ঈদ-উল-আযহার ছুটিতে ব্যাংকের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ
আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে বাংলাদেশের সকল ব্যাংক সমূহ আগামী ২০ জুলাই, ২০২১ থেকে ২৪ জুলাই, ২০২১ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ছুটিকালীন এই সময়ে বিদ্যমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করা অতীব জরুরি। কেননা ছুটির এই সময়টি ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য বেশ ঝুকিপূর্ণ ও হুমকি স্বরূপ। এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেমন- চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ভল্ট ভেঙ্গে টাকা লুট ইত্যাদি ঘটার আশঙ্কা থাকে।
এছাড়াও লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ব্যাংকের শাখাসমূহের অধীনস্থ এটি বুথে দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ডগন প্রায়ইশ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে যা বিভিন্ন ব্যাংকের সুনাম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করেছে। তাই আসন্ন ঈদ-উল-আযহার ছুটির সময়ে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে এবং নিম্নলিখিত বিষয় সমূহের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।
ক) ঈদের ছুটি কালীন সময়ে শাখা ব্যবস্থাপক/ মনোনীত অফিসার কর্তৃক আকস্মিক পরিদর্শন
১. শাখা ব্যবস্থাপক নিজে কিংবা তাঁর মনোনীত ব্যক্তিকে ঈদের ছুটি কালীন সময়ে শাখার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণে আকস্মিক শাখা পরিদর্শন করবেন এবং শাখায় অবস্থিত পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করবেন
২. সকল ব্যাংকের সকল শাখা গঠনপূর্বক দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারবৃন্দ প্রিয় নামে শাখা ব্যবস্থাপক করতে হবে
৩. সিকিউরিটি গার্ডের ডিউটি রেজিস্টার এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে
৪. ভিজিট বুক চালুকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্ধের দিনে ঊর্ধতন কর্মকর্তাগণ শাখা এটিএম বুথ ভিজিট করবেন।
খ) ঈদের ছুটি কালীন সময় নিরাপত্তা প্রহরীদের দায়িত্ব বন্টন ও তত্ত্বাবধান
১. ঈদের ছুটি চলাকালীন সময়ে সিকিউরিটি গার্ডের ২৪ ঘণ্টার একটি বিশেষ দায়িত্ববন্টন সূচি তৈরি করে তা শাখা/অফিস প্রধান কর্তৃক প্রয়োজনীয় তত্ত্বাবধান এর মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
২. রাত্রিকালীন সময়ে কমপক্ষে দুইজন একত্রে (যে সকল শাখায় দুইয়ের অধিক সিকিউরিটি গার্ড আছে সেখানে দুইজন সিকিউরিটি গার্ড এবং যে সকল শাখায় দুই/এক জন সিকিউরিটি গার্ড আছে সেখানে একজন একজন সিকিউরিটি গার্ড ও পিয়ন) অবশ্যই শাখায় অবস্থান করতে হবে।
৩. সিকিউরিটি গার্ডগন অচেনা বা অপরিচিত এমনকি পরিচিত ব্যক্তিদের সাথেও বিধি বহির্ভূত সখ্যতা গড়তে পারবে না। এ ব্যাপারে শাখা ব্যবস্থাপককে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
৪. ছুটি কালীন সময়ের পূর্বে শাখা বিল্ডিং এর আশে-পাশে, উপরে-নিচে কোন লোকের সন্দেহজনক আগমন বা চলাফেরা পরিলক্ষিত হলে উক্ত বিষয়ের উপর নজর রাখতে হবে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
গ) অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিদের আনাগোনার উপর সর্তকতা
১. কোন একটি অপরাধ ঘটানোর পূর্বে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করে। এ সকল ব্যক্তিদের আনাগোনার উপর পূর্ব থেকেই সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
২. সন্দেহজনক কোন কিছু দেখলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবগত করতে হবে।
৩. ব্যাংকের শাখা, ভবনের যে তলায় অবস্থিত তার পাশে, উপরে বা নিচে যারা ভাড়া নিয়েছে তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য লিপিবদ্ধ রাখতে হবে।
৪. ব্যাংকের আশে-পাশে কোনরূপ বিস্ফোরক বা অনাকাঙ্খিত দ্রব্যাদি যাতে কেউ না রাখতে পারে সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে এবং নিরাপত্তা প্রহরীকে তার দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সম্ভাব্য সন্দেহজনক স্থান পরিদর্শন করে শাখা ব্যবস্থাপককে রিপোর্ট করতে হবে।
৫. ডাকাতির উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতকারীদের ব্যাংকে আসার সম্ভাব্য পথ ও পলায়নের সম্ভাব্য পথ সম্পর্কে বিশেষ করে সিকিউরিটি গার্ডদের ধারণা রাখতে হবে।
ঘ) অগ্নি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষায় করণীয়
১. শাখায় অবস্থিত Fire Extinguisher মেয়াদ আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে না থাকলে তা দ্রুত Re-filling করিয়ে নিতে হবে।
২. যে সকল শাখায় অগ্নিনির্বাপণ করার জন্য বালু ও পানি ভর্তি বালতি রাখা নেই, সে সকল শাখাকে অতিসত্বর শাখার দৃশ্যমান জায়গায় বালু ও পানি ভর্তি বালতি রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি যেসব উৎস থেকে অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে সেগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ইলেকট্রিক মেইন সুইচ বোর্ড বা জংশন বোর্ডের পাশে কার্বন-ডাই-অক্সাইড Fire Extinguisher আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. নিকটবর্তী থানা এবং ফায়ার সার্ভিসের নাম্বার সমূহ জায়গায় রাখতে হবে যাতে আপদকালীন সময়ে দ্রুত সাহায্য পাওয়া যায়।
