ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার কোথায় কোথায় জরুরী-৫
মুহাম্মদ শামসুজ্জামানঃ ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার কোথায় কোথায় জরুরী – একজন আমার কাছে হেড অফিসের আজকের ইস্যু করা একটা মেমোরেন্ডাম পাঠিয়েছে যেখানে সাব স্টাফদের মধ্যে যারা যে পদের যোগ্য সেই পদে পদোন্নতি বিবেচনার জন্য কাজ করছে মর্মে জানানো হয়েছে। কিন্ত একটু পর অর্থাৎ বিকেল নাগাদ শুনি পদোন্নতি কার্যকর হয়ে গিয়েছে। যে কাজটি গত পনেরো বছরে হয়নি তা কয়েকদিনের লেখালেখিতে এখন কিভাবে হলো? এর নামই ঠেলার নাম বাবাজী।
জুয়েল মল্লিক লিখেছে- আমি সবসময়ই বলি আমাদের বৈষয়িক চাওয়া এবং তার বিপরীতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার পরিকল্পনা কখনই সমান্তরাল নয়৷ আলহামদুলিল্লাহ প্রানের প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ব্যাংকের সকল মেসেঞ্জারদের মধ্যে যারা মাস্টার্স পাশ তাদেরকে জুনিয়র অফিসার এবং যারা ডিগ্রি পাশ তাদেরকে সহকারী অফিসার হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছে৷ ব্যাংকের যে কর্তৃপক্ষ এই পদোন্নতি দিলেন তাদের জন্য দোয়া এবং যারা পদোন্নতি পেলেন তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন। আল্লাহ আপনাদের যোগ্যতাকে আরও বাড়িয়ে দিন৷ ব্যাংকে থেকে এমন অনেককেই আমি পেয়েছি যারা কষ্ট করে লেখাপড়া করে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে অথচ পদোন্নতি নেই বিধায় দীর্ঘকাল সেই পদেই রয়ে গেছেন। তবে অনেকে আবার ভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও যোগ দিয়ে এখন ভালো জীবন যাপন করছেন।
আরও দেখুন:
◾ ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার কোথায় কোথায় জরুরী-৪
আমানউল্লাহ লিখেছেন- Congratulations to those sub staffs of Islami Bank who have promoted to Assistant Officer/Junior Officer. It is highly expected that the promotee officers will endeavour their efforts for the benefit of the IBBPLC.
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
এমন আরো অনেকেই নিশ্চিত করেছেন। আমিও বলি, আলহামদু লিল্লাহ। পদোন্নতি প্রাপ্তদের অভিনন্দন এবং দোয়া। একই সাথে বলবো, এটা তোমাদের মর্যাদা যেমন বাড়িয়েছে তেমনি মনে রেখো দায়িত্বও অনেক বেড়ে গেলো। অতএব আমরা প্রত্যাশা করবো ব্যাংকের অর্পিত দায়িত্ব চরম আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করবে। এই পর্ব লেখাকালীন আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মী বা ক্লিনারদের তরফে বহু অনুরোধ এমন পেয়েছি যেন তাদের কষ্টের কথা লিখি।
জুনিয়র ষ্টাফ অফিসারদের সংখ্যা যেমন বেশী তেমন তাদের বিষয়ে বেইনসাফীও বেশী, তাদের অভাব অনুযোগও সংগত কারণে বেশী। আমার জানামতে, ইসলামী ব্যাংকের শুরু থেকেই ক্লিনার নিয়োগ হয়েছে টেমপরেরী বেসিসে এবং এখনো তা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে অনেকেই চাকুরী থেকে বিদায় হয়েছেন। যাবার বেলায় এক কপর্দকও আর্থিক সহযোগীতা পাননি। ফলে এদের কোন সঞ্চয় নেই, নেই পিএফ কিংবা বিএফ। নিয়মিতদের মতো এদের কোন সুবিধাও নেই।
