ব্যাংকার

ব্যাংকারদের দেরিতে অফিস ত্যাগ সিস্টেম নাকি অদক্ষতা

মোশারফ হোসেনঃ একজন ব্যক্তি ফোনে জানালেন, রাত ৮টা বাজলেও তার ব্যাংকার স্ত্রী বাসায় ফেরেননি। প্রায় প্রতিদিনই তার স্ত্রীসহ অন্য নারী কর্মকর্তাদের ব্যাংক ম্যানেজার রাত ৮টা পর্যন্ত ব্যাংকে আটকে রাখেন! শনিবারও অফিস করতে বাধ্য করেন। ২৮ মে ২০১৫ নারী ব্যাংকারদের সন্ধ্যা ৬টার পর অফিসে অবস্থান করতে বাধ্য না করার নির্দেশনা দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংকার হিসেবে আমার সেই বন্ধুকে আমি কি সমাধান দিতে পারি? নিম্নপদস্থ কিংবা সদ্যনিযুক্ত ব্যাংকারদের কাছে জিজ্ঞাসা- আপনারা ম্যানেজার হলে এমনই করবেন? কথাগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া। অন্য ব্যাংকারদের মতো আমিও সার্কুলারটি পড়েছি। সার্কুলারে নারী কর্মীদের বিষয়কে গুরুত্ব দিলেও কেবল নারীদেরই ৬টার পর অফিস ত্যাগের কথা বলা হয়নি, সব কর্মীর কথাই বলা হয়েছে।

আমি এ সার্কুলারের এমন নির্দেশনা সাধুবাদযোগ্য জানাই। কারণ ‘নারী’ মা, কন্যা, ভগিনী ও স্ত্রীর জাতি। সম্মান, সমর্থন আর অগ্রাধিকার অবশ্যই তাদের প্রাপ্য। আমার স্ত্রীও কিছুদিন বাদেই চাকরিজীবনে প্রবেশ করবেন। আমার মেয়েও হয়তো বড় হয়ে কোনো করপোরেটের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী হবে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নির্দেশনায় আমি একটু বেশিই খুশি।

নারীদের কর্মঘণ্টা পুরুষদের চেয়ে এক-দুই ঘণ্টা কমিয়ে দেয়া যেতে পারে। পুরুষরা চাকরিজীবী হলে শুধু চাকরিই সামলায়, চাকরিজীবী নারীদের চাকরি ও সংসার দুটোই সামলাতে হয়। নারীকে কর্মস্থলে যাওয়ার আগে ঘর গোছানো, সংসারের সবার সকালের নাশতা তৈরি করা, শিশুসন্তানদের স্কুলের জন্য তৈরি ইত্যাদি অনেক কিছুই করে আসতে হয়। অফিস শেষে বাসায় ফিরে আবারও সেই রান্নাঘর, সবার জন্য ডাইনিং টেবিল প্রস্তুত করা, সন্তানদের পড়াশোনা সবই নারীকে সামলাতে হয়।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ব্যাংকারদের কেন রাত ৮টা অবধি অফিসে থাকতে হয়? এটা কি ইচ্ছাকৃত নাকি বাধ্য হয়ে? ব্যাংকিং পেশাটা এমন কেন? সমাধানের কোনো চেষ্টা বা উদ্যোগ আছে কি? সব শাখায় প্রয়োজনীয় জনবল নির্ধারণের এবং নিয়োজিত করার কোনো অভিন্ন মানদণ্ড অনুসরণ করা হয় কি? সমস্যা সমাধান না করে শুধু ভয় দেখিয়ে আর শাস্তি দেয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে কি?

