ব্যাংকারের কুরবানি
রাকিব সাহেবের বউ চেঁচিয়ে বললেনঃ ”আচ্ছা, তুমি কি এবার কুরবানি করবে না?”
একজন আদর্শ ব্যাংকার রাকিব সাহেব। কাজের চাপে ওনার মাথায় আর কিছুই ঢুকবার জো নেই। বিনম্র কন্ঠে মিসেস কে বলেন, ”কেন দেব না?”
”আগামী শুক্রবার ঈদুল আযহা। আজ বুধবার, সে খেয়াল আছে কারো?” মিসেস রাকিবের আহাজারি।
সত্যিই তো হাতে সময় নেই। ”আচ্ছা ঠিক আছে। আজ একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বের হয়ে কুরবানি কিনে আনব” ব্যাংকার দৃঢ় প্রত্যয়ে অভয় দিলেন সহধর্মিণীকে। তারপর অফিসে ৪.৩০ মিনিটের দিকে ম্যানেজারকে বললেন, স্যার, এবারের কুরবানিটা নিজের হাতেই কিনার নিয়ত করেছি। তাই আজ একটু আগেভাগেই যেতে চাচ্ছিলাম।
ম্যানেজারঃ দেখুন, আপনি অফিসের রিসপনসিবল অফিসার। ঈদ উপলক্ষে লেনদেন একটু বেশি হচ্ছে। এখন এসব বললে হবে, বলেন?
রাকিব সাহেবঃ স্যার, একটা দিনই তো!
ম্যানেজারঃ গত শুক্রবার শনিবার কিনে নিলেই পারতেন।
রাকিব সাহেবঃ আমি যে এলাকায় থাকি সেখানে বৃহস্পতিবার আর রবিবার হাট। তাই কেনা হয় নি।
ম্যানেজারঃ তাহলে ঈদের আগের দিন নিয়েন। ব্যাংকে চাকরি করে…………..। বোঝেনই তো।
রাকিব সাহেবের মন খুবই খারাপ হলো। এ শালা চাকরিতে জয়েন করার পর থেকেই নিজের কুরবানি নিজে আজ অব্দি কিনতে পারে নি। তবু জিদ করেছে এবার নিজেই পছন্দ করে কুরবানি কিনবে। অবশেষে ঈদের ছুটি পেয়ে ঈদের আগের দিন কুরবানির হাটে যাচ্ছেন রাকিব সাহেব।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
প্রথম পরিচিত সহযাত্রীঃ কেমন কুরবানি কিনলেন?
রাকিব সাহেবঃ এই তো কিনতে যাচ্ছি।
প্রথম সহযাত্রীঃ নিয়তটা একটু শক্ত করেন ভাইসাব। আপনারা টাকা-পয়সা ওয়ালা লোক। আগেভাগেই ভাল দেখে কুরবানি কিনবেন। ছেলে-মেয়েরা অনেক খুশি হবে।
দ্বিতীয় সহযাত্রীঃ আপনারা সারা জীবন শুধু হিসাবটাই করলেন ভাই।
এসব শুনে বুক ফেটে যাচ্ছিল রাকিব সাহেবের। তবু নিজ হাতে গরু কেনার জন্য দৃঢ় পায়ে গরুর হাটে যেতে লাগলেন। অতঃপর ৫৫,০০০/= টাকায় একটি ষাঁড় কিনে বাসায় যেতে লাগলেন।
পথিমধ্যে এক হুজুরকে দেখে বুকের ভেতর ধক্ করে উঠল রাকিব সাহেবের। সালাম দিলেন তিনি। এই হুজুর গত জুমার খুৎবায় বলেছিলেন, ”সুদ, ঘুষ, চুরি, জুয়ার টাকা, অবৈধ ব্যবসা কিংবা দুর্নীতির টাকায় কুরবানি হবে না। আর যারা ব্যাংকে বা মাইক্রোক্রেডিট রিলেটেড আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তারাও সমগোত্রীয়।”
ডিনার সেরে অনেক কিছু ভাবছেন তিনি। সকাল ৯.৩০ মিনিটে অফিসে ঢোকেন একজন ব্যাংকার। বের হন সন্ধ্যা ৭-৮ টায়। কখনও আরো দেরি হয়। তবু এতো কথা হজম করতে হয় ব্যাংকারদের।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লেন রাকিব সাহেব। মাঝ রাতে আবার ঘুম ভেঙ্গে গেল। অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার। এসব জিজ্ঞাসা করতে হবে হুজুরকে।
১. সুদের টাকায় কুরবানি যদি না কবুল হয় তবে আমার ওপর কুরবানি কি ওয়াজিব হয়েছে? কারন, বেতনের টাকা বাদ দিলে তো আমি গরিব মানুষ।
২. আমার বেতনের টাকা কোন মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হলে সেই মসজিদে নামাজ হবে কি না?
ছোট ছেলেটার ঘুম মনে হয় ভেঙে গেছে। সে বাবাকে বলল, ”বাবা, সামনের ঈদে একমাস আগে গরু কিনে দিও, আচ্ছা?”
রাকিব সাহেবের নিজ হাতে কুরবানির গরু কেনার সখ মিটে গেছে। ”আচ্ছা বাবা” সায় দিলেন রাকিব সাহেব।
এই কথা শুনে স্ত্রী বললেন, সারাজীবন আমার সাথে মিথ্যা বলেছ, অসুবিধা নেই। মাছুম বাচ্চাটাকেও মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছ কেন?
এবার নির্বাক হয়ে রাকিব সাহেব ভাবলেন, একজন ব্যাংকারের দুঃখ তার স্ত্রীও বুঝে না। সামনের কুরবানি আসার পূর্বে নিজের কুরবানি নিজেই মনে মনে কামনা করলেন রাকিব সাহেব।
(দেশের সকল ব্যাংকারের প্রতি উৎসর্গীকৃত)
লেখকঃ শিবলী সাদিক
আরও দেখুন:
◾ ঈদ মুবারক (ঈদ-উল-আযহা ও কুরবানির ইতিহাস)