মিজানুর রহমানঃ উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে এবং কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের সাথে এমএফএস প্রোভাইডার, ভিসা,মাস্টার ও আমেরিকান এক্সপ্রেস পেমেন্ট স্কিমের সক্রিয় ভূমিকায় স্মার্ট হার্টের যুগে পদার্পণ করেছিল ২০২২ সালে কোরবানির গরুর হাটকে কেন্দ্র করে। প্রথম বছরে অল্প সময়ের নোটিশে অধিক চ্যালেঞ্জিং মনে হলেও এ হাটের আবির্ভাব প্রান্তিক গরু ব্যবসায়ীদের মধ্যে দারুন উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা ছিল লক্ষ্যনীয়। সচরাচর লেনদেনের চাইতে ভিন্ন ও নতুন এ স্মার্ট হাট নিয়ে অভ্যাস হীনতার কারনে শুরুতে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত এবং ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে তথ্য জ্ঞানের অভাবে কম জনপ্রিয়তা মনে হলেও এটা যে সুদূরপ্রসারী ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি কার্যকরী প্লাটফর্ম ও নতুন উপাদান তা সময়ের ব্যবধানে আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এ স্মার্ট হাটের স্মৃতিচারণে উল্লেখ্য যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালে পাইলট প্রকল্প হিসাবে অন্যান্য ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংক এশিয়ার অল্টারনেটিভ ডেলিভারি চ্যানেলের প্রধান জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান খান, তৎকালীন ব্যাংক এশিয়ার মাইক্রো মার্চেন্টের প্রধান জনাব চন্দন কুমার নাগ এর যৌথ সৃজনশীল নেতৃত্বে বাস্তব মঞ্চায়ন হয়েছিল ভাটারার গরুর হাটে। সেই স্মার্ট হাটের বাস্তব রুপদানের মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় ভূমিকার তালিকা অনেক লম্বা হলেও ব্যাংক এশিয়ার জনাব এ কে এম আব্দুল মুয়িদ খান, জনাব সাইফুল ইসলাম সোহেল সহ প্রমুখদের সরাসরি অন্তর্ভুক্তি ক্রেতা বিক্রেতাদের মাঝে দারুন রসায়ন হয়েছিল। অনেকের সঙ্গে আমিও আউটলেটে রোস্টার ডিউটি করে সাধারণ ব্যাংক কর্মী হিসেবে স্মার্ট হাটের সাথে যুক্ত থাকতে পেরে ইতিহাসের নিরব সাক্ষী ও পরম সৌভাগ্যবান মনে করছি।
আরও দেখুন:
◾ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সার্কুলার
তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও সরকারের একশপ প্রকল্প, এটুআই, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ ও ইউএনডিপির সহযোগিতায় এই হাট বসছে। এছাড়াও কোরবানির গরুর ডিজিটাল হাটে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ, ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশন অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের খামারিরা পশু বিক্রি করতে পারছেন।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
প্রতিবছরই সারাদেশে প্রান্তিক গরু ব্যবসায়ীরা কোরবানিকে কেন্দ্র করে পশু মোটাতাজাকরণ, গ্রামীণ হাট-বাজার ও ব্যক্তি মালিকানায় পালিত পশু সংগ্রহ করে ব্যবসার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন হাটে নিয়ে আসে। বিক্রেতারা গরু বিক্রি করে নগদ টাকা সঙ্গে রেখে নিরাপত্তাহীনতা, নানান রকম ঝক্কি ঝামেলায় বিপাকে পড়ে। প্রতিবছরই হাজারো ব্যবসায়ীর মধ্যে কেউ না কেউ মলম পার্টি, চুরি, ছিনতাই কিংবা বাড়ি ফেরার পথে ডাকাতির সম্মুখীন হয়ে অর্থ করি হারিয়েছেন। কখনো কখনো ব্যবসায়ীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার মত দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখন সেই অনিশ্চয়তা, দুর্ভাবনা লাঘবে পাশে থাকবে স্মার্ট হাটের ডিজিটাল বুথ যার ফলে ত্বরান্বিত হবে ক্যাশলেস লেনদেন। এর পাশাপাশি ক্রেতাদের গরুর হাটে বহন করতে হবে না ক্যাশ টাকা। চাইলেই যেকোনো পর্যায়ের পশু বিক্রেতা ফান ট্রান্সফার করে তার নিজের একাউন্টে টাকা নিয়ে যেতে পারবে কিংবা পশু বিক্রির সঙ্গেই স্মার্ট হাটের বুথেই টাকা জমা রাখতে পারবে। ইতোপূর্বে যারা হিসাব খুলেছেন তারা তাদের পূর্বের হিসাবে টাকা রাখতে পারবে।
