আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন
অর্থনৈতিক শোষণের আরেক নাম সুদ। সুদ ধনীকে আরও ধনী গরিবকে আরও গরিব করে। আরবি ‘রিবা’ শব্দের বাংলা অর্থ বেড়ে যাওয়া, বেশি হওয়া, অতিরিক্ত ইত্যাদি। ইবনে কাসির সুদের সংজ্ঞায় বলেন, ‘চুক্তির বাইরে মূল সম্পদের সঙ্গে অতিরিক্ত সম্পদকে রিবা তথা সুদ বলে। যেমন এক মণ ধানের সঙ্গে এক মণ ৫ কেজি ধান বেশি নেওয়া। মুফাসসির আলী সাবুনি বলেন, ‘সময়ের বিনিময়ে ঋণদাতা ঋণগ্রহীতা থেকে যে অতিরিক্ত সুবিধা নেয় তাকেই সুদ বলে।’
সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
اَلَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوۡمُوۡنَ اِلَّا کَمَا یَقُوۡمُ الَّذِیۡ یَتَخَبَّطُہُ الشَّیۡطٰنُ مِنَ الۡمَسِّ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ قَالُوۡۤا اِنَّمَا الۡبَیۡعُ مِثۡلُ الرِّبٰوا ۘ وَ اَحَلَّ اللّٰہُ الۡبَیۡعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا ؕ فَمَنۡ جَآءَہٗ مَوۡعِظَۃٌ مِّنۡ رَّبِّہٖ فَانۡتَہٰی فَلَہٗ مَا سَلَفَ ؕ وَ اَمۡرُہٗۤ اِلَی اللّٰہِ ؕ وَ مَنۡ عَادَ فَاُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ ہُمۡ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۲۷۵
অর্থাৎ ‘যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।’ সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৫।
یَمۡحَقُ اللّٰہُ الرِّبٰوا وَ یُرۡبِی الصَّدَقٰتِ ؕ وَ اللّٰہُ لَا یُحِبُّ کُلَّ کَفَّارٍ اَثِیۡمٍ ﴿۲۷۶
অর্থাৎ ‘আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।’ সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৬।
মুমিনমাত্রই সুদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না। আল্লাহ বলেন-
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَ ذَرُوۡا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۲۷۸
অর্থাৎ ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।’ সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৮।
সুদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা মানে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করা। পরের আয়াতেই আল্লাহ বলেন-
فَاِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلُوۡا فَاۡذَنُوۡا بِحَرۡبٍ مِّنَ اللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ ۚ وَ اِنۡ تُبۡتُمۡ فَلَکُمۡ رُءُوۡسُ اَمۡوَالِکُمۡ ۚ لَا تَظۡلِمُوۡنَ وَ لَا تُظۡلَمُوۡنَ ﴿۲۷۹
অর্থাৎ ‘অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না’ সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৯।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
ইসলামী অর্থনীতিবিদরা বলেন, সুদ দুই রকমের হতে পারে। একই বস্তু বিনিময় করে বেশি গ্রহণ করা। যেমন এক কেজি চালের বিনিময়ে দেড় কেজি চাল নেওয়া। কিংবা এক কেজি চালের বিনিময় এক কেজি চাল সঙ্গে অন্য কিছু নেওয়া। এটা স্পষ্ট সুদ। আরেক ধরনের সুদ হলো সময়ের বিনিময়ে অতিরিক্ত নেওয়া। যেমন ১০০ টাকা ঋণ দিয়ে এক মাস পর ১১০ টাকা নেওয়া। কিংবা এক কেজি চাল দিয়ে এক মাস পর এক কেজি চাল সঙ্গে আরও কিছ, হতে পারে টাকা বা অন্যকিছু নেওয়া। জাহেলি যুগে দ্বিতীয় ধরনের সুদ প্রচলিত ছিল। কেউ কারও কাছে কোনো বস্তু বা অর্থ ঋণ নিলে ফেরত দেওয়ার সময় হলে বলত, আর কিছুদিন আমার কাছে থাকুক, বিনিময়ে তোমাকে বাড়িয়ে দেব। একপর্যায়ে দেখা যেত, সুদ মূলধনের চেয়ে বেশি হয়ে যেত।
আধুনিক ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলোও দ্বিতীয় ধরনের সুদ দেয়। ব্যাংকগুলো বেশি দেওয়ার কথা বলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাকা জমা নেয়। তবে ইসলামী অর্থনীতির সূত্র মেনে চললে সুদ থেকে বেঁচে চলা সহজ। ইসলামী শরিয়াহ মতে পরিচালিত ব্যাংকগুলো চেষ্টা করে সুদমুক্ত থাকার। তবে তাদেরও নানান সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যে কারণে কখনো-সখনো তারা চাইলেও সুদমুক্ত থাকতে পারে না। সুদমুক্ত রাখতে পারে না। সুদের ব্যাপারে মূলনীতি হলো- একই বস্তুর বিনিময়ে বেশি নেওয়া যাবে না। যেমন এক কেজি চালের বিনিময়ে এক কেজি চালই নিতে হবে। দেড় কেজি নিলেই তা সুদ হবে।
লেখক: মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী, বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান: বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।