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তার পোস্টে একজন ব্যাংকার মন্তব্য করেছেন, ব্যাংকারদের দেরিতে অফিস ত্যাগের জন্য অদক্ষতাই দায়ী। এটি সত্য, তবে তা একমাত্র কারণ নয়। ‘অদক্ষতাই একমাত্র কারণ’ এমনটা প্রমাণ করার জন্য শহর, মফস্বল ও হেড অফিস সব পর্যায়ের ব্যাংকিং বিবেচনা করতে হবে। শুধু অদক্ষতাই নয়, আরও কারণ দায়ী। যেমন একটি শাখা হয়তো শুধু সাধারণ রিসিভ-পেমেন্ট করে, কিন্তু একই পর্যায়ের আরেক শাখাকে সমান সংখ্যক অফিসার নিয়ে সাধারণ রিসিভ-পেমেন্টের পাশাপাশি একাধিক ইউটিলিটি বিলও রিসিভ করতে হচ্ছে।

ঠিক একইভাবে একটি শাখার একজন কর্মকর্তা শুধু বিদ্যুৎ বিল রিসিভ করে, কিন্তু আরেক শাখার একজন কর্মকর্তাকে একাই সাধারণ রিসিভের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল, টেলিফোন বিল সবই রিসিভ করতে হচ্ছে। কোনো কোনো শাখায় একজন ক্যাশ কর্মকর্তা দিয়েই চলে রিসিভ-পেমেন্ট উভয় কাজ। তাহলে এই দুই ধরনের শাখার মধ্যে কোন শাখার কর্মকর্তারা আগে অফিস ত্যাগ করতে পারবেন, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

ব্যাংকে ফ্রন্ট ডেস্ক অফিসার, রিলেশনশিপ ম্যানেজার, ডেসপ্যাচার, ডিরেক্ট সেলস অফিসার, ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট, রিকভারি অফিসার, ক্যাশ সর্টার প্রভতি অনেক পদ এবং এসবের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সব শাখায় এসব পদে লোক আছে কি? না থাকলে এসব কাজ কে করছেন? নিশ্চয় অন্য কোনো অফিসারের সম্পর্কেই তা ন্যস্ত হয়। ঠিক তেমনিভাবে কোনো শাখায় একজন কর্মকর্তাই অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ও ক্লোজিং করে, চেক ও ডেবিট কার্ড ইস্যু করে, ডেসপ্যাচ করে, ব্যাচ ও ইএফটির কাজ করে; কিন্তু আরেক শাখায় এই কাজগুলোই করছেন ৩-৫ জন অফিসার মিলে। এখানে যে অফিসারটি ৩-৫ জন অফিসারের কাজ একা করছেন, দক্ষতার স্কেলে সে অন্যদের সঙ্গে পেরে উঠবেন কীভাবে?

প্রধান কার্যালয়ের প্রতিটি ডিভিশন রিটার্ন বা স্টেটমেন্টটি সর্বাগ্রে চান। আর সেটি যদি বাংলাদেশ ব্যাংক যাচিত হয়, তাহলে তো সেটা গ্রাহকসেবা, আহার-ইবাদত ফেলে রেখে সম্পাদন করে দিতে হয়। আর এসব ক্ষেত্রে অফিস টাইম পেরিয়ে গেছে, রাত ৯টা বেজে গেছে বা আজ ছুটির দিন (শনিবার), অমুক অফিসার ছুটিতে, অমুক অফিসার অসুস্থ এসব বলার বা কোনো অজুহাত দেখানোর কোনো সুযোগ থাকে না। এখানে কর্মকর্তার দায় কতটুকু যদি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা/নির্বাহী বা কর্তৃপক্ষ তাকে লেট আওয়ার পর্যন্ত বা ছুটির দিনে অফিস করতে বাধ্য করে? আর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা/নির্বাহী বা ব্যাংক কর্তৃপক্ষেরই বা দায় কতটুকু যদি ব্যাংকিং সিস্টেমই তাকে বাধ্য করে, তার অধীন কর্মীকে লেট আওয়ার পর্যন্ত বা ছুটির দিনে অফিস করাতে?

ব্যাংকারদের একটি ফেসবুক গ্রুপে একটি মন্তব্য ‘যারা ব্যাংকে অফিস আওয়ারের পরেও অবস্থান করে, তাদের দাম্পত্য জীবনে সমস্যা আছে!’ এ মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেও কারও ক্ষেত্রে হয়তো এটা সত্য। তবে অভিজ্ঞতা থেকে যা দেখেছি, ব্যাংকাররা ইচ্ছে করে নয়, বাধ্য ও নিরুপায় হয়েই লেট আওয়ার পর্যন্ত অফিস করেন। পরিচিত একাধিক ব্যাংকারের বর্ণনা থেকে শুনেছি, তাদের রাত একটা-দুইটা পর্যন্ত অফিস করতেও বাধ্য করা হয়েছে! শুক্রবার-শনিবারে অফিস করতে তো হতোই, বরং শুক্র-শনিবারে অফিসে না এলে তার জন্য ম্যানেজারের কাছ থেকে অগ্রিম ছুটি নিতে হতো!