এরাই অফিস প্রাংগনকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে, কর্ম পরিবেশ স্বাচ্ছন্দ রাখে এবং গ্রাহকদের জন্য আরামদায়ক ও অনুকুল রাখে অথচ আমরা তাদেরকে কখনো মূল্যায়নই করতে পারলাম না।অতীতেও না, এখনো না। তাদের দাবী হলো, তাদেরকে স্থায়ী কর্মী হিসাবে বিবেচনা করা হোক এবং নিয়মিত কর্মী হিসাবে ব্যাংকের প্রচলিত সুবিধাদিতে ইনক্লুদ করা হোক। আমি এ দাবীকে খুব বড় চাহিদা বলে মনে করি না বরং এর দ্বারা তারা সম্মানিত হবে,আরো ডেডিকেটেড হবে। অনেক ক্লীনারের ছেলেমেদের জানি বেশ মেধাবী কিন্ত অর্থাভাবে ভালো স্কুল কলেজে পড়াতেও পারে না। আশাকরি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এদের বিষয়টাকেও বিবেচনায় নিবেন।
একসময় এখানে মহিলা অফিসার ছিলোই না। জ্ঞরহুম শাহ আবদুল হান্নান স্যার চেয়ারম্যান থাকাকালীন আমাদের কয়েকজনের সাথে মহিলা অফিসার নিয়োগের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলাপ করেন। আমরা তাদের পৃথক কর্ম পরিবেশ, তাহারাত ও নামাজের স্থান ইত্যাদির নিশ্চয়তা দিলে তিনি পরীক্ষামূলক কয়েকজন প্রবেশানার নিয়োগে সম্মতি দেন।
আমার সালটা পূরোপূরি মনে নেই,সম্ভবতঃ ১৯৯৮ সালে প্রথম মহিলা নিয়োগ হয়। তারপর থেকে নিয়মিত ব্যাচে মহিলাদের নিয়োগ অব্যাহত আছে। ব্যাংকের মালিকানা বদলের সাথে সাথে বাছ বিচারহীনভাবে মহিলা নিয়োগ হতে থাকে। ইসলামী ব্যাংকে জব করে এমন বহু মহিলা এখন পর্দার আবশ্যকতাকে জরুরত মনে করেনা। আমি এমন শাখাও দেখেছি যেখানে মহিলা ফ্রন্ট ডেস্কের মতো ব্যস্ত টেবিল সামলাচ্ছে অথচ তার নিজেরই পর্দা নেই। এটা দুঃখজনক। প্রসংগত বলে রাখি, আমাদের হাতে কয়েকজন অন্য ধর্মের ছেলেমেয়েও নিয়োগ পায়। অনেকেই বিসিএস করে চলে যায়। এখনো প্রাণের চেয়েও বেশী ভালোবাসে এমন একজন কন্যাসম হিন্দু মেয়ের কথা আমি জানি যার চলাফেরা বহু মুসলমান মেয়ের চেয়েও বেশী শালীন ও শোভন। আমি তার জন্য দোয়া করি।
এমন অনেক কিছুই আমাদের ইসলামী ব্যাংক সংস্কৃতির সাথে যুক্ত ছিলো, ছিলো নৈতিক ও মানবিক প্রশিক্ষণের জন্য কুরআন ও হাদীস পাঠ। প্রতিদিনের জোহর ও আসরের সালাত হতো জামায়াতের সাথে। ব্যাংকেরই কোন ভাই ইমামতি করতেন। গ্রাহকগণও তাতে অংশ নিতেন। এসব এখন অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছে। তার স্থান নিয়েছে বড় বড় ব্যানার লাগিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপন, বক্তৃতা ও মেহমানদারী। যতদূর শুনেছি ইসলামী ব্যাংকগুলোকে একরকম বাধ্য করা হয়েছে রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশ নিতে। তবে অনেকে আগ বাড়িয়েও যে অনেক কিছু করেছেন পিএম ও আলীগের গুডবুকে থাকার জন্য তারও এন্তার প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। পরবর্তী পর্ব আগামীতে আসবে ইনশাআল্লাহ।
লেখকঃ মুহাম্মদ শামসুজ্জামান [সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি]