ফিনটেক

বিটকয়েন (Bitcoin) পরিচিতি

বিটকয়েন হল ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটকলের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া সাংকেতিক মুদ্রা। বিটকয়েন লেনদেনের জন্য কোন ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয় না। ২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো এই মুদ্রাব্যবস্থার প্রচলন করেন। তিনি এই মুদ্রাব্যবস্থাকে পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেন নামে অভিহিত করেন।

বিটকয়েনের লেনদেনটি বিটকয়েন মাইনার নামে একটি সার্ভার কর্তৃক সুরক্ষিত থাকে। পিয়ার-টু-পিয়ার যোগাযোগ ব্যাবস্থায় যুক্ত থাকা একাধিক কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মধ্যে বিটকয়েন লেনদেন হলে এর কেন্দ্রীয় সার্ভার ব্যবহারকারীর লেজার হালনাগাদ করে দেয়। একটি লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে নতুন বিটকয়েন উৎপন্ন হয়। ২১৪০ সাল পর্যন্ত নতুন সৃষ্ট বিটকয়েনগুলো প্রত্যেক চার বছর পরপর অর্ধেকে নেমে আসবে। ২১৪০ সালের পর ২১ মিলিয়ন বিটকয়েন তৈরী হয়ে গেলে আর কোন নতুন বিটকয়েন তৈরী করা হবে না।

যেহেতু বিটকয়েনের লেনদেন সম্পন্ন করতে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পরে না এবং এর লেনদেনের গতিবিধি কোনভাবেই অনুসরণ করা যায় না তাই বিশ্বের বিভিন্ন যায়গায় বিটকয়েন ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বৈধ পণ্য লেনদেন ছাড়াও মাদক চোরাচালান এবং অর্থপাচার কাজেও বিটকয়েনের ব্যবহার আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও বিটকয়েন ডিজিটাল কারেন্সি হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে এর দর মারাত্মক ওঠানামা, দুষ্প্রাপ্যতা এবং ব্যবসায় এর সীমিত ব্যবহারের কারণে অনেকেই এর সমালোচনা করেন।

সম্প্রতি কানাডার ভ্যানক্যুভারে বিটকয়েন এর প্রথম এটিএম মেশিন চালু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এটি বিটকয়েনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। মাদক, চোরাচালান অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও অন্যান্য বেআইনি ব্যবহার ঠেকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডীয় সরকার বিটকয়েনের গ্রাহকদের নিবন্ধনের আওতায় আনার চিন্তা-ভাবনা করছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

‘বিটকয়েন’ (Bitcoin)
‘বিটকয়েন’ (Bitcoin) বর্তমানে আলোচিত একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency)। ‘ক্রিপ্টো’ মানে অদৃশ্য, গোপন, সিক্রেট। কারেন্সি মানে মুদ্রা। সহজে বললে এমন একটি মুদ্রা, যা অদৃশ্য, সংকেত বা নাম্বারের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, এর না আছে নিজস্ব বস্তুগত কোন আকার, না তা স্পর্শযোগ্য। তেমনিভাবে এর না আছে নিজস্ব কোন মূল্যমান বা ফায়দা (Intrinsic Value)।

আর ‘বিটকয়েন’-এ bit শব্দের অনেক অর্থ। যেমন- টুকরো, ছোট অংশ, অল্প, কিছুক্ষণ। এর আরেক অর্থ, কম্পিউটারে ব্যবহৃত সংক্ষিপ্ততম তথ্য। এখানে শেষোক্ত অর্থই উদ্দেশ্য। যেহেতু এটি কম্পিউটারের ক্ষুদ্র তথ্যকে ব্যবহার করে তৈরি হয়, তাই একে ‘বিটকয়েন’ বলা হয়।