কোনো কারণে শুক্র-শনিবারে অফিসে আসতে ১০টার জায়গায় সাড়ে ১০টা বাজলে স্বয়ং সেকেন্ড ম্যান অফিসারদের বাসায় গিয়ে বকাবকি করে অফিসে আসতে বাধ্য করতেন। এখন কেউ বলতে পারেন, অফিসাররা এসব অন্যায় নির্দেশনা মানতেন কেন? কারণ অনেকের কাছে এসব অন্যায় নির্দেশনা মনে হলেও কর্তৃপক্ষের কাছে তা স্বাভাবিক ছিল। কারণ তাদের কাছে মুনাফা, আমানত আর ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করাই মূল বিষয়। সেটা কী উপায়ে এবং কর্মীদের কতটা যাতনা হচ্ছে, তা দেখার প্রয়োজন ছিল না।

আর কর্মীরা এমন ম্যানেজারের বিরুদ্ধে যাওয়ার বা বিরুদ্ধে বলার সাহস পেতেন না। কারণ এই মানেজার যে ম্যানেজমেন্টের কাছে সোনার ডিমপাড়া হাঁস কোনো শাখা ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করলেও এই ম্যানেজারের শাখা যে প্রতি বছরই সফল! তাই মানেজার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজরে ছিলেন সব সময়। তার ইচ্ছায়ই কর্মীদের ভাগ্য নির্ধারিত হতো। ম্যানেজারের ক্ষমতার দাপটে কর্মকর্তারা রাতের একটা-দুইটা, শুক্র-শনিবার কাজ করে তাদের অ্যানুয়াল পারফরম্যান্স অ্যাপ্রাইজালের স্কোর বিলো অ্যাভারেজ থেকে উপরে রাখতে চাইতেন!

এমন সংস্কৃতি তৈরি হওয়ার পেছনে ম্যানেজারদের দায়টা অনেক বেশিই বলা যায়। শাখার জন্য বেশি মুনাফা করে বছর বছর প্রমোশন বাগিয়ে নেয়াই অনেকের মিশন! বেতন, বোনাস, প্রমোশন অর্থাৎ ক্যারিয়ারটাই যেন সবকিছু। জীবন, সংসার, পরিবার, ধর্ম, বিনোদন আর সামাজিকতা শিকেয় যাক। অধীনস্থ ১০ জন কর্মীর জীবন ও পরিবার বরবাদ হয়ে যাক। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ম্যানেজাররাও অসহায়, ৫০ লাখ টাকার অর্জিত মুনাফার বিপরীতে পরের বছর যখন লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি টাকা হয়ে যায়, তখন ম্যানেজারদেরও দিশাহারা অবস্থা হয়ে যায়! যত বেশি ঋণ যত দ্রুত দেয়া যায় শাখার আয় তত তাড়াতাড়ি বাড়বে, যত বেশি বেশি আমানত হিসাব খোলা আর আমানত আহরণ করা যাবে প্রধান কার্যালয় থেকে সুদ (আইবিটিএ সুদ) আয় তত বাড়বে।

তাই আমানত হিসাব খুলার সময় নির্দিষ্ট থাকে না, বিকাল ৪-৫টা কোনো বিষয় নয়। ঋণ প্রস্তাব তৈরির সময় রাতের বারোটা-একটা হলেও হোক! একইভাবে ঊর্ধ্বতন কেউ সারপ্রাইজ ভিজিটে বা বিশেষ প্রয়োজনে অফিস আওয়ারের পরে কোনো শাখায় গিয়ে যদি কর্মকর্তাদের কর্মরত দেখেন, তখন তারা কর্মীদের ডেডিকেটেড ও হার্ড ওয়ার্কিং বলে বাহবা দেন, অদক্ষ বলে তিরস্কার করতে কখনও শুনিনি আমি। তাই প্রত্যক্ষ দায় ম্যানেজারের হলেও পরোক্ষ দায় ব্যাংক ব্যবস্থাপনা তথা পুরো ব্যাংকিং সিস্টেমেরই।