এছাড়াও যাদের হিসাব খোলা নেই তারা তাৎক্ষণিক ন্যূনতম ডকুমেন্টস দিয়ে হিসাব খুলে টাকা জমা রাখতে পারবে। এতে আলাদা কোন মাশুল কিংবা চার্জ দিতে হবে না। উল্লেখ্য যে বেশ কিছুদিন থেকেই এ প্রান্তিক পশু বিক্রেতা ও খামারিদের হিসাব খোলার জন্য ব্যাংক এশিয়া সহ বিভিন্ন ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে গরুর হাটে পশু বিক্রি করেই টাকা জমা রেখে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। প্রান্তিক গরু ব্যবসায়ীদের এ সুবিধাটা এতটাই কার্যকরী যে একজন ভ্রাম্যমান বাজার অবলোকনকারী হিসেবে ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতার বর্ণনায় তা স্পষ্ট প্রতিীয়মান। ছেঁড়াফাটা, জাল টাকা, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য, হাতে ক্যাশ টাকা নিয়ে লেনদেনে ভয়, ক্যাশ টাকা দেখে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি ছাড়াও বাড়ি ফেরার সময় ডাকাতির আশঙ্কা তো থাকেই। যে কারণে আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে দেই টাকা জমা হলে ক্রেতারা গরু নিয়ে নেয়। ব্যাংক এশিয়ার ডিজিটাল ও স্মার্ট বুথের সামনে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন মানিকগঞ্জ থেকে আগত ভাটারা বাজার হাটের প্রান্তিক গরু ব্যবসায়ী ইসাহাক আলী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিগত বছরের লেনদেন পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০২২ সালের ঈদুল আযহা উপলক্ষে ডিএনসিসির ছয়টি স্মার্ট হাটে প্রায় ৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং২০২৩ সালে ৪৪ কোটি টাকা ক্যাশলেস লেনদেন হয়েছিল। চলতি বছর ঢাকায় আরো দুটি হাট বাড়ানোর পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) দুটি পশুর হাটসহ মোট ১০টি স্মার্ট হাটে নির্ধারিত ব্যাংকের বুথ, সকল ধরনের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, এমএফএস সার্ভিসের মাধ্যমে লেনদেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় ২৬টি জেলার খামারীদের সংযুক্ত করা হয়েছে। এ বছর ক্যাশলেস লেনদেনে আরো বৃদ্ধি পাবেন এ প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডিএনসিসির অস্থায়ী ও স্থায়ী যে আটটি হাটে ক্যাশলেস ডিজিটাল লেনদেন করা যাবে সেগুলো হলো দিয়াবাড়ি ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর ও বউ বাজার পর্যন্ত খালি জায়গা। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। মিরপুর সেকশন-৬ (ওয়ার্ড-৬) ইস্টার্ন হাউজিং। ভাটারা সুতি ভোলা খাল সংলগ্ন খালি জায়গা। কাওলা শিয়াল ডাঙ্গা সংলগ্ন খালী জায়গা, মোহাম্মদপুর বসিলা রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা এবং মিরপুর গাবতলী গবাদি পশুর হাট। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তি সূত্রে প্রচারিত যে এ সব গরুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করবে ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক এবং পূবালী ব্যাংক পিএলসি। এসব ব্যাংকের বুথ থেকে ভিসা, মাস্টার কার্ড, আ্যামেক্স, কার্ড দিয়ে টাকা তোলা যাবে। এছাড়াও বিকাশ, নগদ, এমক্যাশের মাধ্যমেও টাকা লেনদেন করা যাবে। পাশাপাশি পিওস (পয়েন্ট অফ সেল) মেশিনে লেনদেন এবং বর্তমান সময়ের সবচাইতে সহজ বাংলা কিউ আর কোর্ড (কুইক রেসপন্স) এর মাধ্যমে লেনদেনসহ মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস এর মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারবেন।
২০২৪ সালের এ ক্যাশলেস ডিজিটাল স্মার্ট হাট নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে হাট সংশ্লিষ্ট স্বপ্নদ্রষ্টারা বলেন, হাট থেকে পশু কিনে নিয়ে যাওয়া একটি বিরাট সমস্যা। কিন্তু ডিজিটাল হাটের উদ্যোগে পশুর শিপমেন্টের ব্যবস্থা থাকবে ভবিষ্যতে। এছাড়া মাংস প্রসেসিং করার জন্য থাকবে কসাইয়ের ব্যবস্থাও। বসবে লাইভ হাট। ভিডিও কলে পশু দেখা যাবে এবং আপডেট দেয়া হবে প্রতিনিয়ত। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও যশোরে জবাইসহ সব ধরনের সেবা দেয়া হবে।
সুতরাং ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষে এ লেনদেন সারাবছর এবং সারাদেশে সব ক্ষেত্রেই বাধ্যতামূলক করা এখন সময়ের দাবি। তাহলেই সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
মিজানুর রহমান: কলাম লেখক ও ব্যাংক কর্মকর্তা
ইমেইল: mr.rahman@bankasia-bd.com