ঙ) এটিএম বুথে নিরাপত্তায় করণীয়
১. এটিএম বুথে নিয়োজিত সিকিউরিটি গার্ডের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
২. এটিএম বুথে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ কোন ধরনের যন্ত্র স্থাপন বা মেরামত করতে আসলে সিকিউরিটি গার্ড ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন করে ঐ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের পরিচয় নিশ্চিত করবে। প্রয়োজনবোধে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা এটিএম বুথে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে এরূপ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের পরিচয় নিশ্চিত করে কাজ করার অনুমতি দিবেন।
৩. Help Desk বাস্তবায়ন করে নিয়োজিত কর্মকর্তার নাম ও ফোন নম্বর নোটিশ হিসেবে এটিএম বুথে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে গ্রাহকদের সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।
৪. ছুটিকালীন সময়ে শাখা থেকে দূরে অবস্থিত এটিএম বুথে নিয়োজিত সিকিউরিটি গার্ডের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি বা পাহারা নিশ্চিত করতে শাখার সিকিউরিটি টিম কর্তৃক আকস্মিক পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
চ) ভল্ট রুমের নিরাপত্তা
১. বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নম্বর-০৭ তারিখ ০৫-০৭-২০১৫ এর আলোকে ভল্ট রুমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে কাঠামোগত (মেঝে, ছাদ ও চারপাশের দেয়াল) কোন সমস্যা থাকলে সেটা বন্ধের পূর্বেই সমাধান করিয়ে নিতে হবে।
২. ভোল্ট এর দিকে মুখ করে একটি সিসি ক্যামেরার অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নির্দেশনা অনুসরণ ও পরিপালন করা যেতে পারে।
৩. নগদ স্থিতি ভল্ট লিমিটের অতিরিক্ত হলে তা Feeding শাখায় পাঠানো অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
৪. ভল্ট রুমে Auto Fire Extinguisher স্থাপন করতে হবে এবং এর মেয়াদ আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. ভল্ট ও স্ট্রং রুমের দরজা বন্ধ করার বিষয়টি জয়েন্ট কাস্টোডিয়ানকে নিশ্চিত করতে হবে।
৬. সকল সিকিউরিটি গার্ডগন নিয়মিত শাখার ভল্ট রুমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে।
ছ) Intruder Alarm System এর কার্যকারিতা নিশ্চিতকল্পে করনীয়
১. শাখায় ব্যাংকিং কার্যাদি শেষ হলে শাখা ত্যাগ করার পূর্বে অবশ্যই Intruder Alarm System এর Watch Mode চালু নিশ্চিত করতে হবে।
২. রিমোট কন্ট্রোলারটি যেন অনুমোদিত অফিসার ব্যতীত অন্য কেউ ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে এবং একটি অফিস আদেশের মাধ্যমে তা নির্ধারণ করতে হবে।
৩. ব্যাংকের ভল্টের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ইন্ট্রুডার এলার্ম এর সাথে যুক্ত মোবাইলগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক বহন করতে হবে। Panic/Intruder Alarm পাওয়ার সাথে সাথে ডিভাইসের প্যানেলভুক্ত সকলকে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে এর সঠিকতা যাচাই করে তদনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৪. ডিভাইসে ব্যবহৃত সিমের বিল পরিষোধকরনের মাধ্যমে ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু রাখা নিশ্চিত করতে হবে এবং ডিভাইসের সাথে সংশ্লিষ্ট মোবাইলগুলোর মেসেজ (ইনবক্স) খালি করতে হবে।
৫. Intruder Alarm System এর সাথে সংশ্লিষ্ট ডিভাইসে কোন সমস্যা থাকলে সেটা পূর্ব থেকেই সমাধান করিয়ে নিতে হবে।
জ) সিসিটিভির কার্যকারিতা নিশ্চিতকরণ
১. ভল্ট রুম ও শাখার গুরুত্বপূর্ণ আগমন ও নির্গমন এলাকাসমূহ যাতে সিসিটিভির কাভারেজ বা আওতার মধ্যে থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
২. সিসিটিভির ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার (ডিভিআর) সংরক্ষণে এবং প্রদর্শনে ব্যাংকের বিধি-বিধান যথাযথভাবে পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
৩. শাখা ম্যানেজার বা দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক সিসিটিভির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।
ঝ) গোডাউন সমূহের নিরাপত্তা
১. গোডাউনে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির প্রবেশ এবং অবস্থান বন্ধ করতে হবে।
২. গোডাউন গার্ড কর্তৃক সকল প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথ বন্ধ করতে হবে।
৩. বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা আগুনের উদ্ভব হতে পারে এমন উৎস বন্ধ করতে হবে।
৪. দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ আকস্মিক পরিদর্শন করে পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করতে হবে।
আরও দেখুন:
◾ ঈদ-উল-আযহা উৎসবকালীন সময়ে ATM ও MFS এর মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন লেনদেন নিশ্চিতকরণ
সোর্সঃ বাংলাদেশ ব্যাংক