন্বীকার্য। ব্যাংকে যারা জব করেন তাদের জন্য প্রমোশনের ক্ষেত্রে মার্ক রয়েছে।
Banking Diploma কী এবং কেন?
ব্যাংকিং সেক্টরকে যাঁরা ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছেন, তাঁদের জন্য Banking Diploma পাস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ পরীক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান পেশাগত জীবনে একজন ব্যাংকারকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। এ ছাড়া অনেক ব্যাংকেই বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনেও (ACR) ব্যাংকিং ডিপ্লোমার জন্য আলাদা নম্বর বরাদ্দ থাকে, যা পদোন্নতিতে সহায়তা করে। এমনও দেখা গেছে, Banking Diploma পাস না করার কারণে পদোন্নতি আটকে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জন্য Banking Diploma পাস করা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যোগদানের প্রথম বছর শেষে বেতন বৃদ্ধি হলেও Banking Diploma পার্ট ওয়ান পাস না করলে পরবর্তী বছরগুলোতে বেতন বাড়ে না। যদিও পাস করা হলে বকেয়াসহ বেতন পরিশোধ করা হয়। প্রায় সব ব্যাংকেই Banking Diploma পাস করলে মেলে এককালীন আর্থিক পুরস্কার। অনেকবার পরীক্ষা দিয়েও সব বিষয়ে পাস করতে পারেন না অনেকে, আবার অনেকের বাজিমাত একবারেই!
পরীক্ষা পদ্ধতি
ব্যাংকিং ডিপ্লোমার জন্য দুই পার্টে (JAIBB, DAIBB) ৬+৬=১২টি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। বছরে দুবার (সাধারণত জুন ও ডিসেম্বর) পরীক্ষা হয়, যার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় সাধারণত এপ্রিল ও সেপ্টেম্বরে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (IBB)। ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার বিষয়সহ পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস পাওয়া যাবে এখানে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা পাস নম্বর ৫০। কোনো বিষয়ে অনন্য কৃতিত্ব দেখাতে পারলে তার জন্য রয়েছে পুরস্কারের ব্যবস্থাও। IBB বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরীক্ষা ও নিবন্ধনের তারিখ ঘোষণা করে। প্রতিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়েও পরীক্ষার নোটিশ দেওয়া হয়। আইবিবি পরীক্ষার আবেদনের ফরম পাওয়া যাবে এখানে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ফি ১৫০০ টাকা। পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরীক্ষার ফি জমা দিয়ে চাকরিরত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। পরীক্ষা হয় শুক্রবার সকালে ও বিকেলে।
সিলেবাস দেখে প্রস্তুতি
Banking Diploma কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা নয়। এটি একটি প্রফেশনাল কোর্স। এ পরীক্ষার পরীক্ষার্থীরা সবাই চাকরিজীবী। ফলে এ পরীক্ষার জন্য খুব বেশি প্রস্তুতি নেওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর কমপক্ষে দুই মাস সময় পাওয়া যায় প্রস্তুতির জন্য। প্রথমে সিলেবাসটি সংগ্রহ করে নিন। সিলেবাসের বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রথমে একটি সম্যক ধারণা নিন। ইন্টারনেটে সার্চ দিয়েও অনেক তথ্য পেতে পারেন। Banking Diploma পরীক্ষার সহায়ক বই পাওয়া যায় বাজারে। এসব বইয়ের সহায়তা নিতে পারেন। ফেসবুকে Banking Diploma Helpline নামে একটি গ্রুপ আছে। এছাড়া Banking News Bangladesh ওয়েবসাইট থেকে হেল্প নিতে পারেন। ইংরেজি মাধ্যমে প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হতে পারে এটি। সেখান থেকে বিভিন্ন তথ্য সংবলিত গুরুত্বপূর্ণ সহায়িকা সংগ্রহ করতে পারেন। বিগত সালের প্রশ্নগুলো সংগ্রহ করে নিন। সিলেবাস ও বিগত বছরের প্রশ্নের আলোকে সাজেশন তৈরি করে পড়া শুরু করে দিন। পাস করা কঠিন হবে না।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
লেখার মাধ্যম
বাংলা বা ইংরেজি যেকোনো মাধ্যমেই পরীক্ষায় উত্তর করা যায়। তবে ইংরেজি মাধ্যমে উত্তর করাটা বেশি নম্বর পেতে সহায়তা করে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক ইশরাফুল আউলিয়া চৌধুরী। তিনি জানান, ইংরেজি বাক্য গঠন সঠিক রেখে সহজ ভাষায় প্রশ্নের উত্তর করতে পারলেই ভালো নম্বর পাওয়া যায়। তবে ইংরেজি মাধ্যমে ভালো দক্ষতা না থাকলে বাংলায় উত্তর করাই ভালো। প্রশ্নে যা জানতে চেয়েছে উত্তরে তা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। কোনো বিষয়ে ধারণা না থাকলে লিখে এলে পরীক্ষকের মনে পরীক্ষার্থী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে।