ইন্টারনেটে ক্রিপ্টোকারেন্সি অনেক আছে। যেমন- Ripple, Ethereum ইত্যাদি। এসবের মধ্যে বর্তমানে ‘বিটকয়েন’ সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে আলোচিত ক্রিপ্টোকারেন্সি। এসব ক্রিপ্টোকারেন্সির কিছু কমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এবং কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা কারেন্সির প্রস্তুতকারীগণ নির্ণয় করে থাকেন। আমাদের বক্ষ্যমাণ আলোচনা কেবল বিটকয়েন নিয়ে, যার সাথে অন্যগুলোর কিছু পার্থক্য আছে, এবং যা শরঈ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখা জরুরী। বিজ্ঞদের মতে, বিটকয়েন মূলত একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি, যা ভার্চুয়াল মুদ্রা। এর শারীরিক (Physical) বৈশিষ্ট্য স্পর্শযোগ্য নয়। নিজস্ব কোন মূল্যও নেই। এটি বিশেষ হার্ডওয়্যার দ্বারা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সংকেত আকারে তৈরি হয়। অন্য কথায়, এটি একটি ভার্চুয়াল টোকেন, যাকে এর প্রস্তুতকারীগণ বিনিময়ের মাধ্যম বা মুদ্রা হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তৈরি করেছেন। অন্য যে কোনো পন্যের ন্যায় বিটকয়েনেরও চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে অন্যান্য ফেইথ (Faite) মুদ্রার সাথে এর মূল্যমান কম-বেশি হয়ে থাকে।

২০০৮ইং সনের নভেম্বরে এক অজ্ঞাত সংস্থা বা ব্যক্তি কর্তৃক একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়। যার ছদ্ম নাম ‘সাতোশী নাকামোতো (Satoshi Nakamoto)’। এই আর্টিকেলের ভিত্তিতে ২০০৯ইং সনের জানুয়ারীতে প্রথম বিটকয়েনের ঘোষণা দেয়া হয়। ধারণা করা হয়, এই ছদ্মনাম বিশিষ্ট ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২১ মিলিয়ন বিটকয়েনের মধ্যে মাত্র ৫% উৎপন্ন করেছে। এটি করা হয়েছে মাইনিং পদ্ধতি ব্যবহার করে।

যেভাবে বিটকয়েন তৈরি হয় (How Bitcoin is made)
কাগুজে মুদ্রা তৈরি হয় টাকা ছাপানোর মেশিনে। সরকার একে অনুমোদন করে, নিয়ন্ত্রন করে। এভাবে এতে সৃষ্টি হয় ক্রয়-ক্ষমতা (Purchasing power)। কিন্তু বিটকয়েন তৈরি হয় সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। এটি তৈরির প্রধান উৎস-‘ব্লক চেইন (Block chain) নামক এক উন্নত প্রযুক্তি। প্রযুক্তিটি আবিষ্কার হয়েছে ১৯৯১ইং সনে ব্লকচেইন (Block chain) একটি প্রযুক্তিগত ফ্রেমওয়ার্ক, যার ওপর বিটকয়েন তৈরি করা হয়েছে। ব্লক চেইন একটি চমৎকার প্রযুক্তি। সংক্ষেপে তার বিবরণ দেয়া হল।

ব্লক চেইন প্রযুক্তি (Block Chain Technology)
সাধারণত আমরা আরেক জনের কাছে টাকা পাঠাই তৃতীয় কোন মাধ্যমে। যেমন- ব্যাংক, পোস্ট অফিস ইত্যাদি। তদ্রুপ জমির মালিকানা হস্তান্তর করি ভূমি অধিদপ্তরের মধ্যস্থতায়। এসব তৃতীয় পক্ষ লেনদেনে মধ্যস্থতা করার পাশাপাশি অর্থ-সম্পদের নিরাপত্তাও প্রদান করে।

আমাদের লেনদেনের যাবতীয় তথ্য তাদের নিকট সংরক্ষিত থাকে। এই মাধ্যমগুলো ব্যবহারের অনেক সুবিধার মাঝে তিনটি অসুবিধাও আছে। যথা-
এক. অতিরিক্ত ফি দিতে হয়।
দুই. লেনদেন সম্পন্ন হতে অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ হয়।
তিন. তৃতীয় পক্ষের নিকট সকল ডাটা চলে যায়। মূলত এই অসুবিধাগুলো দূর করতে আবিস্কৃত হয়েছে ইন্টারনেট ভিত্তিক এক বিশেষ ব্লক চেইন প্রযুক্তি। এর দুটি অংশ। যথা-