বর্তমান যুগে ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্সের মাধ্যমে কোন কর্মকর্তা কখন অফিসে এলেন, কখন অফিস ত্যাগ করলেন, কত ঘণ্টা বেশি অফিস করলেন, কত ঘণ্টা কম অফিস করলেন এ হিসাব রাখা খুব সহজ। অপ্রয়োজনে অফিসে অবস্থান নিরুৎসাহিত করতে, কেউ ৮ ঘণ্টার বেশি সময় অফিসে অবস্থান করলে, সংশ্লিষ্ট অফিসার এবং তার ম্যানেজার বা বিভাগীয় প্রধানের কাছে কারণ জানতে চাওয়া যেতে পারে। কারণ শাখায় অফিস সময়ের পরে অবস্থানকারী ব্যাংককর্মীদের মাধ্যমে জালজালিয়াতির অনেক নজির আছে।

তাছাড়া দুই-একজন কর্মীর জন্য পুরো শাখার লাইট, ফ্যান ও এসি চালিয়ে ব্যাংকের খরচ বাড়ানোর জবাবদিহি করলে এ প্রবণতা অবশ্যই কমবে। তবে এ ব্যাখ্যা বা জবাবদিহি চাওয়াটা হতে হবে সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে, উচ্চকণ্ঠে ৬টার মধ্যে অফিস শেষ করাতে নয়। এজন্য প্রতিটি শাখায় লোকবল নিয়োগ সুষম করতে হবে। কোনো শাখায় কেউ বসার চেয়ার পান না, কোনো শাখায়/বিভাগে কেউ কেউ কাজ করতে করতে দম ফেলতে পারেন না। এমন হলে সমাধান কখনোই আসবে না।

তিন-চারটি সূচক- আমানত, ঋণ, মুনাফা, দৈনিক ভাউচার সংখ্যা প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে জনবল নির্দিষ্ট না করে এগুলোর পাশাপাশি আরও কয়েকটি সূচক আমানত ও ঋণ হিসাবের সংখ্যা, খেলাপি ঋণের সংখ্যা ও পরিমাণ, দৈনিক ফরেন রেমিট্যান্স ভাউচার সংখ্যা, ইউটিলিটি বিল ভাউচার সংখ্যা ও অন্যান্য বিল/ফিস কালেকশন ভাউচার সংখ্যা ইত্যাদি বিষয়গুলোর সম্মিলিত বিবেচনায় একটি শাখার আদর্শ ম্যানপাওয়ার সংখ্যা নির্ধারণের নির্দিষ্ট নীতি বা সূত্র থাকতে হবে। যদি এমন হয় যে, দুটি শাখার প্রতিটিরই বয়স এক বছর করে এবং উভয় শাখায়ই সমানসংখ্যক আমানত হিসাব এবং সমানসংখ্যক ঋণ হিসাব আছে এবং উভয় শাখারই দৈনিক সেবাগ্রহীতার গড় সংখ্যা সমান। কিন্তু একটি শাখার অফিসার সংখ্যা ১০ জন, আরেকটি শাখার যদি ২৫ জন হয়, তাহলে তা কখনোই সুষম মানবসম্পদ বণ্টন নয়।

দেরিতে অফিস ত্যাগের পেছনে ব্যাংকারদের অদক্ষতাও দায়ী। চাকরি পাওয়ার পর ই-মেইলের ব্যবহার আর টাইপ করা শিখতে আসা ব্যাংকার দিয়ে স্কুল চালানো সম্ভব, ব্যাংক নয়। পুরোনো ঋণগ্রহীতাকে তৃতীয়বার ঋণ দিতে গিয়ে আগের ওয়ার্ড ফাইল কপি এবং এডিট করে কাজ না করে নতুন করে নথি তৈরি করে কাজ করা নিশ্চয় অদক্ষতা। দুই পাতা টাইপ করে সেটা সেভ না করে পিসি শাটডাউন দেয়াও অবশ্যই অদক্ষতা। বাংলায় কোনো চিঠি লিখতে বললে, ‘বাংলা টাইপ পারি না’ বলা বা আরেক অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে একটি চিঠি টাইপ করা অবশ্যই অদক্ষতা ও কালক্ষেপণের মোক্ষম কারণগুলোর কয়েকটি।