খাতায় উপস্থাপন
ব্যাংকিং ডিপ্লোমায় পাস করার ক্ষেত্রে উপস্থাপনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার্থীরা সবাই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাস করে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। সবাই মোটামুটি সমান মেধাবী। মেধাবীদের পাসের প্রতিযোগিতা এটি। তাই সুন্দর উপস্থাপনা পাস করতে সহায়তা করতে পারে। এক্সিম ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট আজহারুল ইসলাম জানান, সব প্রশ্নের উত্তর সমানভাবে করার চেষ্টা করতে হবে। কিছু প্রশ্ন খুব ভালোভাবে উত্তর করে কোনো প্রশ্নের উত্তর ছেড়ে আসার তুলনায় সব প্রশ্নের উত্তর সমানভাবে করে আসাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। ব্যাংকিং ডিপ্লোমায় খুব বেশি লেখার চেয়ে পরিচ্ছন্ন হাতের লেখা, ভিন্ন উপস্থাপনা কৌশল, বানানের ব্যাপারে সতর্কতা, বাক্য গঠনে নির্ভুলতা—এ সব কিছু পরীক্ষায় অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রাখে। এ ছাড়া পরিসংখ্যান, তথ্য-উপাত্ত, ছক, গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে রঙিন কালির ব্যবহার পরীক্ষকের দৃষ্টি কাড়তে সাহায্য করতে পারে।
পাস করার সহজ কায়দা
Banking Diploma পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথমবারেই উত্তীর্ণ হওয়া ন্যাশনাল ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার আরিফুর রহমান মনে করেন, ব্যাংকিং ডিপ্লোমায় সহজে পাস করার জন্য বিগত সালের প্রশ্ন সমাধান করতে হবে। বিগত সালের প্রশ্ন সমাধান করতে পারলেই ৬০-৭০ শতাংশ প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে যায়। এর সঙ্গে সিলেবাসের টপিকগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে যেতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর ছেড়ে আসা চলবে না। ভুল উত্তর করা যাবে না। একটি ভুল বা অযৌক্তিক উত্তর অন্য প্রশ্নের মার্কিংয়ের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আরো কিছু বিষয়
Banking Diploma পরীক্ষায় পাসের কোনো বয়স নেই। তবে চাকরির শুরুর দিকে পাস করাই বুদ্ধিমানের কাজ। বয়স ও চাকরি জীবন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ততা বাড়ে, বাড়ে জটিলতা। তাই পরীক্ষায় পাস করাও কঠিন হয়ে যায়। তাই প্রথম দিকেই ব্যাংকিং ডিপ্লোমা শেষ করাই শ্রেয়।
ব্যাংকিং প্রফেশনাল এক্সাম (BPE):
ব্যাংকিং প্রফেশনাল এক্সাম (BPE) ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রফেশনাল/ পেশাদারদের জ্ঞান বৃদ্ধি এবং দক্ষতা মূল্যায়ন করার জন্য ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (IBB) কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে। ব্যাংকিং প্রফেশনাল এক্সাম (BPE) দুই ভাগে বিভক্ত: জুনিয়র অ্যাসোসিয়েট অব দি ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (জেএআইবিবি) এবং অ্যাসোসিয়েট অব দি ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এআইবিবি)। ব্যাংকিং সেক্টরে ক্যারিয়ারের অগ্রগতির জন্য এই পরীক্ষাগুলো পাস করা অপরিহার্য, কারণ এই এক্সামগুলো (JAIBB, AIBB) পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ব্যাংকিং অপারেশন, আর্থিক নীতি এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো বোঝা এবং জানার সুযোগ দেয়। সাধারণত বছরে দুইবার (জুন ও নভেম্বর) IBB কর্তৃক বিভাগীয় কেন্দ্রগুলোতে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষার নতুন সিলেবাস ও সাবজেক্ট-এর তালিকা প্রকাশ করেছে দি ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (আইবিবি)। ৯৬তম ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষা-২০২৩ থেকে নতুন এই সিলেবাস কার্যকর করা হয়েছে। এতে সকল বিষয়ের পূর্ণ নম্বর- ১০০ এবং পাস নম্বর- ৪৫ করা হয়েছে।
আরও দেখুন:
◾ ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি
◾ সার্কুলার, সময়সূচি, সিলেবাস, রেজাল্ট, বিগত সালের প্রশ্ন ও সাজেশন
◾ ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষার সময়সূচী