ক. Open Ledger বা উন্মুক্ত খাতা
ইন্টারনেটে ব্লক চেইন প্রযু্িক্ত ব্যবহার করে যখন কেউ কারো নিকট অর্থ বা অন্য কোন তথ্য পাঠায়, তখন ব্লক চেইন নেটওয়ার্কে যারা লেজার মেইন্টেইন করে তাদের লেজারে সেই ডাটাগুলো ব্লক হয়ে যুক্ত হয়। যেমন-A-b-C-d-e-F । ধরা যাক, A ১০০ টাকা পাঠিয়েছে b এর নিকট। তদ্রুপ b কিছু পাঠিয়েছে C এর নিকট। এভাবে প্রত্যেকে তার পরের জনের নিকট কিছু অর্থ পাঠিয়েছে। এই পাঠানো তথ্যগুলো জমা হবে তাদের নিকট যারা লেজার মেইন্টেইন করে।

এখানে বড় হাতের ইংরেজী অক্ষর হল সেই লেজার মেইন্টেইনকারী। পরিভাষায় তাদেরকে Miners ও বলা হয়। মনে রাখতে হবে, এখানে যে লেনদেনগুলো হল, এগুলো করার সাথে সাথে পূর্ণতায় পৌঁছে না। তথা সাথে সাথে বাস্তবেই অর্থ স্থানান্তর হয় না। বরং লেনদেনটি করা মাত্রই একটি ব্লক তৈরি হয়। উক্ত ব্লকে প্রতি দশ মিনিটের মধ্যে যেসব ট্রাঞ্জাকশন হয়, তা রেকর্ড হয়ে যায়।

খ. Distributed Ledger বা বিতরণ খাতা
উক্ত ব্লক তৈরি হওয়ার পর সেটা ব্লক চেইন নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে যায়, এবং পৃথিবীজুড়ে হাজারো কপি তৈরি হয়। তখন সেটা উপরোক্ত প্রত্যেক মাইনারের লেজারে ব্লক হিসেবে এসে যায়। কিন্তু এতেই উক্ত ট্রাঞ্জাকশন Validate হয়নি। অর্থাৎ বাস্তবেই অর্থ স্থানান্তর হয়নি। এখন তাকে Validate করার জন্য সকল মাইনার একযোগে ঐ ব্লক নিয়ে কাজ শুরু করে। তাকে সমাধান করতে চেষ্টা করে। তাদের কেউ যখন সেটা সমাধান করে ফেলে তখন ট্রাঞ্জাকশনটি Validate হয়। অর্থাৎ তখন বাস্তবেই যার কাছে টাকা পাঠানো হল সে সেটা পেয়ে যায়। এই সমাধিত ব্লকটি একটি ফাইনাল ব্লক।

এবার এই ব্লকটি প্রত্যেকে মাইনারের নিকট রেকর্ডকৃত পূর্বের সমাধিত ব্লকের সাথে জুড়ে যায়। অনেকটা চেইনের মত। একটির পেছনে আরেকটি জুড়ে। এজন্য একে ব্লক চেইন বলা হয়।

উল্লেখ্য, প্রতিটি সমাধিত ব্লকে তিনটি বিষয় থাকে। যথা- ডাটা, হ্যাশ ও পূর্বের ব্লকের হ্যাশ। হ্যাশ হল, বিশেষ অ্যালগরিদম বা বিশেষ ম্যাথ জাতীয় বিষয়। সেই ম্যাথ সলূশন করা হলে তাকে হ্যাশ বলে। এই হ্যাশটা পূর্বের সমাধিত ব্লকের সাথে মিলতে হবে। তবেই ফাইনাললি ব্লকটি সমাধিত হবে। সর্বপ্রথম যে মাইনর সমাধান করতে পারবে সে বিটকয়েন লাভ করবে।

এসব কাজের মধ্য দিয়েই তার জন্য অটো বিটকয়েন ক্রিয়েট হয়ে যাবে। বর্তমানে প্রায় প্রতি দশ মিনিটে একটি ব্লক সল্ভ হয়ে যায়। এসব মাইনিং-এর জন্য বেশ পাওয়ারফুল কম্পিউটার ও বিশেষ মেশিনের প্রয়োজন হয়। অনেক বিদ্যুৎ খরচ হয়। মোটা অংকের টাকা এসব খাতে ইনভেষ্ট করতে হয়।

বিটকয়েন ও একটি উদাহরণ (Bitcoin & an example)
আমাদের দেশে বিভিন্ন শপিং মলে এরূপ প্রচলন আছে যে, কোন পণ্য ক্রয় করা হলে একটি পয়েন্ট দেয়া হয়। এটি একটি সংখ্যা। ভার্চুয়াল টোকেন। এই পয়েন্ট যখন একটি নির্ধারিত পরিমাণে পৌঁছে, তখন তা দিয়ে ঐ দোকান থেকে কোন কিছু ক্রয় করা যায়। এর অর্থ এই ভার্চুয়াল পয়েন্টকে একটি বিনিময়ের মাধ্যমের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। বিটকয়েন কনসেপ্ট অনেকটাই এরূপ। একটি সংখ্যা। যা মাইনিং করার পর মাইনর পেয়ে থাকে। মাইনিং-এ উদ্বুদ্ধ করার জন্য এই ভার্চুয়াল টোকেনকে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে একটি বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। যার মূল্য ডিমান্ড অনুযায়ী বাড়ে-কমে।

ব্লক চেইনের বিস্তৃতি (Width of the block chain)
ব্লক চেইট প্রযুক্তি মূলত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি হয়েছে। যেমনটি আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। তাই এ প্রযুক্তি শুধু বিটকয়েন উৎপন্নে ব্যবহৃত হচ্ছে বিষয়টা এমন নয়। জমির দলিল সংরক্ষণের জন্যও এর ব্যবহার চিন্তা করা হচ্ছে। এমনটিক এর মাধ্যমে যাকাত সংগ্রহ ও আদায়ের চিন্তাও চলমান।

বিটকয়েনের নিরাপত্তা (Bitcoin’s Security)
উক্ত প্রযুক্তিতে সকল ডাটা অগণিত মাইনিংকারীদের লেজারে সংরক্ষিত থাকে। ফলে সেটা হ্যাক করতে হলে একই সময় অগণিত কম্পিউটার হ্যাক করতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব। এজন্য বলা হয়, এটি সেন্ট্রালাইজড মাধ্যম থেকেও নিরাপদ।

তবে হ্যাক হওয়াটা অবাস্তব নয়। ইতোমধ্যে কয়েকবার বিভিন্ন বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ বা ওয়ালেট হ্যাক হয়েছে, ফলে হাজারো বিটকয়েন মজুদকারী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অপরদিকে পুরো পৃথিবীর মাইনারদের নিয়ন্ত্রণ করছে কয়েকটি বড় মাইনিং প্রতিষ্ঠান, যারা ৫০% এর বেশি মাইনিং করে থাকে। অনেকে তাদেরকে বিটকয়েনের সেন্ট্রাল ব্যাংক বলে অভিহিত করে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তারা একত্রিত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে তা অসম্ভব নয়।

বলাবাহুল্য, বিটকয়েন একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা, যা সংরক্ষিত থাকে ভার্চুয়াল ওয়ালেটে। কাজেই ওয়ালেটের নিরাপত্তা সংরক্ষণের উপরও ব্যক্তির সংগৃহীত বিটকয়েনের নিরাপত্তা নির্ভর করে।

বিটকয়েন মাইনিং (Bitcoin Mining)
Mining শব্দের মূল অর্থ- মাটি খুঁড়ে মূল্যবান সম্পদ বের করা বা আবিষ্কার করা। এখানে বিশেষ এ্যলগরিদম সল্ভ করার মাধ্যমে মূল্যবান বিটকয়েন লাভ হয়। তাই একে মাটি খুঁড়ে মূল্যবান সম্পদ বের করার সাথে তুলনা করে ‘মাইনিং’ বলা হয়েছে। যারা এই কাজটি করেন, তাদেরকে বলা হয়-‘মাইনর’ (Miner)।

বিটকয়েন মাইনিং এর প্রধান উদ্দেশ্য হল, দু’জন লেনদেনকারীর মালিকানা যথাযথভাবে ট্রান্সফার করাকে নিশ্চিত করা। এই নিশ্চিতকরণটা পূর্বোক্ত পন্থায় যে আগে করতে পারবে সেই কিছু বিটকয়েন লাভ করবে।

এভাবে ২১ মিলিয়ন বিটকয়েন একক তৈরি করা যাবে। এভাবেই উক্ত প্রযুক্তির প্রোগ্রাম সেট করা আছে। এরপর আর নতুন করে বিটকয়েনের কোন একক তৈরি করা সম্ভব হবে না। (অর্থাৎ তখন আক্ষরিক অর্থেই মাইনিং বন্ধ হয়ে যাবে)। তবে উক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থ লেনদেনের সত্যায়নের কাজ মাইনিংকারীরা করে যাবে আগের মতই। তখন বিটকয়েনের বহু ক্ষুদ্র একককে কাজে লাগানো হবে। বিশেষজ্ঞরা তাই বলছেন।

বিটকয়েন সংগ্রহ (Bitcoin Collection)
বিটকয়েন মূলত দুটি পন্থায় সংগ্রহ করা হয়। যথা-
এক. মাইনিং করে। এর বিবরণ পূর্বে দেয়া হয়েছে।
দুই. ক্রয় করে। যার কাছে বিটকয়েন আছে সেটা কাগুজে মুদ্রায় ক্রয় করা। বিটকয়েন সংগ্রহের জন্য দ্বিতীয়টিই এখন পর্যন্ত বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম। একেই বলা হয় ‘বিটকয়েন ইনভেষ্ট’। বলা বাহুল্য, বিটকয়েন সংগ্রহের দুটি মাধ্যমই বেশ প্রতারণাপূর্ণ। বহু মানুষের টাকা খোয়া গেছে।

বিটকয়েন সংরক্ষণ (Bitcoin storage)
ইলেক্সট্রনিক বিশেষ পন্থা তথা E-Wallet এর মাধ্যমে বিটকয়েন সংরক্ষণ করা হয়। এর মাধ্যমে বিটকয়েন বেচা-কেনাও করা হয়। কয়েকটি প্রসিদ্ধ ই-ওয়ালেট হল-
১) Computer Wallets: এর মাধ্যমে বিটকয়েন প্রেরণ করা, গ্রহণ করা সবই সম্ভব।
২) Phone Wallets: এটি অনেকাংশেই প্রথমটির মত। এর মাধ্যমে (NFC (Near field communication) টেকনোলজি ব্যবহার করে ক্রয়কৃত বিভিন্ন পণ্যের দামও শোধ করা যায়।
৩) Web wallets: বিটকয়েন ব্যবহারকারী এর মাধ্যমে নির্ধারিত সাইটে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়। এটি অনেকটা ই-মেইল খোলার মত। এরপর নির্ধারিত একাউণ্ট খোলে তাতে বিটকয়েন সংরক্ষণ করা হয়।
৪) Hardware wallets: এটি ছোট একটি মেশিন জাতীয়। যার কাজই হল বিটকয়েন সংরক্ষণ করা। অন্য কোন কাজ নয়। এতে অন্য কোনও প্রোগ্রাম আপলোড করা যায় না। ইলেক্ট্রনিক চুরির ক্ষেত্রে এটি পূর্বের সকল পন্থার চেয়ে অনেক বেশি নিরাপত্তা দান করে।

বিটকয়েন ও অবৈধ কার্যকলাপ (Bitcoin and illegal activity)
বিটকয়েন সেন্ট্রালাইজড না হওয়ায় এর মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ অনেক সহজ। ব্লকচেইন প্রযুক্তিটি প্রতিটি তথ্য অজ্ঞাতনামে সংরক্ষণ করে, ফলে বিটকয়েনের প্রেরক ও প্রাপক কে তা নির্দিষ্ট করা যায় না।

সুতরাং অর্থপাচার, (Money laundering), টেক্স/কর ফাঁকি দেয়া, ফটকাবাজী (Speculations), শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানি-রপ্তানি (Smuggling), অস্ত্রের ব্যবসা ইত্যাদি যাবতীয় রাষ্ট্রীয় আইন বহির্ভূত ও শরীয়াহ্ পরিপন্থী কার্যকলাপ অনায়েসেই করা যায়।

ইসলামিক ইকনোমিক ফোরাম তাদের বিটকয়েন বিষয়ক গবেষণায় লিখেছে- অস্ট্রেলিয়ার জনৈক গবেষক তার গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় আইন বহির্ভূত কার্যকলাপ (অস্ত্রের ব্যবসা ইত্যাদি) এর হার ৫০%।

লেখক- মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, আই এফ একাডেমী এন্ড কনসালটেন্সি, সহকারী মুফতি, ফতোয়া বিভাগ, জামিয়া শারইয়্যাহ, মালিবাগ, ঢাকা।

একটি মন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button