অন্যদিকে ক্রেডিট ডেস্কে হঠাৎ করেই রেমিট্যান্সে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অফিসারকে দায়িত্ব দিলে দক্ষতা-অদক্ষতার তর্ক কখনোই শেষ হবে না। তাই ব্যাংকারদের দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং সেটা নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকেই শুরু করতে হবে। অদক্ষ ও তথাকথিত সনদসর্বস্ব ব্যাংকার নিয়োগ রোধে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে সরকারি ব্যাংকের মতো বেসরকারি ব্যাংকের নিয়োগ-সংক্রান্ত দায়িত্বও ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির ওপরই ন্যস্ত করা যেতে পারে। একইসঙ্গে প্রত্যেক ব্যাংকের নিজস্ব উদ্যোগে প্রত্যেক কর্মীর নিয়মিত জব রোটেশন, অন দ্য জব ও অফ দ্য জব ট্রেনিং, পেশাসংক্রান্ত কোর্স সম্পাদনে ও ডিগ্রি অর্জনের ব্যবস্থা করতে হবে। কেবল আমানত ও মুনাফার টার্গেটভিত্তিক প্রমোশন পদ্ধতি অনুসরণ না করে পেশাগত মেধাভিত্তিক প্রমোশনের নীতি অনুসরণ করতে হবে।

ব্যাংকগুলোর মধ্যে কেবল গ্রাহক ও ব্যবসাকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতাই লক্ষ করা যায়। মেধাবী ফ্রেশার বা অন্য ব্যাংকের ভালো ব্যাংকারদের নিজের ব্যাংকের প্রতি আকৃষ্ট করতে এবং নিজের ব্যাংকের বিদ্যমান ব্যাংকারদের উদ্দীপ্ত করতে ব্যাংকগুলোর মাঝে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও যেন এক্ষেত্রে উদাসীন। তাই কর্মী সন্তুষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। তাই ব্যাংকের রেটিংয়ে কেবল গ্রাহক ও ব্যবসাসংশ্লিষ্ট সূচককেই প্রাধান্য না দিয়ে কর্মীসন্তুষ্টি বিষয়ক সূচকগুলোকেও বিবেচনায় নিলে অবশ্যই ব্যাংকের পক্ষ থেকে কর্মীদের জন্য ভালো কিছু করার প্রয়াস দেখা যাবে।

নারী কর্মীদের প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু করেছিলাম। একজন নারীর আর্লি অফিস ত্যাগের বেশকিছু প্রতিবন্ধকও আছে। নারী কর্মকর্তাকে যদি ডেস্কের কাজ সম্পাদন ব্যতিত ৬টায় অফিস ত্যাগ করতে দেয়া হয়, তাহলে দিনশেষে তার অসম্পূর্ণ কাজ কে করবেন? অন্য কোনো পুরুষ কি এগিয়ে আসবেন তার একজন নারী সহকর্মী যিনি হয়তো তার গ্রেডেই চাকরি করেন, মাস শেষে তারই সমান বেতন পান, তার কাজটি করে দিতে? তারও বাসায় স্ত্রী আছেন, সন্তান আছেন। তাই তারও তো আধা ঘণ্টা দেরিতে অফিস ত্যাগ করার মানে হচ্ছে তার স্ত্রী-সন্তানকে আধা ঘণ্টা নিজের সান্নিধ্য ও দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত করা। তাই নারী ও পুরুষ উভয় কর্মীই যেন ৬টার মধ্যেই অফিস ত্যাগ করতে পারে, এমন কর্মীবান্ধব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

লেখক একজন স্বনামধন্য ব্যাংকার, কলামিস্ট ও ফ্রিল্যান্স লেখক।

আরও দেখুন:
 আইবিবির নতুন মহাসচিব হলেন লাইলা বিলকিস
 ব্যাংক এশিয়ার নতুন পরিচালক তানিয়া নুসরাত জামান
 আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এসভিপির ইন্তেকাল
 ইসলামী ব্যাংক অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্টের ইন্তেকাল
 করোনায় ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তার ইন্তেকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button